২৬-২৮ নং আয়াতের তাফসীর
পিতা-মাতার সাথে সদয় আচরণের নির্দেশ দানের পর আল্লাহ তাআলা আত্মীয়দের সাথে সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন। হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মাতার সাথে সদাচরণ কর এবং পিতার সাথেও সদাচরণ কর। তারপর তার সাথে উত্তম ব্যবহার কর যে বেশী নিকটবর্তী, তারপর তার সাথে যে বেশী নিকটবর্তী।” অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি তার জীবিকায় ও বয়সে বৃদ্ধি বা উন্নতি চায় সে যেন সদয় আচরণ করে।”
মুসনাদে বায্যারে রয়েছে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতিমাকে (রাঃ) ডেকে তাকে ফিদক (বাগানটি) দান করেন। (এই হাদীসের সনদ সঠিক নয় এবং ঘটনাটিও সত্য বলে মনে হচ্ছে না। কেননা, এই আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সময় ফিদক' বাগানটি রাসূলুল্লাহর (সঃ) দখলেই ছিল না। সপ্তম হিজরীতে খায়বার বিজিত হয়, এরপর ফিদক নামক বাগানটি রাসূলুল্লাহর (সঃ) অধিকারভূক্ত হয়)
মিসকীন ও মুসাফিরের পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে বারাআতে গত হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। খরচের হুকুমের পর অপব্যয় করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করছেন। মানুষের কৃপণ হওয়াও উচিত নয় এবং অপব্যয়ী হওয়াও উচিত নয়, বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিত। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ وَ الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ یُسْرِفُوْا وَ لَمْ یَقْتُرُوْا وَ كَانَ بَیْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا অর্থাৎ “যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অমিতব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (২৫:৬৭) তারপর আল্লাহ তাআলা অপব্যয়ের মন্দগুণের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, অপব্যয়ী লোকেরা শয়তানের ভাই। تَبْذِيْر বলা হয় অন্যায় পথে ব্যয় করাকে। কেউ যদি তার সমুদয় মাল আল্লাহর পথে ব্যয় করে দেয়, তবুও তাকে অমিতব্যয়ী বলা হবে না। পক্ষান্তরে অল্প মালও যদি অন্যায় পথে ব্যয় করে তবুও, তাকে অমিতব্যয়ী বলা হবে।
বানু তামীম গোত্রের একটি লোক রাসূলুল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি একজন সম্পদশালী লোক এবং আমার পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন রয়েছে। আমি কি পন্থা অবলম্বন করবো। তা আমাকে বলে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “প্রথমে তুমি। যাকাতকে তোমার মাল হতে পৃথক করে দাও, তাহলে তোমার মাল পবিত্র হয়ে যাবে। তারপর তা হতে তোমার আত্মীয় স্বজনের উপর খরচ কর, ভিক্ষুককে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং প্রতিবেশী ও মিসকীনদের উপরও খরচ কর।” সে আবার বললোঃ حَسْبِىَ اللهُ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অল্প কথায় পূর্ণ। উদ্দেশ্যটি আমাকে বুঝিয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “আত্মীয় স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদের হক আদায় কর এবং বাজে খরচ করো না।” সে তখন বললোঃ । অর্থাৎ “আল্লাহ আমার জন্যে যথেষ্ট।” আচ্ছা জনাব! যখন আপনার যাকাত আদায়কারীকে আমার যাকাতের মাল প্রদান করবো তখন কি আমি আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের (সঃ) কাছে মুক্ত হয়ে যাবো। (অর্থাৎ আমার উপর আর কোন দায়িত্ব থাকবে না, (তা)?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে তাকে বললেনঃ “হাঁ, যখন তুমি আমার দূতকে তোমার যাকাতের মাল প্রদান করে দেবে তখন তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) কাছে মুক্ত হয়ে যাবে এবং তোমার জন্যে প্রতিদান ও পুরস্কার সাব্যস্ত হয়ে। যাবে। এখন যে এটা বদলিয়ে দেবে, এর গুনাহ তার উপরই বর্তিবে।”
এখানে বলা হয়েছে যে, অপব্যয়, নির্বুদ্ধিতা, আল্লাহর আনুগত্য হতে ফিরে আসা এবং অবাধ্যতার কারণে অপব্যয়ী লোকেরা শয়তানের ভাই হয়ে যায়। শয়তানের মধ্যে এই বদঅভ্যাসই আছে যে, সে আল্লাহর নিয়ামতের নাশুকরী করে এবং তার আনুগত্য অস্বীকার করে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই আত্মীয় স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদের কেউ যদি তোমার কাছে কিছু চেয়ে বসে এবং ঐ সময় তোমার হাতে কিছুই না থাকে, আর এই কারণে তোমাকে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে দিতে হয় তবে তাকে নরম কথায় বিদায় করতে হবে। যেমন বলতে হবেঃ “ভাই! এখন আমার হাতে কিছুই নেই। যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে দিবেন তখন আমি। তোমার প্রাপ্য ভুলে যাবো না ইত্যাদি।”