৮-১০ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার সূক্ষ্মদর্শিতা ও সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন এ কথাই ফুটে উঠেছে। এ পৃথিবীর স্থলে-জলে, দিবালোকে-আধাঁরে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ও জমিনে-আকাশমণ্ডলীতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে, হবে এবং আছে কোন কিছুই আল্লাহ তা‘আলার নিকট অস্পষ্ট বা গোপন নয়। এমনকি একজন নারী গর্ভে কী ধারণ করে তাও আল্লাহ তা‘আলা জানেন। সন্তান জীবিত হবে না মৃত, সৌভাগ্যশীল হবে না দুর্ভাগা, ছেলে হবে না মেয়ে হবে ইত্যাদি আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব থেকেই জ্ঞাত। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنْشَأَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ وَإِذْ أَنْتُمْ أَجِنَّةٌ فِيْ بُطُوْنِ أُمَّهٰتِكُمْ)
“তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত- যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণরূপে ছিলে।” (সূরা নাজম ৫৩:৩২)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَخْلُقُكُمْ فِيْ بُطُوْنِ أُمَّهٰتِكُمْ خَلْقًا مِّنْۭ بَعْدِ خَلْقٍ فِيْ ظُلُمٰتٍ ثَلَاثٍ)
“তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে এক অবস্থার পর অন্য অবস্থায় তিন স্তরের অন্ধকারের মধ্যে। তিনিই আল্লাহ তা‘আলা, তোমাদের প্রতিপালক, সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই।” (সূরা যুমার ৩৯:৬)
এখানে তিনটি অন্ধকার বলতে প্রথম অন্ধকার মায়ের পেট, দ্বিতীয় অন্ধকার গর্ভাশয়, তৃতীয় অন্ধকার ঝিল্লী, তা হল সেই পাতলা আবরণ যাতে বাচ্চা জড়ানো থাকে। এ সম্পর্কে সূরা ফাতিরের ১১ নং এবং সূরা ফুসসিলাতের ৪৭ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।
এমনকি জরায়ুতে যা বাড়ে-কমে তাও আল্লাহ তা‘আলা জানেন। এখানে বাড়ে-কমে দ্বারা উদ্দেশ্য হল গর্ভের সময় কাল। অর্থাৎ কারো আট, আবার কারো দশ মাসেও সন্তান প্রসব হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়। আর তাঁর নিকট প্রত্যেক বস্তুর একটি নির্দিষ্ট সময়কাল রয়েছে। অর্থাৎ কার জীবনকাল কত দিন? সে রিযিকের কত অংশ পাবে ইত্যাদি। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “তাঁরই এক কন্যা তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে খবর দেন যে, তার এক ছেলে মৃত্যু শিয়রে দণ্ডায়মান। সুতরাং তিনি তাঁর উপস্থিতি কামনা করেন। এ খবর শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মেয়ের কাছে সংবাদ পাঠান: আল্লাহ তা‘আলা যা প্রেরণ করেন তা তাঁরই। তাঁর নিকট প্রত্যেক বস্তুরই একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। তোমরা তাকে বল, সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের আশা করে। (সহীহ বুখারী হা: ১৬০২)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা সকল বিষয়েই অবগত আছেন আর প্রত্যেক বস্তুরই একটি নির্ধারিত সময়কাল রয়েছে।
শুধু তাই নয়, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াতে বলছেন যে তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সকল বিষয়েই অবগত আছেন, তাঁর নিকট কোন বিষয় গোপন নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(عٰلِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ط وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ)
“অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত; আর তিনিই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।” (সূরা আনয়াম ৬:৭৩)
অতএব আল্লাহ তা‘আলা র নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। তিনি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সবই জানেন। আর তিনি সুমহান, সর্বোচ্চ। তাঁর চেয়ে বড় আর কেউ নেই। এমনকি তিনি তাও জানেন যা মানুষ তাদের অন্তরে কল্পনা করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَإِنَّه۫ يَعْلَمُ السِّرَّ وَأَخْفٰي)
“যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল, তবে (জেনে রেখ) তিনি যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবই জানেন।” (সূরা ত্বহা ২০:৭)
তিনি ছোট-বড় সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত এবং রাত্রের অন্ধকারে যে আত্মগোপন করে ও দিবসে যে বিচরণ করে সবই তাঁর জ্ঞানায়ত্ত্বে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا تَكُوْنُ فِيْ شَأْنٍ وَّمَا تَتْلُوْا مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّلَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوْدًا إِذْ تُفِيْضُوْنَ فِيْهِ ط وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَا۬ءِ وَلَآ أَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَآ أَكْبَرَ إِلَّا فِيْ كِتٰبٍ مُّبِيْنٍ)
“তুমি যে কোন অবস্থায় থাক না কেন এবং তুমি কুরআন হতে যা তিলাওয়াত কর এবং তোমরা যে কোন কার্যই কর না কেন, আমি তোমাদের পরিদর্শক যখন তোমরা তাতে পূর্ণরূপে মনোনিবেশ কর। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অনু পরিমাণও তোমার প্রতিপালকের অগোচর নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ নেই।” (সূরা ইউনুস ১০: ৬১)
অতএব, আল্লাহ তা‘আলা র দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে কোন কিছু করার সুযোগ নেই। তাই সে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সকল পাপ কাজ ও আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানী বর্জন করা প্রত্যেক মু’মিনের একান্ত কর্তব্য।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার নিকট সমস্ত কিছুর জ্ঞান রয়েছে।
২. আল্লাহ তা‘আলা অদৃশ্য বস্তুর খবর জানেন, এমনকি মায়ের গর্ভে যা কিছু বাড়ে-কমে তাও তিনি জানেন। তিনি ব্যতীত আর কেউ অদৃশ্যের বা গায়েবের খবর জানে না।
৩. মানুষকে তিনটি অন্ধকারের মধ্যে সৃষ্টি করা হয়।
৪. আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে বড়, তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই ইত্যাদি।