তারা যদি উভয়ে পৃথক হয়ে যায় তবে আল্লাহ আপন প্রাচুর্য দিয়ে প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করে দেবেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময়, মহাকুশলী।
English Sahih:
But if they separate [by divorce], Allah will enrich each [of them] from His abundance. And ever is Allah Encompassing and Wise.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
এবং যদি তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তাঁর প্রাচুর্য দ্বারা তাদের প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করবেন। [১] বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।
[১] এখানে তৃতীয় অবস্থার কথা বলা হচ্ছে যে, প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যদি বনিবনাও না হয়, তাহলে তারা তালাকের মাধ্যমে পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যাবে। হতে পারে তালাকের পর পুরুষ তার চাহিদার গুণের নারী এবং মহিলা তার চাহিদার গুণের পুরুষ পেয়ে যাবে। ইসলামে তালাককে চরম ঘৃণা করা হয়েছে। একটি হাদীসে এসেছে যে, ((أَبْغَضُ الحَلاَلِ إِلَى اللهِ الطَّلاَقُ)) অর্থাৎ, তালাক আল্লাহর নিকট সর্বাধিক ঘৃণিত হালাল বস্তু। (আবূ দাঊদ) তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাতে অনুমতি দিয়েছেন। কারণ, কোন কোন সময় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে, তালাক ব্যতীত অন্য কোন উপায় থাকে না এবং তাদের উভয় পক্ষের মঙ্গল একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার মধ্যেই থাকে। উল্লিখিত হাদীস সনদের দিক দিয়ে দুর্বল হলেও কুরআন ও হাদীসের উক্তির দ্বারা এ কথা পরিষ্কার হয় যে, এ (তালাকের) অধিকার তখনই কার্যকরী করা উচিত, যখন কোনভাবেই বনিবনাও সম্ভব হবে না।
দ্রষ্টব্যঃ উল্লিখিত হাদীস (أَبْغَضُ الحَلاَل...)কে আল্লামা আলবানী দুর্বল বলেছেন। (ইরওয়াউল গালীলঃ ২০৪০নং) তবে শরয়ী কোন কারণ ছাড়া তালাক দেওয়া যে অপছন্দনীয় তাতে কোন সন্দেহ নেই।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর যদি তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যায় তবে আল্লাহ তাঁর প্রাচুর্য দ্বারা প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময় [১]।
[১] পূর্বে উল্লেখিত তিনটি আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মানুষের দাম্পত্য জীবনের এমন একটি জটিল দিক সম্পর্কে পথ-নির্দেশ করেছেন, সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন সময়ে প্রত্যেকটি দম্পতিকেই যার সম্মুখীন হতে হয়। তা হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক মনোমালিন্য ও মন কষাকষি। আর এটি এমন একটি জটিল সমস্যা, যার সুষ্ঠু সমাধান যথাসময়ে না হলে শুধু স্বামী-স্ত্রীর জীবনই দুৰ্বিসহ হয় না, বরং অনেক ক্ষেত্রে এহেন পারিবারিক মনোমালিন্যই গোত্র ও বংশগত বিবাদ তথা হানাহানি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কুরআনুল কারীম নর ও নারীর যাবতীয় অনুভূতি ও প্রেরণার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় শ্রেণীকে এমন এক সার্থক পদ্ধতি বাতলে দেয়ার জন্য নাযিল হয়েছে, যার ফলে মানুষের পারিবারিক জীবন সুখী-সমৃদ্ধ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। এর অনুসরণে পারস্পারিক তিক্ততা ও মর্মপীড়া, ভালবাসা ও প্রশাস্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আর যদি অনিবার্য কারণে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হয়, তবে তা করা হবে সম্মানজনক ও সৌজন্যমূলক পস্থায় যেন তার পেছনে শক্রতা, বিদ্বেষ ও উৎপীড়নের মনোভাব না থাকে। এ আয়াতে শেষ চিকিৎসা তালাক ও বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার ব্যাপারে হেদায়াত দিয়ে বলা হয়েছে যে, এটা মনে করার কোন সংগত কারণ নেই যে, সার্বিক সমঝোতা সম্ভব না হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে আল্লাহ তাদের উভয়ের প্রতি দয়াশীল হবেন না। বরং আল্লাহ তা’আলা তাদের উভয়েরই রব। তিনি তাদের প্রত্যেককেই তাদের প্রয়োজনীয় জীবিকা নির্বাহ করবেন। সুতরাং বিবাহ-বিচ্ছেদ পদ্ধতির ব্যাপারে কারও আপত্তি করা উচিত নয়।
মোটকথা, কুরআনুল কারীম উভয় পক্ষকে একদিকে স্বীয় অভাব অভিযোগ দূর করা ও ন্যায্য অধিকার লাভ করার আইনতঃ অধিকার দিয়েছে। অপরদিকে ত্যাগ, ধৈর্য, সংযম ও উন্নত চরিত্র আয়ত্ব করার উপদেশ দিয়েছে। এখানে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, বিবাহ বিচ্ছেদ হতে যথাসাধ্য বিরত থাকা কর্তব্য । বরং উভয় পক্ষেই কিছু কিছু ত্যাগ স্বীকার করে সমঝোতায় আসা বাঞ্ছনীয়। তারপরও যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তবে জীবন সম্পর্কে হতাশ হওয়া উচিত নয়। আল্লাহ প্রত্যেককেই তাঁর রহমতে স্থান দিবেন।
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর যদি তারা উভয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তবে আল্লাহ প্রত্যেককে নিজ প্রাচুর্য দ্বারা অভাবমুক্ত করবেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাবান।
4 Muhiuddin Khan
যদি উভয়েই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে আল্লাহ স্বীয় প্রশস্ততা দ্বারা প্রত্যেককে অমুখাপেক্ষী করে দিবেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত, প্রজ্ঞাময়।
5 Zohurul Hoque
আর যা-কিছু আছে মহাকাশমন্ডলে এবং যা-কিছু পৃথিবীতে সে-সবই আল্লাহ্র। আর আমরা নিশ্চয়ই নির্দেশ দিয়ছিলাম তোমাদের আগে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের এবং তোমাদেরও যেন তোমরা আল্লাহ্কে ভয়-শ্রদ্ধা করবে। কিন্তু যদি তোমরা অবিশ্বাস পোষণ করো তবে নিঃসন্দেহ আল্লাহ্রই যা-কিছু আছে মহাকাশমন্ডলে ও যা-কিছু পৃথিবীতে। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন মহাধনবান, পরম প্রশংসিত।