আর রহমান আয়াত ৭৮
تَبٰرَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِى الْجَلٰلِ وَالْاِكْرَامِ ࣖ ( الرحمن: ٧٨ )
Tabaarakasmu Rabbika Zil-Jalaali wal-Ikraam (ar-Raḥmān ৫৫:৭৮)
English Sahih:
Blessed is the name of your Lord, Owner of Majesty and Honor. (Ar-Rahman [55] : 78)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
মাহাত্ম্য ও সম্মানের অধিকারী তোমার প্রতিপালকের নাম বড়ই কল্যাণময়। (আর রহমান [৫৫] : ৭৮)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
কত মহান তোমার মহিমময়, [১] মহানুভব প্রতিপালকের নাম!
[১] تَبَارَكَ শব্দটি بركة থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ, চিরত্ব ও স্থায়িত্ব। অর্থাৎ, তাঁর নাম চিরন্তন ও চিরস্থায়ী। অথবা তাঁর নিকট সর্বদাই বরকত ও কল্যাণের ভান্ডার বিদ্যমান। কেউ কেউ তার অর্থ করেছেন, আল্লাহর মহিমা, গৌরব ও মর্যাদার উচ্চতা। আর যাঁর নাম এত বরকতময় তথা এত কল্যাণ ও উচ্চতার অধিকারী, তখন তাঁর সত্তা কতই না কল্যাণময় এবং কতই না বড়ত্ব ও উচ্চতার অধিকারী।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
কত বরকতময় আপনার রবের নাম যিনি মহিমাময় ও মহানুভব [১] !
[১] সূরা আর-রহমানে বেশির ভাগ আল্লাহ তা'আলার অবদান ও মানুষের প্রতি অনুগ্রহ বর্ণিত হয়েছে। উপসংহার সার-সংক্ষেপ হিসেবে বলা হয়েছেঃ আল্লাহর পবিত্র সত্তা অনন্য। তাঁর নামও খুব পুণ্যময়। তার নামের সাথেই এসব অবদান কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত আছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত আদায়ের পরে বসা অবস্থায় বলতেন,
اللّٰهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَيا ذَاالْجَلَالِ وَالإكْرَامِ
“হে আল্লাহ্ আপনি সালাম (শান্তি নিরাপত্তাপ্রদানকারী), আপনার পক্ষ থেকেই সালাম (শান্তি ও নিরাপত্তা) আসে। আপনি বরকতময়, হে মহিমাময় মহানুভব।” [মুসলিম; ৫৯১, ৫৯২] কোন বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা “ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” বলে বেশী বেশী করে সার্বক্ষনিক আল্লাহর কাছে চাও”। [তিরমিয়ী; ৩৫২২, মুসনাদে আহমদঃ ৪/১৭৭]
3 Tafsir Bayaan Foundation
তোমার রবের নাম বরকতময়, যিনি মহামহিম ও মহানুভব।
4 Muhiuddin Khan
কত পূণ্যময় আপনার পালনকর্তার নাম, যিনি মহিমাময় ও মহানুভব।
5 Zohurul Hoque
কত কল্যাণময় তোমার প্রভুর নাম, তিনি অপার মহিমার ও বিপুল করুণার অধিকারী।
6 Mufti Taqi Usmani
বড় মহিয়ান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি গৌরবময়, মহানুভব!
7 Mujibur Rahman
কত মহান তোমার রবের নাম যিনি মহিমাময় ও মহানুভব!
8 Tafsir Fathul Mazid
৪৬-৭৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
পূর্বের আয়াতে জাহান্নামীদের দুর্ভোগের কথা আলোচনার পর এখানে জান্নাতীদের পরম সুখ সাচ্ছন্দ্যের কথা তুলে ধরেছেন।
(وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه۪ جَنَّتٰنِ)
‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু‘টি জান্নাত’ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : যে ব্যক্তি এ ভয় করে যে, কিয়ামতের দিন স্বীয় প্রতিপালকের সামনে দাঁড়িয়ে হিসাব দিতে হবে সে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজ হতে বিরত থাকে এবং নিজেকে কু-প্রবৃত্তি হতে হেফাযত করে, দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দেয় এবং সে জানে আখিরাতই শ্রেষ্ঠ। ফলে শরীয়তের ফরযগুলো যথাযথ আদায় করে, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকে তার জন্য কিয়ামত দিবসে দু’টি জান্নাত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : দু’টি জান্নাত হবে রৌপ্যের এবং তার আসবাবপত্রসহ তার ভেতরে যা কিছু আছে সব।
আর দুটি জান্নাত হবে স্বর্ণের এবং তার আসবাবপত্র ও তার ভেতরে যা আছে সব। জান্নাতবাসী ও আল্লাহর দীদারের মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না কেবলমাত্র তাঁর কিবরিয়ার চাঁদর যা তাঁর চেহারার ওপর, থাকবে। এটা থাকবে আদন নামক জান্নাতে। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৮০, সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ : মু’মিনরা কিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখবে)
আবূ দারদা (রাঃ) একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে বর্ণনা করতে শুনলেন
(وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه۪ جَنَّتٰنِ)
‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু‘টি জান্নাত’ আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সে যদি ব্যভিচার করে ও চুরি করে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয়বার উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন। আমি দ্বিতীয়বার বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! সে যদি ব্যভিচার করে ও চুরি করে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয়বার প্রাগুক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন। আমি তৃতীয়বার বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! সে যদি ব্যভিচার করে ও চুরি করে? তিনি বলেন, যদিও আবূ দারদার নাক ধূলায় ধূসরিত হয়। (সনদ সহীহ, আহমাদ হা. ৮৬৮৩)
(ذَوَاتَآ أَفْنَانٍ) ‘উভয়টি বহু শাখাপল্লববিশিষ্ট বৃক্ষে ফলমূল দ্বারা ভরপুর’ أَفْنَانٍ শব্দটি فن এর বহুবচন, অর্থ ডালপালা। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তাতে ছায়া হবে ঘন ও সুনিবিড়। অনুরূপ ফলও হবে অধিক হারে। প্রতিটি ডাল ফলে পরিপূর্ণ থাকার কারণে ডালগুলো ঝুঁকে পড়বে। (ইবনু কাসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি গাছ রয়েছে, একজন আরোহী দ্রুতগতিসম্পন্ন একটি ঘোড়ায় চড়ে ১০০ বছর চলেও তা অতিক্রম করতে পারবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে একজন আরোহী তার ছায়ার নীচ দিয়ে একশত বছর অতিক্রম করেও শেষ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম হা. ২৮২৮, ২৮২৬)
(فِيْهِمَا عَيْنَانِ تَجْرِيٰنِ)
‘উভয়টিতে রয়েছে সদা প্রবহমান দু‘টি ঝর্ণাধারা’ দু’টি প্রস্রবণের একটি হলো “তাসনীম” অপরটি হলো “সাল সাবিল” এ উক্তি হাসান বাসরী (রহঃ)। (ইবনু কাসীর)
(فِيْهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجٰنِ)
‘উভয় বাগানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই প্রকার’ অর্থাৎ প্রত্যেক শ্রেণির ফল হবে দুপ্রকারের। প্রত্যেকটির স্বাদ ও রং হবে ভিন্ন তবে সবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, দুনিয়াতে কোন মিষ্টি বা টক গাছ নেই যার অনুরূপ জান্নাতে নেই এমনকি মাকালফল গাছও জান্নাতে থাকবে তবে তাও মিষ্টি হবে (কুরতুবী)।
(مُتَّكِئِيْنَ عَلٰي فُرُشٍۭ بَطَآئِنُهَا....)
‘সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে” এটা হলো জান্নাতীদের জন্য তৈরি করে রাখা বিছানার বৈশিষ্ট্য। জান্নাতীরা আরাম ও আয়েশের জন্য সে সব বিছানায় রাজা বাদশাদের মতো হেলান দিয়ে বসে থাকবে- এখানে জান্নাতী বিছানার শুধু ভেতরের সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে। বাহ্যিক সৌন্দর্য কেমন হবে তা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানে না। শব্দটি بطانة এর বহুবচন, যা অভ্যন্তরে থাকে, ভেতর দিক। মোটা রেশমী কাপড়কে إِسْتَبْرَقٍ বলা হয়।
(وَجَنَي الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ)
অর্থাৎ জান্নাতের ফল এত নিকটবর্তী হবে যে, বসে বসে এমনকি শুয়ে শুয়ে পাড়তে পারবে। আল্লাহ বলেন :
(وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا تَذْلِيْلًا)
“জান্নাতের বৃক্ষছায়া তাদের ওপর ঝুঁকে থাকবে এবং ওর ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন থাকবে।” (সূরা দাহর ৭৬ : ১৪)
যেমন আল্লাহ বলেন : (قُطُوْفُهَا دَانِيَةٌ)
“যার ফল-ফলাদি অতি নিকটে নাগালের মধ্যে থাকবে।” (সূরা হাক্কাহ্ ৬৯ : ২৩)
(فِيْهِنَّ قٰصِرٰتُ الطَّرْفِ.....)
‘‘সেখানে রয়েছে বহু আনতনয়না স্ত্রীগণ....” সে সকল বিছানায় রয়েছে এমন নারী যারা তাদের দৃষ্টিকে নিজ স্বামী ছাড়া অন্যদের থেকে অবনত রাখে। ইবনু জায়েদ বলেন : বর্ণিত আছে যে, জান্নাতী প্রত্যেক নারী তার স্বামীকে লক্ষ্য করে বলবে : আল্লাহর শপথ! আপনার চেয়ে উত্তম জান্নাতে আর কিছু দেখছি না। জান্নাতে আপনার চেয়ে আমার নিকট প্রিয় আর কিছুই নেই। তাই আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা যিনি আপনাকে আমার ভাগে দিয়েছেন। (ইবনু কাসীর)
(لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ.....)
অর্থাৎ তারা হবে কুমারী, নব-যুবতী ও অবিবাহিতা যাদের সাথে কোন পুরুষ বা জিন সহবাস করেনি। এ আয়াত প্রমাণ করছে যে, জিন মু‘মিনরাও জান্নাতে যাবে, যেমন মানুষ মু’মিনরা জান্নাতে যাবে।
এ সকল জান্নাতী নারীদের আরো বৈশিষ্ট্য হল :
(كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ)
অর্থাৎ মণিমুক্তা যেমন পরিস্কার স্বচ্ছ, তারাও ঠিক এমন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : জান্নাতী নারীরা এমন যে, তার পদনালীর শুভ্রতা সত্তরটি রেশমের হুল্লার (পোশাক বিশেষ) মধ্য হতেও দেখা যাবে, এমনকি ভেতরের মজ্জাও দৃষ্টি-গোচর হবে। (তিরমিযী হা. ২৫৩৩, সহীহ)
অতঃপর তিনি
(كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ)
‘তারা যেন হীরা ও মতি’ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন এবং বলেন : ইয়াকুত একটি পাথর বটে কিন্তু যদি ওর মধ্যে সুতো পরিয়ে দেয়া হয় তবে বাইরে থেকে তা দেখা যাবে। (তিরমিযী হা. ২৫৩৩, হাসান সহীহ)
এ ছাড়াও জান্নাতী নারীদের সৌন্দর্য ও স্বামীর প্রতি তাদের ভালবাসার গভীরতার ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে।
(هَلْ جَزَا۬ءُ الْإِحْسَانِ)
‘উত্তম কাজের পুরস্কার উত্তম (জান্নাত) ব্যতীত আর কী হতে পারে?’ আয়াতের প্রথম إحسان ইহসান এর অর্থ হলো : সৎ কর্ম ও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য। আর দ্বিতীয় إحسان এর অর্থ হলো : প্রতিদান। অর্থাৎ যারা সৎকর্ম ও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করে তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান ছাড়া আরো কিছু আছে কি? না, তাদের জন্য উত্তম প্রতিদানই রয়েছে।
(وَمِنْ دُوْنِهِمَا جَنَّتٰنِ)
অর্থাৎ এ জান্নাত দু’টি মর্যাদা ও ফযীলতের দিক দিয়ে সমান, এছাড়াও আরো দু’টি জান্নাত রয়েছে। যেমন ৪৬ নম্বর আয়াতের তাফসীরে হাদীস গত হয়েছে। অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে স্বর্ণের জান্নাত مقربين তথা নৈকট্যশীলদের জন্য আর রৌপ্যের জান্নাত ডানপন্থীদের জন্য।
আব্দুল্লাহ ইবনু কায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : (জান্নাতের মধ্যে) দুটি বাগান থাকবে। এ দুটির সকল পাত্র এবং এর ভেতর সকল বস্তু রৌপ্য নির্মিত হবে এবং (জান্নাতে) আরো দুটি বাগান থাকবে- এ দুটির সকল পাত্র এবং ভেতরের সকল বস্তু স্বর্ণের তৈরি হবে। জান্নাতে আদনের মধ্যে জান্নাতী লোকেরা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ করবে। এ জান্নাতবাসী এবং তাদের প্রতিপালকের এ দর্শনের মাঝে আল্লাহ তা‘আলার সত্তার ওপর জড়ানো তাঁর বড়ত্বের চাদর ছাড়া আর কোন অন্তরাল থাকবে না। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৭৮, সহীহ মুসলিম হা. ৭৪৪৪)
(مُدْهَآمَّتٰنِ)
অর্থাৎ অত্যধিক সতেজ ও সবুজ হওয়ার কারণে তা কালোর মতো দেখাবে।
(نَضَّاخَتٰنِ) অর্থাৎ فوارثان বা উচ্ছলিত।
(فِيْهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ)
‘সে সকলের মাঝে রয়েছে উত্তম চরিত্রের সুন্দরীগণ’ অধিকাংশ বিদ্বান বলেন : সতী সাধ্বী মহিলা যারা উত্তম চরিত্র ও অবয়বের অধিকারিণী। আবার বলা হয় জান্নাতে অনেক কল্যাণ রয়েছে (ইবনু কাসীর)।
(حُوْرٌ مَّقْصُوْرَاتٌ فِي الْخِيَامِ)
‘তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : জান্নাতে মতির তাঁবু হবে। তার প্রস্থ হবে ৬০ মাইল। তার প্রতি কোণে থাকবে জান্নাতী স্ত্রী। এক কোণের লোকদের অপর কোণের লোকেরা দেখতে পাবে না। মু’মিনরা তাতে বিচরণ করবে। (সহীহ বুখারী হা. ৩২৪৩)
( مُتَّكِئِيْنَ عَلٰي رَفْرَفٍ.....)
‘তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন সবুজ আসনে এবং সুন্দর গালিচা’ অর্থ মসনদ, বালিশ, গালিচা অথবা এ ধরণের উৎকৃষ্ট বিছানা।
عَبْقَرِيٍّ প্রত্যেক উৎকৃষ্ট ও মূল্যবান জিনিসকে বলা হয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমার (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে এ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। আমি কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি এমন দেখিনি যে, ‘উমারের মতো কাজ করতে পারে। (সহীহ বুখারী হা. ৩৬৮২, সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ : ‘উমার (রাঃ)-এর ফযীলত) অর্থাৎ জান্নাতীরা এমন আসনে হেলান দিয়ে উপবেশন করবে, যার ওপর সবুজ রঙের মসনদ, গালিচা এবং কারুকার্য খচিত উৎকৃষ্টমানের বিছানা বিছানো থাকবে।
(تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ)
‘বরকতময় তোমার প্রতিপালকের নাম যিনি মহিমান্বিত ও সম্মানিত’ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষে এ দু‘আ পরিমাণ বসতেন :
اللّٰهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
হে আল্লাহ তা‘আলা আপনি সালাম (শান্তি) আপনার পক্ষ থেকেই শান্তি আসে, আপনি বরকতময় হে মহিমান্বিত ও সম্মানিত। (সহীহ মুসলিম হা. ৫৯১)
সুতরাং প্রত্যেক মু‘মিন ব্যক্তির অবশ্যই এমন নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ আশা করা উচিত। শুধু আশা করলেই হবে না, সাথে সাথে সে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতের পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশের পাথেয় সংগ্রহ করার তাওফীক দান করুন! আমীন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. নেয়ামতে ভরপুর জান্নাতের বিবরণ পেলাম।
২. জান্নাতীদের আরাম-আয়েশ ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হলাম।
৩. জান্নাতী নারীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানলাম।
৪. দুনিয়াতে ঈমানের সাথে সৎ আমল করলে আখিরাতে এ নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত লাভ করবে।
৫. মহিয়ান গরিয়ান বরকতময় আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত আমাদের ওপর প্রতিনিয়ত অসংখ্য নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
9 Fozlur Rahman
বরকতময় তোমার মহামহিম ও চিরসম্মানিত প্রভুর নাম।
10 Mokhtasar Bangla
৭৮. অতি মাহাত্ম্য ও প্রাচুর্যপূর্র্ণ আপনার রবের নাম। যিনি মহিয়ান, স্বীয় বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহশীল ও কৃপানিধান।
11 Tafsir Ibn Kathir
৬২-৭৮ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে যে দুটি জান্নাতের বর্ণনা রয়েছে এ দুটো জান্নাত ঐ দুটো জান্নাত অপেক্ষা নিম্ন মানের যে দুটোর বর্ণনা পূর্বে গত হলো। ঐ হাদীসের বর্ণনাও গত হয়েছে যাতে রয়েছে যে, দুটো জান্নাত স্বর্ণের ও দুটো জান্নাত রৌপ্যের। প্রথমটি বিশেষ নৈকট্য লাভকারীদের স্থান এবং দ্বিতীয়টি আসহাবে ইয়ামীনের স্থান। মোটকথা, এ দুটোর মান ঐ দুটোর তুলনায় কম। এর বহু প্রমাণ রয়েছে। একটি প্রমাণ এই যে, ঐ দুটির গুণাবলীর বর্ণনা এ দুটির পূর্বে দেয়া হয়েছে। সুতরাং পূর্বে বর্ণনা দেয়াই ঐ দুটির ফযীলতের বড় প্রমাণ। তারপর এখানে وَمِنْ دُوْنِهِمَا বলা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে যে, এ দুটি ঐ দুটি অপেক্ষা নিম্নমানের। ওখানে ঐ দুটির প্রশংসায় ذَوَاتَا اَفْنَانٍ বলা হয়েছে অর্থাৎ বহু শাখা-পল্লব বিশিষ্ট বৃক্ষে পূর্ণ। আর এখানে বলা হয়েছে। مُدْهَامَّتَانِ অর্থাৎ ঘন সবুজ এই উদ্যান দু’টি। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) সবুজ অর্থ করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলো সজীতে পরিপূর্ণ। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ এতো বেশী পাকা পাকা ফল ধরে রয়েছে যে, সম্পূর্ণ বাগান সবুজ-শ্যামল মনে হচ্ছে। মোটকথা, ওখানে শাখাগুলোর প্রাচুর্যের বর্ণনা রয়েছে এবং এখানে গাছগুলোর আধিক্যের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সুতরাং এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঐগুলো ও এগুলোর মধ্যে বহু পার্থক্য রয়েছে।
ঐ দুটি উদ্যানের দুটি প্রস্রবণের ব্যাপারে تَجْرِيَانِ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ প্রবহমান দুটি প্রস্রবণ। আর এই দুটি উদ্যানের দুটি প্রস্রবণ সম্পর্কে نَضَّاخَتَانِ ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ উচ্ছলিত দুটি প্রস্রবণ। আর এটা প্রকাশ্য ব্যাপার যে, উজ্জ্বলিত হওয়ার চেয়ে প্রবহমান হওয়া উচ্চতর।
ঐখানে বলা হয়েছে যে, উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই প্রকার। আর এখানে বলা হয়েছে যে, উদ্যান দুটিতে রয়েছে ফলমূল-খর্জূর ও আনার। তাহলে এটা স্পষ্ট যে, পূর্বের উদ্যান দুটির শব্দগুলো সাধারণত্বের জন্যে। ওটা প্রকারের দিক দিয়ে এবং পরিমাণ বা সংখ্যার দিক দিয়েও এটার উপর ফযীলত রাখে। কেননা, এখানে فَاكِهَة শব্দটি নাকেরাহ বটে, কিন্তু হিসাবে اِثْبَات-এর জন্যে। সুতরাং এটা عَام বা সাধারণ হতে পারে না। এজন্যেই তাফসীর হিসেবে পরে نَخْل ও رُمَّان বলে দিয়েছেন। যেমন خَاص-এর বা عَطْف সংযোগ عَام -এর উপর হয়ে থাকে। ইমাম বুখারী (রঃ) প্রমুখ মনীষীদের تَحْقِيْق বা শব্দ বিশ্লেষণও এটাই।
খেজুর ও আনারকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ এই যে, অন্যান্য ফলের উপর এ দুটোর মর্যাদা রয়েছে।
মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদীতে হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইয়াহূদীদের কতক লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! জান্নাতে ফল আছে কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, তথায় রয়েছে ফলমূল, খর্জুর ও আনার।” তারা আবার প্রশ্ন করেঃ “তারা (অর্থাৎ জান্নাতীরা) কি তথায় দুনিয়ার মত পানাহার করবে?” জবাবে তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, বরং বহুগুণে বেশী করবে। তারা পুনরায় প্রশ্ন করেঃ “তারা কি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরো করবে (অর্থাৎ তাদের পায়খানা প্রস্রাবের প্রয়োজন হবে কি?” তিনি উত্তর দেনঃ “না, বরং ঘর্ম আসার ফলে সবই হযম হয়ে যাবে।”
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জান্নাতের খেজুর গাছের পাতা হবে জান্নাতীদের পোশাক। এটা লাল রঙ এর হবে, এর কাণ্ড হবে সবুজ পান্না। এর ফল হবে মধুর চেয়েও মিষ্ট এবং মাখনের চেয়েও নরম। এতে বিচি মোটেই থাকবে না।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি জান্নাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখি যে, ওর একটি আনার যেন শিবিকাসহ উট (অর্থাৎ এরূপ উটের মত বিরাট বিরাট)।” (এ হাদীসটিও ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
خَيْرَاتٌ -এর অর্থ হচ্ছে সংখ্যায় অধিক, অত্যন্ত সুন্দরী এবং খুবই চরিত্রবতী সতী-সাধ্বী। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, হ্রগুলো যে গান গাইবে তাতে এও থাকবেঃ “আমরা সুন্দরী, চরিত্রবতী ও সতী-সাধ্বী। আমাদেরকে সম্মানিত স্বামীদের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে।” এই পূর্ণ হাদীসটি সূরায়ে ওয়াকিয়াহতে সত্বরই আসছে ইনশাআল্লাহ।
خَيْرَاتٌ শব্দটিকে তাশদীদ সহও পড়া হয়েছে। এরপর আল্লাহ তা'আলা পুনরায় প্রশ্ন করছেনঃ সুতরাং হে দানব ও মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা তাঁবুতে সুরক্ষিত হুর। এখানেও ঐ পার্থক্যই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, ওখানে বলা হয়েছিল হরগুলো নিজেরাই তাদের চক্ষু নীচু করে রাখে, আর এখানে বলা হচ্ছে তাদের চক্ষু নীচু করানো হয়েছে। সুতরাং নিজেই কোন কাজ করা এবং অপরের দ্বারা করানো এই দুয়ের মধ্যে কত বড় পার্থক্য রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়, যদিও সবাই তাঁবুতে সুরক্ষিত।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে খায়রাহ অর্থাৎ সতী-সাধ্বী, চরিত্রবতী ও উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্টা হ্র রয়েছে। প্রত্যেক খায়রাহ বা হরের জন্যে তাঁবু রয়েছে। প্রত্যেক তাঁবুর চারটি দরযা আছে, যেগুলো দিয়ে প্রত্যহ উপহার, উপঢৌকন, হাদিয়া এবং ইনআম আসতেই আছে। সেখানে না আছে কোন ঝগড়া-বিবাদ, না আছে কড়াকড়ি, না আছে ময়লা আবর্জনা এবং না আছে দুর্গন্ধ। বরং হরদের সাহচর্য, যারা শুভ্র ও উজ্জ্বল মুক্তার মত, যাদেরকে ইতিপূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতে একটি তাঁবু রয়েছে যা খাঁটি মুক্তা দ্বারা নির্মিত। ওর প্রস্থ ষাট মাইল। ওর প্রত্যেক কোণায় জান্নাতীরা রয়েছে যারা অন্য কোণার লোকদেরকে দেখতে পায় না। মুমিনরা তাদের কাছে আসা যাওয়া করতে থাকবে। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত রয়েছে। সহীহ মুসলিমেও হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে) অন্য বর্ণনায় তাঁবুটির প্রস্থ তিন মাইলের কথাও রয়েছে।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেন যে, জান্নাতে মণি-মুক্তার তৈরী একটি তাঁবু রয়েছে। যার মোতির তৈরী সত্তরটি দরযা আছে। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত রয়েছে। সহীহ মুসলিমেও হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জান্নাতে একটি তাঁবু থাকবে যা মুক্তা দ্বারা নির্মিত হবে। ওর চার হাজারটি দরযা হবে এবং সমস্ত চৌকাঠ হবে সোনার তৈরী।
একটি মারফু হাদীসে আছে যে, সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতীর আশি হাজার খাদেম থাকবে এবং বাহাত্তরটি স্ত্রী হবে। আর মণি-মুক্তা ও যবরজদের প্রাসাদ হবে যা জাভিয়াহ হতে সানআ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। (অর্থাৎ জাভিয়াহ হতে সানআ পর্যন্ত জায়গাদ্বয়ের মধ্যে যতটা ব্যবধান রয়েছে ততদূর পর্যন্ত ঐ প্রাসাদ পৌছে যাবে)।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এদেরকে (অর্থাৎ এই হ্রদেরকে) ইতিপূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। এই প্রকারের আয়াতের তাফসীর পূর্বে গত হয়েছে। তবে পূর্ববর্তী জান্নাতীদের হ্রদের গুণাবলী বর্ণনায় এ বাক্যটুকু বেশী আছে যে, তারা যেন প্রবাল ও পদ্মরাগ। এখানে এই হ্রদের ব্যাপারে এটা বলা হয়নি। আল্লাহ তাআলা আবারও বলেনঃ সুতরাং হে দানব ও মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে। এই তাকিয়া হবে খুবই উন্নতমানের ও নকশাকৃত। এই তখৃত, বিছানা ও বালিশগুলো জান্নাতী বাগীচা ও পুষ্প বীথির উপর থাকবে। এগুলো হবে উচ্চমানের রেখাযুক্ত নকশীদার রেশমের এবং এটাই হবে তাদের বিছানা। কোনটা হবে লাল রঙ এর, কোনটা হবে হলদে রঙ এর এবং কোনটা হবে সবুজ রঙ এর। জান্নাতীদের কাপড় ও পোশাকও এরূপ মূল্যবান। দুনিয়ায় এমন কোন জিনিস নেই যার এগুলোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এটা হবে মখমলের বিছানা ও গদি যা হবে অত্যন্ত নরম ও খাঁটি। তাতে কয়েকটি রঙ মিলিতভাবে থাকবে এবং নকশাকৃত হবে।
আবু উবাইদা (রঃ) বলেন যে, আবকারী একটি জায়গার নাম যেখানে উন্নত মানের নকশীদার কাপড় বুনানো হয়। খলীল ইবনে আহমাদ (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক সুন্দর ও উত্তম জিনিসকে আরবরা আবকারী বলে থাকে। যেমন এক হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) সম্পর্কে বলেনঃ “আমি কোন আবকারীকে দেখিনি যে উমার (রাঃ)-এর মত বড় বড় বালতি টেনে থাকে।”
এখানেও এটা খেয়াল রাখার বিষয় যে, পূর্ববর্ণিত জান্নাতদ্বয়ের বিছানা, গদি ও বালিশের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা এগুলো হতে উন্নততর। ওখানে বর্ণিত হয়েছিল যে, ওর আস্তর অর্থাৎ ভিতরের কাপড় হবে খাঁটি ও পুরু রেশমের এবং উপরের কাপড়ের বর্ণনা দেয়া হয়নি। কারণ যার ভিতরের কাপড় এরূপ উচ্চমানের তার উপরের কাপড় কত উন্নতমানের হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। তারপর পূর্বের জান্নাতদ্বয়ের গুণাবলীর সমাপ্তিতে বলেছিলেনঃ উত্তম কাজের জন্যে উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কি হতে পারে? তাহলে দেখা যায় যে, ঐ জান্নাতবাসীদের গুণাবলীর বর্ণনায় ইহসানের বর্ণনা দিয়েছেন যা মর্যাদার শেষ সীমা। যেমন হযরত জিবরাঈল (আঃ) যুক্ত হাদীসে রয়েছে, তিনি প্রথমে প্রশ্ন করেন ইসলাম সম্পর্কে, তারপর ঈমান সম্পর্কে এবং এরপর ইহসান সম্পর্কে।
সুতরাং বেশ কয়েকটি যুক্তি রয়েছে যেগুলো দ্বারা এটা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, পূর্ববর্তী দু’টি জান্নাতের বড় ফযীলত রয়েছে পরবর্তী দুটি জান্নাতের উপর। পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা যে, তিনি যেন আমাদেরকে ঐ জান্নাতে প্রবিষ্ট করেন যা ঐ জান্নাতদ্বয়ের মধ্যে হবে যেগুলোর গুণাবলী পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আমীন!
‘অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম যিনি মহিমময় ও মহানুভব। তিনি যুল-জালাল বা মহিমান্বিত। অর্থাৎ তিনি এই যোগ্যতা রাখেন যে, তাঁর মহিমাকে মেনে নেয়া হবে এবং তাঁর মহিমা ও গৌরবের প্রতি লক্ষ্য রেখে তার অবাধ্যাচরণ করা হবে না, বরং তার পূর্ণ। আনুগত্য করা হবে। তিনি এই যোগ্যতাও রাখেন যে, তার মর্যাদা রক্ষা করা হবে অর্থাৎ তার ইবাদত করা হবে এবং তার সাথে অন্য কারো ইবাদত করা হবে না। তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে এবং অকৃতজ্ঞ হওয়া চলবে না। তাঁকে স্মরণ করা হবে এবং ভুলে যাওয়া চলবে না। তিনি শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরবের অধিকারী। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আল্লাহ তা'আলাকে মর্যাদা প্রদান কর এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নাও।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য হাদীসে রয়েছেঃ “পাকা চুল বিশিষ্ট মুসলমানকে, ন্যায় বিচারক বাদশাহকে এবং কুরআন পাঠকারীকে, যে কুরআন পাঠকারী ওর মধ্যে সীমালংঘন করে না (যথা হরফের মদ, গুনাহ ইত্যদি সীমার অতিরিক্ত করে না বা মাখরাজ পরিবর্তন করে না ইত্যাদি) এবং সীমা হতে ঘটিয়ে অন্যায় করে না। (অর্থাৎ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে বা অজ্ঞতা বশতঃ ভুল অর্থ করে না), এই লোকদেরকে সম্মান করা, আল্লাহকে সম্মান করার শামিল।"
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ يَا ذَالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ -এর সাথে ঝুলে পড়।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন। জামে তিরমিযীতেও এ হাদীসটি আছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে অরক্ষিত ও গারীব বলেছেন)
হযরত রাবীআহ ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “তোমরা ذُالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ -এর সাথে লটকে যাও।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
জাওহারী (রাঃ) বলেন যে, যখন কেউ কোন কিছুকে শক্ত করে ধরে নেয় তখন الظ শব্দ আরবরা ব্যবহার করে থাকে। এই শব্দটিই এ হাদীসে এসেছে। তাহলে অর্থ হবেঃ অনুনয় বিনয়, আন্তরিকতা, অপারগতা এবং দারিদ্রের ভাব দেখিয়ে সদা-সর্বদা আল্লাহর অঞ্চলের সাথে ঝুলে পড়।
সহীহ মুসলিমে ও সুনানে আরবাতে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামায হতে সালাম ফিরানোর পর শুধু নিম্নের কালেমাগুলো পাঠ করা পর্যন্ত বসে থাকতেনঃ
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনা হতেই শান্তি, হে মহিমময় ও মহানুভব! আপনি কল্যাণময়।”