মু’মিনগণ যেন মু’মিনগণ ছাড়া কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে, মূলতঃ যে এমন করবে আল্লাহর সাথে তার কোন কিছুরই সম্পর্ক নেই, তবে ব্যতিক্রম হল যদি তোমরা তাদের যুলম হতে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন।
English Sahih:
Let not believers take disbelievers as allies [i.e., supporters or protectors] rather than believers. And whoever [of you] does that has nothing [i.e., no association] with Allah, except when taking precaution against them in prudence. And Allah warns you of Himself, and to Allah is the [final] destination.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
বিশ্বাসী (মু’মিন)গণ যেন বিশ্বাসী (মু’মিন)দেরকে ছাড়া অবিশ্বাসী (কাফের)দেরকে অভিভাবক (বা অন্তরঙ্গ বন্ধু)রূপে গ্রহণ না করে।[১] যে কেউ এরূপ করবে, তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের কাছ থেকে কোন ভয় আশংকা কর (তাহলে আত্মরক্ষার জন্য কৌশল অবলম্বন করতে পার।)[২] আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই (তোমাদের) প্রত্যাবর্তন।
[১] আউলিয়া ওলীর বহুবচন। আর ওলী এমন বন্ধুকে বলা হয়, যার সাথে থাকে আন্তরিক ভালবাসা এবং বিশেষ সম্পর্ক। যেমন, মহান আল্লাহ নিজেকে ঈমানদারদের ওলী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। [اَللهُ ولِيُّ الَّذِيْنَ آمَنُوا] "আল্লাহ হলেন ঈমানদারদের ওলী।" আলোচ্য আয়াতের অর্থ হল, ঈমানদারদের পারস্পরিক ভালবাসা এবং বিশেষ সম্পর্ক থাকে। তারা আপোসে একে অপরের অন্তরঙ্গ বন্ধু। এখানে মহান আল্লাহ মু'মিনদেরকে কাফেরদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কারণ, কাফেররা আল্লাহর শত্রু এবং মু'মিনদেরও। সুতরাং তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা কিভাবে বৈধ হতে পারে? আর এই কারণেই আল্লাহ তাআলা এই বিষয়টাকে কুরআনের আরো কয়েক স্থানে অতীব গুরুত্বের সাথে পেশ করেছেন। যাতে মু'মিনরা কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব এবং বিশেষ সম্পর্ক কায়েম করা থেকে বিরত থাকে। অবশ্য (পার্থিব) প্রয়োজন ও সুবিধার দাবীতে তাদের সাথে সন্ধি ও চুক্তি হতে পারে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেনও। অনুরূপ যে কাফের মুসলিমদের সাথে শত্রুতা রাখে না, তার সাথে উত্তম ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার করা বৈধ। (এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা মুমতাহিনায় আছে।) কারণ, এ সব কার্যকলাপ (বন্ধুত্ব ও ভালবাসা থেকে) ভিন্ন জিনিস।
[২] এই অনুমতি সেই মুসলিমদের জন্য যারা কোন কাফের দেশে বসবাস করে। যদি কোন সময় তাদের (কাফেরদের) সাথে বন্ধুত্বের প্রকাশ করা ব্যতীত তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে মৌখিকভাবে বন্ধুত্বের প্রকাশ করতে পারবে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফেরদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ না করে। আর যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহ্র কোন সম্পর্ক থাকবেনা; তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর [১]। আর আল্লাহ্ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করেছেন [২]। এবং আল্লাহ্র দিকেই প্রত্যাবর্তন।
[১] কোন কাফেরের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসা কোন অবস্থাতেই জায়েয নয়। এ আয়াতে কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, মুসলিমদের কোন ব্যাপারে সাহায্য সহযোগিতার চুক্তি করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, যে কেউ সেটা করবে তার সাথে আল্লাহ্র সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ্র দ্বীনে তার কোন অংশ থাকবে না। কেননা কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঈমানের সাথে একত্রিতভাবে থাকতে পারে না। ঈমান তো শুধু আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র বন্ধু মুমিনদের সাথে সম্পর্ক রাখতে বলে যারা আল্লাহ্র দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে এবং আল্লাহ্র শক্ৰদের সাথে জিহাদ করে। আল্লাহ্ বলেন, “আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীরা তারা পরস্পর পরস্পরের ওলী” [সূরা আত-তাওবাহ ৭১]
সুতরাং কেউ যদি ঈমানদারদের ব্যতীত এমন কাফেরদেরকে বন্ধু বানায় যারা আল্লাহ্র নূরকে নিভিয়ে দিতে চায় এবং তাঁর বন্ধুদেরকে বিপদে ফেলতে চায়, তাহলে সে মুমিনদের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কাফেরদের গণ্ডিভুক্ত হবে। এজন্যই আল্লাহ্ বলেছেন, কেউ যদি তাদেরকে বন্ধু বানায় তবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হলো যে, কাফেরদের থেকে দুরে থাকতে হবে, তাদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না, তাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক থাকতে পারবে না। অনুরূপভাবে তাদের প্রতি অনুরাগী হওয়া যাবে না। কোন কাফেরকে মুসলিমদের উপর কর্তৃত্ব দেয়া যাবে না। [সা’দী]
[২] আল্লাহ্র ভয়ের পরিবর্তে মানুষের ভয় যেন তোমাদেরকে আচ্ছন্ন করে না রাখে; কেননা মানুষের ভয় ও ক্ষতির সম্ভাবনা দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহ্র শাস্তি ও ক্ষতির সম্ভাবনা দুনিয়া ছাড়িয়ে আখেরাতেও ব্যাপৃত। সুতরাং আল্লাহ্র শাস্তির ভয়ে ভীত থাক। যে কাজে তার শাস্তি অবধারিত সে কাজ থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখ। যদি তোমরা তাঁর অবাধ্য হও তবে তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন। [সা’দী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোন ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন এবং আল্লাহর নিকটই প্রত্যাবর্তন।
4 Muhiuddin Khan
মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।
5 Zohurul Hoque
বিশ্বাসীরা যেন বিশ্বাসীদের বাদ দিয়ে অবিশ্বাসীদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যে এমন করবে আল্লাহ্র কাছ থেকে কোনো কিছুই থাকবে না, তবে যদি তোমরা তাদের থেকে সতর্কতা স্বরূপ হুশিয়াঁর হতে চাও। আর আল্লাহ্ তোমাদের তাঁর সন্বন্ধে সাবধান করেছেন, আর আল্লাহ্র দিকেই শেষ গতি।