আম্বিয়া আয়াত ৭০
وَاَرَادُوْا بِهٖ كَيْدًا فَجَعَلْنٰهُمُ الْاَخْسَرِيْنَ ۚ ( الأنبياء: ٧٠ )
Wa araadoo bihee kaidan faja'alnaahumul akhsareen (al-ʾAnbiyāʾ ২১:৭০)
English Sahih:
And they intended for him a plan [i.e., harm], but We made them the greatest losers. (Al-Anbya [21] : 70)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তারা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল কিন্তু আমি তাদেরকেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে ছাড়লাম। (আম্বিয়া [২১] : ৭০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তারা তার সাথে চক্রান্ত করার ইচ্ছা করেছিল; কিন্ত আমি তাদেরকে করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তারা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু আমরা তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম।
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর তারা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম।
4 Muhiuddin Khan
তারা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল, অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম।
5 Zohurul Hoque
আর তারা চেয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে, কিন্তু আমরা তাদেরই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলাম।
6 Mufti Taqi Usmani
তারা ইবরাহীমের বিরুদ্ধে এক দুরভিসন্ধি আঁটল, কিন্তু আমি তাদেরকেই করলাম মহা ক্ষতিগ্রস্ত।
7 Mujibur Rahman
তারা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু আমি তাদেরকে করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
8 Tafsir Fathul Mazid
৫১-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
মূসা (عليه السلام) ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে আলোচনা করার পর অত্র আয়াতগুলোতে মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইবরাহীম (عليه السلام) স¤পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সৎ পথের জ্ঞান দান করেছিলেন। مِنْ قَبْلُ অর্থাৎ মূসা (عليه السلام) ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রেরণ করা ও তাঁদেরকে কিতাব দেয়ার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে হিদায়াতের জ্ঞান দান করেছিলেন, ফলে তিনি মানুষকে এদিকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। (وَكُنَّا بِه۪ عٰلِمِيْنَ) অর্থাৎ ইবরাহীম (عليه السلام)-কে সঠিক পথের জ্ঞান দান করা, তাঁকে নাবী হিসেবে চয়ন করা, তাঁকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা এবং দুনিয়া ও পরকালে শ্রেষ্ঠত্ব দান করার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান ছিল যে, ইবরাহীম (عليه السلام)-এর অধিকারী ও যোগ্য।
ইবরাহীম (عليه السلام) তাঁর পিতা ও সম্প্রদায়কে বললেন: এ মূর্তিগুলো কী? تماثيل শব্দটি تمثال এর বহুবচন। অর্থ কোন জিনিসের হুবহু প্রতিকৃতি। عاكف অর্থ অবস্থান করা, ধরে রাখা। অর্থাৎ এ মূর্তিগুলো কী, যাদের কাছে নিরবে অবস্থান কর? তারা বলল: আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এরূপ পূজা করতে দেখেছি। তখন ইবরাহীম (عليه السلام) বললেন: তোমরা ও তোমাদের বাপ দাদারা প্রকাশ্য গুমরাহীতে লিপ্ত রয়েছ। তখন তারা বলল: তুমি কি আমাদের নিকট সত্য জিনিস নিয়ে এসেছ, না তুমি কৌতুক করছ। তখন তিনি বললেন: না, তোমাদের প্রতিপালক তো তিনি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর আমি এ বিষয়ে অন্যতম সাক্ষী। প্রাথমিক দাওয়াতের কাজ এখানে সমাপ্ত, এরপরও যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল তখন ইবরাহীম (عليه السلام) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: আল্লাহ তা‘আলার শপথ! তোমরা অনুষ্ঠানে বা ঈদে চলে যাওয়ার পর আমি এ মূর্তিগুলোর ব্যাপারে কিছু একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যখন তারা চলে গেল তখন তিনি এ মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন। শুধুমাত্র তাদের বড় মূর্তিটি ব্যতীত। অতঃপর যখন তারা ফিরে এসে এরূপ অবস্থা দেখতে পেল তখন তারা বলল: কে আমাদের উপাস্যগুলোর সাথে এরূপ আচরণ করেছে? নিশ্চয়ই সে একজন সীমালঙ্ঘনকারী। তখন তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলল: আমরা এক যুবককে এদের ব্যাপারে সমালোচনা করতে শুনেছি যার নাম ইবরাহীম। তখন তাঁকে নিয়ে আসার জন্য বলা হল। অতঃপর যখন তাঁকে নিয়ে আসা হল তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার করেছ? তাদের প্রশ্নের জবাবে ইবরাহীম (عليه السلام) বললেন: তাদের মধ্যে যে বড় সেই তো এ কাজ করেছে, তাকেই জিজ্ঞেস কর যদি তারা কথা বলতে পারে। একথা শুনে তারা লজ্জায় মাথা অবনত করল এবং বলল: তুমি তো জানো যে, এরা কথা বলতে পারে না।
তখন ইবরাহীম (عليه السلام) তাদেরকে বললেন: তোমরা এমন জিনিসের পূজা করছ যারা তোমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না? সুতরাং তোমাদের জন্য এবং তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের জন্য ভর্ৎসনা।
তখন তাঁর সম্প্রদায় আর কোন জবাব দিতে পারলনা। শুধুমাত্র বলল যে, তাঁকে আগুনে পুড়ে ফেল, তোমাদের মা‘বূদদেরকে রক্ষা কর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেনঃ
(فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَنْ قَالُوا اقْتُلُوهُ أَوْ حَرِّقُوهُ)
“অতঃপর তার সম্প্রদায়ের এ কথা বলা ছাড়া কোন উত্তর ছিল না যে, ‘একে হত্যা কর অথবা অগ্নিদগ্ধ কর।” (আনকাবুত ২৯:২৪)
তখন তারা তাকে আগুনে নিক্ষেপ করল জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য। ইবরাহীম (عليه السلام)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হল তখন তিনি বলেছিলেন: حسبي الله ونعم الوكيل আমার জন্য আল্লাহ তা‘আলাই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মকর্তা। তখন আল্লাহ তা‘আলা আগুনকে নির্দেশ দিয়ে বললেন: আগুন! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। অবশেষে তারা ক্ষতি করতে গিয়ে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। আর ইবরাহীম (عليه السلام) অক্ষত অবস্থায় সে আগুন থেকে পরিত্রাণ পেলেন। ইবরাহীম (عليه السلام) সম্পর্কে আরো আলোচনা সূরা আন‘আমে ও সূরা মারইয়ামে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইবরাহীম (عليه السلام)-এর মত হিকমত নিয়ে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে হবে।
২. মূর্তি ভাঙ্গা নাবীদের বৈশিষ্ট্য, মুসলিমদের উচিত নাবীদের এ বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করা।
৩. ইবরাহীম (عليه السلام) জানতেন মূর্র্তি ভাঙ্গলে তাকে পাকড়াও করবে, তারপরেও তিনি ভেঙ্গেছেন।
৪. সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে হবে।
৫. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে অবিচল থাকে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সহযোগিতা করেন।
9 Fozlur Rahman
তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে (তার ক্ষতি করতে) চাইল, কিন্তু আমি তাদেরকেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করলাম।
10 Mokhtasar Bangla
৭০. ইব্রাহীমের সম্প্রদায় তাঁকে জ্বালানোর কৌশল করলো। অতঃপর আমি তাদের কৌশলকে বাতিল করে দিলাম। উপরন্তু তাদেরকে ধ্বংস ও পরাজিত করলাম।
11 Tafsir Ibn Kathir
৬৮-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
এটা নিয়ম যে, মানুষ যখন দলীল প্রমাণ পেশ করতে অপারগ হয়ে যায় তখন হয় পুণ্য তাকে আকর্ষণ করে, না হয় পাপ তার উপর জয়যুক্ত হয়। এখানে এই লোকগুলিকে তাদের মন্দভাগ্য ঘিরে ফেলে এবং তারা দলীল প্রমাণ পেশ করতে অপারগ হয়ে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) উপর শক্তি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। পরস্পর পরামর্শক্রমে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) আগুনে নিক্ষেপ করা হোক, যাতে তাদের দেবতাদের মর্যাদা রক্ষা পায়। এর উপর তাদের সবাই একমত হয়ে গেল এবং খড়ি জমা করার কাজে লেগে পড়লো। এমন কি তাদের রুগ্না নারীরাও মানত করলো যে, যদি তারা রোগ হতে আরোগ্য লাভ করে তবে তারাও হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) পোড়াবার জন্যে খড়ি আনয়ন করবে। যমীনে একটা বড় ও গভীর গর্ত তারা খনন করলো এবং খড়ি দ্বারা তা পূর্ণ করে দিলো। খড়ির স্তুপ খাড়া করে তারা তাতে আগুন ধরিয়ে দিলো। ভূ-পৃষ্ঠে কখনো এমন ভয়াবহ আগুন দেখা যায় নাই। অগ্নি শিখা যখন আকাশচুম্বী হয়ে উঠলো এবং ওর পার্শ্বে গমন অসম্ব হয়ে পড়লো তখন তারা হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লো যে, কেমন করে তারা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) আগুনে নিক্ষেপ করবে? (শেষ পর্যন্ত পারস্যের কুর্দিস্তানের একজন। বেদুইনের পরামর্শক্রমে একটি লোহার দোলনা তৈরী করা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, তাঁকে ওটায় বসিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হবে এবং এই ভাবে তাকে অগ্নি কুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। ঐ বেদুঈন লোকটির নাম ছিল হায়ন। বর্ণিত আছে যে, ঐলোকটিকে তৎক্ষণাৎ আল্লাহ যমীনে ধ্বসিয়ে দেন। যখন তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয় তখন তিনি বলেনঃ حَسْبِىَ اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ অর্থাৎ “আমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মকর্তা।" রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও তাঁর সাহাবীদের (রাঃ) কাছে যখন এ খবর পৌঁছে যে, সমস্ত আরব বীর সৈনিকদেরকে নিয়ে তার মুকাবিলার জন্যে আসছে তখন তিনিও উপরোক্ত দুআটি পাঠ করেন।
এটাও বর্ণিত আছে যে, যখন মুশরিকরা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করতে থাকে তখন তিনি বলেনঃ اَللّٰهُمَّ اِنَّكَ فِى السَّمَاءِ وَاحِدٌ وَاَنَا فِى الْاَرْضِ وَاحِدٌ اَعْبُدُكَ অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আকাশে আপনি (মাবুদ) একাই এবং যমীনে আমি একাই আপনার ইবাদত করি। (এটা মুসনাদে আবি ইয়ালায় হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে) বর্ণিত আছে যে, যখন কাফিররা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) বাধতে থাকে তখন তিনি পাঠ করেনঃ لَااِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ لَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الْمُلْكُ لَا شَرِيْكَ لَكَ অর্থাৎ “আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আপনি পবিত্র, প্রশংসা আপনারই জন্যে, রাজত্ব আপনারই, আপনার কোন অংশীদার নেই।” হযরত শুআইব জুবাঈ (রঃ) বলেন যে, ঐ সময় হযরত ইবরাহীমের (আঃ) বয়স ছিল মাত্র ষোল বছর। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
পূর্ব যুগীয় কোন কোন মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে, ঐ সময়েই হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার সামনে আসমান ও যমীনের মাঝে আবির্ভূত হন এবং তাঁকে বলেনঃ “আপনার কোন প্রয়েজিন আছে কি? উত্তরে তিনি বলেনঃ “আপনার কাছে আমার কোন প্রয়োজন নেই। আমার প্রয়োজন আছে আল্লার কাছে।”
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, বৃষ্টির দারোগা ফেরেশতা সব সময় কান খাড়া করে প্রস্তুত ছিলেন যে, কখন আল্লাহর হুকুম হবে এবং তিনি ঐ আগুনে বৃষ্টি বর্ষণ করে তা ঠাণ্ডা করে দিবেন। কিন্তু মহান আল্লাহ সরাসরি আগুনকেই হুকুম করলেনঃ “হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের (আঃ) জন্যে ঠাণ্ডা ও নিরাপদ হয়ে যাও।” বর্ণিত আছে যে, এই হুকুমের সাথে সাথেই সারা পৃথিবীর আগুন ঠাণ্ডা হয়ে যায়। হযরত কা'ব আহবার (রাঃ) বলেন যে, ঐ দিন সারা দুনিয়ায় কেউই আগুন দ্বারা কোন উপকার লাভ করতে পারে নাই। হযরত ইবরাহীমের (আঃ) বন্ধনের রশিগুলি আগুনে পুড়ে যায় বটে, কিন্তু তাঁর নিজের শরীরের একটি লোমও পুড়ে নাই। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ আগুনকে নিদের্শ দেয়া হয় যে, যেন হযরত ইবরাহীম খলীলের (আঃ) কোনই ক্ষতি না করে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যদি আগুনকে শুধু ঠাণ্ডা হওয়ার নির্দেশ দেয়া হতো তবে ঠাণ্ডাই তার ক্ষতি করতো। এজন্যেই সাথে সাথেই ওকে নিদের্শ দেনঃ “নিরাপদ হয়ে যাও।'
যহহাক (রাঃ) বলেন যে, মুশরিকরা খুব বড় ও গভীর গর্ত খনন করেছিল। এবং ওটাকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করেছিল। চতুর্দিকে আগুনের শিখা বের হচ্ছিল। তারা ওর মধ্যে হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু অগ্নি তাকে স্পর্শও করেনি। শেষ পর্যন্ত মহামহিমান্বিত আল্লাহ ওকে ঠাণ্ডা করে দেন। উল্লিখিত আছে যে, ঐ সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) মুখ হতে ঘর্ম মুছতে ছিলেন। সুতরাং এইটুকু ছাড়া আগুন তার আর কোন কষ্ট দেয় নাই।
সুদ্দী (রাঃ) বলেন যে, ছায়াকারী ফেরেশতা ঐ সময় তার সাথে ছিলেন। বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) ঐ অগ্নিকুণ্ডে চল্লিশ দিন অথবা পঞ্চাশ দিন ছিলেন। তিনি বলতেনঃ “এই দিনগুলিতে আমি যতটা আরাম ও আনন্দবোধ করেছিলাম, ওর থেকে বের হওয়ার পর ততটা আরাম ও শান্তি লাভ করি নাই। যদি আমার সারা জীবনটাই ওর মধ্যে অতিবাহিত হয়ে যেতো তবে কতই না ভাল হতো!”
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, হযরত ইবরাহীমের পিতা সবচেয়ে উত্তম যে কথাটি বলে ছিলেন তা এই যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) আগুন হতে সম্পূর্ণ সুস্থ ও নিরপিদ অবস্থায় বের হয়ে আসেন, ঐ সময় তাকে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে আসতে দেখে সে তাকে বলেছিলঃ “হে ইবরাহীম (আঃ)! তোমার প্রতিপালক বড়ই বুযর্গ ও মহান এবং বড়ই শক্তিশালী।"
হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন যে, ঐদিন যতগুলি জীবজন্তু বের হয় সবাই ঐ আগুন নিবিয়ে দিবার চেষ্টা করতে থাকে, একমাত্র গিরগিট (টিকটিকির চেয়ে বড় এক প্রকার বিষাক্ত প্রাণী) এর ব্যতিক্রম। হযরত যুহরী (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গিগিটকে মেরে ফেলার হুকুম দিয়েছেন এবং ওকে ফাসেক বলেছেন। হযরত আয়েশার (রাঃ) ঘরে একটি বর্শা দেখে একটি স্ত্রী লোক তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “ঘরে এটা কেন রেখেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “গিরগিটকে মারবার জন্যে এটা রেখেছি। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে সময় হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয় সেই সময় গিরগিট ছাড়া সমস্ত জীবজন্তু ঐ আগুন নিবিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গিরগিট ঐ আগুনে ফু দিচ্ছিল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গিরগিটকে মেরে ফেলার নিদের্শ দিয়েছেন।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু আমি করে দিলাম তাদের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
হযরত আতিয়্যাহ আওফী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইব্রাহীমকে (আঃ) আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখবার জন্যে ঐ কাফিরদের বাদশাহ এসেছিল। একদিকে হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হলো, আর অপরদিকে ঐ আগুনেরই একটি স্ফুলিঙ্গ উড়ে এসে ঐ বাদশাহ বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর পড়ে যায় এবং সেখানেই সবারই সামনে তাকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেয় যেমন ভাবে তূলা জ্বলে থাকে।