আল ক্বামার আয়াত ৫৫
فِيْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ ࣖ ( القمر: ٥٥ )
Fee maq'adi sidqin 'inda Maleekim Muqtadir (al-Q̈amar ৫৪:৫৫)
English Sahih:
In a seat of honor near a Sovereign, Perfect in Ability. (Al-Qamar [54] : 55)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদার স্থানে, সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী (আল্লাহ)’র নিকটে। (আল ক্বামার [৫৪] : ৫৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
যথাযোগ্য আসনে,[১] সার্বভৌমক্ষমতার অধিকারী সম্রাটের সান্নিধ্যে। [২]
[১] مَقْعَدِ صِدْقٍ সম্মানের আসন বা সত্যের আসন। যেখানে না কোন পাপের কথা হবে, আর না অশ্লীলতার। অর্থাৎ, জান্নাত।
[২] مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ মহাশক্তিধর সম্রাট। অর্থাৎ, তিনি সর্বপ্রকার ক্ষমতার মালিক। যা চান, তা-ই করতে পারেন। তাঁকে কেউ অপারগ ও ব্যর্থ করতে পারে না। عِنْدَ (সান্নিধ্যে) বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেই উচ্চ স্থান, মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি, যা ঈমানদারগণ আল্লাহর নিকট লাভ করবেন।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতি (আল্লাহ্)র সান্নিধ্যে।
3 Tafsir Bayaan Foundation
যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতির নিকটে।
4 Muhiuddin Khan
যোগ্য আসনে, সর্বাধিপতি সম্রাটের সান্নিধ্যে।
5 Zohurul Hoque
সত্যের আসনে সর্বশক্তিমান রাজাধিরাজের সমক্ষে!
6 Mufti Taqi Usmani
সত্যিকারের মর্যাদাপূর্ণ আসনে, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহা সম্রাটের সান্নিধ্যে।
7 Mujibur Rahman
যোগ্য আসনে, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সান্নিধ্যে।
8 Tafsir Fathul Mazid
৪৭-৫৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
শানে নুযুল : আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন : কুরাইশ মুশরিকরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাকদীর সম্পর্কে বাদানুবাদ করে। ফলে
( إِنَّ الْمُجْرِمِيْنَ فِيْ ضَلَالٍ وَّسُعُرٍ ........بِقَدَرٍ)
আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম হা. ২৬৫৬)
পাপী ও অপরাধী লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা সত্যের পথ হতে বিচ্যুত, তারা সন্দেহ ও দুর্ভাবনার মধ্যে পতিত হয়েছে। প্রত্যেক কাফির ও বিদ‘আতী যারা তারা এ দোষে দুষ্ট। এরপর আল্লাহ বলছেন, তাদের এ সন্দেহ ও দোদুল্যমনা জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : নিশ্চয়ই আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। এরূপ আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَه۫ تَقْدِيْرًا)
“তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।” (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
الَّذِيْ خَلَقَ فَسَوّٰي) (وَالَّذِيْ قَدَّرَ فَهَدٰي
“যিনি সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর পরিপূর্ণভাবে সুবিন্যস্ত করেছেন, এবং যিনি পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, তারপর হেদায়েত দিয়েছেন” (সূরা আল আ‘লা- ৮৭ : ২-৩)
ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর সহীহ বুখারীতে তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা আবশ্যক হওয়ার প্রমাণ এবং যারা তাকদীরকে অস্বীকার করে তাদের প্রতিবাদস্বরূপ অনেক হাদীস কিতাবুল ঈমানে নিয়ে এসেছেন।
এখানে তাকদীরের সাথে সম্পৃক্ত কয়েকটি সহীহ হাদীস তুলে ধরা হলো :
‘আমর ইবনু শু‘আইব তিনি তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করে বলেন : এ আয়াতটি কেবলমাত্র “আহলে কদর” তথা তাকদীরে বিশ্বাসীদের ব্যাপারেই নাযিল হয়েছে। (মায্মাউজ জাওয়ায়েদ ৭/১১৭ পৃঃ, হাসান)
হাদীসে জিবরীলে এসেছে, জিবরীল (আঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলেন : ঈমান কি? জবাবে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন :
তুমি ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি এবং তুমি ঈমান আনবে তাকদীরের ভালমন্দের প্রতি। (সহীহ মুসলিম হা. ৮)
বিশিষ্ট তাবেয়ী নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : ইবনু ‘উমারের সিরিয়াবাসী একজন বন্ধু ছিল, যার সাথে পত্র আদান প্রদান চলত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদা তার কাছে পত্র লিখলেন যে, আমার কাছে সংবাদ এসেছে যে, তুমি নাকি তাকদীর সম্পর্কে সমালোচনা করো। অতএব আমার কাছে পত্র লিখতে তোমাকে সাবধান করছি। কেননা আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি- অচিরেই আমার উম্মাতের মধ্যে তাকদীর অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে। (আহমাদ ২/৯০)
হাদীসটি সহীহ মুসলিমের শর্তানুপাতে সহীহ, কিন্তু তিনি এটি নিয়ে আসেননি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : কোন ব্যক্তি চারটি বিষয়ের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না।
(১) সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি আল্লাহ তা‘আলার রাসূল। সত্যসহ আমাকে প্রেরণ করেছেন।
(২) মৃত্যুর প্রতি ঈমান আনবে।
(৩) পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান আনবে।
(৪) তাকদীরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান আনবে। (তিরমিযী হা. ২১৪৫, ইবনু মাযাহ হা. ৮১, সহীহ)
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
كَتَبَ اللّٰهُ مَقَادِيرَ الْخَلَائِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، قَالَ : وَعَرْشُهُ عَلَي الْمَاءِ
আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা মাখলুকের তাকদীর লিখে রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম হা. ২৬৫৩) এ ছাড়া আরো অনেক সহীহ হাদীস প্রমাণ করে- কখনো একজন ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা ছাড়া মু‘মিন হতে পারবে না। আহলুস্ সুন্নাহ ওয়ালা জামা‘আহ এসকল আয়াত ও হাদীসের আলোকে বিশ্বাস করেন যে, সবকিছুর তাকদীর পূর্ব নির্ধারিত। আর এ আয়াতগুলো সে সকল বাতিল ফিরকার ভ্রান্ত মতবাদকে প্রতিবাদ করছে যারা তাকদীরে বিশ্বাসী নয়, যাদেরকে কাদরিয়া বলা হয়। এ ফির্কার আবির্ভাব হয়েছিল সাহাবীদের শেষ যুগে। (ইবনু কাসীর)
(وَمَآ أَمْرُنَآ إِلَّا وَاحِدَةٌ)
‘আমার আদেশ তো একটি কথায় নিষ্পন্ন’ এটা আল্লাহর ইচ্ছার ক্ষমতা ও বাস্তবায়নের সংবাদ। আল্লাহ তা‘আলা যখন কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন শুধু একবার নির্দেশ দেন, দ্বিতীয়বার নির্দেশের কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা‘আলা শুধু বলেন “হও” সাথে সাথে হয়ে যায়। (সূরা নাহাল ১৬ : ৪০) কোন কবি কত সুন্দরই না বলেছেন :
إِذَا مَا أَرَادَ اللَّهُ أَمْراً فَإِنَّمَا * يَقُولُ لَهُ : كن - قولة – فيكون
যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন হও তখন হয়ে যায় (ইবনু কাসীর)।
أَشْيَاعَكُمْ অর্থাৎ তোমাদের মত পূর্ববর্তী জাতির কাফির সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَحِيْلَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُوْنَ كَمَا فُعِلَ بِأَشْيَاعِهِمْ مِّنْ قَبْلُ ط إِنَّهُمْ كَانُوْا فِيْ شَكٍّ مُّرِيْبٍ)
“তাদের কাক্সিক্ষত জিনিসের মধ্যে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করা হয়েছে, যেমন আগে করা হয়েছিল তাদের স্বধর্মীদের সাথেও। তারা ছিল সন্দেহের মধ্যে উদ্বেগজনক অবস্থায় নিপতিত।” (সূরা সাবা ৩৪ : ৫৪)
(فَعَلُوْهُ فِي الزُّبُرِ)
অর্থাৎ ছোট-বড় যা কিছু করে সবকিছু লাওহে মাহফূজে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশাহ (রাঃ)-কে বলতেন, হে আয়িশাহ! ছোট গুনাহ করা তুচ্ছ মনে করা থেকে বিরত থাক। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এরও হিসাব নেবেন। (সিলসিলাহ সহীহাহ হা. ৫১৩)
(مَقْعَدِ صِدْقٍ)
অর্থাৎ সম্মানের আসনে।
(مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ)
অর্থাৎ মহান বাদশা যিনি সকল কিছুর স্রষ্টা ও পরিমেয়ক।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : ইনসাফকারী সৎ লোকেরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট আলোর মিম্বরের ওপর রহমানের ডান দিকে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলার উভয় হাতই ডান। ইনসাফকারী সৎ লোক তারাই যারা তাদের বিচার ফায়সালায়, পরিবার-পরিজনে এবং যা কিছুর দায়িত্বশীল হয়েছে সবকিছুর ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার করেছে। (সহীহ মুসলিম হা. ১৮২৭)
সুতরাং আমরা যেন ছোট গুনাহ করলে কী হবে? এরূপ তুচ্ছ মনে করে তা বার বার না করি। কারণ ছোট ছোট গুনাহ একটি বড় গুনায় পরিণত হবে এবং তা আল্লাহ তা‘আলা তলব করবেন। তাই সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
২. তাকদীর অস্বীকারকারীদের সাথে একজন প্রকৃত মুসলিমের সম্পর্ক থাকতে পারে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলার দুটি হাত রয়েছে এবং তা উভয়টি ডান হাত।
9 Fozlur Rahman
সত্যের (যোগ্য) আসনে, মহাশক্তিধর সম্রাটের (আল্লাহর) সান্নিধ্যে।
10 Mokhtasar Bangla
৫৫. সব কিছুর মালিক ও সব কাজে সামর্থ্যবানের নিকট সত্যনিষ্ঠ মাজলিসে। যেথায় কোন বাজে কিংবা পাপের কথা নেই। তাই তাদের অবিচ্ছিন্ন ভোগসামগ্রী সম্পর্কে জিজ্ঞেসের কোন অপেক্ষা রাখে না।
11 Tafsir Ibn Kathir
৪৭-৫৫ নং আয়াতের তাফসীর:
পাপী ও অপরাধী লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, তারা বিভ্রান্ত হয়ে গেছে এবং সত্য পথ হতে সরে গেছে। তারা সন্দেহ ও দুর্ভাবনার মধ্যে পতিত হয়েছে। এই দুষ্ট ও দুরাচার লোকগুলো কাফিরই হোক অথবা অন্য কোন দলের অপরাধী ও পাপী লোকই হোক, তাদের এই দুষ্কর্ম তাদেরকে উল্টোমুখে জাহান্নামের দিকে টানতে টানতে নিয়ে যাবে। এখানে যেমন তারা উদাসীন রয়েছে, তেমনই ওখানেও তারা বে-খবর থাকবে যে, না জানি তাদেরকে কোন দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাদেরকে ধমকের সুরে বলা হবেঃ তোমরা এখন জাহান্নামের অগ্নির স্বাদ গ্রহণ কর।
মহান আল্লাহ বলেনঃ 'আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। যেমন অন্য জায়গায় বলেনঃ
وَ خَلَقَ كُلَّ شَیْءٍ فَقَدَّرَهٗ تَقْدِیْرًا
অর্থাৎ “তিনি প্রত্যেক জিনিস সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর ওর পরিমাপ নির্ধারণ করেছেন।" (২৫:২) আর এক জায়গায় বলেনঃ
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلَى ـ الَّذِیْ خَلَقَ فَسَوّٰى ـ وَ الَّذِیْ قَدَّرَ فَهَدٰى
অর্থাৎ “তুমি তোমার সুমহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। যিনি সৃষ্টি করেন ও সুঠাম করেন। আর যিনি পরিমিত বিকাশ সাধন করেন ও পথ-নির্দেশ করেন।” (৮৭:১-৩)।
আহলে সুন্নাতের ইমামগণ এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় মাখলুককে সৃষ্টি করার পূর্বেই তার ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন এবং প্রত্যেক জিনিস প্রকাশিত হবার পূর্বেই আল্লাহ তা'আলার কাছে লিখিত হয়ে গেছে। কাদরিয়া সম্প্রদায় এটা অস্বীকার করে। এ লোকগুলো সাহাবীদের (রাঃ) আখেরী যুগেই বেরিয়ে পড়েছিল। আহলে সুন্নাত ঐ লোকেদের মাযহাবের বিপক্ষে এই প্রকারের আয়াতগুলোকে পেশ করে থাকেন। আর এই বিষয়ের হাদীসগুলোকেও আমরা সহীহ বুখারীর কিতাবুল ঈমানের ব্যাখ্যায় এই মাসআলার বিস্তারিত আলোচনায় লিপিবদ্ধ করেছি। এখানে শুধু ঐ হাদীসগুলো লিপিবদ্ধ করা হলো যেগুলো আয়াতের বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, মুশরিক কুরায়েশরা নবী (সঃ)-এর কাছে এসে তকদীর সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করতে শুরু করে। তখন يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِى النَّارِ ـ ـ ـ-এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আমর ইবনে আয়েব (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, এ আয়াতগুলো তকদীর অস্বীকারকারীদের প্রতিবাদে অবতীর্ণ হয়।” (এটা বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত যারারাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) এ আয়াতগুলো পাঠ করে বলেনঃ “এই আয়াতগুলো আমার উম্মতের ঐ লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে যারা শেষ যামানায় জন্মলাভ করবে এবং তকদীরকে অবিশ্বাস করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আতা ইবনে আবি রিবাহ (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গমন করি। ঐ সময় তিনি যমযম কূপ হতে পানি উঠাচ্ছিলেন। তাঁর কাপড়ের অঞ্চল ভিজা ছিল। আমি বললামঃ তকদীরের ব্যাপারে সমালোচনা করা হচ্ছে। কেউ এই মাসআলার পক্ষে রয়েছে এবং কেউ বিপক্ষে রয়েছে। তিনি তখন বললেনঃ “জনগণ এরূপ করছে।” আমি বললামঃ হ্যাঁ, এরূপই হচ্ছে। তখন তিনি বললেনঃ “আল্লাহর শপথ ذُوْ قُوْا مَسَّ سَقَرَ ـ اِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنٰهُ بِقَدَرٍ-এ আয়াতগুলো তাদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ। হয়েছে। জেনে রেখো যে, এ লোকগুলো হলো এই উম্মতের নিকৃষ্টতম লোক। তারা রোগাক্রান্ত হলে তাদেরকে দেখতে যেয়ো না এবং তারা মারা গেলে তাদের জানাযায় হাযির হয়ো না। তাদের কাউকেও যদি আমি আমার সামনে দেখতে পাই তবে আমার অঙ্গুলি দ্বারা তার চক্ষু উঠিয়ে নিবো।”
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হলো, এমন একজন লোক এসেছে যে তকদীরকে বিশ্বাস করে না। তখন তিনি বললেন, আচ্ছা, তোমরা আমাকে তার। কাছে নিয়ে চল। জনগণ বললো, আপনি তো অন্ধ, সুতরাং আপনি তার কাছে গিয়ে কি করবেন? উত্তরে তিনি বলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যদি আমি তাকে হাতে পাই তবে তার নাক কেটে নিবো এবং যদি তার গর্দান ধরতে পারি তবে তা উড়িয়ে দিবো। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “আমি যেন দেখতে পাচ্ছি যে, বানু কাহরের নারীরা খাযরাজের চতুর্দিকে তাওয়াফ করতে আছে। তাদের দেহ নড়াচড়া করছে। তারা মুশরিকা নারী। এই উম্মতের প্রথম শিরক এটাই। যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! তাদের নির্বুদ্ধিতা এতো চরমে পৌঁছে যাবে যে, তারা আল্লাহ তাআলাকে কল্যাণ নির্ধারণকারী বলেও স্বীকার করবে না। যেমন তাকে অকল্যাণ নির্ধারণকারী বলে স্বীকার করেনি।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত নাফে' (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর সিরিয়াবাসী একজন বন্ধু ছিল, যার সাথে তাঁর পত্র আদান প্রদান চলতো। তিনি শুনতে পেলেন যে, তাঁর ঐ বন্ধুটি তকদীর সম্পর্কে কিছু সমালোচনা করে থাকে। সুতরাং তৎক্ষণাৎ তিনি তাকে পত্র লিখেন- আমি শুনতে পেয়েছি যে, তুমি নাকি তকদীরের ব্যাপারে কিছু বিরূপ মন্তব্য করে থাকে। যদি একথা সত্য হয় তবে আজ হতে তুমি আমার নিকট থেকে কোন পত্র প্রাপ্তির আশা করো না। আজ হতে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “আমার উম্মতের মধ্যে তকন্দীরকে অবিশ্বাসকারী লোকের আবির্ভাব ঘটবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে মাজুস (প্রাচীন পারসিক যাজক মণ্ডলী) থাকে। আমার উম্মতের মাজুসী হলো ঐ লোকগুলো যারা তকদীরে বিশ্বাস করে না। তারা রোগাক্রান্ত হলে তোমরা তাদেরকে দেখতে যেয়ো না এবং তারা মারা গেলে তোমরা তাদের জানাযায় হাযির হয়ো না।” (মুসনাদে আহমাদে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে)
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “শীঘ্রই এই উম্মতের মধ্যে মাসখ’ হবে (অর্থাৎ লোকদের আকৃতি পরিবর্তিত হবে), জেনে রেখো যে, এ অবস্থা ঐ লোকদের হবে যারা তকদীরে বিশ্বাস করে না এবং যারা যিনদীক (অর্থাৎ আল্লাহর একত্বে অবিশ্বাসী)।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। জামেউত তিরমিযীতেও এ হাদীসটি রয়েছে)
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক জিনিসই আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাপে রয়েছে, এমনকি অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতাও।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং অপারগ ও নির্বোধ হয়ো না। অতঃপর যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় তবে বলো যে, এটা আল্লাহ কর্তৃকই নির্ধারিত ছিল এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন। আর এরূপ কথা বলো নাঃ যদি এরূপ করতাম তবে এরূপ হতো। কেননা, এই ভাবে যদি বলাতে শয়তানী আমলের দরযা খুলে যায়।”
রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলেনঃ “জেনে রেখো যে, যদি সমস্ত উম্মত একত্রিত হয়ে তোমার ঐ উপকার করার ইচ্ছা করে যা আল্লাহ তা'আলা তোমার ভাগ্যে লিখেননি তবে তারা তোমার ঐ উপকার কখনো করতে পারবে না। পক্ষান্তরে, যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তোমার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা করে যা তোমার তকদীরে লিখা নেই তবে কখনো তারা তোমার ঐ ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। কলম শুকিয়ে গেছে এবং দফতর জড়িয়ে নিয়ে ভাঁজ করে দেয়া হয়েছে।
হযরত ওয়ালীদ ইবনে উবাদাহ (রঃ)-এর পিতা হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) যখন রোগ শয্যায় শায়িত হন এবং তাঁর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায় তখন হযরত ওয়ালীদ (রঃ) তাঁর পিতাকে বলেনঃ “হে পিতঃ! আমাদেরকে কিছু অন্তিম উপদেশ দিন!” তখন তিনি বলেনঃ “আচ্ছা, আমাকে বসিয়ে দাও।” তাকে বসিয়ে দেয়া হলে তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎস! ঈমানের স্বাদ তুমি গ্রহণ করতে পার না এবং আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে তোমার যে জ্ঞান রয়েছে তার শেষ সীমায় তুমি পৌঁছতে পার না যে পর্যন্ত না তকদীরের ভাল মন্দের উপর তোমার বিশ্বাস হয়।” হযরত ওয়ালীদ (রঃ) তখন জিজ্ঞেস করলেনঃ “আব্বা! কি করে আমি জানতে পারবো যে, তকদীরের ভাল মন্দের উপর আমার ঈমান রয়েছে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “এই ভাবে তুমি জানতে পারবে যে, তুমি যা পেয়েছে তা পাওয়ারই ছিল এবং যা পাওনি তা পাওয়ারই ছিল না এই বিশ্বাস যখন তোমার থাকবে। হে আমার প্রিয় বৎস! জেনে রেখো যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং ওকে বলেনঃ ‘লিখো।' তখনই কলম উঠে গেল এবং কিয়ামত পর্যন্ত যতো কিছু হবার আছে সবই লিখে ফেললো।” হে আমার প্রিয় ছেলে! যদি তুমি তোমার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই বিশ্বাসের উপর না থাকো তবে অবশ্যই তুমি জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (এ হাদীসটি জামেউত তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে সহীহ হাসান গারীব বলেছেন)
হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ ঈমানদার হতে পারে না যে পর্যন্ত না সে চারটির উপর ঈমান আনে। (এক) সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মা’রূদ নেই, (দুই) আর সাক্ষ্য দেবে যে, আমি (মুহাম্মাদ সঃ) আল্লাহর রাসূল, তিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, (তিন) মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস রাখে এবং (চার) তকদীরের ভাল মন্দের উপর ঈমান আনে।” (এ হাদীসটি সুফিয়ান সাওরী (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে ইবনে মাজাহ্তেও এটা বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে মাখলুকের তকদীর লিপিবদ্ধ করেছেন। ঐ সময় তাঁর আরশ পানির উপর ছিল।” (ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম।তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ গারীব বলেছেন)
এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় ইচ্ছা ও আহকাম বিনা বাধায় জারী হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ আমি নির্ধারণ করেছি তা যেমন হবেই, ঠিক তেমনি যে কাজের আমি ইচ্ছা করি তার জন্যে শুধু একবার ‘হও' বলাই যথেষ্ট হয়ে যায়, দ্বিতীয়বার গুরুত্বের জন্যে হুকুম দেয়ার কোনই প্রয়োজন হয় না। চোখের পলক ফেলা মাত্রই ঐ কাজ আমার চাহিদা অনুযায়ী হয়ে যায়। আরব কবি কি সুন্দরই না বলেছেনঃ
اِذَا مَا اَرَادَ اللّهُ اَمْرًا فَاِنَّمَا ـ يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ قَوْلَهٗ فَيَكُوْنُ
অর্থাৎ “আল্লাহ যখনই কোন কাজ করার ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন হয়ে যাও’ আর তখনই তা হয়ে যায়।”
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি ধ্বংস করেছি তোমাদের মত দলগুলোকে, অতএব ওটা হতে উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? আমার তাদেরকে শাস্তিদান ও লাঞ্ছিতকরণের মধ্যে তোমাদের জন্যে শিক্ষা ও উপদেশ নেই কি? যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
وَ حِیْلَ بَیْنَهُمْ وَ بَیْنَ مَا یَشْتَهُوْنَ كَمَا فُعِلَ بِاَشْیَاعِهِمْ مِّنْ قَبْلُ
অর্থাৎ “তাদের এবং তাদের কামনা-বাসনার মধ্যে পর্দা ফেলে দেয়া হয়েছে, যেমন তাদের পূর্ববর্তী দলগুলোর সাথে করা হয়েছিল।” (৩৪:৫৪)
তারা যা কিছু করেছে সবই তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ রয়েছে, যা আল্লাহ তাআলার বিশ্বস্ত ফেরেশতাগণের হাতে রক্ষিত আছে। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সবকিছুই আছে লিপিবদ্ধ। এমন কিছুই নেই লিখতে ছুটে গেছে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)! গুনাহকে তুচ্ছ মনে করো না, জেনে রেখো যে, আল্লাহর কাছে এরও জবাবদিহি করতে হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমেও এটা বর্ণিত হয়েছে)
হযরত সুলাইমান ইবনে মুগীরা (রঃ) বলেনঃ “একদা আমি একটা গুনাহ করে ফেলি যেটাকে আমি অতি নগণ্য মনে করি। রাত্রে স্বপ্নে দেখি যে, একজন আগন্তুক এসে আমাকে বলছেনঃ হে সুলাইমান (রঃ)!
لَا تَحْقِرَنَّ مِنَ الذُّنُوْبِ صَغِيْرًا ـ اِنَّ الصَّغِيْرَ غَدًا يَعُوْدُ كَبِيْرًا
اِنَّ الصَّغِيْرَ وَلَوْ تَقَادَمَ عَهْدُهٗ ـ عِنْدَ الْاِلٰهِ مُسَطَّرٌ تَسْطِيْرًا
فَازْجُرْ هَوَاكَ عَنِ الْبِطَالَةِ لَا تَكُنْ ـ صَعْبَ الْقِيَادِ وَشَمِرَنْ تَشْمِيْرًا
اِنَّ الْمُحِبَّ اِذَا َاحَبَّ اِلٰهَهٗ ـ طَارَ الْفُؤَادُ وَاَلْهَمَ التَّفْكِيْرَا
فَاسْئَلْ هِدَايَتَكَ الْاِلٰهَ بِنِيَّةٍ ـ فَكَفٰى بِرَبّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا
অর্থাৎ “ছোট গুনাহগুলোকেও ছোট ও তুচ্ছ মনে করো না, এই ছোট গুনাহগুলোই বড় গুনাহ হয়ে যাবে। পাপ যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রও হয় এবং ওগুলো করার পর বহু যুগ অতিবাহিত হয়েও যায় তথাপি ওগুলো আল্লাহ তাআলার কাছে স্পষ্টভাবে লিখিত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। পাপ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো এবং এরূপ হয়ো না যে, অত্যন্ত ভারী হয়ে পুণ্যকার্যের দিকে এগিয়ে যাবে, বরং অঞ্চল উঁচু করে পুণ্য কাজের দিকে অগ্রসর হও। যখন কেউ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে মহব্বত করে তখন তার প্রতি আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে চিন্তা-গবেষণার অভ্যাসের ইলহাম করা হয়। স্বীয় প্রতিপালকের নিকট হিদায়াত যাঞা কর এবং নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ কর। হিদায়াত ও সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহ তাআলাই তোমার জন্যে যথেষ্ট।”
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ সৎ এবং আল্লাহভীরু লোকেদের অবস্থা হবে। এই পাপী ও অপরাধী লোকেদের অবস্থার বিপরীত। এরা তো থাকবে বিপদ ও কষ্টের মধ্যে এবং অধঃমুখে তারা নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামে। আর এদের উপর হবে কঠিন ধমক ও শাসন গর্জন। পক্ষান্তরে ঐ সৎ ও আল্লাহভীরু থাকবে স্রোতস্বিনী বিধৌত জান্নাতে। তারা মর্যাদা ও সম্মান, সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ, দান ও ইহসান, সুখ ও শান্তি, নিয়ামত ও রহমত এবং সুন্দর ও মনোরম বাসভবনে অবস্থান করবে। অধিপতি ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে তারা গৌরবান্বিত হবে। যে আল্লাহ সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা এবং সবারই ভাগ্য নির্ধারণকারী। যিনি সবকিছুরই উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি ঐ আল্লাহভীরু লোকদের সব চাহিদাই পূর্ণ করবেন। তাদের মনোবাসনা মিটাতে মোটেই কার্পণ্য করবেন না তিনি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আদল ও ইনসাফকারী সৎলোকেরা আল্লাহ তা'আলার নিকট আলোর মিম্বরের উপর রহমানের (করুণাময় আল্লাহর) ডান দিকে থাকবে। আল্লাহ তাআলার দুই হাতই ডানই বটে। এই ন্যায় বিচারক ও ন্যায়পরায়ণ লোক ওরাই যারা তাদের আদেশসমূহে, নিজেদের পরিবার পরিজনের মধ্যে এবং যা কিছু তাদের অধিকারে রয়েছে সবগুলোর মধ্যেই আল্লাহর ফরমানের ব্যতিক্রম করে , বরং আদল ও ইনসাফের সাথেই কাজ করে থাকে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)