৭৬-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর:
(وَلَقَدْ أَخَذْنٰهُمْ بِالْعَذَابِ...) শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সুফিয়ান রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে আল্লাহ তা‘আলার শপথ ও আত্মীয়তার সম্পর্কের মাধ্যম দিয়ে বলছি যে, আমরা গোবর ও রক্ত খেতে শুরু করে দিয়েছি। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (মুসতাদরাক হাকিম ; ২:৩৯৪)
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, মানুষকে যখন কোন শাস্তি গ্রাস করে তখন তার উচিত আল্লাহ তা‘আলার কাছে নতি শিকার করা, তাঁর কাছে বিনয়ী হওয়া। কিন্তু তারা তা করে না। বরং যখন বিপদ চূড়ান্তভাবে এসে যায় তখন কল্যাণ থেকে নিরাশ হয়ে যায়। অথচ ইতোপূর্বে ছোট ছোট আযাব দ্বারা সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ أَرْسَلْنَآ إِلٰٓي أُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنٰهُمْ بِالْبَأْسَا۬ءِ وَالضَّرَّا۬ءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُوْنَ - فَلَوْلَآ إِذْ جَا۬ءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلٰكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطٰنُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ)
“তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; অতঃপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পীড়িত করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়। আমার শাস্তি যখন তাদের ওপর আসল তখন তারা কেন বিনীত হল না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল।” (সূরা আন‘আম ৬:৪২-৪৩) অনুরূপ সূরা আ‘রাফের ৯৪-৯৫ নং আয়াতেও বলা হয়েছে।
সুতরাং প্রতিটি ব্যক্তির উচিত, যখনই কোন অন্যায় করবে তখন সাথে সাথে তাওবাহ করা। কেননা যদি সে তাওবাহ না করে আর গুনাহ করতেই থাকে তাহলে যখন আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি এসে যাবে তখন আর শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
(وَهُوَ الَّذِيْٓ أَنْشَأَ لَكُمْ)
‘তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন’ এ সম্পর্কে সূরা নাহলের ৭৮ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, তিনিই সকলকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, প্রত্যেকেই নিজ আয়ূ পর্যন্ত বসবাস করবে অতঃপর যখন আয়ূ শেষ হয়ে যাবে তখন তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(قُلْ هُوَ الَّذِيْ ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ - وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰي هٰذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِيْنَ)
“বল: তিনিই পৃথিবীব্যাপী তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরই কাছে তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে। আর তারা বলে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও (তবে বল:) এই প্রতিশ্র“তি কবে বাস্তবায়িত হবে?” (সূরা মুলক ৬৭:২৪-২৫)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দান করেন। এ ক্ষেত্রে কারো কোন ক্ষমতা নেই। হায়াত-মওতের মালিক একমাত্র তিনি। দিবা-রাত্রির পরিবর্তন তিনিই করে থাকেন। তিনি চাইলে ২৪ ঘন্টাই দিন রাখতে পারতেন, আবার চাইলে ২৪ ঘন্টাই রাত রাখতে পারতেন। কিন্তু বান্দার প্রতি তাঁর যে দয়া, তিনি তা করেননি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَهُوَ الَّذِيْٓ أَحْيَاكُمْ ز ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ط إِنَّ الْإِنْسَانَ لَكَفُوْرٌ)
“এবং তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন; অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন। মানুষ তো অতি মাত্রায় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা হজ্জ ২২:৬৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللّٰهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلٰي يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إلٰهٌ غَيْرُ اللّٰهِ يَأْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِ ط أَفَلَا تُبْصِرُوْنَ)
“বল: ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ তা‘আলা যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত এমন কোন্ মা‘বূূদ আছে, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না?” (সূরা কাসাস ২৮:৭২)
অতএব প্রমাণ দেয়ার পরও তারা পূববর্তীদের মত কথা বলে, পূর্বের অবাধ্য লোকেরা যে পথে চলেছে তারাও সে পথের পথিক। তারা বলত, আমরা কি মাটিতে পচে গলে যাওয়ার পরেও পুনরায় জীবিত হব। এটা অসম্ভব, আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও এরূপ প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিল, কই তাদেরকে তো জীবিত করা হল না। যেমন তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّنَسِيَ خَلْقَه۫ ط قَالَ مَنْ يُّحْيِ الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيْمٌ)
“আর সে আমার সম্পর্কে উদাহরণ বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের জন্মের কথা ভুলে যায়। সে বলেঃ কে জীবিত করবে এ হাড়গুলোকে, যখন তা পচে গলে যাবে?” (সূরা ইয়াসীন: ৩৬:৭৮) অতএব আখিরাতের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা জরুরী।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শাস্তি আসার পূর্বে তাওবাহ করতে হবে। শাস্তি এসে গেলে তখন আর হায়-হুতাশ করে কোন লাভ হবে না।
২. জীবন ও মৃত্যুদানকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৩. পুনরুত্থান দিবস সত্য এবং মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে।
৪. কুরআন কোন কল্পকাহিনী নয়, বরং এটি সত্যসহ প্রেরিত কিতাব।