৪৩-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ প্রদান করছেন: তোমার অন্তর, চেহারা ও শরীর সব কিছু দিয়ে মজবুত দীন তথা ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রতি অভিমুখী হও। ইসলামের নির্দেশাবলী পালন কর, নিষেধাজ্ঞাসম্বলিত বিষয় থেকে বিরত থাক। সেদিন আসার পূর্বে যেদিন আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে পালাবার কোন পথ থাকবে না, কোথাও আশ্রয় নেয়া যাবে না এবং দুনিয়াতে ফেরত আসা যাবে না। এখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে সকল মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। সুতরাং আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন তারপরেও কি আমরা তা গ্রহণ করব না? এ সম্পর্কে এ সূরার ৩০ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
এ সব বিধি-বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সতর্ক করে বলছেন যে, এরপরেও যারা কুফরী করবে, তাদের কুফরীর খারাপ পরিণতি তাদের ওপরই বর্তাবে আর যারা ভাল আমল করবে তার প্রতিদান তারাই পাবে। এতে আল্লাহ তা‘আলার কোনই লাভ বা ক্ষতি হবে না। তাতে শুধু তাদের নিজেদেরই লাভ বা ক্ষতি নিহীত। হাদীসে এসেছে:
আবূ যার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّي فَتَضُرُّونِي وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي، فَتَنْفَعُونِي، يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَي أَتْقَي قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ، مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا، يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَي أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا
হে আমার বান্দা! আমার ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ পর্যন্ত তোমরা পৌঁছতে পারবে না, ফলে আমার ক্ষতি হবে। আমার উপকার হয় এমন কোন কাজ পর্যন্ত তোমরা পৌঁছতে পারবে না, ফলে আমার উপকার হবে। তোমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি একজন আল্লাহ তা‘আলাভীরু বান্দার অন্তরে পরিণত হয়ে যায় তাহলে আমার রাজত্বের কোন কিছু বৃদ্ধি পাবে না। আর যদি তোমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন একজন খারাপ মানুষের অন্তরে পরিণত হয়ে যায় তাহলেও আমার রাজত্বের কোন কমতি হবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৭৭)
সুতরাং আমরা ইবাদত করে আল্লাহ তা‘আলার কোন উপকার করছি কি? না; বরং ইবাদত করে আমি আমার নিজের উপকার করছি। এতে আল্লাহর কোন উপকার নেই। আমরা ইবাদত করলেও আল্লাহ তা‘আলার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না, আর ইবাদত না করলেও আল্লাহ তা‘আলার মর্যাদা কমবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর আর কোন আমল করার সুযোগ থাকবে না।
২. কিয়ামত দিবসে সৎ ও অসৎ মানুষ আলাদা আলাদা হয়ে যাবে।
৩. প্রত্যেকে যা আমল করে তা সেই পাবে, তাতে কারো প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
৪. কেউ ভাল আমল করলে নিজের উপকার হবে আর অসৎ আমল করলে নিজেরই ক্ষতি হবে।