৭৪-৮১ নং আয়াতের তাফসীর:
(ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْۭ بَعْدِھ۪......)
আল্লাহ তা‘আলা নূহ (عليه السلام)-এর পরেও প্রমাণ-পঞ্জিসহ অসংখ্য নাবী-রাসূলদেরকে পাঠিয়েছিলেন, যা প্রমাণ করত যে, এরা আসলেই আল্লাহ তা‘আলার নাবী। কিন্তু তারা তা বুঝার পরেও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেনি। কারণ তারা পূর্বেই যেহেতু রাসূলদেরকে কোন রকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই অস্বীকার করেছিল তাই তারা ভাবল যে, আমরা যেহেতু পূর্বেই অস্বীকার করেছি সেহেতু এখন আর ঈমান এনে লাভ হবে না। যার ফলে তারা ঈমান আনেনি। যেভাবে কুফরী ও মিথ্যাজ্ঞান করার কারণে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের হৃদয় মোহরাংকিত হয়েছিল, ঐভাবেই ভবিষ্যতেও যে জাতি রাসূলগণকে মিথ্যাজ্ঞান করবে এবং আল্লাহ তা‘আলার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে, তাদের অন্তরও মোহরাংকিত হবে এবং পূর্ব জাতিসমূহের ন্যায় তারাও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে ।
(ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْۭ بَعْدِھِمْ مُّوْسٰی وَھٰرُوْنَ...... ِنَّ اللہَ لَا یُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِیْنَ)
পূর্বে নূহ (عليه السلام)-এর কথা ও অন্যান্য অনেক রাসূল প্রেরণ করার কথা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতগুলোতে মূসা (عليه السلام) ও হারূন (عليه السلام) সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন। আর রাসূলদের কথা বলার পর বিশেষভাবে তাদের দু‘জনের কথা উল্লেখ করার কারণ হল যে, তারা উভয়েই বিশিষ্ট রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের মাঝে ও তাদের শত্র“র মাঝে অনেক শিক্ষা রয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে স্পষ্ট নিদর্শন দিয়ে প্রেরণ করেছেন ফির‘আউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট, কিন্তু তারা তাদের নিদর্শনকে মেনে নেয়নি। এ নিদর্শন সম্পর্কে সূরা ইসরার ১০১ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু তারা বড় বড় অপরাধমূলক কাজে অভ্যাসী ছিল, যার কারণে আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত রাসূলকেও অহঙ্কার প্রদর্শন করল। কারণ এক পাপ কাজ অন্য পাপকে আকর্ষণ করে এবং পাপের ওপর অটল থাকলে বড় বড় পাপকর্ম সাধনে সাহস যোগায়। সুতরাং যখন সত্য তাদের কাছে আগমন করল তখন তা অস্বীকার করার কোন বিবেকগ্রাহ্য প্রমাণ না থাকায় অব্যাহতি পাওয়ার জন্য বলে দেয় এটা জাদু। তাছাড়া মূসা (عليه السلام)-এর যুগে জাদুর প্রভাব বেশি ছিল, যেমন আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগের সাহিত্য চর্চার প্রভাব বেশি ছিল। মূসা (عليه السلام) বললেন: তোমরা একটু চিন্তা করে দেখ, সত্যের দাওয়াত ও সঠিক কথাকে তোমরা জাদু বলছ! এটা কি জাদু হতে পারে? জাদুকর তো কখনো কৃতকার্যই হতে পারে না। অর্থাৎ ইচ্ছা অনুযায়ী চাহিদা পূরণ করতে এবং অনাকাক্সিক্ষত পরিণতি থেকে বাঁচতে পারে না। আমি তো আল্লাহ তা‘আলার রাসূল, আমি আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য পাই এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আমাকে মু’জিযাহ দেয়া হয়েছে। জাদু ও জাদুবিদ্যার আমার প্রয়োজনই বা কি আছে? তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলার প্রদর্শিত মু’জিযার তুলনায় তার মূল্যই বা কতটুকু।
তারা মূসা (عليه السلام)-এর সমস্ত মু‘জিযা দেখার পর বলল যে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে যে দীনের ওপর পেয়েছি তা থেকে অন্য দীনের ওপর সরে যাব না এবং এই জমিনে তোমাদের রাজত্ব কায়েম করতে দেব না। ফলে তাদের বাপ-দাদার মতবাদে অটল বিশ্বাস ও ধন-সম্পদের লোভ তাদেরকে ঈমান আনা থেকে বিরত রেখেছে। পরবর্তীতে ফির‘আউনের জাদুকরদের ডাকা এবং মূসার জাদুকরদের মোকাবেলা করার কাহিনী সূরা আ‘রাফে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক রাসূলই দুনিয়াতে প্রমাণ নিয়ে এসেছেন।
২. যুগে যুগে যারা ঈমান আনেনি তাদের সকলের পরিণতি একই রকম হবে।
৩. মূসা ও হারূন (عليه السلام) হলেন বিশিষ্ট নাবীদের অন্তর্ভুক্ত।
৪. নাবীদের মু‘জিযা কোন জাদু নয়।
৫. বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে সঠিক বিষয়ে আমল করা থেকে বিরত থাকা ঠিক নয়।