৫১-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
এই আয়াতগুলোতে দ্বিতীয় ফুৎকারের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যার দ্বারা মৃতরা জীবিত হয়ে যাবে। يَنْسِلُوْنَ ক্রিয়া পদটির مَصْدَر হলো نَسْلَان এবং এর অর্থ হচ্ছে দ্রুত গতিতে চলা। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ
یَوْمَ یَخْرُجُوْنَ مِنَ الْاَجْدَاثِ سِرَاعًا كَاَنَّهُمْ اِلٰى نُصُبٍ یُّوْفِضُوْنَ
অর্থাৎ “সেদিন তারা কবর হতে বের হবে দ্রুত বেগে, মনে হবে তারা কোন একটি লক্ষ্যস্থলের দিকে ধাবিত হচ্ছে।” (৭০:৪৩) যেহেতু দুনিয়ায় তারা কবর হতে জীবিতাবস্থায় উত্থিত হওয়াকে অবিশ্বাস করতো, সেই হেত সেদিন তারা বলবেঃ ‘হায়! দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্ৰাস্থল হতে উঠালো।' এর দ্বারা কবরে আযাব না হওয়া প্রমাণিত হয় না। কেননা, ঐ সময় তারা যে ভীষণ কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হবে তার তুলনায় কবরের শাস্তি তাদের কাছে খুবই হালকা অনুভূত হবে। তারা যেন কবরে আরামেই ছিল।
কোন কোন গুরুজন একথাও বলেছেন যে, কবর হতে উত্থিত হওয়ার কিছু পূর্বে সত্যি সত্যিই তাদের ঘুম এসে যাবে। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, প্রথম ফুৎকার ও দ্বিতীয় ফুৎকারের মধ্যবর্তী সময়ে তারা ঘুমিয়ে পড়বে। তাই কবর হতে উঠার সময় তারা এ কথা বলবে। ঈমানদার লোকেরা এর জবাবে বলবেঃ দয়াময় আল্লাহ্ তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তাঁর রাসূলগণ সত্যি কথাই বলতেন। একথাও বলা হয়েছে যে, ফেরেশতারা এই জবাব দিবেন। এ দু’টি উক্তির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের উপায় এই যে, হয়তো এ জবাব মুমিনরাও দিবে এবং ফেরেশতারাও দিবেন। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ্।
আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এগুলো সবই কাফিরদের উক্তি। কিন্তু সঠিক কথা ওটাই যা আমরা বর্ণনা করলাম। যেমন সূরায়ে সাফাতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ
وَ قَالُوْا یٰوَیْلَنَا هٰذَا یَوْمُ الدِّیْنِ ـ هٰذَا یَوْمُ الْفَصْلِ الَّذِیْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
অর্থাৎ “এবং তারা বলবেঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের! এটাই তো কর্মফল দিবস। এটাই ফায়সালার দিন যা তোমরা অস্বীকার করতে।”(৩৭:২০-২১) অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ
وَ یَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ یُقْسِمُ الْمُجْرِمُوْنَ مَا لَبِثُوْا غَیْرَ سَاعَةٍ كَذٰلِكَ كَانُوْا یُؤْفَكُوْنَ ـ وَ قَالَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَ الْاِیْمَانَ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِیْ كِتٰبِ اللّٰهِ اِلٰى یَوْمِ الْبَعْثِ فَهٰذَا یَوْمُ الْبَعْثِ وَ لٰكِنَّكُمْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ “যেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেই দিন পাপীরা কসম করে বলবে যে, তারা (দুনিয়ায় এক ঘন্টার বেশী অবস্থান করেনি। এভাবে তারা সদা সত্য হতে ফিরে থাকতো। ঐ সময় জ্ঞানীরা ও মুমিনরা বলবেঃ তোমরা আল্লাহর লিখন অনুযায়ী পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছে, আর পুনরুত্থানের দিন এটাই, কিন্তু তোমরা জানতে না।”(৩০:৫৫-৫৬)
মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ ‘এটা হবে শুধুমাত্র এক মহানাদ, তখনই তাদের সকলকে হাযির করা হবে আমার সামনে।' যেমন তিনি বলেনঃ
فَاِنَّمَا هِیَ زَجْرَةٌ وَّاحِدَةٌ ـ فَاِذَا هُمْ بِالسَّاهِرَةِ
অর্থাৎ “এটা তো শুধু এক বিকট আওয়ায়, তখনই ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে।”(৭৯:১৩-১৪) মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ
وَ مَاۤ اَمْرُ السَّاعَةِ اِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ اَوْ هُوَ اَقْرَبُ
অর্থাৎ “কিয়ামতের ব্যাপারটি তো শুধু চোখের পলক ফেলার মত, বরং তার চেয়েও নিকটতর।”(১৬:৭৭) মহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ
یَوْمَ یَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِیْبُوْنَ بِحَمْدِهٖ وَ تَظُنُّوْنَ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا قَلِیْلًا
অর্থাৎ “যেই দিন তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করবেন তখন তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে তাঁর আহ্বানে সাড়া দিবে এবং তোমরা ধারণা করবে যে, তোমরা অল্পদিনই (দুনিয়ায়) অবস্থান করেছো।”(১৭:৫২) মোটকথা, হুকুমের সাথে সাথেই সবাই একত্রিত হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ বলবেনঃ ‘আজ কারো প্রতি যুলুম করা হবে না, বরং তোমরা যা করতে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে।'