আল বাকারা আয়াত ১৫
اَللّٰهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ ( البقرة: ١٥ )
Allahu yastahzi'u bihim wa yamudduhum fee tughyaanihim ya'mahoon (al-Baq̈arah ২:১৫)
English Sahih:
[But] Allah mocks them and prolongs them in their transgression [while] they wander blindly. (Al-Baqarah [2] : 15)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আল্লাহ তাদের সঙ্গে (জবাবে) উপহাস করেন এবং তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের মত তাদেরকে ঘুরে মরার অবকাশ দেন। (আল বাকারা [২] : ১৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
আল্লাহ তাদের সাথে পরিহাস করেন(১) আর তাদের অবাধ্যতায় তাদেরকে বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন।
(১) 'আল্লাহ তাদের সাথে পরিহাস করেন'-এর একটি অর্থ হল, যেভাবে তারা মুসলিমদের সাথে উপহাস ও বিদ্রূপমূলক কার্যকলাপ করে, আল্লাহও তাদের সাথে অনুরূপ কার্যকলাপ ক'রে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করেন। এটাকে ভাষাগত ব্যবহারে 'পরিহাস' বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা পরিহাস নয়, বরং তা আসলে তাদের পরিহাস কর্মের শাস্তি। যেমন "মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই।" (সূরা শূরা ৪২;৪০ আয়াত) এই আয়াতে মন্দের প্রতিফলকেও মন্দ বলা হয়েছে। অথচ তা মন্দ নয়; বরং তা একটি বৈধ কাজ। তদনুরূপ "নিশ্চয় মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুত তিনিও তাদেরকে প্রতারিত ক'রে থাকেন।" (সূরা নিসা ৪;১৪২ আয়াত) "অতঃপর তারা ষড়যন্ত্র করল এবং আল্লাহও কৌশল প্রয়োগ করলেন।" (আলে ইমরান ৩;৫৪ আয়াত) প্রভৃতি আয়াতসমূহেও অনুরূপ এসেছে।
এর দ্বিতীয় অর্থ হল, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহও তাদের সাথে উপহাস করবেন। যেমন সূরা হাদীদ ৫৭;১৩ নং আয়াতে এর পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আল্লাহ্ তাদের সাথে উপহাস করেন [১] , এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন।
[১] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, ‘আল্লাহ্ তা'আলা তাদের থেকে বদলা নেয়ার জন্য তাদের সাথে উপহাস করেছেন’। কাফেরদের ঠাট্টা বা উপহাসের বিপরীতে আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক তাদের সাথে উপহাস বা ঠাট্টা করা দোষণীয় কিছু নয়। বরং এটা আল্লাহ্র এমন এক কর্মবাচক গুণ যা হওয়া জরুরী। কেননা, আল্লাহ্র দিকে সম্পৃক্ত করার দিক থেকে বিভিন্ন গুণাগুণ চার প্রকারঃ
১) এমন কিছু গুণ রয়েছে, যেগুলো গুণ হিসেবে পরিপূর্ণ ও উত্তম তবে কখনো কখনো এগুলো থেকে মন্দ অর্থও বুঝা যায়। এরূপ গুণসমূহ থেকে আল্লাহ্র নাম গ্রহণ করা যাবে না। বরং গুণ হিসেবে উল্লেখ করতে হবে। যেমন, ‘কালামুল্লাহ' (আল্লাহ্র কথাবার্তা), ‘ইরাদা’ (আল্লাহ্র ইচ্ছা) এগুলো আল্লাহ্র গুণ হিসেবে ব্যবহার হবে অর্থাৎ গুণ হিসেবে তাঁকে ‘মুতাকাল্লেম’ ও ‘মুরীদ বলা যাবে। কিন্তু এগুলো থেকে আল্লাহ্র নাম গ্রহণ করে আল্লাহ্ তা'আলাকে ‘মুতাকাল্লেম’ ও ‘মুরীদ' নাম দেয়া যাবে না। কেননা, কথাবার্তায় ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ইনসাফ-যুলুম সবকিছুই থাকে। ইচ্ছাও তদ্রুপ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কাউকে আব্দুল মুতাকাল্লেম বা আব্দুল মুরীদ বলা যাবে না এবং আল্লাহ্কে ডাকার জন্য ‘ইয়া মুতাকাল্লেম! ‘ইয়া মুরাদ' বলা যাবে না।
২) এমনকিছু গুণ রয়েছে যেগুলো পুরোপুরিভাবেই উত্তম গুণ। সেগুলো কোন মন্দ অর্থে ব্যবহৃত হয় না। এগুলো গুণ হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয় তেমনিভাবে এগুলো থেকে নামও গ্রহণ করা যাবে আর আল্লাহ্র অধিকাংশ নামও এ ধরণের গুণসমৃদ্ধ। যেমন, রাহমান, রাহীম, সামী', বাছীর ইত্যাদি। এগুলো থেকে তাঁর নাম সাব্যস্ত হওয়ার সাথে সাথে তাঁর জন্য দয়া, করুণা, শুনা ও দেখার গুণসমূহও সাব্যস্ত হবে।
৩) এমনকিছু গুণ রয়েছে যেগুলো সাধারণতঃ উত্তম গুণ নয়। বিশেষ বিশেষ অবস্থায় তা উত্তম গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এগুলো বিশেষ বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতেই শুধু আল্লাহ্র গুণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। যেমন, ধোঁকা, কারসাজি, ঠাট্টা, কৌশল ইত্যাদি আল্লাহ্র জন্য ব্যবহার করে বলা যাবে না যে, আল্লাহ্ ধোঁকা দেন, ঠাট্টা করেন ইত্যাদি। কিন্তু এভাবে বলা যাবে যে, আল্লাহ্ তা'আলা যারা তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করে, ধোঁকাবাজি করে তাদের সাথে ঠাট্টা করেন, ধোঁকা দেন। এর দ্বারা আল্লাহ্র কোন অসম্মান বুঝা যায় না।
৪) এমনকিছু গুণ রয়েছে যেগুলো কোন অবস্থাতেই উত্তমগুণ নয়। যেমন, অপারগতা, দুর্বলতা, অন্ধত্ব, বধিরতা ইত্যাদি। এ জাতীয় গুণাবলী আল্লাহ্র জন্য কোন অবস্থাতেই সাব্যস্ত করা যাবে না।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমাদের কাছে স্পষ্ট হলো যে, যারা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা আল্লাহ্র উত্তম গুণের অন্তর্ভুক্ত। [মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল-উসাইমীন; আল-কাওলুল মুফীদ]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আল্লাহ তাদের প্রতি উপহাস করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরার অবকাশ দেন।
4 Muhiuddin Khan
বরং আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে।
5 Zohurul Hoque
আল্লাহ্ তাদের প্রতি মস্করা ঘুরিয়ে পাঠান, এবং তাদের অন্যায় ক্রিয়া-কলাপের মধ্যে ঘুরপাক খেতে তাদের ছেড়ে দেন।
6 Mufti Taqi Usmani
আল্লাহ তাদের সাথে তামাশা (-এর আচরণ) করেন এবং তাদেরকে ঢিল দেন, যাতে তারা তাদের অবাধ্যতায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
7 Mujibur Rahman
আল্লাহ তাদের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছেন এবং তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন। ফলে তারা নিজেদের অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ফিরছে।
8 Tafsir Fathul Mazid
১৪ ও ১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
এটাও মুনাফিকদের একটি মুখের কথা যা তাদের অন্তরে নেই। যখন তারা মু’মিনদের সাথে একত্রিত হয় তখন নিজেদেরকে ঈমানদার দাবি করে, আবার যখন তাদের শয়তান সাথীদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা তাদেরকে বলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি।
বিশিষ্ট তাবেয়ী সুদ্দী ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এখানে شَیٰطِیْنِھِمْ (শয়তান) দ্বারা উদ্দেশ্য হল- মুশরিক, মুনাফিক ও ইয়াহূদীদের নেতা ও সর্দার। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/১৩৮)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, প্রত্যেক পথভ্রষ্টকারী ও অবাধ্যকে শয়তান বলা হয়। তারা জিন ও মানব উভয় জাতি থেকে হতে পারে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَکَذٰلِکَ جَعَلْنَا لِکُلِّ نَبِیٍّ عَدُوًّا شَیٰطِیْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ یُوْحِیْ بَعْضُھُمْ اِلٰی بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا)
“অনুরূপভাবে আমি মানব ও জিনের মধ্যে যারা শয়তান তাদেরকে প্রত্যেক নাবীর শত্র“ করেছি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তাদের একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা অতি গোপনীয়ভাবে জানিয়ে দেয়।”(সূরা আন‘আম ৬:১১২)
সুতরাং মুনাফিকরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অথবা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যখন ঈমানের কথা বলা দরকার তখন ঈমানের কথা বলে আর যখন কুফরী করা প্রযোজন হবে তখন কুফরী করে।
(إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ)
‘নিশ্চয়ই আমরা তো শুধু ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকি’অর্থাৎ মুনাফিকরা তাদের শয়তান সাথীদের বলে: আমরা মু’মিনদের সাথে ঈমানের কথা বলে ঠাট্টা করি। মু’মিনদের সাথে ঠাট্টার বদলাস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলাও তাদের সাথে ঠাট্টা করেন। আল্লাহ তা‘আলার ঠাট্টা করা হল: তারা যে দুর্ভাগা ও খারাপ অবস্থায় আছে তা তাদের কাছে চাক্যচিক্য করে তুলে ধরেছেন, ফলে তাদের ধারণা যে তারা মু’মিনদের শামিল। আবার কিয়ামতের দিন তাদের সাথে ঠাট্টা করবেন এভাবে যে, মু’মিনদের মত তাদেরকেও পথ চলার জন্য বাহ্যিক নূর দেবেন কিন্তু যখন পথ চলতে শুরু করবে তখন তাদের নূর নিভে যাবে, ফলে অন্ধকারে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ یَقُوْلُ الْمُنٰفِقُوْنَ وَالْمُنٰفِقٰتُ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوا انْظُرُوْنَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُّوْرِکُمْﺆ قِیْلَ ارْجِعُوْا وَرَا۬ءَکُمْ فَالْتَمِسُوْا نُوْرًاﺚ فَضُرِبَ بَیْنَھُمْ بِسُوْرٍ لَّھ۫ بَابٌﺚ بَاطِنُھ۫ فِیْھِ الرَّحْمَةُ وَظَاھِرُھ۫ مِنْ قِبَلِھِ الْعَذَابُ)
“সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী মু’মিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, যাতে আমরা তোমাদের নূর হতে কিছু গ্রহণ করতে পারি। বলা হবেঃ তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও ও আলোর সন্ধান কর। অতঃপর উভয়ের মাঝামাঝি স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর। সেখানে একটি দরজা থাকবে, যার অভ্যন্তরে রহমত এবং বহির্ভাগে আযাব।”(সূরা হাদীদ ৫৭:১৩)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন:
‘‘المكر و الخداع والسخرية
‘‘ অর্থাৎ ষড়যন্ত্র করা, ধোঁকা দেয়া ও ঠাট্টা করা ইত্যাদি স্বভাবসমূহ বিনা কারণে আল্লাহ তা‘আলার শানে ব্যবহার করা সমীচীন নয়।
তবে শাস্তি ও বদলাস্বরূপ ব্যবহৃত হলে কোন নিষেধ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) মূলতঃ কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলার জন্য ঐ জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার হয়েছে শাস্তি ও প্রতিফল প্রদানের ক্ষেত্রে। অতএব ঐ স্বভাবগুলো আল্লাহ তা‘আলার জন্য ব্যবহার হলে মাখলুকের ন্যায় ধারণা করা বৈধ হবে না।
(وَيَمُدُّهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ)
‘তাদেরকে (তাদের) নিজেদের অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে ফেরার জন্য ঢিল দেন’ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও কতক সাহাবী হতে বর্ণিত তারা বলেন: يمدهم এর অর্থ হচ্ছে يملي عليهم অর্থাৎ তাদেরকে অবকাশ দেন। মুজাহিদ বলেন: يمدهم এর অর্থ বৃদ্ধি করে দেয়া। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّھُمْ بِھ۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِیْنَﮆﺫ نُسَارِعُ لَھُمْ فِی الْخَیْرٰتِﺚ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্যস্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি, তা দ্বারা তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, বরং তারা বুঝে না।”(সূরা মু’মিনুন ২৩:৫৫-৫৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ)
“এমনভাবে ক্রমে ক্রমে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারবে না।”(সূরা আ‘রাফ ৭:১৮২)
কেউ কেউ বলেছেন: যখনই তারা নতুন নতুন পাপকাজ করেছে আল্লাহ তা‘আলা তখনই তাদের দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্য আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা ছিল নেয়ামত; প্রকৃতপক্ষে তা ছিল শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُکِّرُوْا بِھ۪ فَتَحْنَا عَلَیْھِمْ اَبْوَابَ کُلِّ شَیْءٍﺚ حثج اِذَا فَرِحُوْا بِمَآ اُوْتُوْٓا اَخَذْنٰھُمْ بَغْتَةً فَاِذَا ھُمْ مُّبْلِسُوْنَ)
“তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল তখন আমি তাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লসিত হল, অতঃপর হঠাৎ তাদেরকে ধরলাম; ফলে তখনি তারা নিরাশ হল।”(সূরা আন‘আম ৬:৪৪)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন: সঠিক কথা হল তাদের ঔদ্ধত্যতার অবকাশ দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَنُقَلِّبُ اَفْئِدَتَھُمْ وَاَبْصَارَھُمْ کَمَا لَمْ یُؤْمِنُوْا بِھ۪ٓ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُھُمْ فِیْ طُغْیَانِھِمْ یَعْمَھُوْنَ)
“তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি আমিও তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেব।”(সূরা আন‘আম ৬:১১০)
ইবনু আব্বাস (রাঃ), কাতাদাহ, মুজাহিদ, আবুল আলিয়া (রহঃ) প্রমুখ বলেন:
(فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ)
এর অর্থ হচ্ছে তারা তাদের কুফরীতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, হীনতায় উদভ্রান্ত। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/১৪০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুনাফিকরা নিজেদের ঘৃণ্য চরিত্র চরিতার্থ করার জন্য দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে, সুতরাং তারা কখনও ঈমানদার নয় প্রকৃতপক্ষে তারা মিথ্যুক।
২. আল্লাহ তা‘আলা বে-ঈমানদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে কুফরীর অবকাশ প্রদান করেন তাদের পরকালীন শাস্তি আরো বৃদ্ধি করার জন্য।
৩. মানুষ শয়তানরা জিন শয়তান থেকে অধিক ক্ষতিকর, মুনাফিকরাই মানুষ শয়তান।
9 Fozlur Rahman
আল্লাহও তাদের সাথে তামাশা করছেন (তাদের তামাশার পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছেন) এবং তাদেরকে আরো অন্যায় করার অবকাশ দিচ্ছেন, যাতে তারা পথহারা হয়ে ঘুরতে থাকে।
10 Mokhtasar Bangla
১৫. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের সাথে তাদের ঠাট্টার বিনিময়ে তাদের সাথে ঠাট্টাই করছেন। আর এটিই হলো কাজের ধরন অনুযায়ী শাস্তি। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে তাদের উপর মুসলমানদের বিধান জারি করলেন। আর পরকালে তিনি তাদেরকে তাদের কুফরি ও মুনাফিকির জন্য শাস্তি দিবেন। এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি খানিকটা অবকাশ দিচ্ছেন। যাতে তারা ভ্রষ্টতা ও হঠকারিতায় আরো সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে তারা অস্থির ও দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় জীবন যাপন করে।
11 Tafsir Ibn Kathir
১৪-১৫ নং আয়াতের তাফসীর
ভাবার্থ এই যে এসব মুনাফিকগণ মুসলমানদের নিকট এসে নিজেদের ঈমান, বন্ধুত্ব ও মঙ্গল কামনার কথা প্রকাশ করে তাদেরকে ধোকায় ফেলতে চায়, যাতে জান ও মালের নিরাপত্তা এসে যায় এবং যুদ্ধলব্ধ মালেও ভাগ পাওয়া যায়। আর যখন নিজেদের দলে থাকে তখন তাদের হয়েই কথা বলে। শব্দের অর্থ এখানে خَلَصُوْا، ذَهَبُوْا، اِنْصَرَفُوْا এবং مَضَوْا অর্থাৎ তারা প্রত্যাবর্তন করে, পৌছে, গোপনে বা নিভৃতে থাকে এবং যায়। সুতরাং خَلَوْا এখানে اِلٰى-এর সঙ্গে مُتَعَدِّى হয়ে ফিরে যাওয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, اِلٰى-এর অর্থ হচ্ছে مَعَ, কিন্তু প্রথমটিই সঠিক। ইবনে জারীরের (রঃ) কথার সারাংশ এটাই। شَيَاطِيْن-এর অর্থ হচ্ছে নেতা, বড় দলপতি এবং সর্দার। যেমন ‘আহ্বার’ বা ইয়াহূদী আলেমগণ, কুরায়েশ কাফিরদের সর্দারগণ এবং কপটগণ।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীগণের (রাঃ) মতে شَيَاطِيْن হচ্ছে তাদের প্রধান, কাফির সর্দারগণ এবং তাদের সমবিশ্বাসী লোকও বটে। এই ইয়াহুদী নেতারাও নবুওয়াতকে অবিশ্বাস করার এবং কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পরামর্শ দিতো। মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ شَيَاطِيْن-এর ভাবার্থ হচ্ছে তাদের সাথী সঙ্গী। তারা হয় মুশরিক ছিল, হয় মুনাফিক ছিল। কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে ঐসব লোক খারাপ কাজ ও শিরকের কাজে তাদের সর্দার ছিল। আবুল আলিয়া (রঃ), সুদ্দী (রঃ) এবং রাবী বিন আনাসও (রঃ) এ তাফসীরই করে থাকেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক পথভ্রষ্টকারী ও অবাধ্যকে شَيْطَان বলা হয়। তারা। জ্বিন বা দানব থেকেই হোক অথবা মানব থেকেই হোক। কুরআন কারীমের মধ্যেও এসেছেঃ (৬:১১২) وَ كَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِیٍّ عَدُوًّا شَیٰطِیْنَ الْاِنْسِ وَ الْجِنِّ হাদীস শরীফে এসেছেঃ ‘আমরা জ্বিন ও মানুষের শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।
হযরত আবু যার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কি শয়তান আছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ হাঁ যখন এই মুনাফিকরা মুসলমানদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলেঃ “আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি, অর্থাৎ যেমন তোমরা, তেমনই আমরা, আমরা তো তাদেরকে উপহাস করছিলাম।' হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত রাবী বিন আনাস (রঃ) এবং হযরত কাতাদাহ (রঃ) -এর তাফসীরও এটাই। মহান আল্লাহ তাদেরকে উত্তর দিতে গিয়ে তাদের প্রতারণামূলক কার্যের মুকাবিলায় বলেন যে, আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে উপহাস করবেন এবং অবাধ্যতার মধ্যে উদভ্রান্ত হয়ে ফিরতে দেবেন। যেমন কুরআন মাজীদের এক জায়গায় আছেঃ یَوْمَ یَقُوْلُ الْمُنٰفِقُوْنَ وَ الْمُنٰفِقٰتُ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوا انْظُرُوْنَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُّوْرِكُمْ قِیْلَ ارْجِعُوْا وَرَآءَكُمْ فَالْتَمِسُوْا نُوْرًا فَضُرِبَ بَیْنَهُمْ بِسُوْرٍ لَّهٗ بَابٌ بَاطِنُهٗ فِیْهِ الرَّحْمَةُ وَ ظَاهِرُهٗ مِنْ قِبَلِهِ الْعَذَابُ
অর্থাৎ ‘কিয়ামতের দিন মুনাফিক নর ও নারী মুমিনদেরকে বলবে, একটু থামো, আমরাও তোমাদের আলো দ্বারা একটু উপকার গ্রহণ করি। বলা হবেপিছনে ফিরে আলো অনুসন্ধান কর, ফিরা মাত্রই মধ্যস্থলে একটি প্রাচীরের আড়াল দেয়া হবে, যার মধ্যে দরজা থাকবে, এর এদিকে থাকবে রহমত এবং ওদিকে থাকবে শাস্তি।' (৫৭:১৩) অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা ঘোষনা করেছেনঃ وَ لَا یَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اَنَّمَا نُمْلِیْ لَهُمْ خَیْرٌ لِّاَنْفُسِهِمْ اِنَّمَا نُمْلِیْ لَهُمْ لِیَزْدَادُوْۤا اِثْمًاۚ
অর্থাৎ কাফিরেরা যেন আমার ঢিল দেয়াকে তাদের জন্যে মঙ্গলজনক মনে। করে, তাদের পাপ আরও বেড়ে যাক এজন্যেই আমি তাদের ঢিল দিচ্ছি।' (৩:১৭৮) সুতরাং কুরআন মাজীদের যেখানেই خَدِيْعَتْ ـ سُخْرِيَتْ ـ اِسْتِهْزَاءُ ইত্যাদি শব্দগুলো এসেছে সেখানেই ভাবার্থ হবে এটাই। অন্য একদল বলেন যে, এসব শব্দ শুধুমাত্র ভয় দেখানো এবং সতর্ক করার জন্যে এসেছে। তাদের পাপ কার্য এবং শিরক ও কুফরের জন্যে তাদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে। মুফাসসিরগণ বলেন যে, এ শব্দগুলি শুধু তাদেরকে উত্তর দেয়ার জন্যে আনা হয়েছে। যেমন, কোন ভাল লোক কোন প্রতারকের প্রতারণা থেকে রক্ষা পেয়ে তার উপর জয়যুক্ত হওয়ার পর তাকে বলেঃ দেখ! আমি কেমন করে তোমাকে প্রতারিত করেছি। অথচ তার পক্ষ থেকে প্রতারণা হয় নাই। এরকমই আল্লাহ তাআলার কথাঃ
وَ مَكَرُوْا وَ مَكَرَ اللّٰهُ وَ اللّٰهُ خَیْرُ الْمٰكِرِیْنَ (৩:৫৪) এবং اَللهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ (২:১৫) ইত্যাদি। নচেৎ মহান আল্লাহর সত্তা প্রতারণা ও উপহাস থেকে পবিত্র। ভাবার্থ এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাদের প্রতারণা ও বিদ্রুপের উপযুক্ত প্রতিফল দেবেন। কাজেই বিনিময়ে ঐ শব্দগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে। দু'টি শব্দের অর্থ দুই জায়গায় পৃথক পৃথক হবে। যেমন কুরআন মাজীদে আছেঃ وَ جَزٰٓؤُا سَیِّئَةٍ سَیِّئَةٌ مِّثْلُهَاۚ অর্থাৎ মন্দের বিনিময় ঐরূপ মন্দই হয়।' (৪২:৪০) অন্যস্থানে রয়েছেঃ فَمَنِ اعْتَدٰى عَلَیْكُمْ فَاعْتَدُوْا عَلَیْهِ
অর্থাৎ যে তোমাদের উপর বাড়াবাড়ি করে তোমরাও তার উপর বাড়াবাড়ি কর।' (২:১৯৪) তাহলে বুঝা গেল যে, প্রতিশোধ গ্রহণ করা অন্যায় নয়। বাড়াবাড়ির মুকাবিলায় প্রতিশোধ নেয়া বাড়াবাড়ি নয়। কিন্তু দুই স্থানে একই শব্দ আছে, অথচ প্রথম অন্যায় ও বাড়াবাড়ি হচ্ছে জুলুম এবং দ্বিতীয় অন্যায় ও বাড়াবাড়ি হচ্ছে সুবিচার। আর একটি ভাবার্থ এই যে, মুনাফিকরা তাদের এই নাপাক নীতি দ্বারা মুসলমানদেরকে উপহাস ও বিদ্রুপ করতো। মহান আল্লাহও তাদের সঙ্গে এইরূপই করলেন যে, দুনিয়ায় তাদেরকে তিনি নিরাপত্তা দান করলেন, তারা এতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল, অথচ এটা অস্থায়ী নিরাপত্তা। কিয়ামতের দিন তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। এখানে যদিও তাদের জান ও মাল রক্ষা পেয়ে গেল, কিন্তু আল্লাহর নিকট তারা বেদনাদায়ক শাস্তির শিকারে পরিণত হবে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এই কথাটিকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। কেননা বিনা কারণে যে ধোকা ও বিদ্রুপ হয়, আল্লাহ তা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। তবে প্রতিশোধ হিসেবে আল্লাহ পাকের দিকে এসব শব্দের সম্বন্ধ লাগানোতে কোন দোষ নেই।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) একথাই বলেন যে, এটা তাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ ও শাস্তি। يَمُدُّهُمْ-এর অর্থ ঢিল দেয়া এবং বাড়ানো বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ রাব্বল আলামীন বলেছেনঃ اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهٖ مِنْ مَّالٍ وَّ بَنِیْنَ ـ نُسَارِعُ لَهُمْ فِی الْخَیْرٰتِ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ অর্থাৎ তারা কি ধারণা করেছে যে, তাদের মাল ও সন্তানাদির আধিক্য দ্বারা তাদের জন্যে আমি মঙ্গল ও কল্যাণকেই ত্বরান্বিত করছি? বস্তুতঃ তাদের সঠিক বোধই নেই।' (২৩:৫৫-৫৬) আল্লাহ রাব্বল ইযত আরও বলেছেনঃ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَیْثُ لَا یَعْلَمُوْنَ অর্থাৎ এভাবেই আমি তাদেরকে ঢিল দেয়ার পর এমনভাবে টেনে ধরব যে, তারা কোন দিক-দিশাই পাবে না।' (৬৮:৪৪) তাহলে ভাবার্থ দাঁড়াল এই যে, এদিকে এরা পাপ করছে আর ওদিকে তাদের দুনিয়ার সুখ-সম্পদ ও ধনৈশ্বর্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, কাজেই এরা সুখী হচ্ছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে এটা একটা শাস্তিই বটে। যেমন আল্লাহ তা'আলা :কুরআন পাকে বলেছেনঃ فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِهٖ فَتَحْنَا عَلَیْهِمْ اَبْوَابَ كُلِّ شَیْءٍ حَتّٰۤى اِذَا فَرِحُوْا بِمَاۤ اُوْتُوْۤا اَخَذْنٰهُمْ بَغْتَةً فَاِذَا هُمْ مُّبْلِسُوْنَ ـ فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِیْنَ ظَلَمُوْا وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ
অর্থাৎ যখন তারা উপদেশ ভুলে গেল, তখন আমি তাদের উপর সমস্ত জিনিসের দরজা খুলে দিলাম, অতঃপর যা তাদেরকে দেয়া হলো তার উপর যখন তারা সর্বোতভাবে খুশী হলো, হঠাৎ করে অতর্কিতে আমি তাদেরকে আঁকড়ে ধরলাম, সুতরাং তারা ভীত সন্ত্রস্ত ও নিরাশ হয়ে পড়লো। অত্যাচারীদের মূলোৎপাটন করে ধ্বংস করে দেয়া হলো এবং বলা হলো যে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব প্রভু আল্লাহর জন্যে।' (৬:৪৪-৪৫)
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, তাদেরকে ঢিল দেয়ার জন্যে এবং তাদের অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ বাড়িয়ে দেয়ার জন্যে তাদেরকে অধিক পরিমাণে ঢিল দেয়া হয়। কোন জিনিসের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াকে طُغْيَان বলা হয়। যেমন আল্লাহ পাক বলেছেনঃ اِنَّا لَمَّا طَغَا الْمَآءُ حَمَلْنٰكُمْ فِی الْجَارِیَةِ
অর্থাৎ “যখন পানি সীমা ছাড়িয়ে গেল, তখন আমি তাদেরকে নৌকায় উঠালাম।' (৬৯:১১) পথভ্রষ্টতাকে عَمْهٌ বলা হয়। সুতরাং আয়াতটির ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, পথভ্রষ্টতা ও কুফরীর মধ্যে ডুবে গেছে এবং এই নাপাকী তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। এখন তারা ঐ কাদার মধ্যেই নেমে যাচ্ছে এবং ঐ নাপাকীর মধ্যে ঢুকে পড়ছে। আর এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার সমস্ত পথ তাদের বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এখন পাঁকের মধ্যে আকণ্ঠ ডুবে আছে। তদুপরি তারা। বধির এবং নির্বোধ। সুতরাং তারা কিভাবে মুক্তি পেতে পারে? চোখের অন্ধত্বের জন্যে আরবী ভাষায় عَمْىٌ শব্দ ব্যবহৃত হয়, আর অন্তরের জন্যে ব্যবহৃত হয় عَمْهٌ শব্দটি। কিন্তু কখনও আবার অন্তরের জন্য عَمْىٌ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন কুরআন পাকে আছে وَ لٰكِنْ تَعْمَى الْقُلُوْبُ الَّتِیْ فِی الصُّدُوْرِ অর্থাৎ তাদের সেই অন্তর অন্ধ যা রয়েছে তাদের সীনার মধ্যে। (২২:৪৬)