لَآ اِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِۗ قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَا ۗوَاللّٰهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ ( البقرة: ٢٥٦ )
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
দীনের মধ্যে জবরদস্তির অবকাশ নেই, নিশ্চয় হিদায়াত গোমরাহী হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কাজেই যে ব্যক্তি মিথ্যে মা’বুদদেরকে (তাগুতকে) অমান্য করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল, নিশ্চয়ই সে দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করল যা ছিন্ন হওয়ার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞাতা।
English Sahih:
There shall be no compulsion in [acceptance of] the religion. The right course has become distinct from the wrong. So whoever disbelieves in Taghut and believes in Allah has grasped the most trustworthy handhold with no break in it. And Allah is Hearing and Knowing.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
ধর্মের জন্য কোন জোর-জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় সুপথ প্রকাশ্যভাবে কুপথ থেকে পৃথক হয়েছে।[১] সুতরাং যে তাগূতকে (অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য বাতিল উপাস্যসমূহকে) অস্বীকার করবে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করবে, নিশ্চয় সে এমন এক শক্ত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙ্গার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।
[১] এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আনসারদের কিছু যুবক ছেলেরা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান হয়ে গিয়েছিল। পরে যখন আনসাররা ইসলাম গ্রহণ করল, তখন তারা তাদের ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান হয়ে যাওয়া সন্তানদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য বাধ্য করতে চাইলে এই আয়াত অবতীর্ণ হল। আয়াত নাযিল হওয়ার কারণের দিকে লক্ষ্য করে কোন কোন মুফাসসির এটাকে আহলে-কিতাবদের জন্য নির্দিষ্ট মনে করেন। অর্থাৎ, মুসলিম দেশে বসবাসকারী ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা যদি জিযিয়া-কর আদায় করে, তাহলে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না। তবে এই আয়াতের নির্দেশ ব্যাপক। অর্থাৎ, কাউকে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা যাবে না। কারণ, মহান আল্লাহ হিদায়াত ও গুমরাহী উভয় পথই সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তবে কুফর ও শিরকের নিষ্পত্তি এবং বাতিল শক্তি চূর্ণ করতে জিহাদ করা এক ভিন্ন ব্যাপার, এটা জোর-জবরদস্তি থেতে পৃথক জিনিস। উদ্দেশ্য সমাজ থেকে এমন শক্তি ও দাপটকে ভেঙ্গে দেওয়া, যা আল্লাহর দ্বীনের উপর আমল করার ও তার তবলীগের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় স্বাধীন সিদ্ধান্তে ইচ্ছা হলে নিজের কুফরীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং ইচ্ছা হলে ইসলামে প্রবেশ করবে। আর যেহেতু (আল্লার পথে) বাধা দানকারী এই শক্তিসমূহ ক্রমশঃ প্রকাশ পেতেই থাকবে, তাই জিহাদের নির্দেশ এবং তার প্রয়োজনীয়তা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। যেমন হাদীসে এসেছে যে, "জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।" নবী করীম (সাঃ) নিজেও কাফের ও মুশরিকদের সাথে জিহাদ করেছেন এবং বলেছেন, "আমি ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের সাথে জিহাদ করার নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি, যতক্ষণ না তারা 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ'র স্বীকৃতি দেয়।" (বুখারী ২৫নং) অনুরূপ মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে যাওয়ার শাস্তি (হত্যা)র সাথেও এর কোন বিরোধ নেই। (যা অনেকে মনে করে থাকে।) কেননা, মুর্তাদের শাস্তি (হত্যা)র উদ্দেশ্য জোর-জবরদস্তি নয়, বরং এর লক্ষ্য ইসলামী দেশের আইনের মর্যাদা রক্ষা। একটি ইসলামী দেশে একজন কাফেরকে তার কুফরীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার অনুমতি অবশ্যই দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু একবার সে যদি ইসলামে প্রবেশ করে যায়, তাহলে পুনরায় তাকে ইসলাম বিমুখ হওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে না। সুতরাং তাকে খুব ভেবে-চিন্তে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। কারণ, যদি এর অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে (দেশের) আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিই ভেঙ্গে পড়বে এবং বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিস্তার লাভ করবে। ফলে মুসলিম সমাজের নিরাপত্তার এবং দেশের আইনকে অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে সৃষ্টি হবে বড় বিঘ্ন। তাই যেমন মানবাধিকারের নামে হত্যা, চুরি, ব্যভিচার এবং ডাকাতি করা ইত্যাদি অপরাধের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে না, অনুরূপ চিন্তা-স্বাধীনতা বা স্বাধীন সিদ্ধান্তের নামে কোন ইসলামী দেশে আইন ভঙ্গ করার (ইসলাম বিমুখ হওয়ার)ও অনুমতি দেওয়া যেতে পারে না। এটা জোর-জবরদস্তি নয়, বরং মুরতাদকে হত্যা করা ঐরূপ সুবিচার, যেমন সুবিচার হল হত্যার, লুটতরাজের এবং চারিত্রিক অপরাধে অপরাধী ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেওয়া। একটির উদ্দেশ্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং দ্বিতীয়টির লক্ষ্য অন্যায় ও অনাচারের হাত হতে দেশকে বাঁচানো। আর উভয় উদ্দেশ্য একটি দেশের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অধিকাংশ ইসলামী দেশগুলো এই উভয় উদ্দেশ্য ত্যাগ করার কারণে যে অস্থিরতা এবং কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।