৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেনঃ কাফির নেতৃবর্গ পরম্পর কথা বানিয়ে নিতো, সেটাই মহান আল্লাহ স্বীয় নবীকে (সঃ) জানিয়ে দিচ্ছেন। তিনি স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! যখন তুমি কুরআন পাঠে নিমগ্ন থাকো তখন এই কাফির ও মুশরিকদের দল চুপে চুপে পরস্পর বলাবলি করেঃ এর উপর কেউ যাদু করেছে। ভাবার্থ এও হতে পারে? এতো একজন মানুষ, যে পানাহারের মুখাপেক্ষী। যদিও এই শব্দটি এই অর্থে কবিতাতেও এসেছে এবং ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এটাকে সঠিকও বলেছেন, কিন্তু এতে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এই স্থলে তাদের একথা বলার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, স্বয়ং এ ব্যক্তি যার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে কেউ কি আছে যে, তাকে এই সময় কিছু পড়িয়ে যায়? কাফিররা তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা প্রকাশ করতো। কেউ বলতো যে, তিনি কবি। কেউ বলতো যাদুকর এবং কেউ বলতো পাগল। এজন্যেই আল্লাহ পাক বলনেঃ দেখো, কিভাবে এরা বিভ্রান্ত হচ্ছে! তারা সত্যের দিকে আসতেই পারছে না। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) মুখে আল্লাহর কালাম শুনবার উদ্দেশ্যে রাত্রিকালে আবু সুফিয়ান ইবনু হারব, আবু জেহেল ইবনু হিশাম এবং আখনাস ইবনু শুরায়েক নিজ নিজ ঘর হতে বেরিয়ে আসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজের ঘরে রাত্রের নামায (তাহাজ্জদ) পড়ছিলেন। এই তিন ব্যক্তি চুপে চুপে। এদিকে ওদিকে বসে পড়ে। তাদের একের অপরের কোন খবর ছিল না। রাত্রি পর্যন্ত তারা শুনতে থাকে। ফজর হয়ে গেলে তারা সেখান থেকে চলে যায়। ঘটনাক্রমে পথে তাদের পরপরে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। তখন তারা একে অপরকে তিরস্কার করে বলেঃ “আমাদের এরূপ করা উচিত নয়। নতুবা সব লোক তাঁরই হয়ে যাবে।” কিন্তু পরবর্তী রাত্রেও আবার ঐ তিন জনই আসে এবং নিজ নিজ জায়গায় বসে গিয়ে কুরআন শুনতে শুনতে রাত্রি কাটিয়ে দেয়। ফজরের সময় তারা চলে যায়। পথে আবার তাদের মিলন ঘটে। আবার তারা পূর্ব রাত্রির কথার পুনরাবৃত্তি করে। তৃতীয় রাত্রেও এরূপই ঘটে। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “এসো, আমরা অঙ্গীকার করি যে, এরপর আমরা এভাবে কখনোই আসবো না।” এভাবে আহদ ও অঙ্গীকার করে তারা পৃথক হয়ে যায়। সকালে আখনাস তার লাঠি ধরে আবু সুফিয়ানের (রাঃ) বাড়ীতে যায় এবং বলেঃ “হে আবূ হানযালা’! বলতো, মুহাম্মদের (সঃ) ব্যাপারে তোমার মত কি?” আবু সূফিয়ান (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আবু সালারা! আমি কুরআনের যে আয়াতগুলি শুনেছি সেগুলির মধ্যে অনেকগুলিরই ভাবার্থ। আমি বুঝেছি। কিন্তু বহু আয়াতের অর্থ আমি বুঝতে পারিনি।” আখনাস বললোঃ “আমার অবস্থাও তাই।” এখান থেকে বিদায় হয়ে আখনাস আবু জেহেলের কাছে গেল এবং তাকেও অনুরূপ প্রশ্ন করলো। তখন আবূ জেহেল বললোঃ “শুন, শরাফত ও নেতৃত্বের ব্যাপার নিয়ে আবদে মানাফের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের ঝগড়া চলে আসছে। তারা মানুষকে সওয়ারী দান করেছে, তাদের দেখা দেখি আমরাও মানুষকে সওয়ারীর জন্তু দান করেছি। তারা জনগণের সাথে সদাচরণ করেছে এবং তাদেরকে পুরস্কার দিয়েছে, এ ব্যাপারে আমরাও তাদের পিছনে থাকা পছন্দ করি নাই। এসব কাজে যখন তারা ও আমরা সমান হয়ে গেলাম এবং কোন ক্রমেই তারা আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারলো না তখন হঠাৎ করে তারা বলে বসলো যে, তাদের মধ্যে নুবুওয়াত রয়েছে। তাদের মধ্যে এমন একটি লোক রয়েছে যার কাছে নাকি আকাশ থেকে ওয়াহী এসে থাকে। এখন তুমি বলতো, আমরা কি করে একে মানতে পারি? আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো এর উপর ঈমান আনবো না এবং কখনো তাকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করবো না।” এ সময় আখনাস তাকে ছেড়ে যায়। (এ ঘটনাটি ‘সীরাত ইবনু ইসহাক’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে)