আল-আনফাল আয়াত ৪
اُولٰۤىِٕكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاۗ لَهُمْ دَرَجٰتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌۚ ( الأنفال: ٤ )
Ulaaa'ika humul mu'minoona haqqaa; lahum darajaatun 'inda Rabbihim wa magh firatunw wa rizqun kareem (al-ʾAnfāl ৮:৪)
English Sahih:
Those are the believers, truly. For them are degrees [of high position] with their Lord and forgiveness and noble provision. (Al-Anfal [8] : 4)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
এসব লোকেরাই হল প্রকৃত মু’মিন। এদের জন্য এদের প্রতিপালকের নিকট আছে নানান মর্যাদা, ক্ষমা আর সম্মানজনক জীবিকা। (আল-আনফাল [৮] : ৪)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তারাই প্রকৃত বিশ্বাসী। তাদেরই জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তারাই প্রকৃত মুমিন [১]। তাদের রব এর কাছে তাদেরই জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদাসমূহ,ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা [২]।
[১] মুমিনের এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার পর বলা হয়েছে যে, (اُولٰىِٕكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا) অর্থাৎ এমনসব লোকই হলো সত্যিকার মুমিন যাদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ। অন্যথায় যাদের মধ্যে এসমস্ত বৈশিষ্ট অবর্তমান, তারা মুখে কালেমা পড়লেও বললেও তাদের অন্তরে থাকে না তাওহীদের রং, আর থাকে না রাসূলের আনুগত্য। কোন এক ব্যক্তি হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন যে- হে আবু সাঈদ। আপনি কি মুমিন? তখন তিনি বললেন; ভাই, ঈমান দুই প্রকার। তোমার প্রশ্নের উদ্দেশ্য যদি এই হয়ে থাকে যে, আমি আল্লাহ, তার ফিরিশতাগণ, কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের উপর এবং জান্নাত-জাহান্নাম, কেয়ামত ও হিসাব-কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখি কি না? তাহলে উত্তর এই যে, নিশ্চয়ই আমি মুমিন। পক্ষান্তরে সূরা আল-আনফালের আয়াতে যে মুমিনে কামেল বা পরিপূর্ণ মুমিনের কথা বলা হয়েছে, তোমার প্রশ্নের উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে, আমি তেমন মুমিন কি না? তাহলে আমি তা কিছুই জানি না যে, আমি তার অন্তর্ভুক্ত কি না। [বাগভী; কুরতুবী]
[২] এখানে মুমিনদের জন্য তিনটি বিষয়ের ওয়াদা করা হয়েছে।[১] সুউচ্চ মর্যাদা, [২] মাগফেরাত বা ক্ষমা এবং [৩] সম্মানজনক রিযক।
3 Tafsir Bayaan Foundation
তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্ক।
4 Muhiuddin Khan
তারাই হল সত্যিকার ঈমানদার! তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রুযী।
5 Zohurul Hoque
তারা নিজেরাই হচ্ছে সত্যিকারের মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর কাছে মর্যাদার স্তরসমূহ, আর পরিত্রাণ ও সম্মানজনক জীবিকা।
6 Mufti Taqi Usmani
এরাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযক।
7 Mujibur Rahman
এরাই সত্যিকারের ঈমানদার, এদের জন্য রয়েছে তাদের রবের সন্নিধানে উচ্চ পদসমূহ, আরও রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
8 Tafsir Fathul Mazid
২-৪ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে প্রকৃত মু’মিনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তা‘য়ালা প্রকৃত মু’মিনের পরিচয় তুলে ধরতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন:
১. মু’মিনদের সামনে যখন আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করা হয় তখন তাদের অন্তর আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে কেঁপে উঠে। অর্থাৎ তাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার মহত্ব, বড়ত্ব ও আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির কথা স্মরণ হয় ফলে শাস্তির ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। এটা হল তাদের মজবুত ঈমানের পরিচয়। ফলে আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে তাঁর আদেশগুলো পালন করে এবং নিষেধগুলো বর্জন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِیْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْٓا اَنْفُسَھُمْ ذَکَرُوا اللہَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِھِمْ)
‘এবং যখন তারা কোন অশ্লীল কার্য করে কিংবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে অপরাধসমূহের ব্যাপারে ক্ষমা প্রার্থনা করে’ (সূরা আলি-ইমরান ৩:১৩৫) এ জন্য ইমাম সুফইয়ান সাওরী (রহঃ) বলেন, আমি এ আয়াতের তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী সুদ্দী (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি: অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির অন্তর ভয়ে কম্পিত হয়, যে কারো প্রতি জুলুম করতে চায় বা কোন অবাধ্য কাজ করার ইচ্ছা করে, তখন তাকে বলা হয় আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার অন্তর আল্লাহর শাস্তির ভয়ে কেঁপে উঠে। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
২. যখন আল্লাহ তা‘আলার কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ওপর তারা ভরসা করে ।
৩. তারা সালাত কায়েম করে এবং
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সম্পদ থেকে তাঁর পথে ব্যয় করে।
এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মু’মিনদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক। কেউ কেউ বলেছেন উল্লিখিত আয়াতগুলোতে মু’মিনদের তিন রকমের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ রয়েছে, তাই তিন প্রকার পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।
(زَادَتْهُمْ إِيْمَانًا)
‘তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে’ অর্থাৎ মু’মিন সৎ আমল করলে তার ঈমান বৃদ্ধি পায় আর অবাধ্যমূলক কাজে জড়িত হলে ঈমান কমে যায়। এ ব্যাপারে উক্ত আয়াত ছাড়াও অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(هُوَ الَّذِيْ أَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ فِيْ قُلُوْبِ الْمُؤْمِنِيْنَ لِيَزْدَادُوْآ إِيْمَانًا مَّعَ إِيْمَانِهِمْ)
“তিনিই সেই সত্তা, যিনি মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন, যাতে তারা তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বাড়িয়ে নেয়।” (সূরা ফাতহ ৪৮:৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(لِيَسْتَيْقِنَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتٰبَ وَيَزْدَادَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ إِيْمَانًا وَّلَا يَرْتَابَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتٰبَ وَالْمُؤْمِنُوْنَ)
“যাতে আহলে কিতাবের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে, ঈমানদারদের ঈমান বর্ধিত হয় আর আহলে কিতাব ও মু’মিনগণ যেন সন্দেহ পোষণ না করে।”(সূরা মুদ্দাসসির ৭৪:৩১)
অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে সৎ আমল করলে ঈমান বৃদ্ধি পায় ও অসৎ আমল করলে হ্রাস পায়। অতএব ঈমান বৃদ্ধি হ্রাস ও পায় এ বিশ্বাস রাখতে হবে।
এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদাহ। সকল ইমাম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির এ বিষয়ে একমত কেবল ইমাম আবূ হানিফাহ ছাড়া। এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী ইজমা বর্ণনা করেছেন।
সুতরাং প্রকৃত মু’মিন হতে হলে অবশ্যই উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে। শুধু মুখে দাবী করলে হবে না।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রকৃত ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: তারা সালাত কায়েম করে এবং সম্পদের যাকাত প্রদান করে।
২. সৎ আমল করলে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং অবাধ্য ও নাফরমান কাজ করলে ঈমান হ্রাস পায়।
২. প্রকৃত ঈমানদারদের পরিণাম অত্যন্ত শুভ হবে।
9 Fozlur Rahman
তারাই হল সত্যিকার মুমিন। তাদের জন্য তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
10 Mokhtasar Bangla
৪. এ বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারীরা সত্যিকারার্থেই মু’মিন। কারণ, তাদের মাঝে ঈমান ও ইসলামের প্রকাশ্য গুণাবলীর সমন্বয় ঘটেছে। তাদের প্রতিদান হবে নিজেদের প্রতিপালকের নিকট সুউচ্চ অট্টালিকা, গুনাহের ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক। যা আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য নিয়ামত স্বরূপ তৈরি করে রেখেছেন।
11 Tafsir Ibn Kathir
২-৪ নং আয়াতের তাফসীর:
মুনাফিকরা যখন নামায আদায় করে তখন কুরআন কারীমের আয়াতসমূহ তাদের অন্তরে মোটেই ক্রিয়াশীল হয় না । না তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, না আল্লাহর উপর ভরসা করে। যখন তারা বাড়ীতে অবস্থান করে তখন নামায আদায় করে না। আর তারা যাকাতও দেয় না। আল্লাহ পাক এখানে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মুমিন কখনও এরূপ হয় না। এখানে মুমিনদের গুণাবলী এভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যখন তারা কুরআন পাঠ করে তখন ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। যখন তাদের সামনে কুরআনের আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা ওগুলো বিশ্বাস করে বলে তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পায় এবং তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারও উপর ভরসা করে না। মুমিনের প্রকৃত পরিচয় এই যে, কোন ব্যাপারে মধ্যভাগে আল্লাহর নাম এসে গেলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। তারা তাঁর নির্দেশ পালন করে থাকে এবং তাঁর নিষেধকৃত কাজ থেকে বিরত থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা এমন লোক যে, যখন তারা এমন কাজ করে বসে যাতে অন্যায় হয় অথবা নিজেদের উপর অত্যাচার করে বসে তখন আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর নিজেদের পাপরাশির জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে, আর আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে পাপসমূহ ক্ষমা করবে? আর তারা নিজেদের (মন্দ কর্মে) হঠকারিতা করে না এবং তারা অবগত।” অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আল্লাহর সামনে হাযির হওয়ার যাদের ভয় রয়েছে এবং যারা কুপ্রবৃত্তিকে অন্যায় ও অবৈধভাবে পূর্ণ করা থেকে বিরত থাকে, প্রকৃতপক্ষে তারাই জান্নাতের হকদার।”
সুদ্দী (রঃ) মুমিন ব্যক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ “সে ঐ ব্যক্তি যে পাপ কার্যের ইচ্ছা করে, কিন্তু যখন তাকে বলা হয়- ‘আল্লাহকে ভয় কর তখন তার অন্তর কেঁপে ওঠে।”
উম্মু দারদা (রাঃ) বলেন, যে অন্তর আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে শুরু করে এবং দেহে এমন এক জ্বালার সৃষ্টি হয় যে, লোম খাড়া হয়ে যায়। যখন এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যাবে তখন বান্দার উচিত যে, সে যেন সেই সময় স্বীয় মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্যে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে। কেননা, ঐ সময় দুআ কবূল হয়ে থাকে।
ইরশাদ হচ্ছে- কুরআন শুনে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। যেমন তিনি বলেনঃ যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন কেউ বলে, এই আয়াত দ্বারা তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে কথা এই যে, ঐ ব্যক্তির ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় যে পূর্ব থেকেই মুমিন। আর জান্নাতের সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্যেই। ইমাম বুখারী (রঃ) এবং অন্যান্য ইমামগণ এই প্রকারের আয়াতসমূহ দ্বারাই এই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, ঈমানের মধ্যে হ্রাস বৃদ্ধি হতে পারে। জমহুর ইমামদের মাযহাব এটাই। এমন কি বলা হয়েছে যে, বহু ইমামের এর উপরই ইজমা রয়েছে। যেমন ইমাম শাফিঈ (রঃ), ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) এবং ইমাম আবু উবাইদ (রঃ)। আমরা এটা শরহে বুখারীতে বর্ণনা করেছি।
وَعَلٰى رَبِّهِمْ یَتَوَكَّلُوْنَ অর্থাৎ তারা তিনি ছাড়া আর কারো কাছে কোন আশাই করে না, আশ্রয়দাতা একমাত্র তাঁকেই মনে করে থাকে। কিছু চাইলে তার কাছেই চেয়ে থাকে। প্রতিটি কাজে তার দিকেই ঝুঁকে পড়ে। তারা জানে যে, তিনি (আল্লাহ) যা চাইবেন তাই হবে এবং যা চাইবেন না তা হবে না। তিনি একক। তাঁর কোন অংশীদার নেই। সব কিছুরই মালিক একমাত্র তিনিই। তাঁর হুকুমের পর আর কারও হুকুম চলতে পারে না। তিনি সত্বর হিসাব গ্রহণকারী। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, আল্লাহর উপর ভরসা হচ্ছে ঈমানের বন্ধন।
الَّذِیْنَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ মুমিনদের বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করার পর তাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ পাক সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা নামায পড়ে এবং তাদের প্রদত্ত মাল থেকে গরীব দুঃখীদেরকে দান করে থাকে। এ কাজ দু’টি এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, সমস্ত মঙ্গলজনক কাজ এ দু'টি কাজের অন্তর্ভুক্ত। নামায প্রতিষ্ঠা হচ্ছে আল্লাহর হকসমূহের মধ্যে একটি হক। ইকামাতে সালাতের অর্থ হচ্ছে নামাযকে সময়মত আদায় করা, অযু করার সময় ভালরূপে হাত মুখ ধৌত করা, রুকু-সিজদায় তাড়াহুড়া না করা এবং আদব সহকারে কুরআন মাজীদ পাঠ করা এবং নবী (সঃ)-এর উপর তাশাহ্হুদ ও দরূদ পাঠ করা। এটাই ইকামাতে সালাত এবং یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে। আর یُنْفِقُوْنَ -এর ভাবার্থ এই যে, যা কিছু আল্লাহ তা'আলা দিয়েছেন তা যদি যাকাতের নেসাবে পৌছে যায় তবে যাকাত প্রদান করবে এবং যা কিছু রয়েছে তা থেকেই মানুষকে দান করতে থাকবে। বান্দাদের ওয়াজিব ও মুসতাহাব আর্থিক হক আদায় করবে। আল্লাহর প্রদত্ত সম্পদ হতে সকল বান্দাকে সাহায্য করতে থাকবে। কেননা, সমস্ত লোকই আল্লাহর পরিবার ও সন্তান সন্ততি। আল্লাহ তা'আলার নিকট ঐ বান্দা সবচেয়ে বেশী স্বীকৃত যে তার সৃষ্টজীবের বেশী উপকার সাধন করে থাকে। তোমাদের মালধন আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যেন আমানত স্বরূপ। অতিসত্বরই তোমাদের মাল তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে। সুতরাং ওর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া উচিত নয়।
اُولٰٓىٕكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا এসব গুণে যারা গুণান্বিত তারাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিন। হারিস ইবনে মালিক (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আগমন করলে তিনি তাকে বলেনঃ “হে হারিস (রাঃ)! সকাল বেলা তোমার কিভাবে কেটেছে?” হারিস (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “একজন প্রকৃত মুমিন হিসেবে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “খুব চিন্তা করে কথা বল। প্রত্যেক জিনিসেরই একটা হাকীকত বা মূলতত্ত্ব রয়েছে। বল তো, তোমার ঈমানের হাকীকত কি?” হারিস (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “আমি দুনিয়ার মহব্বত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, রাত্রে জেগে জেগে ইবাদত করি, দিনে রোযার কারণে পিপাসার্ত থাকি এবং নিজেকে এরূপ পাই যে, যেন আমার সামনে আল্লাহর আরশ খোলা রয়েছে, আমি যেন জান্নাতবাসীদেরকে পরস্পর মিলিত হতে দেখছি এবং জাহান্নামবাসীদেরকে দেখছি যে, তারা কষ্ট ও বিপদে পতিত হয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যা, হে হারিস (রাঃ)! তাহলে তুমি ঈমানের হাকীকতে পৌছে গেছে। এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার চেষ্টা কর।” একথা তিনি তিনবার বললেন।
কুরআন কারীম আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং حَقًّا শব্দটি সাহিত্যিক মর্যাদা রাখে। যেমন বলা হয়ে থাকে فُلَانٌ سَيِّدٌ حَقًّا অর্থাৎ ‘অমুক ব্যক্তি প্রকৃত সরদার’, যদিও কওমের মধ্যে অন্যান্য সরদারও রয়েছে। আরও বলা হয়- ‘অমুক প্রকৃত ব্যবসিক’, যদিও অন্যান্য ব্যবসিকও রয়েছে। অমুক ব্যক্তি প্রকৃত কবি', যদিও আরও বহু কবি রয়েছে।
لَهُمْ دَرَجٰتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ অর্থাৎ জান্নাতে তারা বড় বড় পদ লাভ করবে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহর কাছে তাদের জন্যে বড় পদমর্যাদা রয়েছে এবং তারা যা কিছু করছে আল্লাহ তা সম্যক অবগত আছেন। আল্লাহ তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাদের পুণ্যগুলো কবূল করবেন।” জান্নাতবাসীরা একে অপরের অপেক্ষা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে। কিন্তু উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরা নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন লোকদেরকে দেখে অহংকার করবে না এবং নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা উচ্চ শ্রেণীর লোকদেরকে দেখে হিংসাও করবে না।
সহীহ মুসলিম ও সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ “উপরের লোকদেরকে নীচের লোকেরা এরূপভাবে দেখবে যেমন তোমরা আকাশ প্রান্তে তারকারাজি দেখে থাক।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কি নবীদের মযিল, যা অন্য কেউ লাভ করবে না?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “কেন লাভ করবে না? আল্লাহর শপথ! যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং রাসলদেরকে সত্য জেনেছে তারাও এর অধিকারী হবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতবাসীরা উপরের জান্নাতবাসীদেরকে এরূপ দেখবে যেমন আকাশের উপর তারকারাজি দেখা যায়। আবু বকর (রাঃ) এবং উমার (রাঃ) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। তারাও এই মর্যাদা লাভ করবে।”