৫২-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলছেনঃ তুমি কুরআন অমান্যকারী মুশরিকদেরকে বলে দাওঃ এই কুরআন সত্য সত্যই আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে, অথচ তোমরা একে অবিশ্বাস করছো! তাহলে আল্লাহ তাআলার নিকট তোমাদের কি অবস্থা হবে! যে ব্যক্তি স্বীয় কুফরী ও বিরোধিতার কারণে সত্য পথ হতে বহু দূরে সরে পড়েছে তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে আছে?
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদের জন্যে আমার নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করবো বিশ্ব জগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। ইসলামপন্থীদেরকে আমি বিজয় দান করবো। তারা সাম্রাজ্যসমূহের সম্রাট হয়ে যাবে। সমস্ত দ্বীনের উপর দ্বীনে ইসলামের প্রাধান্য থাকবে।
বদর ও মক্কা বিজয়ের নিদর্শন স্বয়ং মুশরিকদের নিজেদের মধ্যেই রয়েছে যে, তারা সংখ্যায় অধিক হওয়া সত্ত্বেও অল্প সংখ্যক মুসলমানের নিকট লাঞ্ছনাজনক পরাজয় বরণ করে। ভাবার্থ এও হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলার হাজার হাজার নিদর্শন স্বয়ং মানব জাতির নিজেদের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। তাদের সষ্টি ও গঠন কৌশল, তাদের স্বভাব-প্রকৃতি, তাদের পৃথক পৃথক চরিত্র, পৃথক পৃথক রূপ ও রং ইত্যাদি তাদের সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি নৈপুণ্য এবং শিল্প চাতুর্যেরই পরিচায়ক, যেগুলো সদা তাদের চোখের সামনে রয়েছে, এমন কি স্বয়ং তাদের নিজেদের সত্তার মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। তাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায় ও অবস্থা, যেমন বাল্যকাল, যৌবন, বার্ধক্য, তাদের রুগ্নতা ও সুস্থতা, দারিদ্র্য ও স্বচ্ছলতা, সুখ ও দুঃখ ইত্যাদি পরিষ্কারভাবে তাদের উপর প্রকাশমান। মোটকথা, আল্লাহ তাআলার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নিদর্শনাবলী এতো অধিক রয়েছে যে, মানুষ এগুলো দেখে তাঁর কথার সত্যতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। আল্লাহ তা'আলার সাক্ষ্যই যথেষ্ট এবং তিনি স্বীয় বান্দাদের কথা ও কাজ সম্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তিনি যখন বলছেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) একজন সত্য নবী, তখন মানুষের এটা স্বীকার করে নিতে বাধা কিসের? যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
لٰكِنِ اللّٰهُ یَشْهَدُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اِلَیْكَ اَنْزَلَهٗ بِعِلْمِهٖ
অর্থাৎ “কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, যা তিনি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছেন তা তিনি তাঁর জ্ঞানের সাথেই অবতীর্ণ করেছেন।” (৪:১৬৬)
অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ জেনে রেখো যে, এরা এদের। প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাঙ্কারে সন্দিহান অর্থাৎ কিয়ামত যে সংঘটিত হবে এটা তারা বিশ্বাসই করে না, আর এ কারণেই তারা নিশ্চিন্ত রয়েছে, পুণ্য অর্জনে রয়েছে উদাসীন এবং পাপ কার্য হতে বিরত থাকছে না। অথচ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের লেশমাত্র নেই।
হযরত সাঈদ আনসারী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) একদা মিম্বরের উপর উঠে আল্লাহ তা'আলার হামদ ও সানার পর বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! আমি তোমাদেরকে কোন নতুন কথা বলার জন্যে একত্রিত করিনি, বরং এজন্যেই তোমাদেরকে আমি একত্রিত করেছি যে, বিচার দিবসের ব্যাপারে আমি খুব চিন্তা-ভাবনা করেছি, এতে আমি যা বুঝেছি তা তোমাদেরকে শুনাতে চাই। তা এই যে, যারা এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে তারা নির্বোধ এবং যারা এটাকে মিথ্যা মনে করে তারা ধ্বংস প্রাপ্ত।” অতঃপর তিনি মিম্বর হতে নেমে পড়লেন। তাঁর যারা এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে তারা নির্বোধ’ একথার ভাবার্থ এই যে, তারা এটাকে সত্য মনে করছে অথচ এর জন্যে কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করছে না। এর অন্তর প্রকম্পিতকারী ও ভয়াবহ অবস্থা হতে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন থাকছে, একে ভয় করে এমন আমল করে না যা তাকে ঐদিনের ভীতি হতে নিরাপত্তা দান করতে পারে। ঐ ব্যক্তি নিজেকে ওর সংঘটনের সত্যতা স্বীকারকারীও বলছে, আবার খেল-তামাশা, অবহেলা, কুপ্রবৃত্তি, পাপ এবং নির্বুদ্ধিতার মধ্যে নিমজ্জিত থাকছে, আর এদিকে কিয়ামত নিকটে চলে আসছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন ।
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা স্বীয় পূর্ণ ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সবকিছুকে তিনি পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। কিয়ামত ঘটানো তাঁর কাছে খুবই সহজ কাজ। সমস্ত সৃষ্টজীব ও সৃষ্ট বস্তু তাঁর অধিকারে রয়েছে। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন। কেউই তাঁর হাত ধরে রাখতে পারে না। তিনি যা চেয়েছেন তা হয়েছে এবং যা চাইবেন তা অবশ্যই হবে। তিনি ছাড়া প্রকৃত হুকুমদাতা আর কেউ নেই। তিনি ছাড়া অন্য কারো সত্তা কোন প্রকারের ইবাদতের যোগ্য নয়।