আন-নূর আয়াত ১০
وَلَوْلَا فَضْلُ اللّٰهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهٗ وَاَنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ حَكِيْمٌ ࣖ ( النور: ١٠ )
Wa law laa fadlul laahi 'alaikum wa rahmatuhoo wa annal laaha Tawwaabun Hakeem (an-Nūr ২৪:১০)
English Sahih:
And if not for the favor of Allah upon you and His mercy... and because Allah is Accepting of Repentance and Wise. (An-Nur [24] : 10)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে (তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে), আল্লাহ তাওবাহ গ্রহণকারী, বড়ই হিকমতওয়ালা। (আন-নূর [২৪] : ১০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে[১] এবং আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময় না হলে (তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেত না)।
[১] এর জওয়াব এখানে ঊহ্য আছে; অর্থাৎ, 'তোমাদের মধ্যে মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর আযাব তৎক্ষণাৎ এসে পড়ত' (অথবা তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেত না।) কিন্তু যেহেতু তিনি তওবাগ্রহণকারী, ক্ষমাশীল ও প্রজ্ঞাময়, সেহেতু তিনি গোপন করে নিয়েছেন যাতে কোন ব্যক্তি বিশুদ্ধ মনে তওবাহ করলে আল্লাহ তাকে দয়ার কোলে আশ্রয় দেবেন। আর তিনি প্রজ্ঞাময় বলেই লিআনের মত সমস্যার সমাধান দিয়ে স্ত্রীর প্রতি ঈর্ষাবান আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন পুরুষদের জন্য উত্তম ও সুন্দর যুক্তিগ্রাহ্য পথ করে দিয়েছেন।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে [১]; এবং আল্লাহ্ তো তাওবা গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময়।
[১] এখানে বাক্যের বাকী অংশ উহ্য আছে। কারণ, এখানে অনেক কিছুই বর্ণিত হয়েছে যদি আল্লাহ্র রহমত ও অনুগ্রহ না থাকত তবে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারত। যদি আল্লাহ্র রহমত ও অনুগ্রহ হিসেবে এ আয়াতসমূহ নাযিল না করা হতো তবে এ সমস্ত বিষয় মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিত। যদি আল্লাহ্র রহমত না হতো তবে কেউ নিজেদেরকে তাওবার মাধ্যমে পবিত্র করার সুযোগ পেত না। যদি আল্লাহ্র রহমত না হতো তবে তাদের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদের উপর লা‘নত বা গজব নাযিল হয়েই যেত। এ সমস্ত সম্ভাবনার কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা এখানে উত্তরটি উহ্য রেখেছেন। [দেখুন, তাবারী, বাগভী, ফাতহুল কাদীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকত, (তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে) আর নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা গ্রহণকারী, প্রজ্ঞাময়।
4 Muhiuddin Khan
তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে এবং আল্লাহ তওবা কবুল কারী, প্রজ্ঞাময় না হলে কত কিছুই যে হয়ে যেত।
5 Zohurul Hoque
আর আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও তাঁর করুণা যদি তোমাদের উপরে না থাকত, আর আল্লাহ্ যে তওবা কবুলকারী, পরমজ্ঞানী ।
6 Mufti Taqi Usmani
তোমাদের প্রতি আল্লাহর ফযল ও তাঁর রহমত না হলে এবং আল্লাহ যে অত্যধিক তাওবা কবুলকারী ও হিকমতের মালিক এটা না হলে (চিন্তা করে দেখ তোমাদের দশা কী হত)।
7 Mujibur Rahman
তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেহই অব্যাহতি পেতেনা; এবং আল্লাহ তাওবাহ গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময়।
8 Tafsir Fathul Mazid
৬-১০ নং আয়াতের তাফসীর:
সাধারণ মু’মিন নর-নারীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার বিধান বর্ণনা করার পর এখানে লি‘য়ান এর বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। যার অর্থ হলন কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীকে নিজের চোখে অন্য কোন পুরুষের সাথে যেনায় লিপ্ত দেখে, তারপরেও ব্যভিচারের বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য মোট চারজন সাক্ষীর প্রয়োজন। তা না হলে স্ত্রীর ওপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না। আর তা সম্ভব না হলে নিজের চোখে দেখার পর এ রকম অসতী স্ত্রী নিয়ে সংসার করাও সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় শরীয়ত সমাধান দিয়েছে যে, স্বামী আদালতে কাযীর সামনে চারবার আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলবে যে, সে তার স্ত্রীর ওপর ব্যভিচারের যে অভিযোগ করেছে তা সত্য এবং এ ব্যাপারে সে নিজে সত্যবাদী। অথবা স্ত্রীর এ সন্তান বা গর্ভ তার নয়। আর পঞ্চমবার বলবে আমি যদি এ ব্যাাপারে মিথ্যাবাদী হই, তাহলে আমার ওপর আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ পতিত হবে। অনুরূপ স্ত্রীও আল্লাহ তা‘আলার নামে চারবার কসম করে বলবে যে, আমার স্বামী যা বলছে সব মিথ্যা। পঞ্চমবার বলবে- যদি আমার স্বামী সত্যবাদী হয় তাহলে আমার ওপর আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ পতিত হবে।
(الْكٰذِبِيْنَ.... وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ أَزْوَاجَهُمْ) শানে নুযূল:
ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, হেলাল বিন উমাইয়া (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে নিজ স্ত্রীকে “শারীক বিন সাহমা”-এর সাথে ব্যভিচারের অপবাদ দিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তুমি প্রমাণ উপস্থিত কর, না হয় তোমাকে হদ লাগানো হবে। তখন হেলাল বিন উমাইয়া বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি আমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে অন্য কোন লোককে ব্যভিচার করতে দেখে তাহলে কে প্রমাণ খুজতে যাবে? তার এ কথার জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই কথা বললেন: প্রমাণ আনতে হবে, না হয় তোমাকেই হদ দেয়া হবে। তখন এ বিধান সংক্রান্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ২৬৭১)
ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হেলাল বিন উমাইয়া (رضي الله عنه) শারীক বিন সাহমার সাথে তার স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলেন। অতঃপর যখন এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখান থেকে ফিরে গিয়ে হেলাল বিন উমাইয়ার স্ত্রীর নিকট লোক পাঠালেন তাকে নিয়ে আসার জন্য। অতঃপর হেলাল বিন উমাইয়া এ ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্য থেকে একজন মিথ্যাবাদী। কেউ তোমাদের দুজনের মধ্যে থেকে তাওবাহ করে ফিরে আসবে কি? অতঃপর মহিলাটি দাঁড়াল এবং চারবার সাক্ষ্য প্রদান করল। যখন পঞ্চমবার বলবে তখন সে একটু নিরব থাকল, ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: আমরা মনে করলাম যে, মহিলাটি মনে হয় এ থেকে ফিরে আসবে। কিন্তু সে তা না করে বলল যে, আমি আমার সম্প্রদায়কে সারা জীবনের জন্য তুচ্ছ করতে চাই না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: লক্ষ্য কর! যদি ঐ মহিলার গর্ভের সন্তানের পায়ের গোছা পাতলা হয়, বর্ণ কিছুটা কাল হয় তাহলে সে হবে ঐ ব্যক্তির সন্তান যার সাথে ঐ মহিলাকে অপবাদ লাগানো হয়েছে। অতঃপর যখন মহিলাটি সন্তান প্রসব করল তখন দেখা গেল ঐ রকমই বর্ণ নিয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যদি ঐ ব্যাপারটি কসমের সাথে জড়িত না থাকত তাহলে আমি অবশ্যই এ মহিলাটিকে শাস্তি প্রদান করতাম। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৪৭)
অতএব যদি কেউ তার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ দেয় আর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে তাহলে অবশ্যই চারবার শপথ করে বলবে যে, আমি সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার বলবে, যদি আমি মিথ্যাবাদী হই তাহলে আমার ওপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত। অনুরূপভাবে স্ত্রী যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চায় তাহলে সেও চারবার শপথ করে বলবে যে, তার স্বামী মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবার বলবে, যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয় তাহলে তার (স্ত্রী) ওপর আল্লাহ তা‘আলার লানত। আর তাদের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। তালাকের প্রয়োজন হবে না। এটাই হল লি‘য়ানের পদ্ধতি।
(وَلَوْلَا فَضْلُ اللّٰهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُه)
অর্থাৎ যদি আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও করুণা তোমাদের ওপর না থাকত তাহলে মিথ্যা বলার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তৎক্ষণাৎ শাস্তি দিতেন। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও প্রজ্ঞাময় সেহেতু তিনি মিথ্যাবাদীর মনের কথা গোপন রেখে দিয়েছেন যাতে সমাজে বিশৃংখলা না হয় এবং সে মিথ্যাবাদী নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. লি‘য়ানের পদ্ধতি জানা গেল।
২. লি‘য়ানের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়। তালাকের প্রয়োজন হয় না।
৩. স্বামী যদি তার স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তাহলে সেক্ষেত্রে চারজন সাক্ষী না থাকলেও স্বামীর এ প্রকার সাক্ষ্যই যথেষ্ট।
9 Fozlur Rahman
যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত (তাহলে দেখতে তোমাদের কী অবস্থা হত)! আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, প্রজ্ঞাময়।
10 Mokhtasar Bangla
১০. হে মানুষ! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো আর যদি তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দার তাওবা গ্রহণকারী এবং তাঁর শরীয়ত ও পরিকল্পনায় প্রজ্ঞাময় না হতেন তাহলে তিনি তোমাদের গুনাহগুলোর দ্রæত শাস্তি দিতেন এবং তোমাদেরকে সেগুলোর জন্য লজ্জিত করতেন।
11 Tafsir Ibn Kathir
৬-১০ নং আয়াতের তাফসীর
এ কয়েকটি আয়াতে কারীমায় বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ ঐ স্বামীদের মুক্তির উপায় বর্ণনা করেছেন যারা নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে। এমতাবস্থায় যদি তারা সাক্ষী পেশ করতে অপারগ হয় তবে তাদেরকে লেআন করতে হবে। এর রূপরেখা এই যে, স্বামী বিচারকের কাছে এসে নিজের বর্ণনা দেবে। যখন সে সাক্ষ্য পেশ করতে অপারগ হবে তখন বিচারক তাকে চারজন সাক্ষীর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে চারবার শপথ করতে বলবেন এবং সে শপথ করে বলবে যে, সে সত্যবাদী এবং সে যা বলছে তা সত্য। পঞ্চমবারে সে বলবে যে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহর লানত নেমে আসবে। এটুকু বলা হলেই ইমাম শাফেয়ী (রঃ) প্রমুখ গুরুজনের মতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে যাবে এবং ঐ স্ত্রী স্বামীর জন্যে চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। স্বামী তার মহর আদায় করবে এবং স্ত্রীর উপর ব্যভিচারের শাস্তি স্থির হয়ে যাবে। কিন্তু বিচারকের সামনে ঐ স্ত্রীও যদি মুলাআনা করে তবে তার উপর থেকে শাস্তি উঠে যাবে। সেও চারবার শপথ করে বলবে যে, তার স্বামী মিথ্যাবাদী। আর পঞ্চমবার বলবে যে, যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে। এখানে এটা লক্ষ্য করার বিষয় যে, স্ত্রীর জন্যে ‘গ্যব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা, সাধারণতঃ কোন পুরুষ এটা চায় না যে, অযথা স্ত্রীর উপর অপবাদ দিয়ে নিজের ও আত্মীয় স্বজনের বদনাম করবে। সুতরাং প্রায়ই সে সত্যবাদী হয় এবং তার সত্যবাদিতার ভিত্তিতেই তাকে ক্ষমার্হ মনে করা যেতে পারে। এ কারণেই পঞ্চমবারে তাকে বলিয়ে নেয়া হয় যে, তার স্বামী সত্যবাদী হলে তার উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে। গযব তার উপরই পতিত হয়ে থাকে যে সত্যকে জেনে শুনে ওর অপলাপ করে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেতে না; এবং আল্লাহ তাওবা কবুলকারী ও প্রজ্ঞাময়। তাদের গুনাহ যতই এবং যেমনই হোক না কেন, আর তারা যে কোন সময়েই ঐ গুনাহর জন্যে তাওবা করুক না কেন তিনি তা কবূল করে থাকেন। তিনি আদেশ ও নিষেধকরণে বড়ই প্রজ্ঞাময়। এই আয়াতের ব্যাপারে যেসব রিওয়াইয়াত রয়েছে সেগুলো নিম্নে বর্ণিত হলোঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন وَ الَّذِیْنَ یَرْمُوْنَ الْمُحْصَنٰتِ ثُمَّ لَمْ یَاْتُوْا ـ ـ ـ الخ এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন আনসারদের নেতা হযরত সা'দ ইবনে উবাদাহ (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এই আয়াতটি কি এভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “হে অনিসারের দল! তোমাদের নেতা যা বলছে তাকি তোমরা শুনতে পাও না?” তাঁরা জবাবে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি তাঁকে ক্ষমা করে দিন। এটা শুধু তাঁর অত্যধিক লজ্জার কারণ। এ ছাড়া আর কিছুই নয়। তার লজ্জার অবস্থা এই যে, তাঁকে কেউ কন্যা দিতে সাহস করে না।" তখন হযরত সা'দ (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার বিশ্বাস ত আছে যে, এটা সত্য। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি যে, যদি আমি কাউকে তার পা ধরে নিতে দেখতে পাই তবুও তাকে কিছুই বলতে পারবো না যে পর্যন্ত না আমি চারজন সাক্ষী আনয়ন করি! এই সুযোগে তো সে তার কাজ শেষ করে ফেলবে!” তাদের এসব আলাপ আলোচনায় কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়েছে এমন সময় সেখানে হযরত হিলাল ইবনে উমাইয়া (রাঃ) আগমন করেন। ইনি ছিলেন ঐ তিন ব্যক্তির একজন যাঁদের তাওবা কবুল হয়েছিল। তিনি এশার সময় জমি হতে বাড়ীতে ফিরেন। বাড়ীতে এসে তিনি একজন অপর পুরুষকে দেখতে পান। তিনি তাকে স্বচক্ষে দেখেন ও নিজের কানে তার কথা শুনতে পান। সকাল হলেই তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হন এবং তাঁর সামনে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে খুবই খারাপ বোধ হয় এবং তাঁর স্বভাবের উপর খুবই কঠিন ঠেকে। সাহাবীগণ একত্রিত হয়ে যান এবং বলতে শুরু করেনঃ “হযরত সা’দ ইবনে উবাদী (রাঃ)-এর উক্তির কারণেই তো আমরা বিপদে জড়িয়ে পড়েছি, আবার এমতাবস্থাতেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হিলাল ইবনে উমাইয়া (রাঃ)-কে অপবাদের হদ লাগাবেন এবং তাঁর সাক্ষ্যকে অগ্রাহ্য করবেন!” একথা অনে হযরত হিলাল ইবনে উমাইয়া (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি সত্যবাদী এবং আমি মহান আল্লাহর নিকট আশা রাখি তিনি আমার মুক্তির একটা উপায় বের করে দিবেন।” অতঃপর তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমি দেখছি যে, আমার কথা আপনার স্বভাববিরুদ্ধ হয়েছে। হে আল্লাহর সূল (সঃ)! আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যে, আমি সত্যবাদী এবং আল্লাহ এটা ভালরূপেই জানেন। কিন্তু তিনি সাক্ষী হাযির করতে অপারগ ছিলেন বলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে চাবুক মারার নির্দেশ দিতে উদ্যত হচ্ছিলেন এমন সময় অহী অবতীর্ণ হতে শুরু হয়ে গেল। সাহাবীগণ তাঁর চেহারা মুবারক দেখে বুঝতে পারলেন যে অহী নাযিল হচ্ছে। অহী নাযিল শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হিলাল (রাঃ)-এর দিকে তাকিয়ে বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা তোমার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন এবং তোমার মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন। সুতরাং তুমি খুশী হয়ে যাও।” তখন হযরত হিলাল (রাঃ) বলেনঃ “আলহামদুলিল্লাহ! মহান। আল্লাহর কাছে আমি এটাই আশা করছিলাম।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হিলাল (রাঃ)-এর স্ত্রীকে ডাকিয়ে নেন এবং উভয়ের সামনে মুলাআনার আয়াত পাঠ করে শুনিয়ে দেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ “দেখো, আখিরাতের শাস্তি দুনিয়ার তুলনায় অনেক কঠিন।” হযরত হিলাল (রাঃ) বলতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি সম্পূর্ণরূপে সত্যবাদী।” তাঁর স্ত্রী বললো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার স্বামী মিথ্যা কথা বলছেন।” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “ঠিক আছে, তোমরা লেআন কর।” হযরত হিলাল (রাঃ)-কে তিনি বললেনঃ “এভাবে চারবার শপথ কর এবং পঞ্চমবারে এইরূপ বল।” হযরত হিলাল (রাঃ) যখন চারবার শপথ করে ফেলেন এবং পঞ্চমবারের পালা আসে তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে হিলাল (রাঃ)! আল্লাহকে ভয় কর। দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের তুলনায় খুবই সহজ। পঞ্চমবারে তোমার মুখ দিয়ে কথা বের হওয়া মাত্রই তোমার উপর আল্লাহর শাস্তি ওয়াজিব হয়ে যাবে।” তখন তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহর কসম! যেভাবে তিনি আমাকে আমার সত্যবাদিতার কারণে দুনিয়ার শাস্তি হতে বাঁচিয়েছেন, অনুরূপভাবে আমার সত্যবাদিতার কারণে পরকালের শাস্তি হতেও তিনি আমাকে রক্ষা করবেন।” অতঃপর পঞ্চমবারের ভাষাও তিনি মুখ দিয়ে বের করে দেন। তারপর তাঁর স্ত্রীকে বলা হয়ঃ “তুমি চারবার শপথ করে বল যে, তোমার স্বামী মিথ্যাবাদী।” চারবার সে শপথ করলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে পঞ্চমবারের কালেমা উচ্চারণ করা হতে বিরত রাখেন এবং যেমনভাবে হ্যরত হিলাল (রাঃ)-কে বুঝিয়েছিলেন, অনুরূপভাবে তাকেও বুঝাতে লাগলেন। ফলে তার অবস্থার কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলো। পঞ্চমবারের কালেমাটি উচ্চারণ করা হতে সে যবানকে সামলিয়ে নিলো। এমন কি মনে হলো যেন সে তার অপরাধ স্বীকার করেই নেবে। কিন্তু শেষে সে বললোঃ “চিরদিনের জন্যে আমি আমার কওমকে অপমানিত করতে পারি না।” অতঃপর সে বলে ফেললোঃ “যদি আমার স্বামী সত্যবাদী হয় তবে আমার উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের দু'জনের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন এবং নির্দেশ দেন যে, তার গর্ভে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তার সম্পর্ক যেন হিলাল (রাঃ)-এর দিকে লাগানো না হয়। আর ঐ সন্তানকে অবৈধ সন্তানও যেন বলা না হয়। যে তাকে অবৈধ সন্তান বলবে বা ঐ স্ত্রীর উপর অপবাদ আরোপ করবে তাকে অপবাদের শাস্তি দেয়া হবে। তিনি এই ফায়সালাও দেন যে, তার পানাহারের দায়িত্ব তার স্বামীর উপর অর্পিত হবে না। কেননা, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেয়া হয়েছে। তালাকও হয়নি এবং স্বামী মৃত্যুবরণও করেনি। তিনি আরো বললেনঃ “দেখো, শিশুর বর্ণ যদি লাল ও সাদা মিশ্রিত হয় এবং পায়ের গোছা মোটা হয় তবে জানবে যে, ওটা হিলাল (রাঃ)-এর সন্তান। আর যদি তার পায়ের গোছা পাতলা হয় ও বর্ণ কিছুটা কালো হয় তবে ঐ শিশুকে ঐ ব্যক্তির মনে করবে যার সাথে তাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে।” সন্তান ভূমিষ্ট হলে দেখা গেল যে, সে ঐ খারাপ গুণ বিশিষ্ট ছিল যা অপবাদের সত্যতার নিদর্শন ছিল। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যদি এই মাসআলাটি কসমের সাথে জড়িত না থাকতো তবে অবশ্যই আমি স্ত্রীলোকটিকে হদ গালাতাম।” এই ছেলেটি বড় হয়ে মিসরের গভর্নর হয়েছিল। তার সম্পর্ক তার মাতার সাথে লাগানো হতো। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে আবি দাউদে এটা বর্ণিত হয়েছে)
এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতেও রয়েছে। তাতে আছে যে, হযরত হিলাল ইবনে উমাইয়া (রাঃ) তাঁর স্ত্রীর উপর শুয়েক ইবনে সাহমার সাথে ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে তা বর্ণনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি সাক্ষী হাযির কর, অন্যথায় তোমার পিঠে হদ গালানো হবে।” হযরত হিলাল (রাঃ) তখন বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! একজন লোক তার স্ত্রীকে স্বচক্ষে মন্দ কাজে লিপ্ত দেখে সাক্ষী খুঁজতে যাবে?” কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ কথাই বলতে থাকলেন। তাতে এও আছে যে, তাদের উভয়ের সামনে বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা খুবই ভাল জানেন যে, তোমাদের দুজনের মধ্যে একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। সুতরাং তোমাদের একজন কি তাওবা করে নিজেকে মিথ্যা বলা হতে বিরত রাখছো?” অন্য বিওয়াইয়াতে আছে যে, পঞ্চমবারে তিনি বলেনঃ “তোমরা তার মুখ বন্ধ করে দাও।” অতঃপর তিনি তাঁকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেনঃ “দেখো, আল্লাহর লা'নত অপেক্ষা সবকিছুই হালকা।” অনুরূপ উপদেশবাণী স্ত্রীর সামনেও পেশ কৰা হয় (শেষ পর্যন্ত)।
হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন, হযরত ইবনে যুবায়ের (রাঃ)-এর অধিনায়কত্বের যুগে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “পরস্পর লা'নতকারী বা লেআনকারী স্বামী স্ত্রীর মাঝে কি বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে?” এর উত্তর দিতে আমি সক্ষম না হয়ে হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট হাযির হই এবং তাঁকে মাসআলাটি জিজ্ঞেস করি। তিনি উত্তরে বলেনঃ “সুবহানাল্লাহ! ঠিক এই প্রশ্নই ইতিপূর্বে অমুক ইবনে অমুক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে করেছিল। সে বলেছিলঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন লোক তার স্ত্রীকে কোন মন্দ কাজে লিপ্ত অবস্থায় পেয়ে যদি মুখ দিয়ে কোন কথা বের করে তবে সেটাও লজ্জার কথা, আবার যদি নীরব থাকে তবে সেটাও খুবই নির্লজ্জতাপূর্ণ নীরবতা। সুতরাং এমতাবস্থায় কি করা যায়?” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নীরব থাকেন। লোকটি আবার এসে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আপনাকে যে প্রশ্নটি করেছি সেটা স্বয়ং আমারই ঘটনা।” তখন আল্লাহ তাআলা সূরায়ে নূরের এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে পাশে ডেকে নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে উপদেশ দেন এবং অনেক কিছু বুঝান। কিন্তু প্রত্যেকেই নিজেকে সত্যবাদী বলে প্রকাশ করে। অতঃপর উভয়েই আয়াত অনুযায়ী শপথ করে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে পৃথক করে দেন।”এটা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। (ইমাম নাসাঈও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা শুক্রবারে সন্ধ্যার সময় মসজিদে বসেছিলাম এমন সময় একজন আনসারী এসে বলেঃ “যখন কোন লোকে তার স্ত্রীর সাথে অপর কোন লোককে দেখে তখন যদি সে তাকে হত্যা করে দেয় তবে তোমরা তাকেও মেরে ফেলবে। আর যদি সে মুখ দিয়ে তা বের করে এবং সাক্ষী হাযির করতে অপারগ হয় তবে তোমরা তাকেই চাবুক মারবে। আবার সে যদি চুপ করে বসে থাকে তবে সেটাও বড়ই লজ্জার কথা! আল্লাহর শপথ! যদি সকাল পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকি তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবো।” অতঃপর সে নিজের ভাষায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এটা জিজ্ঞেস করে এবং দু'আ করেঃ “হে আল্লাহ! আপনি এর ফায়সালাযুক্ত আয়াত নাযিল করুন।” তখন লেআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়। সর্বপ্রথম এই লোকটিই এতে জড়িয়ে পড়েছিল।” (এটাও ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)
হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উওয়াইমির (রাঃ) হযরত আসেম ইবনে আদি (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে বলেনঃ “আপনি গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করুন যে, যদি কোন লোক তার স্ত্রীর সাথে (ব্যভিচারে লিপ্ত) অপর কোন লোককে দেখে তবে সে কি করবে? এমন তো নয় যে, যদি সে তাকে হত্যা করে দেয় তবে তাকেও হত্যা করে দেয়া হবে?” অতঃপর হযরত আসেম (রাঃ) গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ওটা জিজ্ঞেস করেন। এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুবই অসন্তুষ্ট ও মনঃক্ষুন্ন হন। যখন হযরত আসেম (রাঃ)-এর সাথে হযরত উওয়াইমির (রাঃ) সাক্ষাৎ ঘটে তখন তিনি হযরত আসেম (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি আমার কথাটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি কি উত্তর দেন?” উত্তরে হযরত আসেম (রাঃ) তাকে বলেনঃ “আপনি আমাকে ভাল কথা জিজ্ঞেস করতে পাঠাননি। বড়ই দুঃখের বিষয় যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার এই প্রশ্ন শুনে খুবই অসন্তুষ্ট ও মনঃক্ষুন্ন হয়েছিলেন।” তখন হযরত উওয়াইমির (রাঃ) বলেনঃ “আচ্ছা, আমি স্বয়ং গিয়ে তাঁকে এটা জিজ্ঞেস করে আসছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে গিয়ে হযরত উওয়াইমির (রাঃ) জানতে পারেন যে, ইতিপূর্বেই এ সম্পর্কে হুকুম অবতীর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং লেআনের পর হযরত উওয়াইমির (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এখন যদি আমি আমার এ স্ত্রীকে বাড়ী নিয়ে যাই তবে এটাই প্রমাণিত হবে যে, আমি তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলাম।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আদেশের পূর্বেই তিনি তাঁর ঐ স্ত্রীকে পৃথক করে দেন। এরপর লেআনকারীদের জন্যে এই পন্থাই নির্ধারিত হয়ে যায় (শেষ পর্যন্ত)। (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, ঐ স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী ছিল এবং তার স্বামী ঐ গর্ভজাত শিশুকে নিজের সন্তান বলতে অস্বীকার করেছিলেন। এ কারণেই ঐ শিশুটি তার মায়ের দিকে সম্পর্কযুক্ত হতো। তারপর সুন্নাত তরীকা এটাই চালু হয়ে যায় যে, সে তার মায়ের ওয়ারিস হবে এবং মা তার উত্তরাধিকারী হবে।
একটি মুরসাল ও গারীব হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “স্বয়ং যদি তোমাদের খ্রীদের সাথে তোমরা কোন পর পুরুষকে দেখতে পাও তবে তোমরা কি করবে?” দু’জনই উত্তর দেনঃ “আমরা তার গর্দান উড়িয়ে দেবো। এই অবস্থায় দাইয়ুস ছাড়া অন্য কেউই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।” ঐ সময় সূরায়ে নূরের এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।
আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম হযরত হিলাল ইবনে উমাইয়া (রাঃ) ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে লেআন হয়েছিল।