১০৫-১০৬ নং আয়াতের তাফসীর:
(وَبِالْحَقِّ أَنْزَلْنٰهُ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সত্যসহ কুরআন নাযিল করেছেন। এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। সুতরাং তাতে যা কিছু রয়েছে তা সত্য, যে সংবাদ এসেছে তা সঠিক, যে বিধান দেয়া হয়েছে তা ন্যায়সঙ্গত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَّعَدْلًا)
“সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ।” (সূরা আন‘আম ৬:১১৫)
(وَبِالْحَقِّ نَزَلَ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে সত্যসহ কুরআন নাযিল করেছেন সে সত্য নিয়েই কুরআন নাযিল হয়েছে। অন্য কারো কথা মিশ্রিত নেই, কোন কম-বেশি করা হয়নি, নাযিল হওয়ার পথে কোন পরিবর্তন হয়নি এবং শয়তানও তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। কারণ এ কুরআন নিয়ে এসেছেন এমন একজন রাসূল যিনি আমানতদার, শক্তিশালী ও আনুগত্যশীল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِي الْعَرْشِ مَكِيْنٍ لا مُّطَاعٍ ثَمَّ أَمِيْنٍ)
“সে শক্তিশালী আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন।” (সূরা তাকভীর ৮১:২০-২১)
সুতরাং যারা বলে জিবরীল (عليه السلام) ওয়াহী নাযিল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে খিয়ানত করেছেন, যেমন ওয়াহী নিয়ে আসার নির্দেশ ছিল আলী (রাঃ)-এর কাছে ভুল করে মুহাম্মাদের কাছে নিয়ে গেছে তাদের এ সব কথা অনর্থক ও ভ্রান্ত ছাড়া কিছুই নয়।
আর আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যারা ঈমান আনবে ও সৎ আমল করবে তাদের জন্য তিনি উত্তম প্রতিদানের সুসংবাদদাতা, আর যারা কুফরী করবে, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে তাদের জন্য জাহান্নামের সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছেন।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, তিনি এ কুরআনকে খণ্ড খণ্ড করে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অবতীর্ণ করেছেন। যাতে তিনি মানুষকে সহজে বুঝাতে পারেন। পূর্ববতী আসমানী কিতাব একত্রে নাযিল করা হয়েছিল, কুরআন প্রয়োজনানুপাতে খণ্ড খণ্ড আকারে নাযিল করলে মুশরিকরা বলল এ কেমন রাসূল যে, তার কাছে একত্রে কিতাব দেয়া হয় না। সে যদি সত্য রাসূল হয় তাহলে যেন পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের ন্যায় একত্রে একটি কিতাব নিয়ে আসে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা তুলে ধরে বলেন:
(وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْلَا نُزِّلَ عَلَيْهِ الْقُرْاٰنُ جُمْلَةً وَّاحِدَةً)
“কাফিররা বলে: ‘সমগ্র কুরআন তার নিকট একবারে অবতীর্ণ হল না কেন?’ (সূরা ফুরকান ২৫:৩২)
কিন্তু খণ্ড খণ্ড আকারে কুরআন নাযিল করার হিকমত রয়েছে, যা অত্র আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। তা হল, যাতে তিনি ক্রমে ক্রমে মানুষকে পাঠ করে শুনাতে পারেন। কারণ একত্রে এত বড় কুরআন নাযিল হলে মানুষ ধারণ করতে পারবে না। এ ছাড়া ক্রমে ক্রমে নাযিল করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্তরকে দীনের উপর অটল রাখেন। কাফিররা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে কষ্ট দিত, আল্লাহ তা‘আলা তখন কুরআন নাযিল করে সান্ত্বনা দিতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كَذٰلِكَ لِنُثَبِّتَ بِه۪ فُؤَادَكَ وَرَتَّلْنٰهُ تَرْتِيْلًا)
“এভাবেই আমি অবতীর্ণ করেছি তোমার হৃদয়কে তা দ্বারা মজবুত করার জন্য এবং তা ক্রমে ক্রমে স্পষ্টভাবে তেলাওয়াত করেছি।” (সূরা ফুরকান ২৫:৩২)
কুরআন খণ্ড খণ্ড আকারে নাযিল হওয়ার অন্যতম আরেকটি উদ্দেশ্য হল সহজেই মুখস্ত করা। কারণ একত্রে কুরআন নাযিল হলে মুখন্ত করা কঠিন হয়ে যাবে।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা এই কুরআনকে সত্যসহকারে ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুযায়ী অবতীর্ণ করেছেন। যাতে মানুষের বুঝতে সহজ হয়, ধারণ করতে সহজ হয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন সত্যসহকারে অবতীর্ণ হয়েছে। এতে কোন প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন হয়নি।
২. কুরআন প্রয়োজন অনুপাতে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ হয়েছে, একেবারে অবতীর্ণ হয়নি।
৩. কুরআন খণ্ড খণ্ড আকারে নাযিল হওয়ার অন্যতম একটি হিকমত হল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা দেয়া।