একটি জ্ঞাতব্য বিষয়
হাদীস শরীফে আছে যে, সুসংবাদ জান্নাতের এবং ভয় প্রদর্শন দোযখ হতে। لَاتُسْئَلُ-এর আর একটি পঠন مَا تُسْئَلُ-ও রয়েছে। হযরত ইবনে মাসউদের (রাঃ) পঠনে لَنْ تُسْئَلَ-ও এসেছে। অর্থাৎ ' (হে নবী সঃ)! তুমি কাফিরদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে না। যেমন আল্লাহ পাক বলেছেনঃ فَاِنَّمَا عَلَیْكَ الْبَلٰغُ وَعَلَیْنَا الْحِسَابُ অর্থাৎ “ (হে নবী সঃ)! তোমার দায়িত্ব শুধুমাত্র পৌছিয়ে দেয়া এবং হিসাব নেয়ার দায়িত্ব আমার।' (১৩:৪০) আল্লাহ তা'আলা আরও বলেছেনঃ فَذَكِّرْ اِنَّمَاۤ اَنْتَ مُذَكِّرٌـ لَسْتَ عَلَیْهِمْ بِمُصَۜیْطِرٍ
অর্থাৎ ‘তুমি উপদেশ দিতে থাক, তুমি শুধু উপদেষ্টা মাত্র। তুমি তাদের উপর দায়গ্রস্ত অধিকারী নও।' (৮৮:২১-২২) আল্লাহপাক আর এক জায়গায় বলেনঃ نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا یَقُوْلُوْنَ وَ مَاۤ اَنْتَ عَلَیْهِمْ بِجَبَّارٍ فَذَكِّرْ بِالْقُرْاٰنِ مَنْ یَّخَافُ وَعِیْدِ অর্থাৎ তারা যা কিছু বলছে, আমি খুব অবগত আছি, তুমি তাদের উপর বল প্রয়োগকারী নও। অতএব তুমি কুরআনের মাধ্যমে ঐ লোকদেরকে উপদেশ দিতে থাক যারা আমার সতর্কবাণীকে ভয় করে চলে।' (৫০:৪৫)
এ বিষয়ের আরও বহু আয়াত রয়েছে। এর একটি পঠন وَلَا تُسْئَلْ এসেছে। অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি ঐ দোযখবাসীদের সম্বন্ধে আমাকে জিজ্ঞেস করো না।'
মুহাম্মদ বিন কা'বুল কারাযী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যদি আমি আমার পিতা-মাতার অবস্থা জানতে পারতাম! যদি আমি আমার পিতা-মাতার অবস্থা জানতে পারতাম! যদি আমি আমার পিতা-মাতার অবস্থা জানতে পারতাম! যদি আমি আমার পিতা মাতার অবস্থা জানতে পারতাম!' তখন এ নির্দেশনামা অবতীর্ণ হয়। অতঃপর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার পিতা-মাতার কথা উল্লেখ করেননি। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) মূসা বিন উবাইদার (রঃ) বর্ণনায় এটা এনেছেন। কিন্তু বর্ণনাকারী সম্বন্ধে সমালোচনা রয়েছে।
কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ ‘এর ভাবার্থ এই যে, যাদের অবস্থা এরূপ খারাপ ও জঘন্য তাদের সম্বন্ধে যেন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তা'আলাকে কিছুই জিজ্ঞেস করেন।
‘তাযুকিরাহ' নামক কিতাবে কুরতুবী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জনক জননীকে জীবিত করা হয় এবং তারা তার উপর ঈমান আনেন। সহীহ মুসলিমের যে হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোন এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেনঃ “আমার পিতা ও তোমার পিতা দোযখে রয়েছে এর উত্তরও তথায় রয়েছে। কিন্তু এটা স্মরণ রাখা দরকার যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিতা-মাতাকে জীবিত করার হাদীসটি ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীস ইত্যাদির মধ্যে নেই এবং এর ইসনাদও দুর্বল।
তাফসীর-ই-ইবনে জারীরের একটি মুরসাল হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) একদা জিজ্ঞেস করেন- “আমার বাপ-মায়ের কবর কোথায় আছে?' সেই সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটা খণ্ডন করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর তাঁর পিতা-মাতা সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করা অসম্ভব। প্রথম কিরআতটিই সঠিক। কিন্তু আমরা ইমাম জারীরের (রঃ) উপর বিস্মিত হচ্ছি যে, কি করে তিনি এটাকে অসম্ভব বললেন! সম্ভবতঃ এ ঘটনা ঐ সময়ের হবে যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর পিতা-মাতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং এর পরিণাম সম্বন্ধে তিনি হয়তো অবহিত ছিলেন না। অতঃপর তিনি যখন তাদের অবস্থা জেনে নেন তখন তিনি এ কাজ হতে বিরত থাকেন এবং তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং স্পষ্টভাবে বলে দেন যে, তারা দুজনই জাহান্নামী। যেমন বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয়েছে।
মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) কে হযরত আতা' বিন ইয়াসার (রঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “তাওরাতের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (স)-এর গুণাবলী ও প্রশংসা কি রয়েছে? তখন তিনি বলেনঃ হাঁ! তাঁর যে গুণাবলী কুরআন মাজীদের মধ্যে রয়েছে, ঐগুলোই তাওরাতের মধ্যেও রয়েছে। তাওরাতের মধ্যে আছে -“হে নবী (সঃ)! আমি তোমাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা, ভয় প্রদর্শক এবং মুখদের রক্ষক করে পাঠিয়েছি। তুমি আমার বান্দা ও রাসূল। আমি তোমার নাম মুতাওয়াক্কিল’ (ভরসাকারী) রেখেছি। তুমি কর্কশ ভাষীও নও তোমার হৃদয় কঠোরও নয়। তুমি দুশ্চরিত্রও নও। তুমি বাজারে গঞ্জে গণ্ডগোল সৃষ্টিকারীও নও। তিনি মন্দের বিনিময়ে মন্দ করেন না, বরং ক্ষমা করে থাকেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে দুনিয়া হতে উঠাবেন না যে পর্যন্ত তিনি বক্র ধর্মকে তার দ্বারা সোজা না করেন, মানুষ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কে স্বীকার করে না নেয়, অন্ধ চক্ষু খুলে না যায়, তাদের বধির কর্ণ শুনতে না থাকে এবং মরিচা ধরা অন্তর পরিষ্কার হয়ে না যায়।
সহীহ বুখারী শরীফের كِتَابُ الْبُيُوْعِ-এর মধ্যেও হাদীসটি রয়েছে এবং كِتَابُ التَّفْسِيْرِ এর মধ্যেও বর্ণিত হয়েছে। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই এর মধ্যে এ বর্ণনার পরে এটুকু বেশী রয়েছেঃ “আমি আবার হযরত কা'ব (রাঃ)কেও এ প্রশ্নই করেছি এবং তিনিও ঠিক এ উত্তরই দিয়েছেন।'