আল আহযাব আয়াত ৫৬
اِنَّ اللّٰهَ وَمَلٰۤىِٕكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّۗ يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا ( الأحزاب: ٥٦ )
Innal laaha wa malaaa'i katahoo yusalloona 'alan Nabiyy; yaaa aiyuhal lazeena aamanoo salloo 'alaihi wa sallimoo tasleemaa (al-ʾAḥzāb ৩৩:৫৬)
English Sahih:
Indeed, Allah confers blessing upon the Prophet, and His angels [ask Him to do so]. O you who have believed, ask [Allah to confer] blessing upon him and ask [Allah to grant him] peace. (Al-Ahzab [33] : 56)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন, তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং যথাযথ শ্রদ্ধাভরে সালাম জানাও। (আল আহযাব [৩৩] : ৫৬)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর। (দরূদ ও সালাম পেশ কর।) [১]
[১] এই আয়াতে নবী (সাঃ)-এর ঐ সম্মান ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যা আসমানে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ফিরিশতাগণের নিকট বিদ্যমান। তা এই যে আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাগণের নিকট নবী (সাঃ)-এর সুনাম ও প্রশংসা করেন এবং তাঁর উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতাগণও নবী (সাঃ) এর উচ্চমর্যাদার জন্য দু'আ করেন। তার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীদেরকেও আদেশ করেছেন, যেন তারাও নবী (সাঃ)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে। যাতে নবী (সাঃ)-এর প্রশংসায় ঊর্ধ্ব ও নিম্ন দুই বিশ্ব একত্রিত হয়ে যায়। হাদীসে বর্ণনা হয়েছে যে, সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালামের নিয়ম তো আমাদের জানা আছে (অর্থাৎ তাশাহহুদে 'আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু' পড়ি) কিন্তু আমরা দরূদ কিভাবে পড়ব? এর উত্তরে তিনি দরূদে ইবরাহিমী -- যা নামাযে পাঠ করা হয় তা বর্ণনা করলেন। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা আহ্যাব) এ ছাড়া হাদীসে দরূদের আরো অন্য শব্দ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলিও পাঠ করা চলবে। সংক্ষেপে (صَلَّى اللهُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ وَسَلَّم) পাঠ করা যাবে। পক্ষান্তরে (اَلصَّلَوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ) পাঠ করা এই জন্য ঠিক নয় যে, এতে নবী (সাঃ)-কে সরাসরি সম্বোধন করা হয় এবং এই শব্দগুচ্ছ সাধারণ দরূদে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়নি। আর যেহেতু তাশাহহুদে 'اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِيُّ' শব্দ নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে সেহেতু (তাশাহহুদে তা পাঠ করাতে কোন দোষ নেই। তা ছাড়া (اَلصَّلَوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ) পাঠকারী এই বাতিল বিশ্বাস নিয়ে পাঠ করে যে, নবী (সাঃ) তা সরাসরি শ্রবণ করেন। এই বাতিল বিশ্বাস কুরআন ও হাদীসের পরিপন্থী। সুতরাং এই আকীদা নিয়েও নিজেদের মনগড়া দরূদ পাঠ করা ঠিক নয়। অনুরূপ আযানের পূর্বে তা পাঠ করাও বিদআত, যাতে সওয়াব নয়; বরং গুনাহ হয়। হাদীসে দরূদের বড় গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। নামাযে তা পাঠ করা ওয়াজেব না সুন্নত? অধিকাংশ উলামাগণ বলেছেন সুন্নত এবং ইমাম শাফেয়ী ও আরো অনেকে তা ওয়াজেব বলেছেন। তবে একাধিক হাদীসে তার ওয়াজেব হওয়ারই সমর্থন পাওয়া যায়। অনুরূপ হাদীস দ্বারা এটাও বোঝা যায় যে, যেমন শেষ তাশাহহুদে দরূদ পড়া ওয়াজেব তেমনই প্রথম তাশাহহুদেও দরূদ পাঠ করা ওয়াজেব।
নিম্নে তার কতিপয় দলীল দেওয়া হলঃ-
প্রথম প্রমাণ এই যে, মুসনাদে আহমাদে সহীহ সানাদে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালামের নিয়ম তো আমাদের জানা আছে (অর্থাৎ তাশাহহুদে 'আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু' পড়ি) কিন্তু আমরা নামাযে দরূদ কিভাবে পড়ব? এর উত্তরে তিনি দরূদে ইবরাহিমী শিক্ষা দিলেন (আল ফাতহুর রাববানী ৪/২০-২১)
মুসনাদে আহমাদ ছাড়াও উক্ত হাদীস সহীহ ইবনে হিববান, সুনানে কুবরা বায়হাকী, মুস্তাদরাক হাকেম এবং ইবনে খুযায়মাতে বর্ণিত হয়েছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, যেমন তাশাহহুদে সালাম পড়া হয় অনুরূপ উক্ত প্রশ্নও নামাযের ভিতরে দরূদ পাঠ সম্পর্কে ছিল, উত্তরে নবী (সাঃ) দরূদে ইবরাহিমী পড়ার আদেশ দিয়েছিলেন। যাতে বোঝা যাচ্ছে যে, সালামের সাথে দরূদও পড়া দরকার এবং তা পড়ার স্থান হল তাশাহহুদ। আর হাদীসে তা সাধারণভাবে বর্ণনা হয়েছে। প্রথম বা দ্বিতীয় তাশাহহুদের সাথে নির্দিষ্ট করা হয়নি। যার ফলে বলা যায় যে, প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় তাশাহহুদেই সালাম ও দরূদ পড়তে হবে।
যে বর্ণনাগুলিতে প্রথম তাশাহহুদ দরূদ ছাড়া উল্লেখ হয়েছে সেগুলিকে সূরা আহযাবের আয়াত 'صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا' অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের ধরা হবে। কিন্তু উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর অর্থাৎ পঞ্চম হিজরীর পর যখন নবী (সাঃ) সাহাবায়ে কিরামগণের প্রশ্নের উত্তরে দরূদের শব্দও বর্ণনা করে দিলেন, তখন নামাযে সালামের সাথে দরূদ পড়াও জরুরী হয়ে গেল, চাহে তা প্রথম তাশাহহুদ হোক বা দ্বিতীয়।
আরো একটি প্রমাণ হল, আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, "নবী (সাঃ) কখনো কখনো রাত্রে নয় রাকআত নামায পড়তেন, আট রাকআতে যখন তাশাহহুদে বসতেন, তখন তাতে তাঁর প্রভুর নিকট দু'আ করতেন এবং তাঁর পয়গম্বরের উপর দরূদ পড়তেন তারপর সালাম না ফিরে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং নয় রাকআত পূর্ণ করে পুনরায় তাশাহহুদে বসতেন, তাঁর প্রভুর নিকট দু'আ করতেন এবং তাঁর পয়গম্বরের উপর দরূদ পড়তেন এবং পুনরায় দু'আ করতেন, তারপর সালাম ফিরতেন। (বায়হাকী ২/৭০৪, নাসাঈ ১/২০২, বিস্তারিত দেখুনঃ আল্লামা আলবানীর সিফাতু সালাতিন্নাবী ১৪৫ পৃষ্ঠা) উক্ত বর্ণনায় পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে, নবী (সাঃ) তাঁর রাত্রের নামাযে প্রথম ও শেষ উভয় তাশাহহুদে দরূদ পড়েছেন। এটা যদিও নফল নামাযের কথা ছিল; তবুও নবী (সাঃ)-এর উক্ত আমল দ্বারা উল্লিখিত ব্যাপক দলীলসমূহের সমর্থন হয়। যার ফলে তা শুধু নফল নামাযের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোআ-ইসতেগফার করেন [১]। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর সালাত [২] পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম [৩] জানাও।
[১] আরবী ভাষায় সালাত শব্দের অর্থ রহমত, দো'আ প্রশংসা। অধিকাংশ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁর নবীর প্রতি যে সালাত সম্পৃক্ত করা হয়েছে এর অর্থ, আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন। তার কাজে বরকত দেন। তার নাম বুলন্দ করেন। তার প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তার উপর সালাত প্রেরণের অর্থ হচ্ছে, তারা তাকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে দো'আ করেন, আল্লাহ যেন তাকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তার শরীয়াতকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাকে সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেন। তার উপর রহমত নাযিল করেন। আর সাধারণ মুমিনদের তরফ থেকে সালাতের অর্থ দো'আ ও প্রশংসার সমষ্টি। এ আয়াতের তাফসীরে আবুল আলিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন; আল্লাহ তা'আলার সালাতের অর্থ আল্লাহ কর্তৃক ফিরিশতাদের সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মান ও প্রশংসা করা। [সহীহ বুখারী, কিতাবুত্তাফসীর] আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান দুনিয়াতে এই যে, তিনি ফিরিশতাদের কাছে তার কথা আলোচনা করেন। তাছাড়া তার নামকে সমুন্নত করেন। তিনি পূর্ব থেকেই তার নাম সমুন্নত করেছেন। ফলে আযান, ইকামত ইত্যাদিতে আল্লাহর নামের সাথে সাথে তার নামও শামিল করে দিয়েছেন, তার দ্বীন পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, প্রবল করেছেন; তার শরীয়তের কাজ কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন এবং তার শরীয়তের হেফাযতের দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেছেন। পক্ষান্তরে আখেরাতে তার সম্মান এই যে, তার স্থান সমগ্র সৃষ্টির উর্ধে রেখেছেন এবং যে সময় কোন নবী ও ফেরেশতার সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না, তখনও তাকে সুপারিশের ক্ষমতা দিয়েছেন, যাকে “মাকামে-মাহমুদ” বলা হয়। মনে রাখা প্রয়োজন যে, রাসূলের উপর সালাত প্রেরণের ক্ষেত্রে সালাত শব্দ দ্বারা একই সময়ে একাধিক অর্থ (রহমত, দো'আ ও প্রশংসা) নেয়ার পরিবর্তে সালাত শব্দের এক অর্থ নেয়াই সঙ্গত অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান, প্রশংসা ও শুভেচ্ছা। [দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম, জালাউল আফহাম]
[২] আয়াতের আসল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার আদেশ দান করা। কিন্তু তা এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, প্রথমে আল্লাহ স্বয়ং নিজের ও তাঁর ফেরেশতাগণের দরূদ পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। অতঃপর সাধারণ মুমিনগণকে দরূদ প্রেরণ করার আদেশ দিয়েছেন।
অধিকাংশ ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম উল্লেখ করলে অথবা শুনলে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। [দেখুন, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর] কেননা, হাদীসে এরূপ ক্ষেত্রে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হওয়া বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন; ‘সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে সালাত পাঠ করে না।’ [তিরমিয়ী; ৩৫৪৫] অন্য এক হাদীসে আছে- ‘সেই ব্যক্তি কৃপণ, যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরূদ পাঠ করে না।' [তিরমিয়ী; ৩৫৪৬]
নবী সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্যের জন্য ‘সালাত’ পেশ করা জায়েয কিনা, এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একটি দল, কাযী ঈয়াদের নাম এ দলের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, একে সাধারণভাবে জায়েয মনে করে। এদের যুক্তি হচ্ছে, কুরআনে আল্লাহ নিজেই অ-নবীদের ওপর একাধিক জায়গায় সালাতের কথা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লামও একাধিকবার অ-নবীদের জন্য সালাত শব্দ সহকারে দো'আ করেন। যেমন একজন সাহাবীর জন্য তিনি দো'আ করেন, হে আল্লাহ! আবু আওফার পরিজনদের ওপর সালাত পাঠাও। জাবের ইবনে আবদুল্লাহর রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রীর আবেদনের জবাবে বলেন, আল্লাহ তোমার ও তোমার স্বামীর ওপর সালাত পাঠান। যারা যাকাত নিয়ে আসতেন তাদের পক্ষে তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! ওদের উপর সালাত পাঠাও’। সা'দ ইবনে উবাদার পক্ষে তিনি বলেন, হে আল্লাহ! সা'দ ইবন উবাদার পরিজনদের ওপর তোমার সালাত ও রহমত পাঠাও’। আবার মুমিনের রূহ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, ফেরেশতারা তার জন্য সালাত পাঠ করে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশের মতে এমনটি করা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য তো সঠিক ছিল। কিন্তু আমাদের জন্য সঠিক নয়। তারা বলেন, সালাত ও সালামকে মুসলিমরা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। এটি বর্তমানে তাদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তাই নবীদের ছাড়া অন্যদের জন্য এগুলো ব্যবহার না করা উচিত। এ জন্যই উমর ইবনে আবদুল আযীয একবার নিজের একজন শাসনকর্তকে লিখেছিলেন, “আমি শুনেছি কিছু বক্তা এ নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে শুরু করেছেন যে, তারা আস-সালাতু আলান নাবী'-এর মতো নিজেদের পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারীদের জন্যও “সালাত” শব্দ ব্যবহার করেছেন। আমার এ পত্র পৌঁছে যাবার পরপরই তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং সালাতকে একমাত্র নবীদের জন্য নির্দিষ্ট করে অন্য মুসলিমদের জন্য দো'আ করেই ক্ষান্ত হবার নির্দেশ দাও।” [রূহুল-মা'আনী]
[৩] এ হুকুমটি নাযিল হবার পর বহু সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালামের পদ্ধতি তো আপনি আমাদের বলে দিয়েছেন। (অর্থাৎ নামাযে "আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবীইয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” এবং দেখা সাক্ষাত হলে "আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ" বলা।) কিন্তু আপনার প্রতি সালাত পাঠাবার পদ্ধতিটা কি? [দেখুন,তাবারী,কুরতুবী,তাহরীর ওয়া তানওয়ীর] এর জবাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন সময় যেসব সালাত বা দরূদ শিখিয়েছেন তা বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন,
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ " [বুখারীঃ ৩৩৬৯, ৬৩৬০, ৯৭৯]
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ " [বুখারীঃ ৩৩৭০]
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ [বুখারীঃ ৪৭৯৮]
اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَرِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى آلِإِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
[মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১১৯]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়ার ফযীলত সংক্রান্ত অনেক হাদীস রয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে ফেরেশতারা তার প্রতি দরূদ পাঠ করে যতক্ষণ সে দরূদ পাঠ করতে থাকে।” [মুসনাদে আহমাদ;৩/৪৪৫, ইবনে মাজাহ; ৯০৭] আরো বলেছেন, “যে আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পড়েন।” [মুসলিম; ৩৮৪] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকার সবচেয়ে বেশী হকদার হবে সেই ব্যক্তি যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশী দরূদ পড়বে।” [তিরমিয়ী; ৪৮৪] আরো বলেছেন, আমার কথা যে ব্যক্তির সামনে আলোচনা করা হয় এবং সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না সে কৃপণ। [তিরমিযী; ৩৫৪৬]
3 Tafsir Bayaan Foundation
নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দো‘আ করে*। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।
* ইমাম বুখারী আবুল ‘আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আল্লাহর সালাত’ বলতে বুঝানো হয়েছে ফেরেশতাদের কাছে নবীর প্রশংসা এবং ফেরেশতাদের সালাত হলো দো‘আ। আর ইমাম তিরমিযী সুফিয়ান সওরী থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে আল্লাহর সালাত বলতে রহমত এবং ফেরেশতাদের সালাত বলতে ইস্তেগফার বুঝানো হয়েছে (তাফসীর ইবন কাসীর)।
4 Muhiuddin Khan
আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।
5 Zohurul Hoque
নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ ও তাঁর ফিরিশ্তাগণ নবীর উপরে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরাও তাঁর প্রতি শুভেচ্ছা নিবেদন করো এবং সালাম জানাও সশ্রদ্ধভাবে।
6 Mufti Taqi Usmani
নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরূদ পাঠাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।
7 Mujibur Rahman
আল্লাহ নাবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর মালাইকারাও নাবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নাবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।
8 Tafsir Fathul Mazid
৫৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঐ সম্মান ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে যা আসমানে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ফেরেশতাদের নিকট বিদ্যমান। তা এই যে, আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের নিকট নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মান ও প্রশংসা করেন এবং তাঁর ওপর রহমত বর্ষণ করেন। আর ফেরেশতাগণও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদার জন্য দু‘আ করেন। তার সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ববাসীকে আদেশ করছেন তারাও যেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে। যাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রশংসায় ঊর্ধ্ব ও নিম্ন উভয় জগৎ একত্রিত হয়ে যায়। আবুল আলিয়া বলেন: (নাবীর প্রতি) আল্লাহ তা‘আলার সালাত হলো: ফেরেশতাদের কাছে তাঁর প্রশংসা করা। আর ফেরেশতাদের সালাত হলো: নাবীর জন্য দু’আ করা। (সহীহ বূখারী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পড়ার জন্য উম্মাতের প্রতি তাঁর নির্দেশ ও পদ্ধতি:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মাতকে দরূদ পড়ার ব্যাপারে অনেক জায়গায় নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে মুতাওতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো কা‘ব বিন উজরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: বলা হলো হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল! আপনাকে কিভাবে সালাম দেব তা জানতে পারলাম। কিন্তু সালাত কিভাবে পড়ব? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দরূদে ইবরাহীমের কথা বললেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৯৭)
এছাড়াও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাতে শব্দের একটু ভিন্নতা পাওয়া যায়। তবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করার উত্তম শব্দ ও দরূদ হলো দরূদে ইবরাহীম। তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কিছু দরূদ পাওয়া যায় যেমন
’’يا نبي سلام عليك يا حبيب سلام عليك‘‘
এগুলোর কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা নেই। এগুলো একশ্রেণির নামধারী তথাকথিত আলেম নামক ধর্মব্যবসায়ীদের তৈরি করা কথা। তাই চার রাকাতবিশিষ্ট সালাতের উভয় বৈঠকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব। আবার কেউ সুন্নাত বলেছেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
তাছাড়া আযান শেষে, মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পূর্বে, জানাযার সালাতে, ঈদের সালাতে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে কিছু চেয়ে দু‘আ করার শেষে ও কবর যিয়ারতের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করার পদ্ধতি:
পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা যায় এবং সে দরূদ আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছে দেন। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ; তোমরা আমার কবরকে অনুষ্ঠানের জায়গা বানিয়ে নিও না এবং তোমাদের বাড়ি ঘরকে কবর বানিয়ে নিও না, আর তোমরা আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ কর। তোমরা যেখান থেকেই আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। (আবূ দাঊদ হা: ২০৪২, সনদ সহীহ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জমিনে আল্লাহ তা‘আলার কতগুলো ভ্রাম্যমান ফেরেশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেয়। (আহমাদ ১/৪৪১, নাসায়ী হা: ১২৮১, সনদ সহীহ) অতএব নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম ও তাঁর প্রতি দরূদ প্রেরণের জন্য পাখি হয়ে মদীনাতে যেতে হবে না এবং কোন হাজী সাহেবকেও বলে দিতে হবে না যে, আমার সালাম নাবীর রওজায় পৌঁছে দেবেন। বরং পৃথিবীর যেখান থেকেই দরূদ পাঠ করা হোক না কেন তা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছে যাবে।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করার ফযীলত ও না পাঠ করলে অপরাধ:
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। (সহীহ মুসলিম ১/৩০৬, আবূ দাঊদ হা: ১৫৩০)
তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: ঐ ব্যক্তির নাক ধূলোয় ধূসরিত হোক, যে ব্যক্তির নিকট আমার নাম উচ্চারণ করা হলো কিন্তু আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
الْبَخِيلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ، ثُمَّ لَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ
সে ব্যক্তি কৃপণ যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরূদ পাঠ করে না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ১৭৩৬, সহীহ)
সুতরাং যে কোন আমল সুন্নাতী তরীকায় আদায় করলে তার নেকীর আশা করা যায়, অন্যথায় তার কোন নেকী পাওয়ার আশা করা যায় না বরং পাপের ভাগী হতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দরূদ পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে জানা গেল।
২. স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা এবং ফেরেশতারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দরূদ পাঠ করেন।
৩. যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দরূদ পাঠ করে না সে হল বড় কৃপণ।
৪. সুন্নাতী দরূদ পাঠ করতে হবে, কোন প্রকার বিদ‘আতী দরূপ পাঠ করা যাবে না।
9 Fozlur Rahman
আল্লাহ (তাঁর) নবীকে অনুগ্রহ করেন; তাঁর ফেরেশতারাও তার জন্য (আল্লাহর) অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। (অতএব) হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার জন্য (আল্লাহর) অনুগ্রহ প্রার্থনা করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।
10 Mokhtasar Bangla
৫৬. অবশ্যই আল্লাহ স্বীয় ফিরিশতাদের নিকট রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রশংসা করেন। আর তাঁর ফিরিশতারা তাঁর জন্য দো‘আ করেন। ওহে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নকারী ও তাঁর বান্দাদের উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত শরীয়তের উপর আমলকারীরা! তোমরা রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পেশ করো।
11 Tafsir Ibn Kathir
সহীহ বুখারীতে হযরত আবুল আলিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলার স্বীয় নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করার ভাবার্থ হলো তাঁর নিজ ফেরেশতাদের কাছে নবী (সঃ)-এর প্রশংসা ও গুণাবলীর বর্ণনা দেয়া। আর ফেরেশতাদের তার উপর দরূদ পাঠের অর্থ হলো তার জন্যে দু'আ করা। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে, বারাকাতের দুআ। আলেমগণ বলেন যে, আল্লাহর দরূদ অর্থ তাঁর রহমত এবং ফেরেশতাদের দরূদ পাঠের অর্থ ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। আতা (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাবারাকা। ওয়া তা'আলার সালাতের ভাবার্থ হলো:
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ سَبَقَتْ رَحْمَتِىْ عَلٰى غَضَبِىْ
অর্থাৎ “আমি মহান ও পবিত্র, আমার রহমত আমার গযবের উপর বিজয়ী।” এই আয়াতে কারীমার উদ্দেশ্য এই যে, যেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কদর, মান-মর্যাদা ও ইজ্জত-সম্মান মানুষের নিকট প্রকাশ পেয়ে যায়। তারা যেন জানতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং তাঁর প্রশংসাকারী এবং তাঁর ফেরেশতারা তার উপর দরূদ পাঠকারী। মালায়ে আ’লার এই খবর দিয়ে জগতবাসীকে আল্লাহ তাআলা এই নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারাও যেন তার উপর দরূদ ও সালাম পাঠাতে থাকেন। যাতে মালায়ে আ’লা ও দুনিয়াবাসীর মধ্যে সামঞ্জস্য হয়ে যায়।
হযরত মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈল জিজ্ঞেস করেছিলঃ “আপনার উপর কি আল্লাহ তা'আলা দরূদ পড়ে থাকেন?” আল্লাহ তা'আলা তখন তার কাছে অহী। পাঠিয়ে তাঁকে জানিয়ে দিলেনঃ “তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, হা, মহান আল্লাহ নিজ নবী ও রাসূলদের উপর রহমত বর্ষণ করে থাকেন। এ আয়াতে ঐ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা খবর দিয়েছেন যে, তিনি তাঁর মুমিন বান্দাদের উপরও রহমত বর্ষণ করে থাকেন। তিনি বলেছেনঃ
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوا اللّٰهَ ذِكْرًا كَثِیْرًا ـ وَّ سَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّ اَصِیْلًا ـ هُوَ الَّذِیْ یُصَلِّیْ عَلَیْكُمْ وَ مَلٰٓىٕكَتُهٗ
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ তাআলাকে বেশী বেশী স্মরণ কর এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ কর। আল্লাহ তিনিই যিনি তোমাদের উপর রহমত বর্ষণ করে থাকেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও।” (৩৩:৪১-৪৩) অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیْنَ ـ الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِیْبَةٌ قَالُوْۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیْهِ رٰجِعُوْنَ ـ اُولٰٓىٕكَ عَلَیْهِمْ صَلَوٰتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ رَحْمَةٌ
অর্থাৎ “তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও যাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলেঃ আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আশীষ ও দয়া বর্ষিত হয়।” (২:১৫৫-১৫৭) হাদীসে রয়েছেঃ “আল্লাহ তা'আলা কাতারের (সারীর) ডান দিকের লোকদের উপর দরূদ পড়ে থাকেন।” অন্য হাদীসে আছেঃ “হে আল্লাহ! আবুল আওফার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে হযরত জাবির (রাঃ)-এর স্ত্রী আবেদন জানিয়েছিলেন যে, তিনি যেন তাঁর উপর ও তাঁর স্বামীর উপর দরূদ পাঠ করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “আল্লাহ তোমার উপর ও তোমার স্বামীর উপর রহমত বর্ষণ করুন।”
রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠের নির্দেশ সম্পর্কে বহু মুতাওয়াতির হাদীস এসেছে। ওগুলোর মধ্যে আমরা কিছু কিছু বর্ণনা করবো ইনশাআল্লাহ। তাঁরই নিকট আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি।
এই আয়াতের তাফসীরে হযরত কা'ব ইবনে আজরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনাকে সালাম করা তো আমরা জানি। কিন্তু আপনার উপর সালাত বা দরূদ পাঠ কেমন?” উত্তরে তিনি বলেন, তোমরা বলো:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْم اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ ـ اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْم اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি দরূদ নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর, যেমন আপনি দরূদ নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর ও ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর ও ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।” (এভাবে এই দরূদ শরীফ ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারীও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন কিন্তু তার বর্ণনায় عَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْم শব্দ নেই)
অন্য হাদীসঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা আপনার উপর সালাম, কিন্তু আপনার উপর আমরা দরূদ পাঠ করবো কিভাবে? উত্তরে তিনি বলেন, তোমরা বলো:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكَتْ عَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি দরূদ নাযিল করুন আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর, যেমন দরূদ নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর এবং বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর, যেমন বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর।” (এভাবে এই দরূদ ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য হাদীসঃ
আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তারা বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কিভাবে আমরা আপনার উপর দরূদ পাঠ করবো?” জবাবে তিনি বলেন, তোমরা বলো:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَاَزْوَاجِهٖ وَذُرِّيّٰتِهٖ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَاَزْوَاجِهٖ وَذُرِّيّٰتِهٖ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! দরূদ নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং তার স্ত্রীদের উপর ও তার সন্তানদের উপর যেমন দরূদ নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর এবং বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং তাঁর স্ত্রীদের ও সন্তানদের উপর, যেমন বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, সম্মানিত। (এভাবে এই দরূদ ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য হাদীসঃ
হযরত আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট আগমন করেন যখন আমরা হযরত সা’দ ইবনে উবাদা (রাঃ)-এর মজলিসে বসেছিলাম। অতঃপর তাঁকে হযরত বাশীর ইবনে সা’দ (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন আপনার উপর দরূদ পাঠ করি। সুতরাং কিভাবে আমরা আপনার উপর দরূদ পাঠ করবো?” বর্ণনাকারী বলেন যে, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। তারপর বললেন, তোমরা বলো:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكَتْ عَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ فِى الْعَالَمِيْنَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَالسَّلَامُ كَمَا قَدْ عَلِمْتُمْ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি দরূদ নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর যেমন আপনি দরূদ বর্ষণ করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর, এবং আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর সারা বিশ্বজগতে, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মর্যাদাবান।” আর সালাম তো তেমনই যেমন তোমরা জান। (এভাবে ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ),ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)
হযরত ইবনে মাসউদ বদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সাহাবীগণ বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সালাম তো আমরা জানি। কিন্তু আমরা যখন নামায পড়বো তখন আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করবো?” উত্তরে তিনি বলেন, তোমরা বলো:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি দরূদ নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর।” ইমাম শাফিয়ী (রঃ) স্বীয় মুসনাদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে অনুরূপ আনয়ন করেছেন।
ইমাম শাফিয়ী (রঃ)-এর মাযহাব এই যে, নামাযের শেষ তাশাহহুদে কেউ যদি দরূদ না পড়ে তবে তার নামায শুদ্ধ হবে না। এই জায়গায় দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব। পরবর্তী যুগের কোন কোন গুরুজন এই মাসআলায় ইমাম শাফিয়ী (রঃ)-এর মতকে খণ্ডন করেছেন এবং বলেছেন যে, এটা শুধু তাঁরই উক্তি। তাঁর উক্তির বিপরীত কথার উপর ইজমা হয়েছে। অথচ এটা ভুল। সাহাবীদের আর একটি দল এটাই বলেছেন, যেমন হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), আবু মাসউদ বদরী (রাঃ) এবং জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)। তাবেয়ীদের মধ্যেও এই মাযহাবের লোক গত হয়েছেন, যেমন শাবী (রঃ), আবু জাফর বাকির (রঃ) এবং মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ)। ইমাম শাফিয়ী (রঃ) তো এদিকেই গিয়েছেন। এ ব্যাপারে তার মধ্যে ও তাঁর সহচরদের মধ্যে কোনই মতানৈক্য নেই। ইমাম আহমাদ (রঃ)-এরও শেষ উক্তি এটাই, যেমন আবু যারআহ দেমাশকী (রঃ)-এর বর্ণনা রয়েছে। ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রঃ), ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম ফকীহও (রঃ) এটাই বলেন। এমন কি কোন কোন হাম্বলী মাযহাবের ইমাম বলেন যে, নামাযে কমপক্ষে صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলা ওয়াজিব। যেমন তিনি তাঁর সঙ্গীদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা দিয়েছেন। আর আমাদের কোন কোন সঙ্গী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বংশধরের উপর দরূদ পাঠও ওয়াজিব বলেছেন। মোটকথা, নামাযে দরূদ পাঠ ওয়াজিব হওয়ার উক্তিটি খুবই প্রকাশমান। আর হাদীসেও এর দলীল বিদ্যমান রয়েছে। পূর্বযুগীয় ও পরবর্তী যুগের গুরুজনদের মধ্যে ইমাম শাফিয়ী (রঃ) ছাড়াও অন্যান্য ইমামগণও এই উক্তিই করেছেন। সুতরাং এটা বলা কোনক্রমেই ঠিক হবে না যে, এটা শুধু ইমাম শাফিয়ী (রঃ)-এর উক্তি এবং এটা ইজমার বিপরীত। আল্লাহ তাআলাই এসব ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন। তাছাড়া নিম্নের হাদীসটিও এর পৃষ্ঠপোষকতা করেঃ
হযরত ফুযালা ইবনে উবায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে তার নামাযে দু'আ করতে শুনতে পান যে দু'আয় সে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী (সঃ)-এর উপর দরূদও পাঠ করেনি। তখন তিনি বলেনঃ “এ লোকটি খুব তাড়াতাড়ি করলো। তারপর তিনি তাকে ডাকলেন এবং তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেনঃ “তোমাদের কেউ যখন দুআ করবে তখন যেন প্রথমে মহামহিমান্বিত আল্লাহর প্রশংসা করে ও তার উপর সানা পড়ে, তারপর যেন নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করে। অতঃপর যা ইচ্ছা করে তাই যেন চায়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) (তিনি এটাকে সহীহ বলেছেন), ইমাম নাসাঈ (রঃ), ইবনে খুযাইমা (রঃ) এবং ইবনে হিব্বান (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এর সমর্থনে নিম্নের হাদীসটিও রয়েছেঃ
হযরত সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রাঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার অযু নেই তার নামায নেই, ঐ ব্যক্তির অযু হয় না যে অযুর সময় বিসমিল্লাহ বলে না, ঐ ব্যক্তির নামায হয় না যে নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পড়ে না এবং ঐ ব্যক্তির নামায হয় না যে আনসারকে ভালবাসে না।” (এ হাদীস ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য হাদীসঃ
হযরত বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনাকে কিভাবে সালাম দিতে হবে তা আমরা জানি। কিন্তু কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করবো? তিনি উত্তরে বললেন, তোমরা বললঃ
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ صَلٰوتِكَ وَرَحْمَتَكَ وَبَرَكَاتِكَ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا جَعَلْتَهَا عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَاٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনার অনুগ্রহ, আপনার রহমত এবং আপনার বরকত নাযির করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর, যেমন তা করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর ও ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মর্যাদাবান। (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু দাউদ আলআমা, যার নাম নাফী ইবনে হারিস পরিত্যক্ত ব্যক্তি।
হযরত সালামা আল কানদী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী (রাঃ) জনগণকে নিম্ন লিখিত দু'আটি শিক্ষা দিতেনঃ
اَللّٰهُمَّ دَاحِىَ الْمَدْحُوَاتِ وَبَارِئَ الْمَسْمُوْكَاتِ وَجَبَّارَ الْقُلُوْبِ عَلٰى فِطْرَتِهَا شَقِيِّهَا وَسَعِيْدِهَا اِجْعَلْ شَرَائِفَ صَلٰواتِكَ وَنَوَامِىَ بَرَكَاتِكَ وَرَأْفَةِ تَحَنُّنِكَ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ الْخَاتَمِ لِمَا سَبَقَ وَالْفَاتِحِ لِمَا أُغْلِقَ وَالْمُعْلِنِ الْحَقَّ بِالْحَقِّ وَالدَّامِغِ جِيْشَاتِ الْاَبَاطِيْلِ كَمَا حُمِّل فَاضْطَلَعَ بِاَمْرِكَ لِطَاعَتِكَ مُسْتَوْفِزًا فِى مَرْضَاتِكَ غَيْرَ نَكْلٍ فِىْ قَدَمٍ وَلَا وَهِنٍ فِىْ عَزْمٍ وَاعِيًا لِوَحْيِكَ حَافِظًا لِعَهْدِكَ مَاضِيًا عَلٰى نَفَاذِ اَمْرِكَ حَتّٰى اَوْرِىَ قَبَسًا لِقَابِسٍ اٰلَاءُ اللّٰهِ تَصِلُ بِاَهْلِهٖ اَسْبَابُهُ بِهٖ هُدِيَتِ الْقُلُوْبُ بَعْدَ خَوْضَاتِ الْفِتَنِ وَالْاِثْمِ وَابْهَجْ مُوْضِحَاتِ الْاَعْلَامِ ومُنِيْرَاتِ الْاِسْلَامِ وَنَائِرَاتِ الْاَحْكَامِ فَهُوَ اَمِيْنُكَ الْمَأْمُوْنُ وَخَازِنُ عِلْمِكَ الْمَخْزُوْنُ وَشَهِيْدُكَ يَوْمَ الدِّيْنِ وبَعِيْثُكَ نِعْمَةً وَرَسُوْلُكَ بِالْحَقِّ رَحْمَةً اَللّٰهُمَّ افْسَحْ لَهٗ فِىْ عَدْنِكَ وَاَجِزْهُ مُضَاعَفَاتِ الْخَيْرِ مِنْ فَضْلِكَ مُهْنَآتٍ لَهُ غَيْرُ مُكَدَّرَاتٍ مِنْ فَوْزِ ثَوَابِكَ الْمَعْلُوْلِ وَجَزِيْلِ عَطَائِكِ الْمَجْمُوْلِ اَللّٰهُمَّ اَعِلْ عَلٰى بِنَاءِ النَّاسِ بِنَاءَهٗ وَاَكْرِمْ مَثْوَاهُ لَدَيْكَ وَنَزِّلْهُ وَاَتْمِمْ لَهُ نُوْرَهٗ وَاَجِزْهُ مِنَ ابْتِغَاءِكَ لَهٗ مَقْبُوْلَ الشَّهَادَةِ مَرْضَى الْمُقَالَةِ ذَا مَنْطِقٍ عَدْلٍ وخُطَّةِ فَضْلٍ وَحُجَّةٍ وَّبُرْهَانٍ عَظِيْمٍ
ঐ হাদীসের সনদ ঠিক নয়। এর বর্ণনাকারী আবু হারবাজ মুযীঃ সালামা কানদী পরিচিতও নয় এবং হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ প্রমাণিতও নয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “যখন তোমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে তখন খুব উত্তমরূপে পাঠ করবে। কারণ তোমরা জান না যে, হয়তো এটা তার উপর পেশ করা হবে।” জনগণ তখন তাকে বললেনঃ “তাহলে আপনি আমাদেরকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমরা বলো:
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ صَلَوَاتِكَ وَرَحْمَتَكَ وَبَرَكَاتِكَ عَلٰى سَيِّدِ الْمُرْسَلِيْنَ وَاِمَامِ الْمُتَّقِيْنَ وَخَاتَمِ النَّبِيِّيْنَ مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ اِمَامِ الْخَيْرِ وَقَائِدِ الْخَيْرِ وَرَسُوْلِ الرَّحْمَةِ اَللّٰهُمَّ ابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُوْدًا يَغْبِطُ بِهِ الْاَوَّلُوْنَ وَالْاٰخَرُوْنَ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি আপনার অনুগ্রহ, আপনার রহমত এবং আপনার বরকত দান করুন রাসূলদের নেতা, সংযমীদের ইমাম, নবীদেরকে শেষকারী, আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর, যিনি কল্যাণের ইমাম, মঙ্গলের পরিচালক এবং রহমতের রাসূল। হে আল্লাহ! তাঁকে প্রশংসিত জায়গায় পাঠিয়ে দিন যার প্রতি পূর্ববর্তী ও পরবর্তীরা ঈর্ষা পোষণ করেন। হে আল্লাহ! আপনি দরূদ নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর, যেমন আপনি দরূদ নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর ও ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহাসম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর ও ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহামর্যাদাবান।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ্ বর্ণনা করেছেন। এ রিওয়াইয়াতটি মাওকুফ)
হযরত ইউনুস ইবনে খাব্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তাঁকে এমন এক ব্যক্তি খবর দিয়েছেন যিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন : “সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার উপর সালাম সম্পর্কে আমরা জানি। এখন বলুনঃ আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করতে হবে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَاٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْحَمْ مُحَمَّدًا وَاٰلَ مُحَمَّدٍ كَمَا رَحِمْتَ اٰلَ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَبَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! দরূদ নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-এর পরিবারের উপর, যেমন দরূদ নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর ও ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবারের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহাসম্মানিত। আর দয়া করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রতি ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর পরিবারের প্রতি, যেমন দয়া করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবারের প্রতি। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহাসম্মানিত। আর বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বংশধরের উপর যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহাসম্মানিত। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এর দ্বারা এ দলীলও গ্রহণ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্যে রহম বা করুণারও দু'আ রয়েছে। জমহূরের এটাই মাযহাব। এর আরো দৃঢ়তা নিম্নের হাদীস দ্বারা হয়ঃ হাদীসটি এই যে, একজন গ্রাম্য লোলে বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর দয়া করুন এবং আমাদের সাথে আর কারো উপর দয়া করবেন না।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি খুব বেশী প্রশস্ত জিনিসকে সংকীর্ণ করে দিলে।” কাযী আইয়ায (রঃ) জমহুর মালেকিয়া হতে এর অবৈধতা বর্ণনা করেছেন এবং আবু মুহাম্মাদ ইবনে আবি যায়েদ (রঃ) এটাকে জায়েয বলেছেন।
অন্য একটি হাদীসঃ
হযরত রাবীআহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করে তার জন্যে ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন যতক্ষণ সে আমার উপর দরূদ পড়তে থাকে। সুতরাং বান্দা এখন দরূদ পাঠ কম করুক অথবা বেশী করুক।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আর একটি হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “লোকদের মধ্যে যারা আমার উপর অধিক দরূদ পাঠকারী তারাই হবে কিয়ামতের দিন সর্বোত্তম লোক। [এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী (রঃ)]
হযরত যায়েদ ইবনে তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে একজন আগন্তুক আমার নিকট এসে বলেনঃ “যে বান্দা আপনার উপর একটি দুরূদ পাঠ করে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত বর্ষণ করেন। তখন একটি লোক দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি অবশ্যই আমার দু'আর অর্ধেক সময় আপনার উপর দরূদ পাঠে ব্যয় করবো।” জবাবে তিনি তাকে বললেনঃ “তুমি ইচ্ছা করলে তাই কর।” লোকটি আবার বললো: “আমার দু'আর দুই তৃতীয়াংশ সময় আমি আপনার উপর দরূদ পাঠে লাগাবো।” তিনি বললেনঃ “ইচ্ছা হলে তাই কর।” লোকটি পুনরায় বললো: “আমি আমার দু'আর সর্বাংশই আপনার উপর দরূদ পাঠে লাগিয়ে দিবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “তাহলে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের চিন্তা হতে মুক্তি দান করবেন এবং তিনিই তোমার জন্যে যথেষ্ট হবেন। (এ হাদীসটি ইসমাঈল কাযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য একটি হাদীসঃ
হযরত কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, মধ্যরাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বের হতেন এবং বলতেনঃ “প্রকম্পিতকারী আসছে এবং ওকে অনুসরণকারী পরবর্তী ধ্বনিও রয়েছে এবং মৃত্যু তার মধ্যে যা আছে তা নিয়ে আসছে।” [এ হাদীসটিও বর্ণনা করেছেন ইসমাঈল কাযী (রঃ)]
হযরত উবাই (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা রাত্রে নামায পড়ে থাকি। আমি আমার নামাযের এক তৃতীয়াংশ সময় আপনার উপর দরূদ পাঠে কাটিয়ে দিবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “অর্ধেক (কাটাবে)।” তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে, তাহলে অর্ধেক সময় আপনার উপর দরূদ পাঠে লাগিয়ে দিবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “দুই তৃতীয়াংশ।” হযরত উবাই (রাঃ) বললেনঃ “আমি আমার নামাযের সমস্ত সময়ই আপনার উপর দরূদ পাঠে ব্যয় করে দিবো।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তাহলে তো আল্লাহ তা'আলা তোমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন।”
হযরত কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ সময় অতিবাহিত হতো তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) উঠতেন ও বলতেনঃ “হে লোক সকল! আল্লাহকে স্মরণ কর, আল্লাহকে স্মরণ কর! প্রকম্পিতকারী আসছে এবং ওকে অনুসরণকারীও আসছে। মৃত্যু তার মধ্যস্থিত বিপদ-আপদ নিয়ে চলে আসছে, মৃত্যু তার মধ্যস্থিত বিপদ-আপদ নিয়ে চলে আসছে।" হযরত উবাই (রাঃ) তখন বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আপনার উপর অধিক দরূদ পাঠ করে থাকি। বলুন তো, আমি আমার নামাযের কত অংশ আপনার উপর দরূদ পাঠে ব্যয় করবো?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “তুমি যা চাইবে।” তিনি বললেনঃ “এক চতুর্থাংশ?” নবী (সঃ) জবাব দিলেনঃ “তুমি যা ইচ্ছা করবে। তুমি যদি বেশী সময় ব্যয় কর তবে সেটা তোমার জন্যে কল্যাণকর হবে।” উবাই বললেনঃ “তাহলে অর্ধেক?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তুমি যা চাইবে, তবে তুমি যদি বেশী কর তখন তা তোমার জন্যে মঙ্গলজনক হবে।” হযরত উবাই বললেনঃ “তাহলে দুই তৃতীয়াংশ?” নবী (সঃ) জবাব দিলেনঃ “তুমি যা ইচ্ছা করবে। তবে যদি তুমি বেশী কর তা তোমার জন্যে হবে কল্যাণকর।” তখন হযরত উবাই (রাঃ) বললেনঃ “তাহলে আমার নামাযের সমস্ত সময়ই আমি আপনার উপর দরূদ পাঠে কাটিয়ে দিবো।” তার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তাহলে আল্লাহ তোমাকে সমস্ত চিন্তা ও দুর্ভাবনা হতে রক্ষা করবেন এবং গুনাহ্ মাফ করে দিবেন। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান বলেছেন)
হযরত উবাই (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একটি লোক বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি আমি আমার সমস্ত দরূদ আপনার উপর পাঠ করি তবে কি হবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তাহলে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত চিন্তা হতে বাঁচিয়ে নিবেন। এবং তোমার সমস্ত উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (একদা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) বের হলেন এবং আমিও তার অনুসরণ করলাম। তিনি একটি খেজুরের বাগানে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি সিজদায় পড়ে গেলেন। তিনি এতো দীর্ঘক্ষণ ধরে সিজদায় পড়ে থাকলেন যে, আমার মনে সন্দেহ হলো, তার রূহ বের হয়ে যায়নি তো! নিকটে গিয়ে আমি তাকে দেখতে লাগলাম। ইতিমধ্যে তিনি মাথা উঠালেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ব্যাপার কি?” আমি আমার অবস্থা তার কাছে প্রকাশ করলাম। তিনি তখন বললেনঃ “ব্যাপার ছিল এই যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বললেন, আমি আপনাকে একটি শুভ সংবাদ শুনাচ্ছি যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ আপনাকে বলেছেন- যে তোমার উপর দরূদ পাঠ করবে আমিও তার উপর রহমত নাযিল করবো এবং যে তোমার উপর সালাম পাঠাবে আমিও তার উপর সালাম পাঠাবো। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, শেষে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “আমি মহিমান্বিত আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে এ সিজদা করেছিলাম।”
হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোন কার্যোপলক্ষে বের হন। তাঁর সাথে যাবে এমন কেউ ছিল না। তখন হযরত উমার (রাঃ) দ্রুত গতিতে তার পিছনে পিছনে চলতে থাকেন। দেখেন যে, তিনি সিজদায় পড়ে রয়েছেন। তিনি দূরে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যান। তিনি সিজদা হতে মাথা উঠিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলেন, তুমি যে আমাকে সিজদার অবস্থায় দেখে দূরে সরে গেছো এটা খুব ভাল কাজ করেছো, জেনে রেখো যে, আমার কাছে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেনঃ “আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি একবার আপনার উপর দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন এবং তার দশধাপ মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। (এ হাদীসটি আবুল কাসেম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের নিকট আসেন, ঐ সময় তাঁর চেহারায় আনন্দের লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। সাহাবীগণ তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “একজন ফেরেশতা আমার নিকট এসে আমাকে এই সুসংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে কেউ আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করলে তার উপর আল্লাহর দশটি রহমত নাযিল হবে। অনুরূপভাবে আমার উপর কেউ একটি সালাম পাঠালে আল্লাহ তার উপর দশটি সালাম পাঠাবেন করেছেন। (ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, একটি দরূদের বিনিময়ে সে দশটি পুণ্য লাভ করবে, দশটি গুনাহ্ তার মাফ হয়ে যাবে, মর্যাদা দশ ধাপ উঁচু হয়ে যাবে এবং ওরই অনুরূপ তার উপর ফিরিয়ে দেয়া হবে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর একটি দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) একে হাসান সহীহ বলেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ কর, কেননা এটা তোমাদের যাকাত। আর তোমরা আমার জন্যে আল্লাহর নিকট ওয়াসিলা যাজ্ঞা কর। এটা জান্নাতের একটি বিশেষ উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন জায়গা। ওটা একজন লোকই শুধু লাভ করবে। আমি আশা করি যে, ঐ লোকটি আমিই হবো। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা তার উপর সত্তর বার দরূদ নাযিল করবেন। এখন যার ইচ্ছা কম করুক এবং যার ইচ্ছা বেশী করুক। জেনে রেখো যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট বের হয়ে আসলেন, তিনি যেন কাউকেও বিদায় সম্ভাষণ জানাচ্ছিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ “আমি মুহাম্মাদ (সঃ) উম্মী নবী।” একথা তিনি তিনবার বলেন। এরপর বলেনঃ “আমার পরে কোন নবী নেই। আমাকে অত্যন্ত উন্মুক্ত এবং খুবই ব্যাপক ও খতমকারী কালাম প্রদান করা হযেছে। জাহান্নামের দারোগা ও আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের সংখ্যা কত তা আমি জানি। আমাকে বিশেষ দানে। ভূষিত করা হয়েছে। আমাকে ও আমার উম্মতকে সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দান করা হয়েছে। যতদিন আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকবে ততদিন তোমরা আমার কথা শুনবে ও মানবে। যখন আমার প্রতিপালক আমাকে উঠিয়ে নিবেন তখন তোমরা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে। তাতে বর্ণিত হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম মনে করবে।” (মুসনাদে আহমাদে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হয় সে যেন আমার উপর দরূদ পাঠ করে।”
অন্য হাদীসঃ
যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।” (এ হাদীসটি আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
অন্য হাদীসঃ
হযরত হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ ব্যক্তি বখীল বা কৃপণ যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আমার উপর দরূদ পাঠ করে না।” (ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) হাদীসটিকে হাসান, গারীব, সহীহ বলেছেন)
অন্য হাদীসঃ
হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হয় অথচ সে আমার উপর দরূদ পাঠ করে না সে হলো মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় কৃপণ। (এ হাদীসটি ইসমাঈল কাযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আর একটি হাদীসঃ
হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হালে যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয় অথচ সে আমার উপর দরূদ পাঠ করে না। ঐ ব্যক্তির নাক ধুলো-মলিন হালে যার উপর রমযান মাস অতিবাহিত হয়ে গেল অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না। ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হালে যে তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল অথচ (তাদের খিদমত করে) সে জান্নাতে যেতে পারলো না। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)
এ হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর দরূদ পড়া ওয়াজিব। আলেমদের একটি বড় দল এই মতের সমর্থক। যেমন তাহাবী (রঃ), হালীমী (রঃ) প্রমুখ।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়তে ভুলে গেছে সে জান্নাতের পথ ভুল করেছে। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটি মুরসাল হাদীস কিন্তু পূর্বের হাদীস দ্বারা এটা সবলতা লাভ করেছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই ভাল জানেন)
কোন কোন আলেম বলেন যে, মজলিসে অন্ততঃ একবার দরূদ পাঠ ওয়াজিব এবং পরেরগুলো মুস্তাহাব।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যারা কোন মজলিসে বসে এবং আল্লাহর যিকর ও নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ ছাড়াই উঠে পড়ে তারা কিয়ামতের দিন হতভাগ্য হবে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন এবং ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য রিওয়াইয়াতে আল্লাহর যিকরের উল্লেখ নেই। তাতে এও আছে যে, তারা জান্নাতে গেলেও দরূদ পাঠের সওয়াব লাভে বঞ্চিত হওয়ার কারণে আফসোস করতে থাকবে।
কারো কারো উক্তি এই যে, জীবনে একবার নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ ওয়াজিব, তারপর মুস্তাহাব, যাতে আয়াতের উপর আমল করা যায়। কাযী আইয়ায (রঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ ওয়াজিব হওয়ার কথা বলার পর এই উক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। কিন্তু তাবারী (রঃ) বলেন যে, এ আয়াত দ্বারা তো নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ মুস্তাহাব হওয়াই প্রমাণিত হচ্ছে এবং এর উপর ইজমা হওয়ার তিনি দাবী করেছেন। খুব সম্ভব তারও উদ্দেশ্য এটাই যে, একবার ওয়াজিব এবং পরে মুস্তাহাব। যেমন তার নবুওয়াতের সাক্ষ্য দান। কিন্তু আমি বলি যে, এটা খুবই গরীব বা দুর্বল উক্তি। কেননা, নবী (সঃ)-এর উপর বহু সময় দরূদ পাঠের নির্দেশ এসেছে। এগুলোর মধ্যে কোনটা ওয়াজিব। এবং কোনটা মুস্তাহাব। যেমন আযান সম্পর্কে হাদীসে এসেছেঃ হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যখন তোমরা মুআযযিনকে আযান দিতে শোন তখন সে যা বলে তোমরাও তা-ই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কেননা, যে আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত বর্ষণ করেন। তারপর আমার জন্যে আল্লাহর নিকট ওয়াসীল যা করবে। নিশ্চয়ই ওটা জান্নাতের এমন একটি স্থান যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজন বান্দা ছাড়া আর কারো জন্যে শোভনীয় নয়। আমি আশা করি যে, আমিই সেই বান্দা। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্যে ওয়াসীলা যাঞা করবে তার জন্যে আমার। শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।'
অন্য ধারাঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে আমার জন্যে ওয়াসীলা প্রার্থনা করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্যে আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)
অন্য হাদীসঃ
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কেননা, আমার উপর তোমাদের দরূদ পাঠ তোমাদের জন্যে যাকাত। আর তোমরা আমার জন্যে ওয়াসীলা প্রার্থনা কর। ওয়াসীলা হচ্ছে জান্নাতের মধ্যে একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান। একটি লোক ছাড়া তা কেউ লাভ করতে পারবে না এবং আমি আশা করি যে, ঐ লোকটি আমিই হবো।” (এ হাদীসটি ইসমাঈল কাযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত রুওয়াইফা ইবনে সাবিত আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করে এবং বলেঃ اَللّٰهُمَّ اَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ অর্থাৎ “হে আল্লাহ! তাঁকে আপনি আপনার নিকটতম আসন দান করুন,” কিয়ামতের দিন তার জন্যে আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত তাউস হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ
اَللّٰهُمَّ تَقَبَّلْ شَفَاعَةَ مُحَمَّدٍ الْكُبْرٰى وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ الْعُلْيَا وَاَعْطِهٖ سُؤْلَهٗ فِىْ الْاٰخِرَةِ وَالْاُوْلٰى كَمَا اٰتَيْتَ اِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى عَلَيْهِمَا السَّلَامُ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বড় শাফাআ'ত কবুল করুন এবং তার উঁচু দরযা উপরে উঠিয়ে দিন, তাঁর পারলৌকিক ও ইহলৌকিক চাহিদার জিনিস তাকে প্রদান করুন, যেমন প্রদান করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ) ও মূসা (আঃ)-কে।” এর ইসনাদ উত্তম, সবল ও সঠিক।
দরূদ পাঠ করতে হবে মসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মসজিদ হতে বের হবার সময়। কেননা, এরূপ হাদীস রয়েছে যা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হাদীস হলো: হযরত ফাতিমা (রাঃ) বিনতে রাসূলিল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর দরূদ পড়তেন, তারপর বলতেনঃ
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ وَافْتَحْ لِىْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্যে আপনার রহমতের দরগুলো খুলে দিন। আর যখন মসজিদ হতে বের হতেন। তখন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করতেন, তারপর বলতেনঃ
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ وَافْتَحْ لِىْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমার গুনাহগুলো মাফ করে দিন এবং আপনার অনুগ্রহের দুরগুলো খুলে দিন!”
ইসমাঈল কাযী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আলী (রাঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা মসজিদে গমন করবে তখন নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে।” নামাযের শেষের আত্তাহিয়্যাতু এর আলোচনা পূর্বেই গত হয়েছে। তবে প্রথম তাশাহহুদে এটাকে কেউই ওয়াজিব বলেননি। অবশ্য এটা মুস্তাহাব হওয়ার একটি উক্তি ইমাম শাফিয়ী (রঃ)-এর রয়েছে। যদিও দ্বিতীয় উক্তিতে এর বিপরীতও তার থেকেই বর্ণিত হয়েছে।
জানাযার নামাযে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর দরূদ পড়তে হবে। সুন্নাত তারীকা এই যে, প্রথম তাকবীরে সূরায়ে ফাতেহা পড়তে হবে, দ্বিতীয় তাকবীরে পড়তে হবে দরূদ শরীফ, তৃতীয় তাকবীরে মৃতের জন্যে দু'আ করতে হবে এবং চতুর্থ তাকবীরে পড়তে হবে:
اَللّٰهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا اَجْرَهٗ وَلَا تَفْتِنَّا بَعْدَهٗ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! এর পূণ্য হতে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং এর পরে আমাদেরকে ফিত্নায় ফেলবেন না।” নবী (সঃ)-এর সাহাবীদের এক ব্যক্তির উক্তি হলো এই যে, জানাযার নামাযের মাসনূন তরীকা হলো: ইমাম সাহেব তাকবীর পড়ে আস্তে আস্তে সূরায়ে ফাতেহা পড়বেন। তারপর নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবেন এবং মৃতের জন্যে আন্তরিকতার সাথে দু'আ করবেন এবং তাকবীরগুলোতে কিছুই পড়বেন। তারপর চুপে চুপে সালাম ফিরাবেন। (এটা ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
ঈদের নামাযের পূর্বে হযরত ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত আবু মূসা (রাঃ) এবং হযরত হুযাইফা (রাঃ)-এর নিকট আগমন করেন। এসে তিনি বলেনঃ “আজ তো ঈদের দিন। বলুন তো তাকবীরের নিয়ম কি?” উত্তরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “তাকবীরে তাহরীমা বলে আল্লাহর প্রশংসা করবে ও নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পড়বে। তারপর দু'আ করবে। এপর তাকবীর বলে এটাই করবে, আবার তাকবীর বলে এটাই করবে, পুনরায় তাকবীর বলে এটাই করবে, আবার তাকবীর বলে এটাই করবে। এরপর কিরআত পড়বে। তারপর তাকবীর পাঠ করে রুকু করবে। তারপর দাঁড়িয়ে পাঠ করবে এবং স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসা করবে ও নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পড়বে। এরপর দু'আ করবে ও তাকবীর দিবে এবং এভাবে আবার রুকূতে যাবে।” হযরত হুযাইফা (রাঃ) ও হযরত আবু মূসাও (রাঃ) তাঁর কথা সত্যায়িত করেন।
নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠের সাথে দু'আ শেষ করতে হবে। এটা মুস্তাহাব। হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “দু’আ আসমান ও যমীনের মাঝে রুদ্ধ থাকে যে পর্যন্ত না তুমি তোমার নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ কর।”
রাযীন ইবনে মুআবিয়া (রাঃ) তাঁর কিতাবে মারফুরূপে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “দু'আ আসমান ও যমীনের মাঝে রুদ্ধ থেকে যায় যে পর্যন্ত আমার উপর দরূদ পাঠ করা হয়। তোমরা আমাকে আরোহীর পানপাত্রের মত করো না। তোমরা দুআর প্রথমে, শেষে ও মধ্যে আমার উপর দরূদ পাঠ করো।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেছেনঃ “তোমরা আমাকে সওয়ারের পেয়ালার মত করো না। যখন সে তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গ্রহণ করে তখন পানপাত্রটিও পূর্ণ করে থাকে। অযুর প্রয়োজন হলে তা থেকে অযু করে, পিপাসা পেলে তা হতে পান করে, অন্যথায় ফেলে দেয়। তোমরা দু'আর শুরুতে, মধ্যভাগে এবং শেষে আমার উপর দরূদ পাঠ করে নিবে। এটি গারীব বা দুর্বল হাদীস। বিশেষ করে দু'আয়ে কুনূতে এর খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেনঃ “আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কয়েকটি কালেমা শিখিয়ে দিয়েছেন যা বেতরের নামাযে পড়ে থাকি। সেগুলো হলো:
اَللّٰهُمَّ اهْدِنِىْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِىْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِىْ فِيْمَا اَعْطَيْتَ وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَاِنَّكَ تَقْضِىْ وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ وَاِنَّهٗ لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও হিদায়াত দান করুন, যাদেরকে আপনি নিরাপদে রেখেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও নিরাপদে রাখুন, যাদের আপনি কর্ম সম্পাদন করেছেন তাদের মধ্যে আমারও কর্ম সম্পাদন করুন, আমাকে আপনি যা দিয়েছেন তাতে আমার জন্যে বরকত দান করুন, আপনি যে অমঙ্গলের ফায়সালা করেছেন তা হতে আমাকে রক্ষা করুন। নিশ্চয়ই আপনি ফায়সালা করেন এবং আপনার উপর ফায়সালা করা হয় না। নিশ্চয়ই যাকে আপনি বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন সে লাঞ্ছিত হয় না এবং যার সাথে আপনি শত্রুতা রাখেন সে সম্মান লাভ করে না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি কল্যাণময় এবং সমুচ্চ।” সুনানে নাসাঈতে এর পরে রয়েছেঃ
صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ
অর্থাৎ “নবী (সঃ)-এর উপর আল্লাহ দুরূদ নাযিল করুন।”
জুমআর দিনে ও রাত্রে নবী (সঃ)-এর উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। হযরত আউস ইবনে আউস সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সর্বোত্তম দিন হলো জুমআর দিন। এদিনেই হযরত আদম (রাঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়, এই দিনেই তাঁর রূহ কবয করা হয়। এই দিনেই শিঙ্গায় ফুঙ্কার দেয়া হবে এবং এই দিনেই সবাই অজ্ঞান হবে। সুতরাং তোমরা এই দিনে খুব বেশী বেশী আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ আমার উপর পেশ করা হয়।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনাকে তো যমীনে দাফন করে দেয়া হবে, সুতরাং এমতাবস্থায় কিভাবে আমাদের দরূদ আপনার উপর পেশ করা হবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা যমীনের উপর নবীদের দেহকে ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে আবি দাউদ, সুনানে নাসাঈ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে)
অন্য একটি হাদীসঃ
হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জুমআর দিন তোমরা খুব বেশী বেশী দরূদ পড়বে। ঐ দিন ফেরেশতা হাযির হন। যখন কেউ আমার উপর দরূদ পড়ে তখন তার দরূদ আমার উপর পেশ করা হয় যে পর্যন্ত না সে এর থেকে ফারেগ হয়।” জিজ্ঞেস করা হলো: “মৃত্যুর পরেও কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীদের দেহকে খাওয়া যমীনের উপর হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর নবীরা জীবিত থাকেন এবং তাঁদেরকে আহার্য পৌঁছানো হয়। (এ হাদীসটি আবু আবদিল্লাহ ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি গারীব এবং ছেদ কাটা। এসব ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন)
ইমাম বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জুমআর দিনে ও রাত্রে আমার উপর খুব বেশী বেশী দরূদ পড়বে।” (এ হাদীসটিও দুর্বল)
একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, যার সাথে রুহুল কুদুস (হযরত জিবরাঈল আঃ) কথা বলেছেন তার দেহ যমীনে খায় না। এ হাদীসটি মুরসাল। আর একটি মুরসাল হাদীসেও জুমআর দিনে ও রাত্রে খুব বেশী করে দরূদ পাঠের হুকুম রয়েছে।
অনুরূপভাবে খতীবের উপর দুই খুৎবায় দরূদ পাঠ ওয়াজিব। এটা ছাড়া খুৎবা শুদ্ধ হবে না। কেননা, এটা ইবাদত এবং ইবাদতে আল্লাহর যিকর ওয়াজিব। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যিকরও ওয়াজিব হবে। যেমন আযান ও নামায। ইমাম শাফিয়ী (রঃ) ও ইমাম আহমাদ (রঃ)-এর মাযহাব এটাই।
আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর কবর যিয়ারত করার সময়ও তার উপর দরূদ পাঠ মুস্তাহাব। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের কেউ আমার উপর সালাম পাঠ করে তখন আল্লাহ আমার উপর রূহ ফিরিয়ে দেন, শেষ পর্যন্ত আমি তার সালামের জবাব দিয়ে থাকি।” (ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম নববী (রঃ) এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিয়ে নেবে না এবং আমার কবরে মেলা বসাবে না। হ্যা, তবে আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কেননা, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে থাকে। (এ হাদীসটিও ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
বর্ণিত আছে যে, একটি লোক প্রত্যহ সকালে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রওযা মুবারকের উপর আসততা এবং তার উপর দরূদ পাঠ করতো। একদা তাকে হযরত আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) বললেনঃ “তুমি এরূপ কর কেন?” সে উত্তরে বললো: “নবী (সঃ)-এর উপর সালাম পাঠ আমি খুব পছন্দ করি।” তখন তিনি লোকটিকে বললেন, তাহলে শুন, আমি তোমাকে একটি হাদীস শুনাচ্ছি যা আমি আমার পিতা হতে এবং তিনি আমার দাদা হতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিয়ো না। নিজেদের ঘরগুলোকে তোমরা কবর বানিয়ে নিয়ো না। যেখানেই তোমরা থাকো না কেন আমার উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করতে থাকবে। ঐ দরূদ ও সালাম আমার নিকট পৌঁছে যায়। এ হাদীসটি কাযী ইসমাঈল ইবনে ইসহাক (রঃ) স্বীয় কিতাব ফাযলুস সলাতে আলান নাবিয়্যি (সঃ)'-এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদে একজন বর্ণনাকারী সন্দেহযুক্ত রয়েছে যার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
অন্য সনদে এ রিওয়াইয়াতটি মরসালরূপে বর্ণিত হয়েছে যাতে হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কবরের পার্শ্বে কতকগুলো লোককে দেখে তাদেরকে এই হাদীসটি শুনিয়েছিলেন এবং তাঁর কবরে মেলা বসাতে তিনি নিষেধ করেছিলেন। খুব সম্ভব, লোকগুলোর বেআদবীর কারণেই তিনি তাদেরকে হাদীসটি শুনিয়েছিলেন এবং তাদেরকে এটা শুনানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, তারা হয়তো উচ্চস্বরে দরূদ পাঠ করছিল।
এটাও বর্ণিত আছে যে, তিনি একটি লোককে দিনের পর দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রওযা মুবারকের পার্শ্বে আসতে দেখে তাকে বলেনঃ “তুমি এবং যে ব্যক্তি স্পেনে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করার দিব দিয়ে উভয়েই সমান।”
হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা যেখানেই থাকো না কেন আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓىٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِیِّ এ আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর বলেনঃ “এটা একটা বিশেষ গোপনীয় বিষয়। যদি তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করতে তবে আমি বলতাম না। জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা'আলা আমার সাথে দু’জন ফেরেশতা নিযুক্ত রেখেছেন। যখন কোন মুসলমানের সামনে আমার যিকর করা হয় এবং সে আমার উপর দরূদ পাঠ করে তখন ঐ ফেরেশতা দু’জন বলেনঃ “আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন!” তখন আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা ঐ দু’জন ফেরেশতার এ কথার জবাবে ‘আমীন’ বলেন। (এ হাদীসটিও ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি খুবই দুর্বল এবং সদনও দুর্বল)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর যেসব ফেরেশতা যমীনে চলাফেরা করেন তারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছিয়ে থাকেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) প্রমুখ বর্ণনা করেছেন)
একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে আমার কবরের পার্শ্বে আমার উপর সালাম পাঠ করে আমি তার ঐ সালাম শুনে থাকি এবং যে দরূদ ও সালাম পাঠায়, আমার কাছে তা পৌঁছিয়ে দেয়া হয়।” সনদের দিক দিয়ে এ হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়। মুহাম্মাদ ইবনে মারওয়ান সুদ্দী সাগীর পরিত্যক্ত। আমাদের সাথীরা বলেছেন যে, যে ব্যক্তি হজ্বের ইহরাম বেঁধেছে সে যখন তালবিয়া বা লাব্বায়েক' পাঠ হতে ফারেগ হবে তখন তারও উচিত নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করা। মুহাম্মাদ ইবনে আবি কবর (রাঃ) বলেন যে, মানুষ যখন তালবিয়া পাঠ হতে ফারেগ হবে তখন সর্বাবস্থায় তাকে নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (এটা ইমাম শাফিয়ী (রঃ) ও ইমাম দারে কুনী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেনঃ “যখন তোমরা মক্কায় পৌঁছবে তখন সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে ও মাকামে ইবরাহীমে দু'রাকআত নামায পড়বে। তারপর সাফা পাহাড়ের উপর উঠবে যেখান থেকে তোমরা বায়তুল্লাহকে দেখতে পাবে, সেখানে সাতবার তাকবীর পাঠ করবে যার মাঝে আল্লাহর উপর হামদ ও সানা এবং নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে ও নিজের জন্যে দুআ করবে। মারওয়া পাহাড়েও অনুরূপ কাজ করবে। এটা ইসমাঈল কাযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদ খুবই উত্তম, সুন্দর ও সবল।আমাদের সাথীরা একথাও বলেছেন যে, কুরবানীর পশু যবেহ করার সময়ও আল্লাহর যিরের সাথে নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পড়া মুস্তাহাব। কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ অর্থাৎ “এবং আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।” (৯৪:৪)।
জমহুর এর বিপরীত মত পোষণ করেন। তাঁরা বলেন যে, এখানে শুধু আল্লাহর যিকরই যথেষ্ট। যেমন আহারের সময়, সহবাসের সময় ইত্যাদি। এই সময়গুলোতে দরূদ পাঠ সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত নয়।
অন্য একটি হাদীসঃ হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আল্লাহর সমস্ত নবী ও রাসূলের উপরও দরূদ ও সালাম পাঠ করবে। কেননা, আল্লাহ তা'আলা আমার ন্যায় তাঁদেরকেও প্রেরণ করেছেন। (এ হাদীসটি ইসমাঈল কাযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর সনদে দুই জন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন। তারা হলেন আমর ইবনে হারূন ও তার শায়েখ। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী)
কানের টুনটুন শব্দের সময়ও নবী (সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব।
হযরত আবু রাফে’ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তোমাদের কারো কানে যখন টুনটুন শব্দ হবে তখন যেন সে আমাকে স্মরণ করে ও আমার উপর দরূদ পাঠ করে এবং বলেঃ “যে আমাকে মঙ্গলের স্মরণ করেছে তাকেও যেন আল্লাহ তা'আলা স্মরণ করেন।" এর ইসনাদ দুর্বল এবং এটা প্রমাণিত হওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
মাসআলাঃ
লিখকগণ এটা মুস্তাহাব বলেছেন যে, লিখক যখনই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নাম লিখবে তখনই যেন সে صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ লিখে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন কিতাবে আমার উপর দরূদ লিখে, তার দরূদের সওয়াব ঐ সময় পর্যন্ত জারি থাকে যে সময় পর্যন্ত এ কিতাবখানা বিদ্যমান থাকে।” বিভিন্ন কারণে এ হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়। এমনকি ইমাম যাহাবী (রঃ)-এর শায়েখ এটাকে মাওযু হাদীস বলেছেন।
فَصْل বা অধ্যায়ঃ নবীগণ ছাড়া অন্যদের উপর দরূদ পাঠ যদি নবীদের সাথে জড়িত বা মিলিতভাবে হয় তবে তা নিঃসন্দেহে জায়েয। যেমন পূর্বে বর্ণিত হাদীসে গত হয়েছে
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّاٰلِهٖ وَاَزْوَاجِهٖ وَذُرِّيّٰتِهٖ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি দরূদ নাযিল করুন মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর, তাঁর স্ত্রীদের উপর এবং তাঁর সন্তানদের উপর।” হ্যাঁ, তবে শুধু গায়ের নবীদের উপর দরূদ পাঠের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ একে জায়েয বলেছেন এবং দলীল হিসেবে هُوَ الَّذِیْ یُصَلِّیْ عَلَیْكُمْ وَ مَلٰٓىٕكَتُهٗ (৩৩:৩) এবং اُولٰٓىٕكَ عَلَیْهِمْ صَلَوٰتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ رَحْمَةٌ (২:১৫৭) আল্লাহ তা'আলার এ উক্তিকে গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাণীকেও দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। যখন তার কাছে কোন কওমের সাদকা আসতো তখন তিনি বলতেনঃ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِمْ অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি তাদের উপর দরূদ নাযিল করুন!” যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রাঃ) বলেন, যখন আমার পিতা সাদকার মাল নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আসলেন তখন তিনি বললেনঃ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى اٰلِ اَبِىْ اَوْفٰى
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি আবু আওফা (রাঃ)-এর পরিবারের উপর দরূদ নাযিল করুন।”
অন্য একটি হাদীসে আছে যে, একটি স্ত্রীলোক বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার উপর ও আমার স্বামীর উপর দরূদ পাঠ করুন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ
صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ وَعَلٰى زَوْجِكَ
অর্থাৎ “আল্লাহ তোমার উপর ও তোমার স্বামীর উপর রহমত নাযিল করুন।”
কিন্তু জমহুর উলামা এর বিপরীত মত পোষণ করেন। তাঁরা বলেন যে, স্বতন্ত্রভাবে গায়ের নবীদের উপর দরূদ পাঠ জায়েয নয়। কেননা এর ব্যবহার নবীদের জন্যে এতো বেশী প্রচলিত যে, এটা শুনা মাত্রই যমীনে এই খেয়াল জেগে ওঠে যে, এ নাম কোন নবীরই হবে। সুতরাং এটা গায়ের নবীর জন্যে ব্যবহার না করাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। যেমন আবু বকর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অথবা আলী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলা ঠিক হবে না, যদিও অর্থের দিক দিয়ে তেমন কোন দোষ নেই। অনুরূপভাবে مُحَمَّدٌ عَزَّ وَجَلَّ বলা চলবে না, যদিও মুহাম্মাদ (সঃ) মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। কেননা, এ শব্দগুলো আল্লাহ তা'আলার জন্যেই প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে। আর কিতাব ও সুন্নাতে صَلٰوة শব্দের ব্যবহার গায়ের নবীদের জন্যে এসেছে দুআ হিসেবে। এ কারণেই আলে আবি আওফাকে এর পরে কেউই এই শব্দগুলোর দ্বারা স্মরণ করেনি। এই পন্থা আমাদের কাছেও ভাল লাগছে। তবে এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
কেউ কেউ অন্য একটি কারণও বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ নবীদের ছাড়া অন্যদের জন্যে এই ‘সালাত' শব্দ ব্যবহার করা প্রবৃত্তি পূজকদের আচরণ। তারা তাদের বুযর্গদের ব্যাপারেও এরূপ শব্দ ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং তাদের অনুসরণ করা আমাদের উচিত নয়।
এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিরোধ কি পর্যায়ের সে সম্পর্কেও মতানৈক্য রয়েছে যে, এটা কি তাহরীম না কারাহাতে তানযীহিয়্যাহ? না পূর্ববর্তীদের বিরোধ? সঠিক কথা এই যে, এটা মাকরূহে তানযীহী। কেননা, এটা প্রবৃত্তি পূজকদের রীতি। সুতরাং আমাদের তাদের অনুসারী হওয়া উচিত নয়। আর মাকরূহ তো ওটাই যেটা ছেড়ে দেয়াই উত্তম। আমাদের সাথীরা বলেনঃ নির্ভরযোগ্য কথা হচ্ছে এটাই যে, পূর্বযুগীয় মনীষীরা ‘সালাত' শব্দটিকে নবীদের জন্যেই নির্দিষ্ট করেছেন। যেমন عَزَّ وَجَلَّ শব্দটি আল্লাহ তা'আলার জন্যেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখন থাকলো সালাম সম্পর্কে কথা। এ সম্পর্কে শায়েখ আবু মুহাম্মাদ জুওয়াইনী (রঃ) বলেন যে, এটাও صَلٰوة এর অর্থ প্রকাশ করে থাকে। সুতরাং অনুপস্থিতের উপর এটা ব্যবহৃত হয় না। আর যে নবী নয়, বিশেষ করে তার জন্যে এটা ব্যবহার করা চলবে না। সুতরাং আলী (আলাইহিস সালাম) বলা যাবে না। জীবিত ও মৃতদের এটাই হুকুম। হ্যাঁ, তবে যে সামনে বিদ্যমান থাকে তাকে সম্বোধন করে سَلَامٌ عَلَيْكَ বা سَلَامٌ عَلَيْكُمْ অথবা السَّلَامُ عَلَيْك কিংবা اَلسَّلَام عَلَيْكُمْ বলা জায়েয। আর এর উপর ইজমা হয়েছে।
এ কথা স্মরণ রাখা উচিত যে, লেখকদের কলমে আলী আলাইহিস সালাম বা আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু লিখিত হয়ে থাকে। যদিও অর্থের দিক দিয়ে এতে কোন দোষ নেই, কিন্তু এর দ্বারা অন্যান্য সাহাবীদের সাথে কিছুটা বেআদবী করা হয়। সমস্ত সাহাবীর সাথেই আমাদের ভাল ধারণা রাখা উচিত। এ শব্দগুলো তাযীম ও তাকরীমের জন্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং এ শব্দগুলো তো হযরত আলী (রাঃ)-এর চেয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমার (রাঃ) এবং হযরত উসমান (রাঃ)-এর জন্যে বেশী প্রযোজ্য। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, নবী (সঃ) ছাড়া আর কারো জন্যে দুরূদ পাঠ উচিত নয়। হ্যা, তবে মুসলমান নর ও নারীর জন্যে দু'আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) তঁার এক পত্রে লিখেনঃ “কতক লোক আখিরাতের আমল দ্বারা দুনিয়া লাভের চিন্তায় লেগে রয়েছে। আর কতক লোক তাদের খলীফা ও আমীরদের জন্যে ‘সালাত' শব্দটি ব্যবহার করছে যা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্যে ছিল। যখন তোমার কাছে আমার এই পত্র পৌঁছবে তখন তুমি তাদেরকে বলে দেবে যে, তারা যেন 'সালাত' শব্দটি শুধু নবীদের জন্যে ব্যবহার করে এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্যে এটা ছাড়া যা ইচ্ছা প্রার্থনা
করে।” ইসমাঈল কাযী (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। এটি উত্তম ‘আসার'।
হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন যে, প্রত্যহ সকালে সত্তর হাজার ফেরেশতা এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কবরকে ঘিরে নেন এবং নিজেদের ডানাগুলো গুটিয়ে নিয়ে তাঁর জন্যে রহমতের প্রার্থনা করতে থাকেন এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা রাত্রে আসেন এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা দিনে আসেন। এমনকি যখন তাঁর কবর মুবারক ফেটে যাবে তখনও সত্তর হাজার ফেরেশতা তাঁর সাথে থাকবেন। (এ হাদীসটিও ইসমাঈল কাযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
ফরা বা শাখা
ইমাম নববী (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর দরূদ ও সালাম এক সাথে পাঠ করা উচিত। শুধু صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ অথবা শুধু عَلَيْهِ السَّلَام বলা উচিত নয়। এ আয়াতেও দুটোরই হুকুম রয়েছে। সুতরাং صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسْلِيْمًا এরূপ বলাই উত্তম।