যুখরুফ আয়াত ৬৫
فَاخْتَلَفَ الْاَحْزَابُ مِنْۢ بَيْنِهِمْ ۚفَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ اَلِيْمٍ ( الزخرف: ٦٥ )
Fakhtalafal ahzaabu mim bainihim fawailul lillazeena zalamoo min 'azaabi Yawmin aleem (az-Zukhruf ৪৩:৬৫)
English Sahih:
But the denominations from among them differed [and separated], so woe to those who have wronged from the punishment of a painful Day. (Az-Zukhruf [43] : 65)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতঃপর তাদের বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য করল। কাজেই যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক দিনের ‘আযাবের দুর্ভোগ। (যুখরুফ [৪৩] : ৬৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অতঃপর ওদের বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল;[১] সুতরাং সীমালংঘনকারীদের জন্য দুর্ভোগ মর্মন্তুদ দিনের শাস্তির।
[১] এ থেকে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের বুঝানো হয়েছে। ইয়াহুদীরা তো ঈসা (আঃ)-এর মর্যাদা ক্ষুন্ন করে তাঁকে --নাউযুবিল্লাহ -- জারজ সন্তান গণ্য করে। আর খ্রিষ্টানরা তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তাঁকে উপাস্য বানিয়ে নেয়। অথবা এ থেকে খ্রিষ্টানদেরই বিভিন্ন দলকে বুঝানো হয়েছে। এরা আপোসে ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে কঠোর পরস্পর-বিরোধী মত পোষণ করে। একদল তাঁকে আল্লাহর পুত্র, অন্যদল তাঁকে আল্লাহ ও তিনের মধ্যে একজন মনে করে এবং আর একদল তাঁকে মুসলিমদের মত আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল গণ্য করে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
অতঃপর তাদের মধ্য থেকে কতগুলো দল মতানৈক্য করল, কাজেই যালিমদের জন্য দুর্ভোগ যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির !
3 Tafsir Bayaan Foundation
অতঃপর তাদের মধ্যকার কতগুলি দল মতভেদ করেছিল। সুতরাং যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের দুর্ভোগ!
4 Muhiuddin Khan
অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন দল মতভেদ সৃষ্টি করল। সুতরাং যালেমদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক দিবসের আযাবের দুর্ভোগ।
5 Zohurul Hoque
কিন্ত বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করল, কাজেই ধিক্ তাদের প্রতি যারা অন্যায়াচরণ করেছিল -- এক মর্মন্তুদ দিনের শাস্তির কারণে!
6 Mufti Taqi Usmani
তারপরও তাদের মধ্যে কয়েকটি দল মতভেদ সৃষ্টি করল। সুতরাং সে জালেমদের জন্য আছে দুর্ভোগ যন্ত্রণাময় দিবসের শাস্তির।
7 Mujibur Rahman
অতঃপর তাদের কতিপয় দল মতানৈক্য সৃষ্টি করল; সুতরাং যালিমদের জন্য দুর্ভোগ, যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির।
8 Tafsir Fathul Mazid
৫৭-৬৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
‘ঈসা (আঃ) সম্পর্কে মক্কার কুরাইশদের যেমন ধ্যান-ধারণা ছিল সে সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। তারা ‘ঈসা (আঃ) সম্পর্কে কোন উপমা শুনলে হট্টগোল করত এবং বলত : আমাদের দেবতাগুলো শ্রেষ্ঠ, না ঈসা? তারা তর্ক-বিতর্ক, বাক-বিতণ্ডা করার জন্যই এরূপ কথা-বার্তা বলত। তাদের এ কথার উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : সে কোন প্রভু বা উপাস্য নয় যে, তোমরা তাকে দেবতার সাথে তুলনা করছ, সে শুধুমাত্র আমার একজন বান্দা যার প্রতি আমি নবুওয়াত দান করার মাধ্যমে অনুগ্রহ করেছি মাত্র। সে আমার একজন বান্দা ব্যতীত আর কিছুই নয়। ঈসা (আঃ)-এর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের বর্ণনা সূরা মায়িদার ১১০ নম্বর আয়াতেও বর্ণিত হয়েছে। ধর্মীয় ব্যাপারে এরূপ বাক-বিতন্ডা করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে।
আবূ উসামা (রাঃ) বলেন : একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের কাছে বের হলেন, এমন সময় তারা কুরআন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব রাগ করলেন এমনকি মনে হল যেন তাঁর চেহারায় সিরকা ঢেলে দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন : তোমরা কুরআনের এক অংশ দ্বারা অন্য অংশের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি করো না। কারণ যারা এরূপ বাগ-বিতন্ডা করেছে তারাই পথভ্রষ্ট হয়েছে। (তিরমিযী হা. ৩২৫৩, সহীহ)
এসব আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে তিন ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রথম বর্ণনা হল- ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদেরকে বললেন : হে কুরাইশগণ! আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যারই ইবাদত করা হয় তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। কুরাইশরা বলল : আপনি কি মনে করেন না ঈসা (আঃ) একজন নাবী ও সৎ বান্দা ছিলেন। আপনার যদি এ বিশ্বাস থাকে তাহলে জেনে নিন তিনি তো আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের ইবাদত করতেন। (সিলসিলা সহীহাহ হা. ৩২০৮)
দ্বিতীয় বর্ণনা হল- আব্দুল্লাহ বিন যিবা’রা নামক এক ব্যক্তিকে কুরাইশরা বলল : তুমি কি শুনছ মুহাম্মাদ বলেন :
(إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ ط أَنْتُمْ لَهَا وَارِدُوْنَ)
তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে। (সূরা আম্বিয়া ২১ : ৯৮) তখন সে ব্যক্তি বলল, আমি যদি উপস্থিত থাকতাম তাহলে তার জবাব দিতাম। তারা বলল কী জবাব দিতে? সে ব্যক্তি বলল, আমি বলতাম- খ্রিস্টানরা ঈসা (আঃ)-এর ইবাদত করে আর ইয়াহূদীরা উজাইর এর ইবাদত করে। তাহলে তারা দুজন কি জাহান্নামের ইন্ধন? তার কথা শুনে কুরাইশরা খুবই আনন্দিত হল। এর জবাবে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন :
(إِنَّ الَّذِيْنَ سَبَقَتْ لَهُمْ مِّنَّا الْحُسْنٰٓي لا أُولٰ۬ئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُوْنَ)
“যাদের জন্য আমার নিকট হতে পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা হতে দূরে রাখা হবে।” (সূরা আম্বিয়া ২১ : ১০১)
তৃতীয় বর্ণনা হল- কাতাদাহ বলেন : একদা মক্কার মুশরিকরা প্রচার করতে লাগল, মুহাম্মাদ চায় তার ইবাদত করা হোক যেমন ঈসা (আঃ)-এর জাতি ঈসা (আঃ)-এর ইবাদত করে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (কুরতুবী)
(وَلَوْ نَشَا۬ئُ لَجَعَلْنَا مِنْکُمْ مَّلٰ۬ئِکَةً فِی الْاَرْضِ یَخْلُفُوْنَﮋ)
“আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের পরিবর্তে ফেরেশতাদেরকে জমিনে প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করতাম, তারা জমিনে বসবাস করত” এবং তাদের কাছে ফেরেশতা রাসূল প্রেরণ করতাম। কিন্তু তোমারা তো মানুষ, তোমাদের কাছে ফেরেশতা রাসূল হিসেবে প্রেরণ করলে তা সঙ্গতিপূর্ণ হবে না। সুতরাং তোমাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার রহমত যে, তিনি তোমাদের মতই মানুষকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি তোমাদের সকল সমস্যা ও দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারেন।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন : ‘ঈসা সে তো হলো কিয়ামতের একটি নিদর্শন। অর্থাৎ- কিয়ামত পূর্ব মুহূর্তে ‘ঈসা (আঃ)-কে পৃথিবীতে পুনরায় প্রেরণ করা হবে আর তার পরপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয় নেই।
এ আয়াতের অন্য একটি কিরাত (তেলাওয়াত পদ্ধতি) ব্যাপারটিকে শক্তিশালী করে, যেমন :
وَإِنَّهُ لَعَلَمٌ لِّلسَّاعَةِ
আইন অক্ষরে ও লাম অক্ষরে যবর দিয়ে। অর্থাৎ ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ কিয়ামতের একটি বিশেষ আলামত। এ কিরাত ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ ও অন্যান্য মুফাসসিরদের থেকে বর্ণিত।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত এ আয়াতের তাফসীরে বলেন : এটা কিয়ামত দিবসের পূর্বে ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ। (মুসনাদে আহমাদ হা. ২৯২১,সহীহ)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ) কে ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যু সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন : আল হামদুল্লিাহ, ঈসা (আঃ) জীবিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত- তোমাদের মাঝে ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক ও ইমাম হিসেবে। তিনি শূলী ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া তুলে ফেলবেন (তাফসীরে মানার ৩/৩১৭.) ঈসা (আঃ) কর্তৃক স্বজাতির কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আসা ও এক আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহ্বান করার পরেও জাতির লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেল এবং মতানৈক্য করল।
(فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ)
এখানে খ্রিস্টানদেরই বিভিন্ন দলকে বুঝানো হয়েছে। এরা আপোষে ‘ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী মত পোষণ করে। একদল তাঁকে আল্লাহর পুত্র, অন্যদল তাঁকে আল্লাহ ও তিনের মধ্যে একজন মনে করল আর একদল তাঁকে মুসলিমদের মতো আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল হিসেবে গ্রহণ করল। যারা রাসূল হিসেবে গ্রহণ না করে অন্য মত অবলম্বন করেছে তারাই জালিম। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (তাফসীরে মুয়াসসার, তাফসীর অত্র আয়াত)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. ‘ঈসা (আঃ)-এর পুনঃআগমন কিয়ামতের একটি নিদর্শন।
২. ‘ঈসা (আঃ) হলেন শুধুমাত্র আল্লাহর একজন বান্দা ও রাসূল মাত্র, এর বেশি কিছু নন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কারো ‘ইবাদত করা যাবে না। একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদত করতে হবে। কেননা তিনি ব্যতীত সঠিক কোন মা‘বূদ নেই।
9 Fozlur Rahman
অতঃপর তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন দল মতভেদ করল। সুতরাং জালেমদের জন্য রয়েছে কষ্টের দিনের শাস্তির দুর্ভোগ।
10 Mokhtasar Bangla
৬৫. ফলে খ্রিস্টানদের দলগুলো ঈসা এর ব্যাপারে মতানৈক্য করলো। তাদের কেউ বললো: তিনি হলেন আল্লাহ। আবার কেউ বললো: তিনি হলেন অল্লাহর পুত্র। আবার কেউ বললো, তিনি এবং তাঁর মাতা দু’জনই দুই আল্লাহ। যারা ঈসাকে আল্লাহ, তাঁর পুত্র কিংবা তৃতীয় ইলাহ বলে দাবি করেছে তারা ধ্বংস হোক সেই কষ্টদায়ক অপেক্ষমাণ শাস্তির মাধ্যমে যদ্বারা তাদেরকে কিয়ামত দিবসে শাস্তি দেয়া হবে।
11 Tafsir Ibn Kathir
৫৭-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ) এবং হযরত যহ্হাক (রঃ) বলেন যে, يَصِدُّوْنَ-এর অর্থ হলোঃ “তারা হাসতে লাগলো।' অর্থাৎ এতে তারা বিস্ময়বোধ করলো। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ “তারা হতবুদ্ধি হলো এবং হাসতে লাগলো। ইবরাহীম নাখঈ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ “তারা মুখ ফিরিয়ে নিলো।' ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) তাঁর ‘সীরাত গ্রন্থে এর যে কারণ বর্ণনা করেছেন তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা প্রমুখ কুরায়েশদের নিকট আগমন করেন। সেখানে নযর ইবনে হারিসও এসে পড়ে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে কথাবার্তা বলতে শুরু করে। সে যুক্তি-তর্কে টিকতে না পেরে লা-জবাব বা নিরুত্তর হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেনঃ
اِنَّكُمْ وَ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই তোমরা ও তোমাদের মা’বৃদরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে।”(২১:৯৮) তারপর তিনি সেখান হতে চলে আসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে আবদুল্লাহ ইবনে যাবআলী তামীমী আগমন করে। তখন ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা তাকে বলেঃ “নযর ইবনে হারিস তো আবদুল মুত্তালিবের সন্তানের (পৌত্রের) নিকট হেরে গেছে। শেষ পর্যন্ত সে তো আমাদেরকে ও আমাদের মা'বূদদেরকে জাহান্নামের ইন্ধন বলে দিয়ে চলে গেল।” সে তখন বললোঃ “আমি থাকলে সে নিজেই নিরুত্তর হয়ে যেতো। যাও, তোমরা গিয়ে তাকে প্রশ্ন করঃ আমরা এবং আমাদের সমস্ত মা’রূদ যখন জাহান্নামী তখন এটা অপরিহার্য যে, ফেরেশতারা, হযরত উযায়ের (আঃ) এবং ঈসা (আঃ)ও জাহান্নামী হবেন? কেননা, আমরা ফেরেশতাদের উপাসনা করে থাকি, ইয়াহূদীরা হযরত উযায়ের (আঃ)-এর উপাসনা করে এবং খৃষ্টানরা হযরত ঈসা (আঃ)-এর ইবাদত করে?” তার একথা শুনে মজলিসের লোকেরা সবাই খুব খুশী হলো এবং বললো যে, এটাই সঠিক কথা। নবী (সঃ)-এর কানে যখন এ সংবাদ পৌঁছলো তখন তিনি বললেনঃ “প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি, যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে এবং প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে খুশী মনে নিজেদের ইবাদত করিয়ে নেয়, এরূপ উপাসক ও উপাস্য উভয়েই জাহান্নামী। ফেরেশতারা এবং নবীরা (আঃ) না নিজেদের ইবাদত করার জন্যে কাউকেও নির্দেশ দিয়েছেন, না তারা তাতে সন্তুষ্ট। তাদের নামে আসলে এরা শয়তানের উপাসনা করে। সেই তাদেরকে শিরকের হুকুম দিয়ে থাকে। আর তারা তার সেই হুকুম পালন করে।” তখন اِنَّ الَّذِيْنَ سَبَقَتْ ـ ـ ـ -এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ), হযরত উযায়ের (আঃ) এবং এঁদের ছাড়া অন্যান্য যেসব আলেম ও ধর্ম যাজকদের এরা উপাসনা করে, যারা নিজেরা আল্লাহর আনুগত্যের উপর কায়েম ছিলেন এবং শিরকের প্রতি অসন্তুষ্ট ও তা হতে বাধাদানকারী ছিলেন, তাঁদের মৃত্যুর পরে এই পথভ্রষ্ট অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে মা'বুদ বানিয়ে নেয়, তারা সম্পূর্ণরূপে নিরপরাধ ।
আর ফেরেশতাদেরকে যে মুশরিকরা আল্লাহর কন্যা বিশ্বাস করে নিয়ে তাদের উপাসনা করতো তা খণ্ডন করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدً سُبْحٰنَهٗ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُوْنَ
অর্থাৎ “তারা বলে যে, দয়াময় (আল্লাহ) সন্তান গ্রহণ করেছেন, অথচ তিনি। তা হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র, বরং তারা (ফেরেশতারা) তো তার সম্মানিত বান্দা।”(২১:২৬) এর দ্বারা তাদের এই বাতিল আকীদাকে খণ্ডন করা হয়। আর হযরত ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যখন মরিয়ম (আঃ)-এর পুত্রের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন তোমার সম্প্রদায় শশারগোল শুরু করে দেয়। এরপর মহান আল্লাহ হযরত ঈসা (আঃ)-এর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “সে তো ছিল আমারই এক বান্দা যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বানী ইসরাঈলের জন্যে দৃষ্টান্ত। আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো। ঈসা (আঃ) তো কিয়ামতের নিদর্শন।” অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ)-এর মাধ্যমে আমি যেসব মু’জিয়া দুনিয়াবাসীকে দেখিয়েছি, যেমন মৃতকে জীবিত করা, কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করা ইত্যাদি, এগুলো কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দলীল হিসেবে যথেষ্ট। সুতরাং তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না এবং আমাকেই অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে তাদের মা’ৰূদদের জাহান্নামী হওয়ার কথা শুনে তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “ইবনে মরিয়ম (আঃ) সম্পর্কে আপনি কি বলেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।” তারা কোন উত্তর খুঁজে না পেয়ে বললো, “আল্লাহর শপথ! এ ব্যক্তি তো শুধু এটাই চায় যে, আমরা যেন তাকে প্রভু বানিয়ে নিই যেমন খৃষ্টানরা হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-কে প্রভু বানিয়ে নিয়েছিল। তখন আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “এরা তো শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে একথা বলে।”
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) একদা বলেনঃ “কুরআন কারীমের মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে যার তাফসীর কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি। আমি জানি না যে, সবাই কি এর তাফসীর জানে, না না জেনেও জানার চেষ্টা করে না?” তারপর তিনি মজলিসে অন্য কিছুর বর্ণনা দিতে থাকলেন, অবশেষে মজলিস শেষ হয়ে গেল এবং তিনি উঠে চলে গেলেন। তার সঙ্গীগণ তাঁকে আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ না করার জন্যে খুব আফসোস করতে লাগলেন। তখন ইবনে আকীল আনসারী (রাঃ)-এর মাওলা আবু ইয়াহইয়া (রঃ) বললেনঃ “আচ্ছা, আগামী কাল সকালে তিনি আগমন করলে আমি তাকে আয়াতটির তাফসীর জিজ্ঞেস করবো।” পরদিন তিনি আগমন করলে হযরত আবু ইয়াহইয়া (রাঃ) পূর্ব দিনের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ঐ আয়াতটি কি?” উত্তরে তিনি বললেন, শুনো, কুরায়েশদেরকে একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করেন:“কেউ এমন নেই, আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা যেতে পারে এবং তাতে কল্যাণ থাকতে পারে।” তখন কুরায়েশরা বললোঃ “খৃষ্টানরা কি হযরত ঈসা (আঃ)-এর ইবাদত করে না? আপনি কি হযরত ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর নবী এবং তার মনোনীত বান্দা মনে করেন না? তাহলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই একথা বলার অর্থ কি হতে পারে?” তখন وَلَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ ـ ـ ـ -এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ “যখন হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-এর বর্ণনা আসলো তখন এ লোকগুলো হাসতে শুরু করলো।” আর ঈসা (আঃ) কিয়ামতের নিদর্শন’ এর ভাবার্থ এই যে, হযরত ঈসা (আঃ) কিয়ামতের পূর্বে বের হয়ে আসবেন।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এ রিওয়াইয়াতটি পরবর্তী বাক্যটি ছাড়া ইমাম ইবনে আবি হাতিমও (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আমাদের দেবতাগুলো ভাল, না এই ব্যক্তি? তাদের এই উক্তির ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমাদের মা'বুদ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) হতে উত্তম।
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে اَمْ هٰذَا রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ এরা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে একথা বলে। অর্থাৎ তাদের এটা বিনা দলীল-প্রমাণে ঝগড়া। মিথ্যার উপরই তারা তর্ক-বিতর্ক করছে। তারা নিজেরাও জানে যে, তারা যেটা বলছে ভাবার্থ সেটা নয় এবং তাদের প্রতিবাদ ও আপত্তি নিরর্থক। কেননা, প্রথমতঃ আয়াতে مَا শব্দ রয়েছে, যা জ্ঞান-বিবেকহীনের জন্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর দ্বিতীয়তঃ আয়াতে কুরায়েশদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে যারা মূর্তি, প্রতিমা, পাথর ইত্যাদির পূজা করতো। তারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর পূজারী ছিল না। সুতরাং নবী (সঃ)-কে তারা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই এ কথা বলে। অর্থাৎ তারা যে কথা বলে সেটা যে বাকপটুত্ব শূন্য তা তারা নিজেরাও জানে।
হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন কওম হিদায়াতের উপর থাকার পর কখনো পথভ্রষ্ট হয় না যে পর্যন্ত না তাদের মধ্যে দলীল-প্রমাণ ছাড়াই বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়ার রীতি চলে আসে।” অতঃপর তিনি مَا ضَرَبُوْهُ لَكَ اِلَّا جَدَلًا-এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম ইবনে জারীর (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)
মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে এ হাদীসেরই শুরুতে রয়েছেঃ “নবীর আগমনের পর কোন উম্মত পথভ্রষ্ট হয়নি, কিন্তু তাদের পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রথম কারণ হলো তকদীরকে অবিশ্বাস করা। আর নবীর আগমনের পর কোন কওম পথভ্রষ্ট হয়নি, কিন্তু তখনই পথভ্রষ্ট হয়েছে যখন তাদের মধ্যে কোন দলীল-প্রমাণ ছাড়াই বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে পড়ার রীতি চালু হয়েছে।”
হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার সাহাবীদের মধ্যে এমন সময় আগমন করেন যখন তারা কুরআন কারীমের আয়াতগুলো নিয়ে পরস্পর তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের উপর ভীষণ রাগান্বিত হন। অতঃপর তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “তোমরা এভাবে আল্লাহর কিতাবের আয়াতগুলোর একটির সাথে অপরটির টক্কর লাগিয়ে দিয়ো না। জেনে রেখো যে, এই পারস্পরিক বাক-বিতণ্ডার অভ্যাসই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল।” অতঃপর তিনি مَا ضَرَبُوْ لَكَ ـ ـ ـ -এই আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ ঈসা (আঃ) তো ছিল আমারই এক বান্দা যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন বানিয়ে বানী ইসরাঈলের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। যেন তারা জানতে পারে যে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই করার তিনি ক্ষমতা রাখেন।
এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো।
কিংবা এর অর্থ হচ্ছেঃ যেমনভাবে তোমরা একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছ তেমনিভাবে তাদেরকেও করে দিতাম। দুই অবস্থাতেই ভাবার্থ একই।
মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তোমাদের পরিবর্তে তাদের দ্বারা দুনিয়া আবাদ করতাম।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “ঈসা (আঃ) তো কিয়ামতের নিদর্শন।' এর ভাবার্থ ইবনে ইসহাক (রঃ) যা বর্ণনা করেছেন তা কিছুই নয়। আর এর চেয়েও বেশী দূরের কথা হচ্ছে ওটা যা কাতাদা (রঃ), হাসান বসরী (রঃ) এবং সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেছেন। তা এই যে, هُ সর্বনামটি ফিরেছে কুরআনের দিকে। এই দু'টি উক্তিই ভুল। বরং সঠিক কথা এই যে, هُ সর্বনামটি ফিরেছে হযরত ঈসা (আঃ)-এর দিকে অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ) কিয়ামতের একটি নিদর্শন। কেননা, উপর হতে তারই আলোচনা চলে আসছে। আর এটা স্পষ্ট কথা যে, এখানে হযরত ঈসা (আঃ)-এর কিয়ামতের পূর্বে নাযিল হওয়াকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ
وَ اِنْ مِّنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ اِلَّا لَیُؤْمِنَنَّ بِهٖ قَبْلَ مَوْتِهٖ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكُوْنُ عَلَیْهِمْ شَهِیْدًا
অর্থাৎ “তার মৃত্যুর পূর্বে (হযরত ঈসা আঃ-এর মৃত্যুর পূর্বে) প্রত্যেক আহলে কিতাব তার উপর ঈমান আনবে। তারপর কিয়ামতের দিন সে তাদের উপর সাক্ষী হবে।”(৪:১৫৯)।
এই ভাবার্থ পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় এই আয়াতেরই দ্বিতীয় পঠনে, যাতে রয়েছে اِنَّهٗ لَعِلْمُ لِّلسَّاعَةِ অর্থাৎ “নিশ্চয়ই সে (হযরত ঈসা আঃ) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আলামত বা লক্ষণ।”
হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এটা হলো কিয়ামতের লক্ষণ, অর্থাৎ হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-এর কিয়ামতের পূর্বে আগমন। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত হয়েছে। আবুল আলিয়া (রঃ), আৰূ মালিক (রঃ), ইকরামা (রাঃ), হাসান (রঃ), কাতাদা (রঃ) যহহাক (রঃ) প্রমুখ গুরুজন হতেও অনুরূপই বর্ণিত আছে।
মুতাওয়াতির হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সঃ) খবর দিয়েছেন যে, কিয়ামতের দিনের পূর্বে হযরত ঈসা (আঃ) ন্যায়পরায়ণ ইমাম ও ইনসাফকারী হাকিম রূপে অবতীর্ণ হবেন। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না, বরং এটাকে নিশ্চিত রূপে বিশ্বাস কর এবং আমি তোমাদেরকে যে খবর দিচ্ছি তাতে তোমরা আমার অনুসরণ কর, এটাই সরল পথ। শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই আমার এই সরল সঠিক পথ হতে নিবৃত্ত না করে। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
হযরত ঈসা (আঃ) স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ হে আমার কওম! আমি তোমাদের নিকট এসেছি হিকমত অর্থাৎ নবুওয়াত নিয়ে এবং দ্বীনী বিষয়ে তোমরা যে মতভেদ করছো তা স্পষ্ট করে দিবার জন্যে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাই বলেন। এই উক্তিটিই উত্তম ও পাকাপোক্ত। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ঐ লোকদের উক্তিকে খণ্ডন করেছেন যারা বলেন যে, بَعْضُ (কতক) শব্দটি এখানে كُلْ (সমস্ত) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন যে, হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর কওমকে আরো বলেনঃ “সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমারই অনুসরণ কর। আল্লাহই তো আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। মনে রেখো যে, তোমরা সবাই এবং আমি নিজেও তার গোলাম এবং তাঁর মুখাপেক্ষী। আমরা তার দরবার ফকীর। সুতরাং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা আমাদের সবারই একান্ত কর্তব্য। তিনি এক ও অংশী বিহীন। এটাই হলো তাওহীদের পথ, এটাই সরল সঠিক পথ।”
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “অতঃপর তাদের কতিপয় দল মতানৈক্য সৃষ্টি করলো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। কেউ কেউ তো হযরত ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বলেই স্বীকার করলো এবং এরাই ছিল সত্যপন্থী দল। আবার কেউ কেউ তাঁর সম্পর্কে দাবী করলো যে, তিনি আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ)। আর কেউ কেউ তাকেই আল্লাহ বললো (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিকা)। আল্লাহ তা'আলা তাদের দুই দাবী হতেই মুক্ত ও পবিত্র। তিনি সর্বোচ্চ, সমুন্নত ও মহান। এ জন্যেই মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ দুর্ভোগ এই যালিমদের জন্যে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করা হবে।