৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্য মা‘বূদের ইবাদত করে, তাদেরকে ওলী হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের কাছে সাহায্য চায়, সব কিছু পাওয়ার ভরসা করে তাদের দৃষ্টান্ত হল মাকড়সার ন্যায় যে নিজেকে গরম, ঠাণ্ডা ও বালা-মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি ঘর তৈরি করে। কিন্তু সে ঘর বিপদাপদের সময় তার কোন উপকার করতে পারে না। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্য মা‘বূদের ইবাদত করে, তাদেরকে ওলী হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের কাছে সাহায্য চায়, সব কিছু পাওয়ার ভরসা করে, তারা কোন উপকার করতে পারবে না। পৃথিবীর বুকে মাকড়সার ঘর যেমন অতি দুর্বল তেমনি দুনিয়াতেও কিয়ামতের দিনে মানুষের বানানো মা‘বূদেরও কোন ক্ষমতা নেই এবং থাকবে না। তাদের জন্য এরূপ আরো দৃষ্টন্ত কুরআনের অনেক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَمَثَلُه۫ كَمَثَلِ الْكَلْبِ ج إِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْ ط ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيٰتِنَا)
“তার উদাহরণ কুকুরের ন্যায়, তার ওপর তুমি বোঝা চাপালে (জিহ্বা বের করে) সে হাঁপাতে থাকে এবং তুমি বোঝা না চাপালেও (জিহ্বা বের করে) হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাদের উদাহরণ এরূপ ।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৭৬)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সতর্ক করে বললেন, তারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যাদেরকে আহ্বান করে তাদের সম্পর্কে তিনি অবগত। তাদের কি মা‘বূদ হওয়ার ক্ষমতা আছে, তারা কি অস্তিত্বশীল কোন জিনিস, না অন্য কিছু? অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ هِيَ إِلَّآ أَسْمَا۬ءٌ سَمَّيْتُمُوْهَآ أَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّآ أَنْزَلَ اللّٰهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ ط إِنْ يَّتَّبِعُوْنَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَي الْأَنْفُسُ ج وَلَقَدْ جَا۬ءَهُمْ مِّنْ رَّبِّهِمُ الْهُدٰي)
“এগুলো কতক নাম মাত্র, যা তোমাদের পূর্বপুরুষরা ও তোমরা রেখেছ, এর সমর্থনে আল্লাহ তা‘আলা কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা শুধু অনুমান এবং তাদের প্রবৃত্তি যা চায় তারই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হিদায়াত এসেছে।” (সূরা নাজম ৫৩:২৩)
পবিত্র কুরআনে এ সকল দৃষ্টান্ত বর্ণনা করার একটাই কারণ যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। কিন্তু শুধু জ্ঞানী বা আলেমরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। আর অন্যরা বিমুখ হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনিই আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। যা আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যান্য মা‘বূদের ইবাদত করে এ আশায় যে, তারা আখিরাতে আমাদের উপকার করবে, আমাদের জন্য শাফায়াত করবে তাদের এ উপমা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত যে, তারা কোন উপকার করতে পারবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করে তাদের ইবাদত কোন কাজে আসবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সর্বপ্রকার কর্মের খবর রাখেন।
৩. একমাত্র জ্ঞানীরাই কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করে।
৪. আকাশ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।