তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে যে, যখন তোমাদের কারও সামনে মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং সেই ব্যক্তি কিছু সম্পত্তি ছেড়ে যায়, তবে সে ব্যক্তি যেন সঙ্গতভাবে ওয়াসীয়াত করে যায় পিতা-মাতা ও নিকট সম্পর্কীয়দের জন্য, মুত্তাকীদের জন্য এটা একটা কর্তব্য।
English Sahih:
Prescribed for you when death approaches [any] one of you if he leaves wealth [is that he should make] a bequest for the parents and near relatives according to what is acceptable – a duty upon the righteous.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তোমাদের মধ্যে যখন কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং সে যদি ধন-সম্পত্তি রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য বৈধভাবে ‘অসিয়ত’ করার বিধান দেওয়া হল। [১] ধর্মভীরুদের জন্য এটা অবশ্য পালনীয়।
[১] 'অসিয়ত' (উইল) করার এ নির্দেশ উত্তরাধিকার বিষয়ক আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তা রহিত হয়েছে। নবী করীম (সাঃ)-এর উক্তি হল-
(إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَعْطَى كُلِّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ فَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ) অর্থাৎ, "অবশ্যই আল্লাহ প্রত্যেক অধিকারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে দিয়েছেন (অর্থাৎ, ওয়ারেসীনদের অংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন)। অতএব কোন উত্তরাধিকারের জন্য অসিয়ত করা জায়েয নয়।" (আবূ দাউদ ২৮৭০, তিরমিযী ২১২১, নাসায়ী ৩৫৮১, ইবনে মাজা ২৭১৩, আহমদ ১৭২১২নং) তবে এমন আত্মীয়ের জন্য অসিয়ত করা যাবে, যে ওয়ারিস নয়। অনুরূপ সৎপথে ব্যয় করার জন্য অসিয়ত করা যাবে আর তার সর্বাধিক পরিমাণ হল (মোট সম্পত্তির) এক তৃতীয়াংশ। এর বেশী অসিয়ত করা যাবে না। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ফারায়েয, পরিচ্ছেদঃ মীরাসুল বানাত)
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তোমাদের মধ্যে কারও মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে সে যদি ধন-সম্পত্তি রেখে যায় তবে প্রচলিত ন্যায়নীতি অনুযায়ী তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য অসিয়াত করার বিধান তোমাদেরকে দেয়া হলো। এটা মুত্তাকীদের উপর কর্তব্য [১]।
[১] আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-এর মতে অসিয়াত সম্পর্কিত এ নির্দেশটি ‘মীরাস’-এর আয়াত দ্বারা রহিত করে দেয়া হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, মীরাসের আয়াত সে সমস্ত আত্মীয়দের জন্য অসিয়াত করা রহিত করে দেয়া হয়েছে, যাদের মীরাস নির্ধারিত ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব আত্মীয়ের অংশ মীরাসের আয়াতে নির্ধারণ করা হয়নি, তাদের জন্য অসিয়াত করার হুকুম এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। তবে আলেমগণের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে, যেসব আত্মীয়ের জন্য মীরাসের আয়াতে কোন অংশ নির্ধারণ করা হয়নি, তাদের জন্য অসিয়াত করা মৃত্যুপথযাত্রীর পক্ষে ফরয বা জরুরী নয়। সে ফরয রহিত হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজনবিশেষে এটা মুস্তাহাবে পরিণত হয়েছে। অসিয়াত সম্পর্কিত এ আয়াতের নির্দেশ একাধারে যেমন কুরআনের মীরাস সম্পর্কিত আয়াত দ্বারা রহিত ঘোষিত নির্দেশের মাধ্যমেও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর বর্ণিত হাদীসটি রহিত হয়ে গেছে। বিদায় হজের বিখ্যাত খোতবায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেক হকদারের হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং এখন থেকে কোন ওয়ারিসের জন্য অসিয়াত নেই’। [তিরমিযী ২১২০, আবু দাউদ; ৩৫৬৫, ইবনে মাজাহ ২৭১৩]। তবে আলেমগণের সর্বসম্মত অভিমত অনুযায়ী মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তিগণের পক্ষে এখনো তাদের মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত আসিয়াত করা জায়েয।
3 Tafsir Bayaan Foundation
তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোন সম্পদ রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ভিত্তিক অসিয়ত করবে। এটি মুত্তাকীদের দায়িত্ব।
4 Muhiuddin Khan
তোমাদের কারো যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, সে যদি কিছু ধন-সম্পদ ত্যাগ করে যায়, তবে তার জন্য ওসীয়ত করা বিধিবদ্ধ করা হলো, পিতা-মাতা ও নিকটাত্নীয়দের জন্য ইনসাফের সাথে পরহেযগারদের জন্য এ নির্দেশ জরুরী। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সবকিছু শোনেন ও জানেন।
5 Zohurul Hoque
তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করা গেল যে যখন তোমাদের কারোর কাছে মৃত্যু হাজির হয় সে ধন ছেড়ে যাচ্ছে, তবে যেন ওসিয়ৎ করা হয় মাতাপিতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়সঙ্গত-ভাবে; এটা মুত্তকীদের উপরে একটি কর্তব্য।