নাহল আয়াত ৮৩
يَعْرِفُوْنَ نِعْمَتَ اللّٰهِ ثُمَّ يُنْكِرُوْنَهَا وَاَكْثَرُهُمُ الْكٰفِرُوْنَ ࣖ ( النحل: ٨٣ )
Ya'rifoona ni'matal laahi summa yunkiroonahaa wa aksaruhumul kaafiroon (an-Naḥl ১৬:৮৩)
English Sahih:
They recognize the favor of Allah; then they deny it. And most of them are disbelievers. (An-Nahl [16] : 83)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তারা আল্লাহর নি‘মাতকে চিনতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সেগুলো অগ্রাহ্য করে, তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ। (নাহল [১৬] : ৮৩)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তারা আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে নেয়, অতঃপর তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।[১]
[১] অর্থাৎ, তারা এ কথা জানে ও বুঝে যে, এই সকল নিয়ামতের সৃষ্টিকর্তা ও তা ব্যবহারযোগ্য করার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ, তবুও তারা তাঁকে অস্বীকার করে আর অধিকাংশ অকৃতজ্ঞতা করে, অর্থাৎ আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তারা আল্লাহ্র নি’আমত চিনতে পারে; তারপরও সেগুলো তারা অস্বীকার করে [১] এবং তাদের অধিকাংশই কাফির [২]।
[১] মক্কার কাফেররা একথা অস্বীকার করতো না যে, এ সমস্ত অনুগ্রহ আল্লাহ তাদের প্রতি করেছেন। কিন্তু তাদের আকীদা ছিল, তাদের বুযর্গ ও দেবতাদের হস্তক্ষেপের ফলে তাদের প্রতি এসব অনুগ্রহ করা হয়েছে। আর একারণেই তারা এসব অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সময় ঐসব বুযর্গ ও দেবতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো বরং তাদের প্রতি কিছুটা বেশী করেই প্রকাশ করতো। একাজটিকেই আল্লাহ নেয়ামতর অস্বীকৃতি এবং অকৃতজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
[২] বলা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই কাফের। এখানে অধিকাংশ বলে সকলকেই বোঝানো হয়েছে। অথবা অধিকাংশ লোক বলে তাদের মধ্যকার বয়স্ক লোকদের বোঝানো হয়েছে। কারণ, তাদের মধ্যে শিশু সন্তানরাও রয়েছে। অথবা এর অর্থ, তাদের অধিকাংশই সাধারণ লোক, তারা তাদের বিবেক খরচ করে আল্লাহর নেয়ামতসমূহ সম্পর্কে গবেষণা করতে শিখেনি। তারা যদি সত্যিকারভাবে নেয়ামতসমূহ উপলব্ধি করতে পারত তাহলে বুঝতে পারত যে, যিনি নেয়ামত দিয়েছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত অন্য কারও নয়। ফলে তারা নেয়ামতের শুকরিয়া না করে কাফির হয়েছে। আর বাকী মুশরিকরা যারা নেতৃত্বে আছে তারা জেনে-বুঝে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করছে। [ফাতহুল কাদীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
তারা আল্লাহর নিআমত চিনে, তারপরও তারা তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশই কাফির।
4 Muhiuddin Khan
তারা আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে, এরপর অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।
5 Zohurul Hoque
তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ চিনতে পারে, তথাপি তারা সেইটি অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।
6 Mufti Taqi Usmani
তারা আল্লাহর নি‘আমতসমূহ চেনে, তবুও তা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।
7 Mujibur Rahman
তারা আল্লাহর অনুগ্রহ জ্ঞাত আছে; কিন্তু সেগুলি তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির।
8 Tafsir Fathul Mazid
৮০-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতগুলোতে চতুষ্পদ জন্তুসহ যে সকল সৃষ্টির মাঝে মানুষের কল্যাণ নিহিত রেখেছেন তার কয়েকটির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। মানুষের গৃহগুলোকে আশ্রয়স্থল বানিয়ে দিয়েছেন। গৃহে রাত্রি যাপন, গরম ও ঠাণ্ডার সময় আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যতত্নসহকারে রাখা হয়। ظَعْنِ অর্থ সফরে থাকা, অর্থাৎ সফরে ও বাড়িতে অবস্থানকালে চতুষ্পদ জন্তুর চামড়ার তাঁবু বানিয়ে ঘর তৈরি করে থাকতে পার, সফরে নিয়ে যাওয়ার সময় বহন করা হালকা হয়।
أَصْوَافِ শব্দটি صوف এর বহুবচন, এটি ভেড়ার লোমকে বুঝায়, وَأَوْبٰرِ শব্দটি وبر এর বহুবচন, উটের লোমকে বুঝায়, أَشْعَارِ শব্দটি شعر এর বহুবচন যা দুম্বা-ছাগলের লোমকে বুঝায়।
আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির অন্যতম হল গাছ, প্রচণ্ড রৌদ্রের মধ্যে পথ চলা কালে পথিমধ্যে বিশ্রামের সময় গাছের ছায়ার গুরুত্ব বুঝা যায়। এছাড়াও অন্যান্য বস্তুর ছায়া মানুষ প্রয়োজনানুপাতে গ্রহণ করে থাকে। أَكْنَانًا অর্থ গুহা, অর্থাৎ পাহাড়ে গুহা সৃষ্টি করেছেন যাতে গরমের দিন ঠাণ্ডা আর শীতের দিন গরম গ্রহণ করতে পারে এবং ঝড়-তুফানে আশ্রয় নিতে পারে। যেমন বনী ইসরাঈলের সে তিন ব্যক্তি যারা ঝড়ের কবলে পড়ে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল। একটি পাথর এসে গুহার মুখে পড়ে ফলে দুনিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ২৩৩৩)
(تَقِيْكُمْ بَأْسَكُمْ)
অর্থাৎ পশম ও তুলার জামা যা মানুষকে গরম ও ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে। আর এমন কতক পোশাক রয়েছে যা মানুষকে যুদ্ধের ময়দানে শত্র“র আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যেমন লৌহ বর্ম, হেলমেট ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَعَلَّمْنٰهُ صَنْعَةَ لَبُوْسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُمْ مِّنْۭ بَأْسِكُمْ ج فَهَلْ أَنْتُمْ شٰكِرُوْنَ)
“আর আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে; সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না?” (সূরা আম্বিয়া ২১:৮০)
মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা এভাবে নেয়ামত দান করে থাকেন যাতে তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে আত্মসমর্পণ করে। কারণ দাতার কাছে গ্রহীতা সর্বদা কৃতজ্ঞ ও নমনীয় হয়ে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলার এসব নেয়ামত পাওয়ার পরেও যদি মানুষ ঈমান না আনে, বরং ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত রাসূলদের দায়িত্ব কেবল পৌঁছে দেয়া, কারো ওপর জবরদস্তি করে ঈমান আনতে বাধ্য করা নয়।
(يَعْرِفُوْنَ نِعْمَتَ اللّٰهِ)
অর্থাৎ কাফির-মুশরিকরা চিনে এসব আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত, কিন্তু তারপরেও তারা অস্বীকার করে। যেমন মক্কার মুশরিকরা স্বীকার করত আকাশ থেকে বৃষ্টি দেয় আল্লাহ তা‘আলা, হায়াত-মউত ও রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা; কিন্তু তারপরেও তারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতো না। মুজাহিদ বলেন: এর অর্থ হল যেমন মানুষ বলে: এগুলো আমার সম্পদ, আমার বাপ-দাদাদের থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছি। আওন বিন আব্দুল্লাহ বলেন- অমুকরা না থাকলে এসব সম্পদ পেতাম না। অনুরূপ সমুদ্রের ঢেউ যখন উত্তাল হয়ে ওঠে আর মানুষ আল্লাহ তা‘আলাকে একাগ্র চিত্তে আহ্বান করে, কিন্তু যখন তা থেকে মুক্তি পায় তখন বলে: মাঝি ভাল ছিল বলে বেঁচে গেলাম। অনুরূপভাবে বৃষ্টি পাওয়ার পর একশ্রেণির মানুষ বলে: অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি পেয়েছি, অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে। এসব কথা ও কাজ আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতকে অস্বীকার করা এবং তাঁর সাথে কুফরী করার শামিল। যে ব্যক্তি অন্তর ও মুখ দিয়ে এসব নেয়ামতকে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা শুকরিয়া আদায় করা ঈমানের মাথা যা তিনটি রুকনের ওপর প্রতিষ্ঠিত
১. আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সকল নেয়ামত অন্তরে স্বীকার করা। ২. মুখে বলা এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা। ৩. আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে তা কাজে লাগানো। সুতরাং মানুষের উচিত আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতকে স্বীকার করে ইবাদত ও আনুগত্যমূলক কাজে ব্যবহার করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. চতুষ্পদ জন্তুসহ অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা অনেক উপকার নিহিত রেখেছেন।
২. এসব নেয়ামত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য হল যাতে মানুষ তার কাছে আত্মসমর্পণ করে।
৩. নেয়ামতকে আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্পৃক্ত না করে অন্যের দিকে সম্পৃক্ত করা শিরক ও নেয়ামতকে অস্বীকার করা হয়।
৪. ঈমান ও ইসলাম গ্রহণ করতে কাউকে জবরদস্তি করা ইসলামের বিধান নয়।
9 Fozlur Rahman
তারা আল্লাহর নেয়ামত চেনে; তারপরও তা অস্বীকার করে। তাদের অধিকাংশই কাফের।
10 Mokhtasar Bangla
৮৩. মুশরিকরা তাদেরকে দেয়া আল্লাহর নিয়ামতসমূহ ভালোভাবেই জানে। যেগুলোর অন্যতম হলো তাদের নিকট নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে পাঠানো। এরপরও তারা সেগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় না করে বরং রাসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করে তাঁর নিয়ামতসমূহকে অস্বীকার করে। বস্তুতঃ তাদের অধিকাংশই তাঁর নিয়ামত অস্বীকারকারী।
11 Tafsir Ibn Kathir
৮০-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর
মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর আরো অসংখ্য ইহসান, ইনআম ও নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনিই আদম সন্তানের বসবাসের এবং আরাম ও শান্তি লাভ করার জন্যে ঘর-বাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে চতুষ্পদ জন্তুর চামড়ার তাঁবু, ডেরা ইত্যাদি তাদেরকে দান করেছেন। এগুলো তাদের সফরের সময় কাজে লাগে। এগুলো বহন করাও সহজ এবং কোন জায়গায় অবস্থানকালে খাটানোও সহজ। তারপর বকরীর লোম, উঁটের কেশ এবং মেষ ও দুম্বার পশম ব্যবসায়ের মাল হিসেবে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন। এগুলো দ্বারা বাড়ীর আসবাবপত্রও তৈরী হয়। যেমন এগুলো দ্বারা কাপড়ও বয়ন করা হয়। এবং বিছানাও তৈরী করা হয়, আবার ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসার মালও বটে। এগুলো বড়ই উপকারী জিনিস এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানুষ এগুলো দ্বারা উপকার লাভ করে থাকে।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ তোমাদের উপকার ও আরামের জন্য গাছের ছায়া দান করেছেন। তোমাদের উপকারার্থে তিনি পাহাড়ের উপর গুহা, দুর্গ ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন যাতে তোমরা তাতে আশ্রয় গ্রহণ করতে পার এবং মাথা গুজবার ব্যবস্থা করে নিতে পারে। তিনি তোমাদেরকে দান। করেছেন সূতী ও পশমী কাপড়, যেন তোমরা তা পরিধান করে শীত ও গরম। হতে রক্ষা পাওয়ার সাথে সাথে নিজেদের গুপ্তস্থান আবৃত কর এবং দেহের শোভাবর্ধনে সমর্থ হতে পার। তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন লৌহবর্ম, যা শত্রুদের আক্রমণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের কাজে লাগে। এভাবে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের প্রয়োজনের পুরোপুরি জিনিস নিয়ামত স্বরূপ দিতে রয়েছেন, যেন তোমরা আরাম ও শান্তি পাও এবং প্রশান্তির সাথে নিজেদের প্রকৃত নিয়ামত দাতার ইবাদতে লেগে থাকো।”
تُسْلِمُوْنَ এর দ্বিতীয় পঠন تُسْلَمُوْنَ এরূপও রয়েছে অর্থাৎ, তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ কর। আর প্রথম কিরআতের অর্থ হচ্ছেঃ যাতে অনুগত হও ও আত্মসমর্পণ কর। এই সূরার আর একটি নাম ‘সূরাতুন নিআ’মও রয়েছে। অর্থাৎ নিয়ামত সমূহের সূরা। تُسْلمُوْن এর لام কে যবর দিয়ে পড়লে আর একটি অর্থ হবেঃ “তিনি তোমাদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে কাজে লাগে এরূপ জিনিস দান করেছেন, যেন তোমরা শত্রুদের আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পার।” জঙ্গল ও মরুপ্রান্তরও আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত, কিন্তু এখানে পাহাড়ের নিয়ামতের বর্ণনা দেয়ার কারণ এই যে, যাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে তারা ছিল পাহাড়ের অধিবাসী। কাজেই তাদের অবগতি অনুযায়ী তাদের সাথে। কথা বলা হচ্ছে। অনুরূপভাবে মেষ, বকরী ও উট ছিল তাদের প্রধান জীবনোপকরণ। তাই, মহান আল্লাহ তাদেরকে এই নিয়ামতের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। অথচ এর চেয়ে আরো অনেক বড় বড় অসংখ্য নিয়ামত মাখলুকের হাতে রয়েছে। আর এই একই কারণে শীত-গ্রীষ্ম হতে রক্ষা পাওয়ার উপকরণরূপ নিয়ামতের কথা বলেছেন, অথচ এর চেয়ে আরো বড় নিয়ামত বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু এটা তাদের সামনে রয়েছে এবং তাদের জানা জিনিস। তারা ছিল যুদ্ধপ্রিয় জাতি। তাই, যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়ার যে উপকরণ রয়েছে, সেই নিয়ামতের কথা তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ এর চেয়ে বহু বড় বড় নিয়ামত মানুষের অধিকারে রয়েছে। যেহেতু ওটা ছিল গরম দেশ, সেহেতু তাদেরকে বলা হয়েছেঃ “তিনি তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; ওটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে। কিন্তু এর চেয়ে বহুগুণ উত্তম আরো বহু নিয়ামত কি এই প্রকৃত নিয়ামত দাতা আল্লাহ তাআলার নিকট বিদ্যমান নেই? অবশ্যই আছে। এ কারণেই এ সব নিয়ামত ও রহমত প্রকাশ করার পরেই স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! এখনো যদি এরা আমার ইবাদত, তাওহীদ এবং অসংখ্য নিয়ামতের কথা স্বীকার না করে বরং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে এতে তোমার কি আসে যায়? তুমি তাদেরকে তাদের কাজের উপর ছেড়ে দাও। তুমি তো শুধু প্রচারক মাত্র। সুতরাং তুমি তোমার কার্য চালিয়ে যাও।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তারা তো নিজেরাই জানে যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন নিয়ামতরাজি দানকারী। কিন্তু এটা জানা সত্ত্বেও তারা এগুলি অস্বীকার করছে এবং তার সাথে অন্যদের ইবাদত করছে। এমন কি তারা তাঁর নিয়ামতের সম্পর্ক অন্যদের প্রতি আরোপ করছে। তারা মনে করছে যে, সাহায্যকারী অমুক, আহার্যদাতা অমুক। তাদের অধিকাংশই কাফির। তারা হচ্ছে আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দা।
হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুঈন রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আগমন করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার সামনে وَ اللّٰهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْۢ بُیُوْتِكُمْ سَكَنًا এই আয়াতটি পাঠ করেন। অর্থাৎ “আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন তোমাদের আবাস স্থল।” বেদুঈন বলেঃ “হাঁ, (এটা সত্য)।” তারপর তিনি পাঠ করেনঃ “তিনি তোমাদের জন্যে পশু চর্মের ব্যবস্থা করেন। সে বলেঃ “হাঁ, (এটাও সত্য)।” এইভাবে তিনি আয়াতগুলি পাঠ করতে থাকেন এবং সে প্রত্যেক নিয়ামতেরই স্বীকারোক্তি করে। শেষে তিনি পাঠ করেনঃ “যাতে তোমরা মুসলমান ও অনুগত হয়ে যাও।” সে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যায়। এ সময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “তারা আল্লাহর অনুগ্রহ জ্ঞাত আছে; কিন্তু সেগুলি তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির।” (এটা ইবনু আবি হাতিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)