১৯-২২ নং আয়াতের তাফসীর:
এর তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কাফিররা বলতোঃ “বায়তুল্লাহর খিদমত করা এবং হাজীদেরকে পানি পান করানো ঈমান ও জিহাদ হতে উত্তম। যেহেতু আমরা এ দুটো খিদমত আঞ্জাম দিচ্ছি সেহেতু আমাদের চেয়ে উত্তম আর কেউই হতে পারে না।” আল্লাহ তাআলা এখানে তাদের অহংকার ও দম্ভ এবং সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, হে কাফিররা! যখন তোমাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তোমরা বেপরোয়া ভাব দেখিয়ে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং সম্পূর্ণ উদাসীন থাকো। সুতরাং তোমাদের এসব গর্ব ও অহংকার বাজে ও অযৌক্তিক। এমনিতেই তো আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার পথে জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম, তদুপরি তোমাদের মুকাবিলায় এর গুরুত্ব আরো বেশী। কেননা, তোমাদের যে কোন সৎকর্মকেই তো শিরূক খেয়ে ফেলে। তাই আল্লাহ পাক বলেন, এ দু'টি দল কখনো সমান হতে পারে না। এই মুশরিকরা নিজেদেরকে আল্লাহর ঘরের আবাদকারী বলছে বটে, কিন্তু আল্লাহ তাদের নামকরণ করছেন যালিমরূপে। তার ঘরের যে তারা খিদমত করছে তা সম্পূর্ণ বৃথা বলে তিনি ঘোষণা করলেন।
আব্বাস (রাঃ) বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে বন্দী থাকার সময় মুসলিমরা তাঁকে শিরকের কারণে নিন্দে করলে তিনি তাদেরকে বলেনঃ “তোমরা যদি ইসলাম ও জিহাদে থেকে থাকে তবে আমরাও তো কাবা ঘরের খিদমত এবং হাজীদেরকে পানি পান করানোর কাজে ছিলাম।” তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং বলা হয় যে, শিবৃকের অবস্থায় যে পুণ্যের কাজ করা হয় তার সবই বিফলে যায়। বর্ণিত আছে যে, সাহাবীগণ (রাঃ) যখন আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে কথা কাটাকাটি শুরু করেন তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ “আমরা মসজিদুল হারামের মুতাওয়াল্লী ছিলাম, গোলামদেরকে আমরা আযাদ করতাম, আমরা বায়তুল্লাহর উপর গিলাফ চড়াতাম এবং হাজীদেরকে পানি পান করাতাম।” তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।
মুহাম্মাদ ইবনে কারীম (রঃ) বলেন যে, একদা তালহা ইবনে শায়বা (রাঃ), আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) এবং আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) বসেছিলেন ও নিজ নিজ মর্যাদার কথা বর্ণনা করে গৌরব প্রকাশ করছিলেন। তালহা (রাঃ) বলেনঃ “আমি বায়তুল্লাহর চাবি রক্ষক। আমি ইচ্ছা করলে সেখানেই রাত্রি যাপন করতে পারি।” আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমি হাজীদেরকে যমযমের পানি পান করিয়ে থাকি এবং আমি যমযম কূপের রক্ষক। আমি ইচ্ছা করলে সারারাত মসজিদেই কাটিয়ে দিতে পারি।” আলী (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা দু’জন যা বলছে তা আমার মোটেই বোধগম্য হচ্ছে না। আমি জনগণের ছয়মাস পূর্ব থেকে কিবলামুখী হয়ে সালাত পড়েছি। আমি একজন মুজাহিদও বটে।” তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। আব্বাস (রাঃ) আশংকা প্রকাশ করেন যে, না জানি তাঁকে হয়তো যমযম কূপের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “না, না, আপনি এ পদেই প্রতিষ্ঠিত থাকুন! আপনার জন্যে এতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ আয়াতের তাফসীরে একটি মারফু হাদীসও এসেছে। যা এখানেও উল্লেখ করা প্রয়োজন। নুমান ইবনে। বাশীর আল আনসারী (রাঃ) বলেনঃ “আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এক দল সাহাবীর সাথে তার মিম্বরের নিকট বসেছিলাম। তাদের মধ্যে একজন লোক বলেনঃ “ইসলাম গ্রহণের পর হাজীদেরকে পানি পান করানো ছাড়া আমি আর কোন আমল না করলেও আমার কোন পরওয়া নেই। অন্য একটি লোক মসজিদে হারামের আবাদ করার কথা বললেন। তৃতীয় এক ব্যক্তি বললেনঃ “তোমরা দু’জন যে আমলের কথা বললে তার চেয়ে জিহাদই উত্তম।” তখন উমার (রাঃ) তাঁদেরকে ধমক দিয়ে বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর মিম্বরের নিকট উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো না।” ওটা ছিল জুমআর দিন। উমার (রাঃ) তাদেরকে বলেনঃ “জুমআর সালাত আদায় হলে পর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছো তা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করবো।” তিনি তাই করেন। তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ اَجَعَلْتُمْ سِقَایَةَ الْحَآجِّ وَ عِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ হতে وَ اللّٰهُ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ পর্যন্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (এ হাদীসটি আবদুর রাযযাক (রঃ) তাখরীজ করেছেন এবং ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ), ইবনে হিব্বান (রঃ) এবং ইবনে জারীর (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। আর এটা তারই শব্দ)