আদ দোখান আয়াত ৪২

তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন তার কথা স্বতন্ত্র। নিশ্চয় তিনিই মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

সে ছাড়া, যার প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় তিনিই মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন, তার কথা ভিন্ন। নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী দয়াময়।

তারা ব্যতীত যাদের প্রতি আল্লাহ্ করুণা করেছেন। নিঃসন্দেহ তিনি, তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।

আল্লাহ যার প্রতি রহম করেন, সে ব্যতীত। নিশ্চয়ই তিনি পরিপূর্ণ ক্ষমতার মালিক, পরম দয়ালু।

তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন তার কথা স্বতন্ত্র। তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

৩৮-৪২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

আল্লাহ তা‘আলা আকাশসমূহ, জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা অনর্থক সৃষ্টি করেননি বরং এগুলো যথাযথ কারণেই সৃষ্টি করেছেন। এ সম্পর্কে সূরা আস্ সোয়াদ-এর ২৭ নম্বর আয়াতসহ আরো অন্যান্য স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, বিচার দিবসে অর্থাৎ কিয়ামতের দিন কেউ কারো কোন প্রকার উপকারে আসবে না। সেদিন সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

(فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَلَآ أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَّلَا يَتَسَا۬ءَلُوْنَ‏)‏

“এবং যেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না, এবং একে অপরের খোঁজ-খবর নেবে না” (সূরা মু’মিনূন ২৩ : ১০১)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(وَلَا يَسْأَلُ حَمِيْمٌ حَمِيْمًا)

“আর কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুর খোঁজ নেবে না” (সূরা মা‘আরিজ ৭০ : ১০)

তবে যার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার করুণা হবে অর্থাৎ যারা ঈমানদার ও মুত্তাকী হবে তাদের কথা ভিন্ন। তাঁরা আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি সাপেক্ষে তাঁর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশ করতে পারবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. আকাশ, জমিনসহ সকল বস্তু আল্লাহ তা‘আলা যথাযথ উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছেন।
২. পরকালে কাফির-মুশরিকদের সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, তবে মু’মিনদের কথা ভিন্ন।

তবে আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করবেন তার কথা আলাদা। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

৪২. কেবল মানুষের মধ্যে যাকে আল্লাহ দয়া করবেন। কেননা, সে পূর্বে প্রেরিত নেক আমল দ্বাারা উপকৃত হবে। আল্লাহ সেই পরাক্রমশালী যাঁকে কেউ পরাস্ত করতে পারে না। তিনি তাঁর সৃষ্টি, নির্ধারণ ও পরিচালনায় প্রজ্ঞাবান।

৩৮-৪২ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ তা'আলা নিজের আদল ও ইনসাফ এবং তার বৃথা ও অযতা কোন কাজ না করার বর্ণনা দিচ্ছেন। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ
وَ مَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَ الْاَرْضَ وَ مَا بَیْنَهُمَا بَاطِلًا ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا فَوَیْلٌ لِّلَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
অর্থাৎ “আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং এতোদুভয়ের মধ্যস্থিত জিনিস বৃথা সৃষ্টি করিনি। এটা কাফিরদের ধারণা। সুতরাং কাফিরদের জন্যে জাহান্নামের দুর্ভোগ রয়েছে।”(৩৮:২৭) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ
اَفَحَسِبْتُمْ اَنَّمَا خَلَقْنٰكُمْ عَبَثًا وَّ اَنَّكُمْ اِلَیْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ ـ فَتَعٰلَى اللّٰهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِیْمِ
অর্থাৎ “তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না? মহিমান্বিত আল্লাহ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ব্যতীত কোন মা'বুদ নেই, সম্মানিত আরশের তিনি অধিপতি।”(২৩:১১৫-১১৬)

ফায়সালার দিন অর্থাৎ কিয়ামতের দিন যেই দিন আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দাদের মধ্যে হক ফায়সালা করবেন। কাফিরদেরকে শাস্তি দিবেন এবং মুমিনদেরকে দিবেন পুরস্কার। ঐ দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবাই আল্লাহ তা'আলার সামনে একত্রিত হবে। ওটা হবে এমন এক সময় যে, একে অপর হতে পৃথক হয়ে যাবে। এক আত্মীয় অন্য আত্মীয়ের কোনই উপকার করতে পারবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَاِذَا نُفِخَ فِی الصُّوْرِ فَلَاۤ اَنْسَابَ بَیْنَهُمْ یَوْمَئِذٍ وَّ لَا یَتَسَآءَلُوْنَ
অর্থাৎ “যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেই দিন তাদের মধ্যে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকবে না এবং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না।"(২৩:১০১) আর এক জায়গায় বলেনঃ
وَ لَا یَسْئَلُ حَمِیْمٌ حَمِیْمًا ـ یُّبَصَّرُوْنَهُمْ
অর্থাৎ “সুহৃদ সুহৃদের তত্ত্ব নিবে না, তাদেরকে করা হবে একে অপরের দৃষ্টিগোচর।”(৭০:১০-১১) অর্থাৎ কোন বন্ধু তার বন্ধুকে তার অবস্থা সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করবে না, অথচ তারা একে অপরকে দেখতে পাবে। ঐদিন কেউ কাউকেও কোন সাহায্য করবে না এবং বাহির হতেও কোন সাহায্য আসবে। না। হ্যা, তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন তার কথা স্বতন্ত্র। তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।