৩১-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের উপর হুজ্জত পেশ করছেন যে, তাদেরকে তাঁর প্রভুত্ব ও একত্ব স্বীকার করতেই হবে। অর্থাৎ (হে নবী সঃ)! মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশ হতে যিনি বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন তিনি কে? যিনি নিজের ক্ষমতাবলে যমীনের মধ্য থেকে আঙ্গুর, নাশপাতি, যায়তুন, খেজুর, ঘন ঘন বাগান এবং গুচ্ছযুক্ত ফল সৃষ্টি করে থাকেন, তার সাথে অন্য কোন মাবুদ আছে। কি? উত্তরে তাদেরকে অবশ্যই বলতে হবে যে, এগুলো শুধুমাত্র আল্লাহরই কাজ। যদি তিনি তার রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে এমন আছে যে তা খুলতে পারে? যিনি এই শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি দান করেছেন এবং ইচ্ছা করলে যিনি এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন, তিনি কে? যিনি স্বীয় বিরাট ক্ষমতাবলে জীবন্তকে প্রাণহীন থেকে বের করেন এবং প্রাণহীনকে বের করেন জীবন্ত হতে, তিনি কে? এরূপ প্রশ্ন করলে তারা অবশ্যই জবাব দিতে বাধ্য হবে যে, এগুলো করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আল্লাহর। তিনিই এসব কাজ করে থাকেন। এই আয়াতের ব্যাপারে মতভেদ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে এবং এটা সাধারণ ও সবকেই পরিবেষ্টনকারী। সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপনা আল্লাহ পাকেরই দায়িত্বে রয়েছে। যা কিছু হচ্ছে সকলই তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হচ্ছে। তিনিই সকলকে আশ্রয় দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কাউকেও আশ্রয় দিতে পারে না। সবারই উপর তিনি হাকিম। তাঁর হুকুমের পর কারো হুকুমের কোনই মূল্য নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা প্রশ্ন করেন, কিন্তু তাঁকে কেউই কোন প্রশ্ন করতে পারে না । আসমান ও যমীনের সমস্ত মাখলুক তাঁরই রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। সব সময়েই তিনি একাই সব। আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত রাজত্ব তারই। ফিরিশতা, দানব ও মানব তাঁরই মুখাপেক্ষী এবং তাঁরই দাস। তাঁর কাছে সবারই জবাব এটাই যে, এ সমুদয় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার মধ্যেই রয়েছে। কাফির ও মুশরিকরাও এটা জানে এবং স্বীকারও করে। সুতরাং হে নবী (সঃ)! (তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ) আচ্ছা! তাহলে তোমরা মহান আল্লাহকে ভয় করছো না কেন? কেন অজ্ঞতা প্রকাশ করতঃ তাঁকে ছেড়ে অন্যের উপাসনা করছো? প্রকৃত মা'বূদ তো সেই আল্লাহ যাকে তোমরাও স্বীকার করছো। অতএব, একমাত্র তিনিই তো ইবাদতের হকদার। সত্য ও সঠিক কথা বুঝে নেয়ার পরেও এরূপ ভ্রষ্টতার অর্থ কি? তিনি ছাড়া সমস্ত মাবুদই মিথ্যা ও বাতিল। প্রকৃত মাবুদের ইবাদত ছেড়ে কোন দিকে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে ফিরছো?
আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “এইভাবে সমস্ত অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের এই কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল।” অর্থাৎ যেমনভাবে এই মুশরিকরা কুফরী করেছে এবং কুফরীর উপরই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, তেমনিভাবে তারা এ কথা স্বীকারও করে নিয়েছে যে, আল্লাহই হচ্ছেন মহান ও পবিত্র প্রতিপালক, তিনিই হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা, সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপক তিনি একাই এবং তিনি রাসূলদেরকে তাওহীদসহ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং এই অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, তারা জাহান্নামী । যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ قَالُوْا بَلٰى وَ لٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكٰفِرِیْنَ অর্থাৎ “(রাসূলগণ তাদের কাছে এসেছিলেন কি-না, আল্লাহ তাআলার এই প্রশ্নের উত্তরে) তারা বলবেঃ হ্যা (এসেছিলেন), কিন্তু (আমরা অমান্য করেছিলাম, ফলে) কাফিরদের জন্যে আযাবের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়ে রইলো।” (৩৯:৭১)