ত্বোয়া-হা আয়াত ৫৬

আর আমরা তো তাকে আমাদের সমস্ত নিদর্শন দেখিয়েছিলাম [১]; কিন্তু সে মিথ্যারোপ করেছে এবং অমান্য করেছে।

[১] অর্থাৎ তাওহীদ ও নবুওয়তের যাবতীয় নিদর্শন আমরা তাকে দেখিয়েছিলাম। [কুরতুবী] পৃথিবী ও প্রাণী জগতের যুক্তি-প্রমাণসমূহের নিদর্শনাবলী এবং মূসাকে প্রদত্ত যাবতীয় মু'জিযাও সে প্রত্যক্ষ করেছে। ফির’আউনকে বুঝাবার জন্য মূসা আলাইহিসসালাম যেসব ভাষণ দিয়েছিলেন। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সেগুলো বর্ণিত হয়েছে এবং তাকে একের পর এক যেসব মু'জিযা দেখানো হয়েছিল সেগুলোও কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর প্রতি সে মিথ্যারোপ করেছিল। সে তা করেছিল সম্পপূর্ণরূপে গোঁড়ামী ও অহংকারবশত [ইবন কাসীর] আল্লাহ বলেন, “আর তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে নিশ্চিত সত্য বলে গ্রহণ করেছিল। সুতরাং দেখুন, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল!” [সূরা আন-নামল; ১৪]

আমি তাকে আমার সকল নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং অমান্য করেছে।

আমি ফেরাউনকে আমার সব নিদর্শন দেখিয়ে দিয়েছি, অতঃপর সে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং অমান্য করেছে।

আর আমরা অবশ্যই তাকে দেখিয়েছিলাম আমাদের নিদর্শনাবলী -- তাদের সব ক’টি, কিন্তু সে প্রত্যাখ্যান করল ও অমান্য করল।

বস্তুত আমি তাকে (অর্থাৎ ফির‘আউনকে) আমার সমস্ত নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু সে কেবল অস্বীকারই করেছে ও অমান্য করেছে।

আমিতো তাকে আমার সমস্ত নিদর্শন দেখিয়েছিলাম; কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করেছে ও অমান্য করেছে।

Please check ayah 20:98 for complete tafsir.

আমি তো তাকে (ফেরাউনকে) আমার সব নিদর্শন দেখিয়েছি; কিন্তু সে তা অবিশ্বাস ও অমান্য করেছে।

৫৬. আমি নিশ্চয়ই ফিরআউনের জন্য সম্পূর্ণরূপে আমার নয়টি নিদর্শন প্রকাশ করেছি। সে তা দেখেও সেগুলোর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। উপরন্তু সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

৫৩-৫৬ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনের প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তাআলার গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে আরো বলেনঃ ঐ আল্লাহই যমীনকে লোকদের জন্যে বিছানা বানিয়েছেন। مَهْدًا শব্দটি অন্য কিরআতে مِهَادًا ও রয়েছে ।

মহান আল্লাহ যমীনকে বিছানারূপে বানিয়ে দিয়েছেন, যেন তোমরা তার উপর স্থির থাকতে পারো এবং ওরই উপর শুইতে, বসতে ও চলা ফেরা করতে পারো। তিনি যমীনে তোমাদের চলা ফেরা ও সফর করার জন্যে পথ বানিয়ে দিয়েছেন, যাতে তোমরা পথ ভুলে না যাও এবং সহজেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারো। তিনিই আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন এবং এর মাধ্যমে যমীন হতে বিভিন্ন প্রকারের ফসল উৎপন্ন করেন। তোমরা তা নিজেরা খেয়ে থাকো এবং তোমাদের গবাদি পশু গুলিকেও আহার করিয়ে থাকো। তোমাদের খাদ্য, ফল-ফলাদি এবং তোমাদের জীব জন্তুর চারা-ভূষি শুষ্ক ও সিক্ত সবকিছুই এই বৃষ্টির মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা উৎপন্ন করে থাকেন। এই সব নিদর্শন দলীল হচ্ছে আল্লাহর আল্লাহ হওয়ার এবং তার একত্ব ও অস্তিত্বের উপর।

মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। এর থেকেই তোমাদের সূচনা। কেননা, তোমাদের পিতা আদমের (আঃ) সৃষ্টি এই মাটি থেকেই। এর মধ্যেই তোমাদেরকে আবার ফিরে যেতে হবে। মৃত্যুর পর তোমাদেরকে এর মধ্যেই দাফন করা হবে। অতঃপর আমি এটা হতেই পুনর্বার তোমাদেরকে বের করবো। আমার আহবানে সাড়া দিয়ে আমার প্রশংসা করতে করতে তোমরা উঠবে এবং বিশ্বাস করে নিবে যে, তোমরা খুব অল্প দিনই দুনিয়ায় অবস্থান করেছে। অন্য আয়াতে আছেঃ “এই যমীনেই তোমাদের জীবন অতিবাহিত হবে, মৃত্যুর পরেও তোমরা এর মধ্যেই যাবে এবং এর মধ্য হতেই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।” সূনানের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক মৃত ব্যক্তির দাফনের পরে তার কবরে মাটি দেয়ার সময় প্রথমবার مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ বলেন, দ্বিতীয় বার وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ বলেনঃ এবং তৃতীয়বার وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً اُخْرٰى বলেন।

মোট কথা, ফিরাউনের সামনে সমস্ত দলীল প্রমাণ এসে যায়। সে মু'জিযা ও নিদর্শনসমূহ স্বচক্ষে দেখে নেয় কিন্তু সবকিছুই সে অস্বীকার করে। এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করতেই থাকে। সে কুফরী, ঔদ্ধত্যপনা, হঠকারিতা, এবং অহংকার হতে বিরত থাকে নাই। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ وَ جَحَدُوْا بِهَا وَ اسْتَیْقَنَتْهَاۤ اَنْفُسُهُمْ ظُلْمًا وَّ عُلُوًّا অর্থাৎ তাদের অন্তর ওটা বিশ্বাস করে নেয়া সত্ত্বেও তারা যুলুম, বাড়াবাড়ি ও অস্বীকার করা হতে বিরত থাকলো না।” (২৭:১৪)