আত-তাতফীফ আয়াত ২৮
عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُوْنَۗ ( المطففين: ٢٨ )
'Ainaiy yashrabu bihal muqarraboon (al-Muṭaffifīn ৮৩:২৮)
English Sahih:
A spring from which those near [to Allah] drink. (Al-Mutaffifin [83] : 28)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
ওটা একটা ঝর্ণা, যাত্থেকে (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্তরা পান করবে। (আত-তাতফীফ [৮৩] : ২৮)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
এটা একটি প্রস্রবণ, যা হতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করবে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
এটা এক প্রস্রবণ, যা থেকে সান্নিধ্যপ্রাপ্তরা পান করে।
3 Tafsir Bayaan Foundation
তা এক প্রস্রবণ, যা থেকে নৈকট্যপ্রাপ্তরা পান করবে।
4 Muhiuddin Khan
এটা একটা ঝরণা, যার পানি পান করবে নৈকট্যশীলগণ।
5 Zohurul Hoque
একটি প্রস্রবণ যা থেকে পান করে নৈকট্যপ্রাপ্তরা।
6 Mufti Taqi Usmani
তা একটি প্রস্রবণ, যা থেকে আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত বান্দাগণ পানি পান করে।
7 Mujibur Rahman
এটি একটি প্রস্রবণ, যা হতে নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করে।
8 Tafsir Fathul Mazid
১৮-২৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে কাফির, মুনাফিক ও পাপিষ্ঠ লোকদের খারাপ পরিণতির কথা আলোচনার পর আল্লাহ তা‘আলা এখানে সৎলোকদের আলোচনা নিয়ে এসেছেন এবং তারা যেসব নেয়ামতে থাকবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
عِلِّيِّيْنَ শব্দটি এসেছে علو থেকে, যার অর্থ উচ্চ। এটি হলো سِجِّيْنٌ এর বিপরীত। হেলাল বিন এসাফ (রাঃ) বলেন : ইবনু আব্বাস (রাঃ) কাব (রাঃ)-কে سِجِّيْنٌ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি তখন উপস্থিত, জবাবে তিনি বললেন : سِجِّيْنٌ হলো সাত জমিনের নীচে অবস্থিত। সেখানে কাফিরদের আত্মা রয়েছে। আর عِلِّيِّيْنَ হলো সাত আকাশের ওপরে, সেখানে মু’মিনদের আত্মা রয়েছে। (ইবনু কাসীর) মূলত عِلِّيِّيْنَ এর ব্যাখ্যা পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ عِلِّيِّيْنَ মু’মিনদের আমলনামাকে বলা হয়। তবে কেউ বলেছেন এটা عِلِّيِّيْنَ এর ব্যাখ্যা নয়, বরং عِلِّيِّيْنَ মু’মিনদের দফতর, যেখানে তাদের নেক আমলসমূহ লিপিবদ্ধ থাকে (কুরতুবী)। উচ্চমর্যাদার কারণে এ দফতরকে عِلِّيِّيْنَ বলা হয়।
(يَّشْهَدُهُ الْمُقَرَّبُوْنَ)
“(আল্লাহর) সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ফেরেশ্তারা তা প্রত্যক্ষ করবে।” এখানে ফেরেশতা ও বান্দা উভয় অর্থ নেয়া যায়। অর্থাৎ ফেরেশতারা, নাবীদের আত্মা, সিদ্দিক ও শহীদরা তাদের আমলনামা দেখতে পাবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা ঊর্ধ্ব জগতে আলোচনা করেন। (তাফসীর সা‘দী) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনÑ প্রত্যেক আকাশের ফেরেশতারা তা প্রত্যক্ষ করে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : এ সকল সৎ লোকরা নেয়ামত তথা জান্নাতে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য যা তৈরি করে রেখেছেন জান্নাতের পালং-এ বসে বসে তা প্রত্যক্ষ করবে এবং আল্লাহ তা‘আলার চেহারার দিকেও তাকিয়ে দেখবে। (তাফসীর সা‘দী)
(نَضْرَةَ النَّعِيْمِ)
অর্থাৎ তাদের চেহারায় নেয়ামতের উজ্জ্বলতা দেখা যাবে।
رَّحِيْقٍ হলো জান্নাতীদেরকে যে পানীয় প্রদান করা হবে তার মধ্যে সর্বোত্তম ও সুস্বাদু। (তাফসীর সা‘দী)
مَّخْتُوْمٍ “মোহরাংকিত” বলে তার সুস্বাদ আরো সুস্পষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এমন সর্বোত্তম ও সুস্বাদু পানীয় সৎলোকদের জন্য সেখানে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে যা কস্তুরী দ্বারা মোহারাংকিত কারো জন্য তা উন্মোচন করা হয়নি। নাবী (সাঃ) বলেন : যে মু’মিন ব্যক্তি কোন পিপাসিত মু’মিনকে দুনিয়াতে এক ঢোক পানি পান করাবে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে রাহীকুল মাখতুমের বা মোহরাংকিত (ছিপিআঁটা বোতলের) সুস্বাদু পানি পান করাবেন। যে ব্যক্তি কোন ক্ষুধার্ত মু’মিনকে খাবার খাওয়াবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোন বিবস্ত্র মু’মিনকে বস্ত্র পরিধান করাবে তাকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরিধান করাবেন। (আহমাদ, তিরমিযী হা. ২৪৪৯, হাদীসটি দুর্বল।)
(فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُوْنَ)
অতএব এরূপ নেয়ামত পাওয়ার জন্য যেন সৎ আমলের মাধ্যমে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لِمِثْلِ هٰذَا فَلْيَعْمَلِ الْعٰمِلُوْنَ)
“এরূপ সফলতার জন্যই কর্মীদের কাজ করা উচিত।” (সূরা সাফফাত ৩৭: ৬১)
(مِزَاجُه۫ مِنْ تَسْنِيْمٍ)
অর্থাৎ মোহরাংকিত শরাবটি তাসনীমের। তাসনীম হলো জান্নাতীদের জন্য তৈরি করা পানীয়র মধ্যে সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ একটি ঝরনা যা থেকে নৈকট্যপাপ্ত মুুমিনরা পান করবে।
সুতরাং এমন নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত লাভের জন্য প্রতিটি মু’মিনকে ঈমান ও সৎআমলের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করা উচিত। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সে তাওফীক দান করুন, আমীন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইল্লিয়্যীন এর তাফসীর জানলাম।
২. মু’মিনরা আখিরাতে যে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে থাকবে তার বিবরণ জানলাম।
৩. নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত পাওয়ার জন্য সকলের সৎ আমলের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করা উচিত।
9 Fozlur Rahman
এটা (জান্নাতের) একটি ঝরনা, যেখান থেকে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দারা পান করবে।
10 Mokhtasar Bangla
২৮. এটি হলো জান্নাতের উঁচু স্তরের একটি ঝর্নাধারা। যা থেকে নৈকট্যশীল বান্দারা স্বচ্ছ ও খাঁটি পানীয় পান করবে এবং সকল মুমিনও অন্য উপাদানের সাথে মিলিয়ে তা পান করবে।
11 Tafsir Ibn Kathir
১৮-২৮ নং আয়াতের তাফসীর
পাপীদের পরিণাম অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থার বর্ণনা দেয়ার পর এবার পূণ্যবানদের সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ পূণ্যবানদের ঠিকানা হবে ইল্লিয়্যীন যা সিজ্জীনের সম্পূর্ণ বিপরীত। হযরত কাবকে (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই সিজ্জীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, উত্তরে হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন যে, সপ্তম জমীনকে সিজ্জীন বলা হয়। সেখানে কাফিরদের রূহ অবস্থান করবে। ইল্লিয়্যীন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ সপ্তম আসমানকে ইল্লিয়্যীন বলা হয় সেখানে মোমিনদের রুহ অবস্থান করবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এর অর্থ হলো জান্নাত। হযরত আওফী (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, মু'মিনদের আমলসমূহ আল্লাহ তা'আলার কাছে আকাশে রয়েছে। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেনঃ এটা আরশের ডান পায়া।
অন্য লোকেরা বলেনঃ এটা সিদরাতুল মুনতাহার কাছে রয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, এ শব্দটি عُلُوٌّ শব্দ হতে গৃহীত হয়েছে। عُلُوٌّ শব্দের অর্থ হলো উঁচু। যে জিনিস যত উঁচু এবং বুলন্দ হবে তার প্রশস্ততা এবং প্রসারতাও ততো বেশী হবে। এ কারণেই তার বৈশিষ্ট্য এবং মর্যাদা বুঝানোর জন্যে বলা হয়েছেঃ তোমরা এর বিশেষত্ব সম্পর্কে অবগত নও কি? তারপর বিশেষ জোর দিয়ে বলা হয়েছেঃ মুমিনরা যে ইল্লিয়্যীনে থাকবে এটা নিশ্চিত ব্যাপার, কিতাবে তা লিখিত হয়েছে। ইল্লিয়্যীনের কাছে আকাশের সকল বিশিষ্ট ফেরেশতা গমন করে থাকেন। তারপর বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন এই পুণ্যবান লোকেরা চিরস্থায়ী নিয়ামত রয়েছে এমন বাগানসমূহে অবস্থান করবে এবং আল্লাহ তা'আলার রহমতসমূহ তাদের। উপর বৃষ্টিধারার মত বর্ষিত হবে। মুমিন বান্দারা পালংকে বসে থাকবে এবং নিজেদের সাম্রাজ্য ধনমাল, মর্যাদা ও সম্মান প্রত্যক্ষ করবে। তাদের প্রতি প্রদত্ত আল্লাহ তা'আলার এসব নিয়ামত অফুরন্ত। কখনো তাতে কিছুমাত্র কমতী হবে তারা নিজেদের আরামালয়ে সম্মানিত উচ্চাসনে বসে আল্লাহ তাআলার দীদার লাভ করে ধন্য হবে। এটা কাফির মুশরিকদের সাথে কৃত আচরণের সম্পূর্ণ বিপরীত। এদের প্রতি সব সময় আল্লাহর দীদারের অনুমতি থাকবে।
হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর এ বিষয় সংক্রান্ত একটি হাদীসের মর্মানুযায়ী সবচেয়ে নিম্নশ্রেণীর জান্নাতবাসীরা তাদের সম্পদ সাম্রাজ্য দু হাজার বছরের পথ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করবে এবং তার শেষ সীমার সকল জিনিস নিকটবর্তী জিনিসের মতই স্পষ্ট দেখতে পাবে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতবাসীরা প্রতিদিন দু দুবার দীদারে ইলাহীর মাধ্যমে নিজেদের মন প্রফুল্ল রাখবে এবং দৃষ্টি আলোকিত করবে। কেউ তাদের চেহারার প্রতি তাকালে এক দৃষ্টিতেই তাদের পরিতৃপ্তি, আনন্দ, সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, সজীবতা, মর্যাদার অনুভূতি, বৈশিষ্ট্য এবং আরাম আয়েশের পরিচয় পেয়ে যাবে এবং তাদের গৌরব মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে অবহিত হবে এবং অনুধাবন করবে যে, তারা সুখ সাগরে ডুবে আছে। তাদের মধ্যে জান্নাতী শারাব পরিবেশনের পর্ব চলতে থাকবে। رَحِيْق হলো জান্নাতের এক প্রকারের শারাব।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করাবে, তাকে আল্লাহ তা'আলা رَحِيْقٍ مَّخْتُوْمٍ অর্থাৎ মোহরকৃত বিশুদ্ধ পানীয় হতে পান করাবেন। যে ব্যক্তি ক্ষুধার্ত কোন মুসলমানকে আহার করাবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতের মেওয়া খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোন উলঙ্গ মুসলমানকে কাপড় পরিধান করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমী পোশাক পরিধান করাবেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
خِتَامُهٗ مِسْكٌ অর্থাৎ ওর মিশ্রণ হবে মিসক বা কস্তুরী। আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্যে শারাবকে পবিত্র করেছেন এবং মিসকের মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। এই অর্থও হতে পারে যে, সেই শারাবের পরিণাম হলো মিসক অর্থাৎ তাতে কোন প্রকার দুর্গন্ধ নেই, এবং মিসকের সুগন্ধি রয়েছে তাতে। ঠিক রূপোর রঙের মতই এ শারাব। তাতে রীতিমত সীলমোহর লাগানো থাকবে। সেই শারাব বা এমন সুগন্ধ যুক্ত হবে যে, পৃথিবীর কোন মানুষের একটা আঙ্গুল যদি সেই শারাবে লেগে যায় এবং তা সে বের করে নেয় তাহলে সেই সুগন্ধে সমগ্র পৃথিবী সুবাসিত হয়ে যাবে। خِتَام শব্দের অর্থ সুগন্ধ বলেও বর্ণিত আছে।
এরপর ওয়া তা'আলা বলেনঃ এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক। অর্থাৎ প্রতিযোগিতাকারীদের সেই দিকে সর্বাত্মক মনোযোগ দেয়া উচিত। যেমন অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ لِمِثْلِ هٰذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُوْنَ অর্থাৎ “যারা আমল করে তাদের এরকম জিনিসের জন্যেই আমল করা উচিত।”
‘তাসনীম' হলো জান্নাতের একটি উৎকৃষ্টতর শারাবের নাম। এটা এমন এক ঝর্ণা যা থেকে অগ্রাধিকারী ও নৈকট্যপ্রাপ্ত লোকেরা ক্রমাগত পান করবে। যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে তারাও নিজেদের শারাব রাহীক এর সঙ্গে মিশ্রিত করে পান করবে।