২৪-২৬ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, লা ইলালাহ ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই) এর সাক্ষ্য দেয়াই বুঝানো হয়েছে কালেমায়ে তায়্যেবা দ্বারা। আর উত্তম ও পবিত্র বৃক্ষ দ্বারা মুমিনকে বুঝানো হয়েছে। এর মূল দৃঢ়, অর্থাৎ মুমিনের অন্তরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ রয়েছে। এর শাখা রয়েছে ঊর্ধ্বে অর্থাৎ মুমিনের তাওহীদ বা একত্ববাদের কালেমার কারণে তার আমলগুলি আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। আরো বহু মুফাসির হতে এটাই বর্ণিত হয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুমিনের আমল, কথা ও সৎ কার্যাবলী। মুমিন খেজুর বৃক্ষের ন্যায়। প্রত্যেক দিন সকালে ও সন্ধ্যায় তার আমলগুলি আকাশে উঠে যায়।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে একটি খেজুর গুচ্ছ আনয়ন করা হলে তিনি مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ এই অংশটুকু পাঠ করেন এবং বলেনঃ “ওটা খেজুর বৃক্ষ।”
হযরত ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমরা (একদা) রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে বলেনঃ “ওটা কোন্ গাছ যা মুসলমানের মত, যার পাতা ঝরে পড়ে না, গ্রীষ্ম কালেও না শীতকালেও না; যা সব মওসুমেই ফল ধারণ করে থাকে?” হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ “আমি মনে মনে বললাম যে, বলে দিইঃ ওটা খেজুর গাছ। কিন্তু আমি দেখলাম যে, মজলিসে হযরত আবু বকর (রাঃ) , হযরত উমার (রাঃ) রয়েছেন। এবং তাঁরা নীরব আছেন, কাজেই আমিও নীরব থাকলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “ওটা হচ্ছে খেজুরের গাছ।” এখান থেকে বিদায় হয়ে আমি আমার পিতা হযরত উমারকে (রাঃ) এটা বললে তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎস! যদি তুমি এই উত্তর দিয়ে দিতে তবে এটা আমার কাছে সমস্ত কিছু পেয়ে যাওয়ার অপেক্ষাও প্রিয় ও পছন্দনীয় ছিল।” (এ হাদিসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ “আমি মদীনায় হযরত ইবনু উমারের (রাঃ) সঙ্গ লাভ করি। আমি তাঁকে একটি মাত্র হাদীস ছাড়া কোন হাদীস রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করতে শুনি নাই। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে বসেছিলাম, এমন সময় তাঁর কাছে খেজুর গাছের ভিতরের মজ্জা আনয়ন করা হয়। তখন তিনি বলেনঃ “গাছের মধ্যে এমন এক গাছ রয়েছে যা মুসলমানের মত।” আমি তখন বলবার ইচ্ছা করলাম যে, আমিই হলাম কওমের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ (তাই, আমি বললাম না)। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “ওটা হচ্ছে খেজুর বৃক্ষ।” অন্য রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, ঐ সময় উত্তরদাতাদের খেয়াল বন্য গাছ পালার দিকে গিয়েছিল।
হযরত কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সম্পদশালী লোকেরা তো মর্যাদায় খুব বেড়ে গেল!” যদি দুনিয়ার সমস্ত কিছু নিয়ে স্কুপ করে দেয়া হয় তবুও কি তা আকাশ পর্যন্ত পেঁৗছতে পারবে? (কখনই না) তোমাকে কি এমন আমলের কথা বলবো যার মূল দৃঢ় এবং শাখা গুলি আকাশে (চলে গেছে)?” সে জিজ্ঞেস করলোঃ “ওটা কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ এবং আলহামদু লিল্লাহ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর দশ বার করে পাঠ করো তা হলেই এটা হবে এমন আমল যার মূল মযবুত এবং শাখা আকাশে।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন ঐ পবিত্র গাছ জান্নাতে রয়েছে। আল্লাহ পাকের উক্তিঃ ওটা প্রত্যেক মওসূমে ফলদান করে অর্থাৎ-সকাল-সন্ধ্যায় প্রতি মাসে বা প্রতি দু’মাসে অথবা প্রতি ছ’মাসে বা প্রতি সাত মাসে অথবা প্রতি বছরে। কিন্তু শব্দগুলির বাহ্যিক ভাবার্থ তো হচ্ছেঃ “মুমিনের দৃষ্টান্ত ঐ বৃক্ষের মত যার ফল সব সময় শীতে, গ্রীষ্মে, দিনে, রাতে নেমে থাকে। অনুরূপভাবে মু'মিনের নেক আমল দিনরাত সব সময় আকাশে উঠে থাকে।”
আল্লাহ তাআলা মানুষের শিক্ষা, উপদেশ ও অনুধাবনের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে থাকেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা মন্দ কালেমা অর্থাৎ কাফিরের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করছেন, যার কোন মূল নেই এবং যা দৃঢ় নয়। এর দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে ‘হানযাল গাছের সাথে, যাকে ‘শারইয়ান' বলা হয়। হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ওটা হান্যাল গাছ। এই রিওয়াইয়াতটি মার’ রূপেও এসেছে। এর মূল ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন যার কোন স্থায়িত্ব নেই। অনুরূপভাবে কুফরী মূলহীন ও শাখাহীন। কাফিরের কোন ভাল কাজ উপরে উঠে না এবং তার থেকে কিছু কবুলও হয় না।