৩৭-৩৮ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে দর্পভরে ও বাবুয়ানা চালে চলতে নিষেধ করেছেন। উদ্ধত ও অহংকারী লোকদের এটা অভ্যাস। এরপর তাদেরকে নীচু করে দেখবার জন্যে আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ তুমি যতই মাথা উঁচু করে চল না কেন, তুমি পাহাড়ের উচ্চতা থেকে নীচেই থাকবে। আর যতই খট খট করে দম্ভভরে মাটির উপর দিয়ে চল না কেন, তুমি যমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না। বরং এরূপ লোকদের অবস্থা বিপরীত হয়ে থাকে। যেমন হাদীসে এসেছে যে, এক ব্যক্তি গায়ে চাদর জড়িয়ে দর্পভরে চলছিল, এমতাবস্থায় তাকে যমিনে ধ্বসিয়ে দেয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত সে নীচে নামতেই আছে। কুরআন কারীমে কারূণের কাহিনী বর্ণিত আছে যে, তাকে তার প্রাসাদসহ যমিনে ধ্বসিয়ে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে, যারা নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ। করে তাদের মর্যাদা আল্লাহ তাআলা উঁচু করে দেন। হাদীসে এসেছে যে, যারা নত হয় তাদেরকে আল্লাহ তাআলা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করে দেন। তারা নিজেদের তুচ্ছ জ্ঞান করে, আর জনগণ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী মনে করে। পক্ষান্তরে যারা নিজেদেরকে বড় মর্যাদাবান মনে করে ও অহংকার করে, তাদেরকে জনগণ অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। এমনকি তারা তাদেরকে কুকুর ও শূকর অপেক্ষাও নিকৃষ্ট মনে করে।
ইমাম আবু বকর ইবনু আবিদ দুনিয়া (রাঃ) তাঁর কিতাবুল খুমূল ওয়াত তাওয়াল’ নামক গ্রন্থে এনেছেন যে, ইবনুল আহীম নামক একজন লোক খলীফা মনসরের দরবারে যাচ্ছিল। এ সময় তার পরণে ছিল রেশমী জব্বা এবং ওটা পায়ের গোছার উপর থেকে উলটিয়ে সেলাই করা ছিল যাতে নীচে থেকে কুবাও (লম্বা পোষাক বিশেষ) দেখা যায়। এভাবে সে অত্যন্ত বাবুয়ানা চালে দর্পপদক্ষেপে চলছিল। হযরত হাসান বসরী (রঃ) তাকে এ অবস্থায় দেখে তাঁর সঙ্গীদেরকে লক্ষ্য করে বলেনঃ “ঐ দেখো, ঐ যে মাথা উঁচু করে, গাল ফুলিয়ে ডাট দেখিয়ে আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ভুলে গিয়ে, প্রতিপালকের আহকাম ছেড়ে দিয়ে, আল্লাহর হককে ভেঙ্গে দিয়ে পাগলদের চালে অভিশপ্ত শয়তানের সঙ্গী চলে যাচ্ছে।” তাঁর একথাগুলি ইবনুল আহীম শুনতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে ফিরে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তখন তিনি তাকে বলেনঃ “আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে কি হবে? তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা কর এবং এটা পরিত্যাগ কর। তুমি কি মহান আল্লাহর এই নিষেধাজ্ঞা শুন নাই? وَ لَا تَمْشِ فِی الْاَرْضِ مَرَحًا অর্থাৎ “তুমি দম্ভভরে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণ করো না।” (১৭:৩৭)
আবেদ নাজতারী (রাঃ) হযরত আলীর (রাঃ) বংশের একজন লোককে দর্পভরে চলতে দেখে বলেনঃ “হে এই ব্যক্তি! যিনি তোমাকে এই মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর চালচলন এইরূপ ছিল না।” সে তৎক্ষণাৎ তওবা করে নেয়।
হযরত ইবনু উমার (রাঃ) এইরূপ একটি লোককে দেখে বলেনঃ “এইরূপ লোকই শয়তানের ভাই হয়ে থাকে।”
ইবনু আবিদ দুনিয়ার (রঃ) হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আমার উম্মত দর্প ও অহংকারের চালে চলবে এবং পারসিক ও রোমকদেরকে নিজেদের খিদমতে লাগিয়ে দেবে তখন আল্লাহ তাআলা এককে অপরের উপর আধিপত্য দান করবেন।
سَيِّئُهٗ এর দ্বিতীয় পঠন سَيِّئَة রয়েছে। তখন অর্থ হবেঃ “আমি তোমাদেরকে যে সব কাজ থেকে নিষেধ করেছি ঐ সব কাজ অত্যন্ত মন্দ এবং আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয়।” অর্থাৎ ‘সন্তানদেরকে হত্যা করো না’ থেকে। নিয়ে ‘দর্পভরে চলো না পর্যন্ত সমস্ত কাজ। আর سَيِّئه পড়লে অর্থ হবেঃ وَقَضٰى رَبُّكَ হতে এখন পর্যন্ত যে হুকুম আহকাম ও নিষেধাজ্ঞার বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তাতে যত খারাপ কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওগুলো সবই আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয় কাজ। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন।