আল কলম আয়াত ৪৭
اَمْ عِنْدَهُمُ الْغَيْبُ فَهُمْ يَكْتُبُوْنَ ( القلم: ٤٧ )
Am 'indahumul ghaibu fahum yaktuboon (al-Q̈alam ৬৮:৪৭)
English Sahih:
Or have they [knowledge of] the unseen, so they write [it] down? (Al-Qalam [68] : 47)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
নাকি তাদের কাছে গায়বের খবর আছে যা তা তারা লিখে রাখে। (আল কলম [৬৮] : ৪৭)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তাদের কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে, তারা লিখে রাখে? [১]
[১] অর্থাৎ, তারা অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত নাকি? 'লাওহে মাহফূয' তাদের আয়ত্তে নাকি যে, সেখান থেকে যে কথা তারা চায়, তা সংগ্রহ করে নেয় (লিখে নেয়)? এই জন্য তারা তোমার আনুগত্য করার এবং তোমার উপর ঈমান আনার কোন প্রয়োজন মনে করে না। এর জওয়াব হল, না, এমন কক্ষনো নয়।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
নাকি তাদের কাছে গায়েবের জ্ঞান আছে যে, তারা তা লিখে রাখে !
3 Tafsir Bayaan Foundation
অথবা তাদের কাছে কি ‘গায়েব’ (লওহে মাহফুয) আছে যে, তারা লিখে রাখছে।
4 Muhiuddin Khan
না তাদের কাছে গায়বের খবর আছে? অতঃপর তারা তা লিপিবদ্ধ করে।
5 Zohurul Hoque
অথবা অদৃশ্য কি তাদের কাছে রয়েছে, যার ফলে তারা লিখে রাখে?
6 Mufti Taqi Usmani
না কি তাদের কাছে গায়েবের জ্ঞান আছে, যা তারা লিখে রাখছে।
7 Mujibur Rahman
তাদের কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে, তারা তা লিখে রাখে?
8 Tafsir Fathul Mazid
৪২-৪৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
কিয়ামতের দিন যখন চরম সংকটপূর্ণ, ভয়াবহ ও কম্পনযুক্ত অবস্থা সৃষ্টি হবে এবং সকলে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে তখন আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আসবেন এবং নিজের পদনালী খুলে দেবেন-যে পদনালী কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। তখন মানুষকে সিজদা দিতে বলা হবে। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পদনালী খুলে দেবেন ফলে মু’মিনরা তাঁকে সিজদা করবে, আর যারা দুনিয়াতে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং প্রশংসা পাওয়ার জন্য সিজদা করত তারা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। যখন সিজদা করতে যাবে তখন পিঠ তক্তার মত হয়ে যাবে। ফলে তারা সিজদা দিতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯১৯)
(خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ)
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন অপমানের কারণে দৃষ্টি অবনত করে রাখবে। কেননা দুনিয়াতে তাদেরকে সালাতের দিকে আহ্বান করা হয়েছিল কিন্তু তারা সেই ডাকে সাড়া দেয়নি, অথচ তারা সুস্থ সবল ছিল, গ্রহণযোগ্য কোন ওজর ছিল না। তাই আখিরাতে এর শাস্তিস্বরূপ তারা সিজদা দিতে পারবে না।
(فَذَرْنِيْ وَمَنْ يُّكَذِّبُ)
অর্থাৎ যারা কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতঃ এড়িয়ে চলে তাদের ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দাও, আমিই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকে এমনভাবে অবকাশ দেন যে, এরা বুঝতেও পারে না।
(أَمْ تَسْأَلُهُمْ أَجْرًا)
অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহ্বান কর অথচ তাদের নিকট কোন প্রতিদান চাওনা, তারপরেও তারা তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। এটা তাদের মূর্খতার পরিচয়।
সুতরাং দুনিয়াতে যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য সালাত আদায় করে না তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার জন্য সিজদা দিতে পারবে না। তাই আমাদের নিয়মিত সালাত আদায় করা উচিত এবং তা করা উচিত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলার পদনালী রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম। কিন্তু কেমন তা তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।
২. কিয়ামত দিবসে অপরাধীরা অপমানে দৃষ্টি অবনত করে রাখবে।
৩. যারা দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলার জন্য সিজদা করেনি তারা আখিরাতে সিজদা করতে পারবে না।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে পার্থিব সম্পদ দ্বারা অবকাশ প্রদান করেন।
9 Fozlur Rahman
নাকি তাদের কাছে অদৃশ্যের জ্ঞান আছে, যা তারা লিখে রাখে?
10 Mokhtasar Bangla
৪৭. না কি তাদের নিকট গায়েবের জ্ঞান রয়েছে। ফলে তারা নিজেদের পছন্দ মতো এমন কিছু প্রমাণাদি লিখে যদ্বারা তারা আপনার সাথে বিতর্ক করে?!
11 Tafsir Ibn Kathir
৪২-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর
উপরে যেহেতু বর্ণিত হয়েছিল যে, আল্লাহভীরুদের জন্যে নিয়ামত বিশিষ্ট জান্নাতসমূহ রয়েছে, সেই হেতু এখানে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, এই নিয়ামতরাশি তারা ঐ দিন লাভ করবে যেই দিন পদনালী খুলে দেয়া হবে, অর্থাৎ কিয়ামতের দিন, যেই দিন হবে চরম সংকটপূর্ণ, বড়ই ভয়াবহ, কম্পনযুক্ত এবং বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ প্রকাশিত হওয়ার দিন। এখানে সহীহ বুখারীতে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “আমাদের প্রতিপালক তার পদনালী খুলে দিবেন। তখন প্রত্যেক মুমিন নর ও নারী সিজদায় পতিত হবে। হ্যাঁ, তবে দুনিয়ায় যারা লোক দেখানোর জন্যে সিজদা করতো সেও সিজদা করতে চাইবে। কিন্তু তার কোমর তক্তার মত হয়ে যাবে। অর্থাৎ সে সিজদা করতে পারবে না। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম উভয় গ্রন্থেই রয়েছে এবং অন্যান্য হাদীস গ্রন্থসমূহেও আছে যা কয়েকটি সনদে শব্দের কিছু পরিবর্তনসহ বর্ণিত হয়েছে। এটি সুদীর্ঘ ও মাশহুর হাদীস)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই ‘কাশকে সাক’ অর্থাৎ পদনালী খুলে যাওয়ার দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য যে, ঐ দিন বিপদ, কষ্ট ও কাঠিন্যের দিন হবে, যেটাকে এখানে প্রচলিত অর্থে বলা হয়েছে। (এটি ইমাম ইবন জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছে)
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাকে অন্য সনদে সন্দেহের সাথে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) অথবা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ-এর তাফসীরে এক বিরাট বিষয় বর্ণিত হয়েছে। যেমন কবি বলেনঃ شَالَتِ الْحَرْبُ عَنْ سَاقٍ অর্থাৎ “যুদ্ধ তার পদনালী খুলে দিয়েছে।” এখানেও যুদ্ধের বিরাটত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতেও এটাই বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন এই সময়টা হবে অত্যন্ত কঠিন। তিনি আরো বলেন যে, এ বিষয়টি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এও বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ যে সময় বিষয় খুলে যাবে এবং আমলসমূহ প্রকাশিত হয়ে পড়বে। আর এটা খুলে যাওয়া হলো আখিরাত এসে পড়া এবং কর্ম প্রকাশিত হওয়া উদ্দেশ্য। এ রিওয়াইয়াতগুলো ইমাম ইবনে জারীর বর্ণনা করেছেন। এরপর এ হাদীসটি রয়েছে যে, এর তাফসীরে নবী (সঃ) বলেছেনঃ “এর দ্বারা খুব বড় নূর বা জ্যোতিকে বুঝানো হয়েছে। ওর সামনে মানুষ সিজদায় পড়ে যাবে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আবি ইয়ালায়ও বর্ণিত হয়েছে। এর ইসনাদে অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন)
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তাদের দৃষ্টি উপরের দিকে উঠবে না, তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে। কেননা, তারা দুনিয়ায় বড়ই উদ্ধত ও অহংকারী ছিল। সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় যখন তাদেরকে সিজদার জন্যে আহ্বান করা হতো তখন তারা সিজদা করা হতে বিরত থাকতো, যার শাস্তি এই হলো যে, আজ তারা সিজদা করতে চাচ্ছে, কিন্তু করতে পারছে না। পক্ষান্তরে, পূর্বে সিজদা করতে পারতো কিন্তু করতো না। আল্লাহর দ্যুতি বা তাজাল্লী দেখে সমস্ত মু'মিন সিজদায় পতিত হয়ে যাবে। কিন্তু কাফিররা ও মুনাফিকরা সিজদা করতে পারবে না। তাদের কোমর তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে। সুতরাং ঝুঁকতেই পারবে না, বরং পিঠের ভরে চিৎ হয়ে পড়ে যাবে। দুনিয়াতেও তাদের অবস্থা মু'মিনদের বিপরীত, পরকালেও তাদের অবস্থা হবে মুমিনদের বিপরীত।
এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমাকে এবং আমার এই হাদীস অর্থাৎ কুরআনকে অবিশ্বাসকারীদের ছেড়ে দাও। এতে বড়ই ভীতি প্রদর্শন ও ধমক রয়েছে। অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! তুমি থামো, আমি এদেরকে দেখে নিচ্ছি। তুমি দেখতে পাবে, কিভাবে আমি এদেরকে ধীর ধীরে পাকড়াও করবো। এরা ঔদ্ধত্য ও অহংকারে বেড়ে চলবে, আমার অবকাশ প্রদানের রহস্য এরা উপলব্ধি করতে পারবে না, হঠাৎ করে আমি এদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করবো। আমি এদেরকে বাড়াতে থাকবো। এরা মদমত্ত হয়ে যাবে। এরা এটাকে সম্মান মনে করবে, কিন্তু মূলে এটা হবে অপমান ও লাঞ্ছনা। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন
اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهٖ مِنْ مَّالٍ وَّ بَنِیْنَ ـ نُسَارِعُ لَهُمْ فِی الْخَیْرٰتِ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ
অর্থাৎ “আমি যে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি বৃদ্ধি করছি, এর মাধ্যমে আমি তাদের কল্যাণ সাধন করছি এটাই কি তারা ধারণা করছে? (এটা কখনো নয়) বরং তারা বুঝে না।" (২৩:৫৫-৫৬) আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেনঃ
فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِهٖ فَتَحْنَا عَلَیْهِمْ اَبْوَابَ كُلِّ شَیْءٍ حَتّٰۤى اِذَا فَرِحُوْا بِمَاۤ اُوْتُوْۤا اَخَذْنٰهُمْ بَغْتَةً فَاِذَا هُمْ مُّبْلِسُوْنَ
অর্থাৎ “যখন তারা আমার ওয়ায ও নসীহত ভুলে বসে তখন আমি তাদের জন্যে সব জিনিসের দরজা উন্মুক্ত করে দিই, অতঃপর যখন তারা এজন্যে ঔদ্ধত্য ও অহংকার প্রকাশ করতে থাকে তখন অকস্মাৎ আমি তাদেরকে পাকড়াও করি, ফলে তাদের সব আশা আকাঙ্ক্ষা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।” (৬:৪৪) আর এখানে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি, আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা অত্যাচারীদেরকে অবকাশ দেন, অতঃপর যখন ধরেন তখন আর ছেড়ে দেন না।" তারপর তিনি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেনঃ
وَ كَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الْقُرٰى وَ هِیَ ظَالِمَةٌ اِنَّ اَخْذَهٗۤ اَلِیْمٌ شَدِیْدٌ
অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এরূপই। যখন তিনি কোন অত্যাচারী জনপদকে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও কঠিন যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে।” (১১:১০২)
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তো তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাচ্ছ না যা তাদের উপর খুবই ভারী বোধ হচ্ছে? যার ভার বহন করতে তারা একেবারে ঝুঁকে পড়ছে? তাদের কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে, তারা তা লিখে রাখে। এ দু’টি বাক্যের তাফসীর সূরা তুরে বর্ণিত হয়েছে। ভাবার্থ হচ্ছেঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তো তাদেরকে মহামহিমান্বিত আল্লাহর পথে আহ্বান করছো বিনা পারিশ্রমিকে! তাদের কাছে তো তুমি এর বিনিময়ে কোন ধন-সম্পদ যাচঞা করছে না। পুণ্য লাভ করা ছাড়া তোমার তো অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই! তথাপিও এ লোকগুলো তোমাকে অবিশ্বাস করতে রয়েছে! এর একমাত্র কারণ হচ্ছে তাদের অজ্ঞতা ও ঔদ্ধত্যপনা।