আশ-শো'আরা আয়াত ১৯৫
بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُّبِيْنٍ ۗ ( الشعراء: ١٩٥ )
Bilisaanin 'Arabiyyim mubeen (aš-Šuʿarāʾ ২৬:১৯৫)
English Sahih:
In a clear Arabic language. (Ash-Shu'ara [26] : 195)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। (আশ-শো'আরা [২৬] : ১৯৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
(অবতীর্ণ করা হয়েছে) সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় [১]।
[১] আয়াত থেকে জানা গেল যে, আরবী ভাষায় লিখিত কুরআনই কুরআন। অন্য যে কোন ভাষায় কুরআনের কোন বিষয়বস্তুর অনুবাদকে কুরআন বলা হবে না। দেখুন- [ইবন কাসীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
4 Muhiuddin Khan
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
5 Zohurul Hoque
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
6 Mufti Taqi Usmani
নাযিল হয়েছে এমন আরবী ভাষায়, যা বাণীকে সুস্পষ্ট করে দেয়।
7 Mujibur Rahman
অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরাবী ভাষায়।
8 Tafsir Fathul Mazid
১৯২-১৯৫ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন, কাফির মুশরিকরা যে সন্দেহ করত এবং বলত এ কুরআন পূর্ববর্তীদের উপকথা যা মুহাম্মাদ নিজেই রচনা করেছে। তাদের এ কথা খণ্ডন করণার্থে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ কুরআন বিশ্ব প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, এটা কোন মানব রচিত কিতাব নয়। যদি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিল না হত তাহলে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্ববর্তী এসব জাতির খবর কিভাবে জানলেন? এসব খবর তিনিই দিতে পারেন যিনি সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন । যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(تَنْزِيْلُ الْكِتٰبِ مِنَ اللّٰهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ)
“এ কিতাব নাযিল হয়েছে প্রতাপশালী মহাবিজ্ঞ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে।” (সূরা যুমার ৩৯:১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(مَآ أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْاٰنَ لِتَشْقٰٓي لا - إِلَّا تَذْكِرَةً لِّمَنْ يَّخْشٰي لا - تَنْزِيْلًا مِّمَّنْ خَلَقَ الْأَرْضَ وَالسَّمٰوٰتِ الْعُلٰي)
“তুমি কষ্ট পাবে এজন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি, বরং যে ভয় করে কেবল তার উপদেশ লাভের জন্য, যিনি পৃথিবী ও সমুচ্চ আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট হতে এটা অবতীর্ণ, (সূরা ত্বা-হা- ২০:২-৪)
আর এ কুরআন নাযিল করা হয়েছে জিবরীল আমীন এর মাধ্যমে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَإِنَّه۫ نَزَّلَه۫ عَلٰي قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللّٰهِ)
“তুমি বলন যে ব্যক্তি জিবরীলের সাথে শত্র“তা রাখে (সে হিংসায় মরে যাক) সে তো আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে এ কুরআনকে তোমার অন্তঃকরণ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন।” (সূরা বাকারাহ ২:৯৭)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ কুরআনকে নাযিল করা হয়েছে মানুষকে পরকালের শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كِتٰبٌ أُنْزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِه۪ وَذِكْرٰي لِلْمُؤْمِنِيْنَ)
“তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতএব তোমার মনে যেন এ সম্পর্কে কোন সঙ্কোচ না থাকে এর দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে এবং মু’মিনদের জন্য এটা উপদেশ।” (সূরা আ‘রাফ ৭:২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّآ أُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُوْنَ)
“যাতে তুমি সতর্ক করতে পার এমন এক জাতিকে, যাদের পূর্বপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, ফলে তারা গাফিল রয়ে গেছে।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৬)
আর এ কুরআন আরবি ভাষায় নাযিল করা হয়েছে যাতে মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَّهٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِيْنٌ)
“কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবি।” (সূরা নাহল ১৬:১০৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(كِتٰبٌ فُصِّلَتْ اٰيٰتُه۫ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ)
“এটা (এমন) এক কিতাব, বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এর আয়াতসমূহ, আরবি ভাষায় কুরআনরূপে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।” (হা-মীম-সাজদাহ ৪১:৩)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষকে সতর্ক করার জন্য।
২. কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ।
9 Fozlur Rahman
(তা অবতীর্ণ হয়েছে) স্পষ্ট আরবী ভাষায়।
10 Mokhtasar Bangla
১৯৫. জিব্রীল (আলাইহিস-সালাম) সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় তা নিয়ে অবতরণ করেছেন।
11 Tafsir Ibn Kathir
১৯২-১৯৫ নং আয়াতের তাফসীর
সূরার শুরুতে কুরআন কারীমের বর্ণনা এসেছিল, ওরই বর্ণনা আবার বিস্তারিতভাবে দেয়া হচ্ছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন কারীম আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। রূহুল আমীন দ্বারা হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে যিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অহী নিয়ে আসতেন। রূহুল আমীন দ্বারা যে হযরত জিবরাঈল (আঃ) উদ্দেশ্য এটা পূর্বযুগীয় বহু গুরুজন হতে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ), হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত আতিয়্যা (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ), হযরত যুহরী (রঃ) হযরত ইবনে জুরায়েজ (রঃ) প্রমুখ। হযরত যুহরী (রঃ) বলেন যে, এটা আল্লাহ তা'আলার নিম্নের উক্তির মতইঃ
قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِیْلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلٰى قَلْبِكَ بِاِذْنِ اللّٰهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیْنَ یَدَیْهِ
অর্থাৎ “বল-যে কেউ জিবরীল (আঃ)-এর শত্রু এই জন্যে যে, সে আল্লাহর নির্দেশক্রমে তোমার হৃদয়ে কুরআন পৌছিয়ে দিয়েছে, যা ওর পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক।” (২:৯৭) এ ফেরেশতা এমন সম্মানিত যে, তাঁর শত্রু আল্লাহও শত্রু। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, রুহুল আমীন (আঃ) যার সাথে কথা বলেন তাঁকে যমীনে খায় না। মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! এই বুযর্গ ও মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতা, যে ফেরেশতাদের নেতা, তোমার হৃদয়ে আল্লাহর ঐ পবিত্র ও উত্তম কথা অবতীর্ণ করে যা সর্ব প্রকারের ময়লা-মলিনতা, হ্রাস-বৃদ্ধি এবং বক্রতা হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত, যেন তুমি পাপীদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে বাঁচাবার পথ প্রদর্শন করতে পার। আর যাতে তুমি আল্লাহর অনুগত বান্দাদের তাঁর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিতে পার। এটা সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতারিত যাতে সবাই এটা বুঝতে এবং পড়তে পারে, তাদের যেন ওজর কবার কিছুই অবশিষ্ট না থাকে। আর যাতে এ কুরআন কারীম প্রত্যেকের উপর হুজ্জত হতে পারে।
হযরত ইবরাহীম তাইমী (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, একদা বাদলের দিনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীদের সাথে ছিলেন এমন সময় তিনি অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় মেঘের গুণাবলী বর্ণনা করেন। তখন একজন লোক তাকে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি তো সর্বাপেক্ষা বাকপটু ও প্রাঞ্জল ভাষী!” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমার ভাষা এরূপ পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত এবং প্রাঞ্জল হবে না কেন? কুরআন কারীমও তো আমার ভাষাতেই অবতীর্ণ হয়েছে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত সুফইয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, অহী আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রত্যেক নবী তাঁর কওমের জন্যে তাদের ভাষায় অনুবাদ করেছেন। কিয়ামতের দিন সুরইয়ানী ভাষা হবে। আর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আরবী ভাষায় কথা বলবে।