আর রহমান আয়াত ১৩
فَبِاَيِّ اٰلَاۤءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ ( الرحمن: ١٣ )
Fabi ayyi aalaaa'i Rabbikumaa tukazzibaan (ar-Raḥmān ৫৫:১৩)
English Sahih:
So which of the favors of your Lord would you deny? (Ar-Rahman [55] : 13)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতএব (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান [৫৫] : ১৩)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অতএব (হে মানুষ ও জ্বিন সম্প্রদায়!) তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?[১]
[১] এ সম্বোধন মানুষ ও জ্বিন উভয়কেই করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর নিয়ামতসমূহ গনিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করছেন। আর এর বারবার পুনরাবৃত্তির ব্যাপারটা এমন ব্যক্তির মত, যে কারো প্রতি অব্যাহতভাবে অনুগ্রহ করে; কিন্তু সে তা অস্বীকার করে। যেমন বলে, আমি তোমার অমুক কাজটা করে দিয়েছি, তুমি কি তা অস্বীকার করছ? অমুক জিনিসটা তোমাকে দিয়েছি, তোমার কি স্মরণে নেই? অমুক অনুগ্রহটা তোমার প্রতি আমি করেছি, তোমার কি আমার ব্যাপারে একটুও খেয়াল নেই? (ফাতহুল ক্বাদীর)
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহে [১] মিথ্যারোপ করবে [২]?
[১] মূল আয়াতে آلاء শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এবং পরবর্তী আয়াতসমূহে এ শব্দটি বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। ভাষাভিজ্ঞ পণ্ডিত ও তাফসীর বিশারদগণ শব্দের অর্থ করেছেন ‘নিয়ামতসমূহ’ বা ‘অনুগ্রহসমগ্র’। [কুরতুবী] তবে মুফাসসির ইবন যায়েদ বলেন, শব্দটির অন্য অর্থ হচ্ছে, শক্তি ও ক্ষমতা। [ফাতহুল কাদীর] আল্লামা আবদুল হামীদ ফারাহী এ অর্থটিকে অধিক প্রাধান্য দিতেন।
[২] আয়াতে জিন ও মানবকে সম্বোধন করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নিআমতকে তোমরা উভয়ে* অস্বীকার করবে ?
*‘উভয়ে’ দ্বারা জিন ও মানুষকে বুঝানো হয়েছে।
4 Muhiuddin Khan
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?
5 Zohurul Hoque
অতএব তোমাদের উভয়ের প্রভুর কোন্ অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে?
6 Mufti Taqi Usmani
সুতরাং (হে মানুষ ও জিন্ন!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নি‘আমতকে অস্বীকার করবে?
7 Mujibur Rahman
সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
8 Tafsir Fathul Mazid
নামকরণ ও ফযীলত :
(الرحمن) “রহমান” আল্লাহ তা‘আলার গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে অন্যতম। অর্থ : দয়াময় (আল্লাহ তা‘আলা) যিনি তাঁর রহমত দ্বারা সমস্ত মাখলুককে বেষ্টন করে আছেন।
সূরা আল ফাতিহায় এর তাফসীর করা হয়েছে। প্রথম আয়াতে উল্লিখিত আর-রহমান (الرحمن) শব্দ থেকে সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, জনৈক লোক ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-কে বলেন : من ماء غير اسن বাক্যটির اسن শব্দটি কি اسن হবে না ياسن হবে তা কিভাবে চিনবেন? ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) জবাবে বলেন : তুমি কি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছ? সে জবাবে বলল : মুফাস্সালের সমস্ত সূরা এক রাক‘আতে পড়ে থাকি। তিনি বললেন : কবিতা যেমন তাড়াতাড়ি পড়া হয়, তুমিও কি কুরআন সেভাবেই পড়ে থাকো? এটা দুঃখজনক ব্যাপার। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুফাস্সালের প্রাথমিক সূরাগুলোর কোন্ দু’টি সূরা মিলিয়ে পড়তেন তা আমার ভাল স্মরণ আছে। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) সূরা র্আ রহমানকে মুফাস্সালের প্রথম সূরা হিসেবে গণ্য করতেন। (আহমাদ হা. ৩৯১০, সনদ সহীহ)
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের কাছে বের হলেন। তিনি তাদের কাছে সূরা র্আ রহমানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সূরা তিলাওয়াত করে শুনান। সবাই চুপ রয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : কি হলো আমি তোমাদেরকে চুপচাপ দেখছি? জিনের রাতে জিনদের কাছে এ সূরা তিলাওয়াত করেছি তারা তোমাদের চেয়ে উত্তম জবাব দিয়েছে। যখনই আমি
(فَبِأَيِّ اٰلَا۬ءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ)
আয়াতটি তিলাওয়াত করেছি তখন তারা বলেছে :
لَا بِشَيْءٍ مِّنْ نِّعْمَةِ رَبِّنَا نُكَذِّبُ فَلَكَ الْحَمْدُ
হে আমাদের রব! আমরা আপনার কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করি না, সকল প্রশংসা একমাত্র আপনার জন্যই। (তিরমিযী হা. ৩২৯১, হাকিম ২/৪৭৩, সহীহ)
সূরাটি মাক্কী না মাদানী এ নিয়ে একাধিক মত রয়েছে, ইমাম কুরতুবী দুটি মত নিয়ে এসে মাক্কী হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ উরওয়া ইবনু যুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর মক্কায় যিনি সর্বপ্রথম উচ্চ আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করেন তিনি হলেন ইবনু মাসঊদ (রাঃ)। সাহাবীগণ বলেন : আওয়াজের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করা কুরাইশরা শোনেনি, কে আছে যে তাদেরকে আওয়াজের সাথে কুরআন তেলাওয়াত শোনাবে? ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বললেন : আমি, তারা বললেন : আমরা তোমার ব্যাপারে আশংকা করছি। আমরা চাচ্ছি এমন একজন ব্যক্তি যার কুরাইশদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে; ফলে তারা তাকে হেফাযত করবে। কিন্তু তিনি তা মানলেন না, সে স্থানে দাঁড়িয়ে অত্র সূরা তেলাওয়াত শুরু করলেন (কুরতুবী)। সুতরাং আয়াতগুলো প্রমাণ করছে সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ।
সূরার যোগসূত্র এবং
(فَبِأَيِّ اٰلَا۬ءِ....)
বাক্যটি বার বার উল্লেখ করার তাৎপর্য : পূর্ববর্তী সূরা কামারের অধিকাংশ বিষয়বস্তু অবাধ্য জাতিসমূহের শাস্তির সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। তাই প্রত্যেক শাস্তির পর মানুষকে হুশিয়ার করার জন্য
(فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِيْ وَنُذُرِ)
বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর সাথে ঈমান ও আনুগত্যে উৎসাহিত করার জন্য দ্বিতীয় বাক্য
(وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ)
কে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। এর বিপরীতে সূরা রহমানের বেশির ভাগ বিষয়বস্তু আল্লাহ তা‘আলার দুনিয়াবী ও আখিরাতের অনুগ্রহসমূহের বর্ণনা সম্পর্কিত। তাই যখন কোন বিশেষ অবদান উল্লেখ করা হয়েছে তখনই মানুষকে সতর্ককরণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকারে উৎসাহিত করার জন্য
(فَبِأَيِّ اٰلَا۬ءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ)
বাক্যটি বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেক বার বাক্যটি নতুন নতুন বিষয়বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে এটা অলংকার শাস্ত্রের পরিপন্থী নয়।
১-১৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
সূরাটিকে আর রহমান দ্বারা শুরু করার কারণ হল মক্কার মুশরিকরা রহমানকে অস্বীকার করত।
(وَاِذَا قِیْلَ لَھُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ قَالُوْا وَمَا الرَّحْمٰنُﺠ اَنَسْجُدُ لِمَا تَاْمُرُنَا وَزَادَھُمْ نُفُوْرًا)
“যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘রহমান’-কে সিজদা কর,’ তখন তারা বলে : ‘রহমান আবার কে? তুমি কাউকে সিজ্দা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজ্দা করব?’ এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।” (সূরা ফুরকান ২৫ : ৬০) বলা হয়, এ সূরাটি নাযিল হয়েছে মক্কাবাসীর এ কথার জবাবে যে, যখন তারা বলে : এ কুরআন মুহাম্মাদকে কোন খারাপ ব্যক্তি শিক্ষা দিয়েছে। সে হল ইয়ামামার রহমান। এর দ্বারা তারা বুঝাতো মুসায়লামাতুল কাযযাবকে। তখন এ আয়াত নাযিল হল (কুরতুবী)।
(عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন, আর তাঁর থেকে তাঁর উম্মাত গ্রহণ করেছে।
এ আয়াত তাদের কথার প্রতিবাদ করছে যারা বলে : এ কুরআন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন ব্যক্তির কাছ থেকে শিখেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّهُمْ يَقُوْلُوْنَ إِنَّمَا يُعَلِّمُه۫ بَشَرٌ ط لِسَانُ الَّذِيْ يُلْحِدُوْنَ إِلَيْهِ أَعْجَمِيٌّ وَّهٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِيْنٌ)
“অবশ্যই আমি জানি, তারা বলে : ‘তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবী।” (সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ১০৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِنْ هٰذَا إِلَّا إِفْكٌ افْتَرَاهُ وَأَعَانَهُ عَلَيْهِ قَوْمٌ آخَرُوْنَ فَقَدْ جَاءُوْا ظُلْمًا وَزُورًا - وَقَالُوْٓا اَسَاطِیْرُ الْاَوَّلِیْنَ اکْتَتَبَھَا فَھِیَ تُمْلٰی عَلَیْھِ بُکْرَةً وَّاَصِیْلًا)
“কাফিররা বলে : ‘এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।’ এরূপে তারা অবশ্যই জুলুম ও মিথ্যায় উপনীত হয়েছে। তারা বলে : ‘এগুলো তো সে-কালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যা তার নিকট পাঠ করা হয়।” (সূরা আল ফুরক্বা-ন ২৫ : ৪-৫)
মানুষ সৃষ্টি করার পূর্বে কুরআন শিক্ষা দেয়ার কথা উল্লেখের মাঝে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, মানুষ সৃষ্টিই করা হয়েছে কুরআন শিখার জন্য এবং কুরআনের নির্দেশিত পথে চলার জন্য।
(خَلَقَ الْإِنْسَانَ)
অর্থাৎ প্রথমেই আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে ভাব প্রকাশ করার যে ক্ষমতা দিয়েছেন তা একটি বড় নিদর্শন। এদিকে ইশারা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ)
“তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী!” (সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ৪) মানুষ সৃষ্টির পর তাকে অসংখ্য নিয়ামত প্রদান করা হয়েছে। তান্মধ্যে এখানে বিশেষভাবে ভাব বর্ণনা শিক্ষা তথা মনের ভাব প্রকাশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ মানুষের অন্যান্য প্রয়োজনের পূর্বে মনের ভাব প্রকাশের প্রয়োজন। মানুষ সুস্থ থাকুক, অসুস্থ হোক, কোন কিছুর প্রয়োজন হলে প্রথম দরকার তা প্রকাশ করার ক্ষমতা, তাছাড়া কুরআন শিক্ষার জন্যও প্রকাশ ক্ষমতা দরকার। এজন্য মানব সৃষ্টির পরেই মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষমতার নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(اَلشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ)
অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র উভয়টাই একটি অপরটির পর নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে। এতদু’ভয়ের আবর্তনের মধ্যে না আছে টক্কর এবং না আছে কোন অস্থিরতা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَالِقُ الْإِصْبَاحِ ج وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ط ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ)
“তিনিই সকালকে প্রকাশ করেন, তিনিই বিশ্রামের জন্য রাতকে সৃষ্টি করেছেন এবং গণনার জন্য সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন; এসবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিরূপণ।” (সূরা আন‘আম ৬ : ৯৬)
(وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدٰنِ)
ইবনু জারীর আত্ তাবারী (রহঃ) বলেন : النَّجْمُ-এর অর্থ নিয়ে মুফাস্সিরগণ একাধিক মত প্রকাশ করেছেন। তবে এ বিষয়ে সকলে একমত যে, الشَّجَرُ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ গাছ যা তার দেহের ওপর দণ্ডায়মান।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন :
(وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدٰنِ)
আয়াতে “নাজম” হলো সেসব উদ্ভিদ যা জমিনের ওপর বিস্তার লাভ করে।
এরূপ কথাই বলেছেন সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর সুদ্দী ও সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) ইবনু জারীর এ মতকে সমর্থন করেছেন।
মুজাহিদ বলেন : নাজম হল আকাশের তারকা। হাসান বাসরী ও কাতাদাহ্ও এ কথা বলেছেন : ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : এটাই সঠিক। (আল্লাহ তা‘আলাই অধিক জানেন) কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللہَ یَسْجُدُ لَھ۫ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَمَنْ فِی الْاَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُوْمُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَا۬بُّ وَکَثِیْرٌ مِّنَ النَّاسِ)
“তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতমালা, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সিজ্দা করে মানুষের মধ্যে অনেকে?” (সূরা আল হাজ্জ ২২ : ১৮)
(وَوَضَعَ الْمِيْزَانَ)
অর্থাৎ পৃথিবীতে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মানুষকেও তার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنٰتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتٰبَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ)
“নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও মানদণ্ড যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।” (সূরা আল হাদীদ ৫৭ : ২৫)
(أَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيْزَانِ)
অর্থাৎ ওজনে ন্যায়পরায়ণতার গণ্ডি অতিক্রম করো না।
- اكمام শব্দটি كم-এর বহুবচন। অর্থ কচি খেজুরের ওপরের আবরণ।
حب বলতে এমন সব শস্য যা খাদ্যরূপে গণ্য করা হয়। শস্য শুকিয়ে ভূসি হয়ে যায়, যা পশু ভক্ষণ করে।
الرَّيْحَانُ হাসান বাসরী বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : الرَّيْحَانُ অর্থ সবুজ বৃক্ষ। (ইবনু কাসীর) আরবে তুলসী গাছকে “রাইহান” বলা হয়।
(فَبِأَيِّ اٰلَا۬ءِ رَبِّكُمَا)
এ সম্বোধন মানুষ ও জিন উভয়কেই করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর নেয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করছেন। আর বারবার এর পুনরাবৃত্তির ব্যাপারটা এমন ব্যক্তির মতো যে, কারো প্রতি অব্যাহতভাবে অনুগ্রহ করে, কিন্তু সে তা অস্বীকার করে। যেমন বলে : আমি তোমার অমুক কাজটি করে দিয়েছি, তুমি কি তা অস্বীকার করবে? অমুক জিনিসটা তোমাকে দিয়েছি, তোমার কি স্মরণ নেই? অমুক অনুগ্রহটি তোমার প্রতি আমি করেছি, তোমার কি আমার ব্যাপারে একটুও খেয়াল নেই। (ফাতহুল কাদীর)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. রহমান আল্লাহর অন্যতম একটি নাম। এ নামে অন্য কাউকে নামকরণ করা বৈধ নয়।
২. সূরা র্আ রহমানের ফযীলত অবগত হলাম।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা আবশ্যক।
৪. সর্বত্র ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা অবশ্য কর্তব্য।
৫. ওজনে কম দেয়া হারাম।
9 Fozlur Rahman
অতএব, (হে জ্বিন ও ইনসান) তোমরা তোমাদের প্রভুর কোন্ নেয়ামতটি অস্বীকার করবে?
10 Mokhtasar Bangla
১৩. তবে হে জিন ও মানব জাতি! তোমরা নিজেদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত পর্যাপ্ত নিআমতের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?!
11 Tafsir Ibn Kathir
হযরত যার (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক বলেঃ “ مِنْ مَّآءٍ غَيْرِ اٰسِن-এর মধ্যে اٰسِن শব্দটি اٰسِن হবে, না أَسِن হবে?” তখন তাকে জবাবে বলেনঃ “তুমি কি কুরআন পূর্ণটাই পড়েছো?" সে উত্তর দেয়ঃ “আমি মুফাসসালের সমস্ত সূরা এক রাকআতে পড়ে থাকি।” তিনি তখন বলেনঃ “কবিতা যেমন তাড়াতাড়ি পড়া হয়, তুমি হয়তো এই ভাবেই কুরআনও পড়ে থাকো? এটা খুব দুঃখজনক ব্যাপারই বটে। আল্লাহর নবী (সঃ) মুফাসসালের প্রাথমিক সূরাগুলোর কোন দুটি সূরা মিলিয়ে পড়তেন তা আমার খুব ভাল স্মরণ আছে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে মুফাসসালের সর্বপ্রথম সূরা হলো এই সূরায়ে রহমান। (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের (রাঃ) সমাবেশে আগমন করেন এবং সূরায়ে রহমান প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) নীরবে শুনতে থাকেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেনঃ “আমি জ্বিনের রাত্রে এ সূরাটি পাঠ করেছিলাম, তারা তোমাদের চেয়ে উত্তমরূপে জবাব দিয়েছিল। যখনই আমি فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ -এই আয়াতে এসেছি তখনই তারা জবাবে বলেছেঃ
لَا بِشَىْءٍ مِّنْ نِّعَمِكَ رَبَّنَا نُكَذِّبُ فَلَكَ الْحَمْدُ
অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার অনুগ্রহ সমূহের কোন অনুগ্রহকেই অস্বীকার করি না। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আপনারই জন্যে।”
এই রিওয়াইয়াতটিই তাফসীরে ইবনে জারীরেও বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজেই এই সূরাটি পাঠ করেছিলেন অথবা তার সামনে এটা পাঠ করা হয়েছিল। ঐ সময় সাহাবীদেরকে নীরব থাকতে দেখে তিনি একথা বলেছিলেন। আর জ্বিনদের উত্তরের শব্দগুলো নিম্নরূপ ছিলঃ
لَا بِشَىْءٍ مِّنْ نِّعَمِكَ رَبَّنَا نُكَذِّبُ
অর্থাৎ “আমাদের প্রতিপালকের এমন কোন নিয়ামত নেই যা আমরা অস্বীকার করতে পারি।”
১-১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় পূর্ণ করুণার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি তাঁর বান্দাদের উপর কুরআন কারীম অবতীর্ণ করেছেন এবং স্বীয় ফল ও করমে ওর মুখস্থকরণ খুবই সহজ করে দিয়েছেন। তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। এটা হযরত হাসান (রঃ)-এর উক্তি। আর যহ্হাক (রঃ), কাতাদা (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, بَيَان দ্বারা ভাল ও মন্দ বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কথা বলা শিখানো অর্থ নেয়াই বেশী যুক্তিযুক্ত। কারণ এর সাথে সাথেই কুরআন শিক্ষা দেয়ার বর্ণনা রয়েছে। এর দ্বারা তিলাওয়াতে কুরআন বুঝানো হয়েছে। আর তিলাওয়াতে কুরআন কথা বলা সহজ হওয়ার উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক অক্ষরকে ওর মাখরাজ হতে জিহ্বা বিনা কষ্টে আদায় করে থাকে। তা কণ্ঠ হতে বের হোক অথবা ওষ্ঠাধরকে মিলানোর মাধ্যমেই হোক। বিভিন্ন মাখরাজ এবং বিভিন্ন প্রকারের অক্ষরের উচ্চারণের পদ্ধতি আল্লাহ তা'আলা মানুষকে শিখিয়েছেন। সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ নির্ধারিত কক্ষপথে আবর্তন করে। এতদুভয়ের আবর্তনের মধ্যে আছে টক্কর এবং না আছে কোন অস্থিরতা। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
لَا الشَّمْسُ یَنْۢبَغِیْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَ لَا الَّیْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَ كُلٌّ فِیْ فَلَكٍ یَّسْبَحُوْنَ
অর্থাৎ “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় যে, সে চন্দ্রের নাগাল পায় এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে।” (৩৬:৪০) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
فَالِقُ الْاِصْبَاحِ وَ جَعَلَ الَّیْلَ سَكَنًا وَّ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ حُسْبَانًا ذٰلِكَ تَقْدِیْرُ الْعَزِیْزِ الْعَلِیْمِ
অর্থাৎ “তিনি (আল্লাহ) সকালকে বেরকারী, রাত্রিকে তিনি আরাম ও বিশ্রামের সময় বানিয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে হিসাবের উপর রেখেছেন, এটা হলো পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।” (৬:৯৬)
হযরত ইকরামা (রঃ) বলেন যে, যদি সমস্ত মানুষের, জ্বিনের, চতুষ্পদ জন্তুসমূহের এবং পক্ষীকূলের চক্ষুগুলোর দৃষ্টিশক্তি একটি মাত্র মানুষের চোখে দিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর সূর্যের সামনে যে সত্তরটি পর্দা রয়েছে ওগুলোর মধ্যে একটিকে সরিয়ে ফেলা হয় তবুও সম্ভব নয় যে, এই লোকটিও সূর্যের দিকে তাকাতে পারে। অথচ সূর্যের আলো কুরসীর আলোর সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। সুতরাং এটা চিন্তা করার বিষয় যে, আল্লাহ স্বীয় জান্নাতী বান্দাদের চোখে কি পরিমাণ নূর দিবেন যে, তারা তাদের মহান প্রতিপালকের চেহারাকেও খোলাখুলিভাবে তাদের চক্ষু দ্বারা বিনা বাধায় দেখতে পাবে। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ পাকের উক্তিঃ তৃণলতা ও বৃক্ষাদি মেনে চলে তাঁরই বিধান। মুফাসসিরগণ এ বিষয়ে একমত যে, شَجَر বলা হয় ঐ গাছকে যে গাছের গুঁড়ি আছে। কিন্তু نَجْم এর কয়েকটি অর্থ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, গুঁড়ি বিহীন লতা গাছকে نَجْم বলা হয়, যে গাছ মাটির উপর ছড়িয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, نَجْم হলো ঐ তারকা যা আকাশে রয়েছে। এ উক্তিটিই বেশী প্রকাশমান, যদিও প্রথম উক্তিটিকেই ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) পছন্দ করেছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটিও দ্বিতীয় উক্তিটির পৃষ্ঠপোষকতা করেঃ
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللّٰهَ یَسْجُدُ لَهٗ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنْ فِی الْاَرْضِ وَ الشَّمْسُ وَ الْقَمَرُ وَ النُّجُوْمُ وَ الْجِبَالُ وَ الشَّجَرُ وَ الدَّوَآبُّ وَ كَثِیْرٌ مِّنَ النَّاسِ
অর্থাৎ “তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সিজদা করে মানুষের মধ্যে অনেকে।” (২২:১৮)
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন মানদণ্ড অর্থাৎ আদল ও ইনসাফ। যেমন তিনি বলেছেনঃ
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَیِّنٰتِ وَ اَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْمِیْزَانَ لِیَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে দলীল প্রমাণাদিসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও মানদণ্ড, যাতে মানুষ ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।" (৫৭:২৫) অনুরূপভাবে এখানে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যাতে তোমরা ভারসাম্য লংঘন না কর। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা আসমান ও যমীনকে সত্য ও ন্যায়ের সাথে সৃষ্টি করেছেন যাতে সমস্ত জিনিস সত্য ও ন্যায়ের সাথে থাকে। তাই তিনি বলেনঃ ওযনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওযনে কম দিয়ো না। অর্থাৎ যখন ওযন করবে তখন সঠিকভাবে ওযন করবে। কম-বেশী করবে না। অর্থাৎ নেয়ার সময় বেশী নিবে এবং দেয়ার সময় কম দিবে এরূপ করো না। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
وَ زِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِیْمِ
অর্থাৎ “তোমরা ন্যায়ের দণ্ড সোজা রেখে ওযন করো।” (১৭:৩৫)
আল্লাহ তা'আলা আকাশকে সমুন্নত করেছেন, আর পৃথিবীকে নীচু করে বিছিয়ে দিয়েছেন এবং তাতে মযবুত পাহাড় পর্বতকে পেরেকের মত করে গেড়ে দিয়েছেন যাতে এটা হেলা-দোলা ও নড়াচড়া না করে। আর তাতে যেসব সৃষ্টজীব বসবাস করছে তারা যেন শান্তিতে অবস্থান করতে পারে। হে মানুষ! তোমরা যমীনের সৃষ্টজীবের প্রতি লক্ষ্য করো, ওগুলোর বিভিন্ন প্রকার, বিভিন্ন রূপ, বিভিন্ন বর্ণ, বিভিন্ন ভাষা এবং বিভিন্ন স্বভাব ও অভ্যাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করে আল্লাহ তা'আলার ব্যাপক ও সীমাহীন ক্ষমতার পরিমাপ করে নাও। সাথে সাথে যমীনের উৎপাদিত জিনিসের দিকে চেয়ে দেখো। এতে রঙ বেরঙ এর টক-মিষ্ট ফল, নানা প্রকারের সুগন্ধি বিশিষ্ট ফল। বিশেষ করে খেজুর বৃক্ষ যা একটি উপকারী বৃক্ষ এবং যা রোপিত হওয়ার পর হতে নিয়ে শুকনো হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এবং এর পরেও খাওয়ার কাজ দেয়। খেজুর একটি সাধারণ ফল। ওর উপর খোসা থাকে যাকে ভেদ করে এটা বের হয়ে আসে। অতঃপর ওটা হয় কাদার মত, এরপর হয় রসাল এবং এরপর পেকে গিয়ে ঠিক হয়ে যায়। এটা খুবই উপকারী। আর এর গাছও হয় খুব সোজা ও সুন্দর।
হযরত শা'বী (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রোমক সম্রাট হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখেনঃ “আমার দূত আপনার নিকট হতে ফিরে এসে বলেছে যে, আপনার ওখানে নাকি একটি বক্ষ রয়েছে যার মত স্বভাব বা প্রকৃতি অন্য কোন গাছের মধ্যে নেই। ওটা গর্দভের কানের মত যমীন হতে বের হয়। তারপর রক্তিম বর্ণ ধারণ করে মুক্তার মত হয়, এরপর সবুজ বর্ণ ধারণ করে পান্নার (মূল্যবান সবুজ পাথর বিশেষ) মত হয়ে যায়, তারপর লাল বর্ণ। ধারণ করে লাল ইয়াকৃত বা পদ্মরাগের মত হয়। এরপর পেকে গিয়ে অতি উত্তম ও সুস্বাদু ফলে পরিণত হয়। তারপর শুকিয়ে গিয়ে স্থায়ী বাসিন্দাদের রক্ষণ এবং মুসাফিরদের পাথেয় হয়। সুতরাং যদি আমার দূতের বর্ণনা সত্য হয় তবে আমার ধারণায় এটা জান্নাতী গাছ।" তাঁর এই পত্রের জবাবে হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) তাকে লিখেনঃ “এই পত্র আল্লাহর দাস এবং মুসলমানদের নেতা উমার (রাঃ)-এর পক্ষ হতে রোমক সম্রাট কায়সারের নিকট। আপনার দূত আপনাকে যে খবর দিয়েছে তা সম্পূর্ণ সত্য। এ ধরনের গাছ আরবে প্রচুর রয়েছে। এটা ঐ গাছ যা আল্লাহ তা'আলা হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর পার্শ্বে জন্মিয়েছিলেন, যখন তাঁর পুত্র ঈসা (আঃ) তার গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হন। অতএব, হে বাদশাহ! আল্লাহকে ভয় করুন এবং হযরত ঈসা (আঃ)-কে মা’রূদ মনে করবেন না। আল্লাহ এক, তার কোন শরীক নেই। দেখুন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
اِنَّ مَثَلَ عِیْسٰى عِنْدَ اللّٰهِ كَمَثَلِ اٰدَمَ خَلَقَهٗ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهٗ كُنْ فَیَكُوْنُ ـ اَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ فَلَا تَكُنْ مِّنَ الْمُمْتَرِیْنَ
অর্থাৎ “আল্লাহর নিকট ঈসা (আঃ)-এর দৃষ্টান্ত আদম (আঃ)-এর দৃষ্টান্ত সদৃশ। তাকে তিনি মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছিলেন, অতঃপর তাকে বলেছিলেনঃ ‘হও’ ফলে সে হয়ে গেল। এই সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে, সুতরাং তুমি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” (৩:৫৯-৬০)
اَكْمَام-এর অর্থ لِيْف ও করা হয়েছে যা খেজুর বৃক্ষের গর্দানের উপর বাকল বা আবরণের মত থাকে।
এই যমীনে রয়েছে খোসা বিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধ গুল্ম। عَصْف-এর অর্থ হলো ক্ষেত্রের ঐ সবুজ পাতা যাকে উপর হতে কেটে দেয়া হয় এবং শুকিয়ে নেয়া
হয়।
رَيْحَان-এর অর্থ হলো সুগন্ধ গুল্ম অথবা ক্ষেতের সবুজ পাতা। ভাবার্থ এই যে, গম, যব ইত্যাদির ঐ দানা যা ওর মাথার উপর ভূষিসহ থাকে এবং যে পাতা ওগুলোর গাছের উপর জড়িয়ে থাকে। আর এটাও বলা হয়েছে যে, ক্ষেতের প্রথমেই উৎপাদিত পাতাকে তো عَصْف বলা হয়, আর যখন তাতে দানা ধরে তখন ওকে رَيْحَان বলা হয়। যেমন কবি যায়েদ ইবনে আমর স্বীয় প্রসিদ্ধ।
কাসীদায় বলেছেনঃ
وَقُوْلَا لَهٗ مَنْ يُّنْبِتُ الْحَبَّ فِى الثَّرٰى ـ فَيُصْبِحَ مِنْهُ الْبَقَلَ يَهْتَزُّ رَايَا
وَيُخْرِجُ مِنْهُ حَبَّهٗ فِىْ رُءُوْسِهٖ ـ فَفِىْ ذٰاكَ اٰياتٌ لِّمَنْ كَانَ وَاعِيَا
অর্থাৎ “তোমরা দু’জন (হযরত মূসা আঃ ও হযরত হারূন আঃ) তাকে (ফিরাউনকে) বলোঃ কে মৃত্তিকায় শস্য উৎপাদন করেন? অতঃপর ওটা হতে চারা গাছ হয় যা আন্দোলিত হয় এবং তা হতে ওর মাথায় দানা বের করেন (কে তিনি? অর্থাৎ আল্লাহই এসব করে থাকেন)। সুতরাং এগুলোর মধ্যে সংরক্ষণকারীর জন্যে নিদর্শন রয়েছে।”
তাই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অতএব তোমরা উভয়ে (অর্থাৎ দানব ও মানব) তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? অর্থাৎ হে দানব ও মানব! তোমরা তোমাদের আপাদমস্তক আল্লাহর নিয়ামত রাজির মধ্যে ডুবে রয়েছে। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে তোমরা আল্লাহ তাআলার কোন নিয়ামতকেই অস্বীকার করতে পার না। দু' একটি নিয়ামত হলে আলাদা কথা ছিল, কিন্তু এখানে তো তোমাদের পা হতে মাথা পর্যন্ত আল্লাহর নিয়ামতে পরিপূর্ণ রয়েছে। এ জন্যেই তো মুমিন জ্বিনগুলো একথা শোন মাত্রই উত্তরে বলেছিলঃ
اَللّٰهُمَّ وَلَا بِشَىْءٍ مِّنْ اٰلَاءِكَ رَبَّنَا نُكَذِّبُ فَلَكَ الْحَمْدُ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার এমন কোন নিয়ামত নেই যা আমরা অস্বীকার করতে পারি। সুতরাং আপনারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা।" হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর জবাবে বলতেনঃ لَا بِاَيِّهَا يَارَبِّ অর্থাৎ “হে আমার প্রতিপালক! আমরা আপনার নিয়ামতরাজির কোন একটিও অস্বীকার করতে পারি না।”
হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রিসালাতের প্রাথমিক অবস্থায় যখন ইসলাম পুরোপুরিভাবে ঘোষিত হয়নি তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বায়তুল্লাহর রুকনের দিকে নামায পড়তে দেখেছি। ঐ সময় তিনি فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ পাঠ করেছেন এবং মুশরিকরাও তা শ্রবণ করেছে।