হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত এ হাদীসটি পূর্বে গত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঈদের নামাযে এবং জুমআর দিনে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلٰى এবং غَاشِيَة পাঠ করতেন। ইমাম মালিক (রঃ) এর মুআত্তা নামক হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, জুমআর নামাযে রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রথম রাকআতে সুরা জুমআহ্ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা هَلْ اَتٰىكَ حَدِیْثُ الْغَاشِیَةِ পাঠ করতেন। (এ হাদীসটি সুনানে আবী দাউদ, সহীহ মুসলিম, সুনানে ইবনে মাজাহ এবং সুনানে নাসাঈর মধ্যেও বর্ণিত হয়েছে)
১-৭ নং আয়াতের তাফসীর
গাশিয়াহ্ হলো কিয়ামতের একটি নাম, কারণ এটা সবার উপর আসবে, সবাইকে ঘিরে ধরবে এবং ঢেকে ফেলবে। মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত আমর ইবনে মায়ুমুন (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) একটি স্ত্রী লোকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় শুনতে পান যে, هَلْ اَتٰىكَ حَدِیْثُ الْغَاشِیَةِ পাঠ করছে। তখন তিনি দাড়িয়ে গিয়ে শুনতে থাকেন এবং বলেনঃ نَعَمْ قَدْ جَآءَنِىْ অর্থাৎ “হ্যা, আমার নিকট (কিয়ামতের সংবাদ) এসেছে।”
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ সেইদিন বহু লোক হবে অপমানিত চেহারাবিশিষ্ট। অবমাননা তাদের উপর আপতিত হবে। তাদের পুণ্যকর্মসমূহ বিনষ্ট হয়ে যাবে। তারা বড় বড় কাজ করেছিল, আমলের জন্যে কষ্ট করেছিল, কিন্তু আজ তারা প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করবে।
হযরত আবু ইমরান জাওফী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এক রাহিবের (খ্রিষ্টান পাদ্রীর) আশ্রমের পার্শ্ব দিয়ে গমন করছিলেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি ঐ রাহিবকে ডাক দেন। খ্রিস্টান সাধক তাঁর কাছে হাজির হলে সাধককে দেখে কেঁদে ফেলেন। সাধক তাঁকে ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলার কিতাবে উল্লেখিত তাঁর عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ ـ تَصْلٰى نَارًا حَامِیَةً এই উক্তি আমার স্মরণে এসেছে এবং ওটাই আমাকে কাঁদিয়েছে (এটা হাফিয আবু বকর বারকানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এর ভাবার্থ হলোঃ ইবাদত, রিয়াযত করছে, অথচ শেষ পর্যন্ত জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ দ্বারা খ্রিষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। ইকরামা (রাঃ) এবং সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে দুনিয়ায় তারা পাপের কাজ করছে এবং আখেরাতে তারা শাস্তি এবং প্রহারের কষ্ট ভোগ করবে।
তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত অগ্নিতে। সেখানে ضَرِيْع ছাড়া অন্য কোন খাদ্য মিলবে না। এটা হবে আগুনের বৃক্ষ, জাহান্নামের পাথর। এতে বিষাক্ত কন্টক বিশিস্ট ফল ধরে থাকবে। এটা হবে দুর্গন্ধময় খাদ্য ও অত্যন্ত নিকৃষ্ট আহার্য। এটা ভক্ষণে দেহও পুষ্ট হবে না, ক্ষুধাও নিবৃত্ত হবে না এবং অবস্থারও কোন পরিবর্তন হবে না।