৫৭-৫৮ নং আয়াতের তাফসীর:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্মান, তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করার নির্দেশ দেয়ার পর এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করছেন। যারা কষ্ট দেবে তাদেরকে শাস্তির হুমকি দিয়ে বলেন: আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।
আল্লাহ তা‘আলাকে কষ্ট দেয়ার অর্থ হলন আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করা, তাঁর স্ত্রী-সন্তান রয়েছে বলে বিশ্বাস করা, তাঁর সাথে শরীক করা এবং তাঁর ব্যাপারে এমন কথা বলা যা থেকে তিনি পবিত্র। যেমন মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার শরীক সাব্যস্থ করে, ইয়াহূদীরা বলে: উযাইর আল্লাহ তা‘আলার ছেলে ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় বলে ঈসা আল্লাহ তা‘আলার সন্তান ।
হাদীসে এসেছে, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যুগকে গালি দেয়, অথচ আমি যুগ। রাত-দিনের আবর্তন আমিই করে থাকি। (সহীহ বুখারী হা: ৪৮২৬, সহীহ মুসলিম হা: ২)
সুতরাং যুগকে গালি দেয়া, প্রকৃতিকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। কারণ প্রাকৃতিক কর্ম আল্লাহ তা‘আলার হাতে, কোন যুগ বা রাশিচক্রের নয়।
পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট দেয়ার অর্থ হল, যে কোন প্রকার কথা, যেমন তাঁকে মিথ্যাবাদী, কবি, জাদুকর ইত্যাদি বলা ও তাঁকে গালিগালাজ করা। কা‘ব বিন আশরাফ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গালিগালাজ করত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: কে আছো যে কা‘ব বিন আশরাফকে হত্যা করবে? সে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিচ্ছে। তখন সাহাবী মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ তাকে হত্যা করেন। (সহীহ বুখারী হা: ২৫১০, সহীহ মুসলিম হা: ১৮০১) এবং আরো যে সমস্ত কাজে তাঁকে কষ্ট দেয়া। যেমন তাঁর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করা, শারীরিক আঘাত করা, তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা, এমনকি সাহাবীদেরকে গালিগালাজ করলেও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কষ্ট পান।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِنَّمَا فَاطِمَةُ بَضْعَةٌ مِنِّي يُؤْذِينِي مَا آذَاهَا
ফাতিমা আমার একটি অংশ, যে তাকে কষ্ট দেবে সে আমাকে কষ্ট দিল। (সহীহ মুসলিম হা: ২৪৪৯)
অনুরূপভাবে মু’মিন, মু’মিনাদেরকে শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত কষ্ট দেয়া হারাম এবং তাদেরকে অপবাদ দেয়াও বড় গুনাহর কাজ। মু’মিনদেরকে কষ্ট দেয়ার অর্থ হল, তাদের বদনাম করার জন্য তাদের ওপর অপবাদ দেয়া, অবৈধভাবে তাদের অমর্যাদা ও তাচ্ছিল্য করা। যেমন রাফিযী ও শিয়ারা সাহাবায়ে কিরামকে গালি দেয় এবং তাঁদের সাথে এমন কিছু কথা বা কর্ম সম্পৃক্ত করে যা তারা আদৌ বলেননি বা করেননি।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট দেয়া কুফরী কাজ, যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলকে যে কোন উপায়ে কষ্ট দেবে, তাঁদের নিয়ে ব্যঙ্গ করবে তারা মুসলিম থাকতে পারে না। আর সাধারণ মু’মিনকে কষ্ট দেয়া বড় গুনাহর কাজ। তবে উভয় কাজই হারাম। কোন অবস্থাতেই কোন মু’মিনের এমন কাজ করা উচিত নয় ।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রাকৃতিক কোন কিছুকে এবং যুগকে গালি দেয়া আল্লাহ তা‘আলাকে কষ্ট দেয়ার শামিল।
২. আল্লাহ ও রাসূলকে যে-কোনভাবে কষ্ট দেয়া কুফরী কাজ, যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
৩. কোন মু’মিনকে এমন কোন কথা বলা যাবে না যাতে সে মনে কষ্ট পায়।