৩-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।