এমন অনেক জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য মজুদ রাখে না, আল্লাহই তাদেরকে রিযক দান করেন আর তোমাদেরকেও। তিনি সব কিছু শোনেন, সব কিছু জানেন।
English Sahih:
And how many a creature carries not its [own] provision. Allah provides for it and for you. And He is the Hearing, the Knowing.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
এমন বহু জীব-জন্তু আছে[১] যারা নিজেদের রুযী বহন করে না; [২] আল্লাহই ওদেরকে এবং তোমাদেরকে রুযী দান করেন।[৩] আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।[৪]
[১] كأين শব্দটিতে কাফ (তাশবীহ) সাদৃশ্য বর্ণনার জন্য। এখানে এর অর্থ হল কতক বা অনেক।
[২] কারণ, উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাই তাদের নেই, অনুরূপ তারা সঞ্চয় করে রাখতেও পারে না। উদ্দেশ্য হল, রুযী কোন নির্দিষ্ট স্থানে বিশেষভাবে রাখা হয়নি; বরং আল্লাহর রুযী তার সৃষ্টির জন্য ব্যাপক। তাতে সে যেই হোক আর যেখানেই থাক। বরং আল্লাহ তাআলা হিজরতকারী (মুহাজির) সাহাবায়ে কেরামকে পূর্বের চেয়ে অধিক প্রশস্ত ও পবিত্র রুযী প্রদান করেছিলেন। এ ছাড়া অতি অল্প দিন পরেই তাঁদেরকে আরবের বিভিন্ন এলাকার গভর্নর বানিয়ে দিয়েছিলেন। (رضي الله عنهم أجمعين)
[৩] অর্থাৎ, কেউ অক্ষম হোক বা সক্ষম, (রুযী অর্জনের) অসীলা ও উপকরণ প্রাপ্ত হোক অথবা না হোক, স্বদেশে থাক অথবা মুহাজির অবস্থায় বিদেশে, সকলের রুযীর ব্যবস্থাপক সেই আল্লাহ, যিনি পিপীলিকাকে ভূমির বিভিন্ন প্রান্তে, পাখিকে হাওয়াতে ও মাছ ও অন্যান্য জলচর জীব-জন্তুকে সমুদ্রের গভীরে রুযী পৌঁছান। এখানে উদ্দেশ্য হল, দরিদ্রতার ভয় যেন হিজরত করাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। কারণ আল্লাহ তাআলা তোমাদের এবং সকল সৃষ্টিকুলের রুযীর দায়িত্ব নিয়েছেন।
[৪] তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম এবং বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক সব কিছু জ্ঞাত আছেন। সুতরাং শুধু তাঁকেই ভয় কর এবং তিনি ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করো না। তাঁরই আনুগত্যে সুখ ও পরিপূর্ণতা আছে এবং তাঁর অবাধ্যতায় আছে দুঃখ ও দুর্দশা।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর এমন কত জীবজন্তু রয়েছে যারা নিজেদের রিযিক মজুদ রাখে না। আল্লাহ্ই রিযিক দান করেন তাদেরকে ও তোমাদেরকে ; আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বাজ্ঞ [১]।
[১] হিজরতের পথে দ্বিতীয় আশংকা এই যে, অন্য দেশে যাওয়ার পর রুয়ী রোজগারের কি ব্যবস্থা হবে? জন্মস্থানে তো মানুষ কিছু পৈতৃক সম্পত্তি, কিছু নিজের উপার্জন দ্বারা বিষয়-সম্পত্তির ব্যবস্থা করে থাকে। হিজরতের সময় এগুলো সব এখানে থেকে যাবে। কাজেই পরবতী পর্যায়ে জীবননির্বাহ কিরূপে হবে? এ আয়াতসমূহে এর জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, অর্জিত আসবাবপত্রকে রিযিকের যথেষ্ট কারণ মনে করা ভুল। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা'আলাই রিযিক দান করেন। তিনি ইচ্ছা করলে বাহ্যিক আয়োজন ছাড়াও রিযিকদান করেন এবং ইচ্ছা না করলে সব আয়োজন সত্বেও মানুষ সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে। প্রমাণস্বরূপ প্রথম বলা হয়েছে, চিন্তা কর, পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন হাজারো জীব-জন্তু আছে যারা খাদ্য সঞ্চয় করার কোন ব্যবস্থা করে না। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা নিজ কৃপায় প্রত্যহ তাদেরকে খাদ্য সরবরাহ করেন। পৃথিবীর অসংখ্য ও অগণিত প্রকার জীব-জন্তুর মধ্যে অধিকাংশের অবস্থা এই যে, তারা খাদ্য সংগ্ৰহ করার পর আগামীকালের জন্যে তা সঞ্চিত রাখে। না এবং এর প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জামও তাদের নেই। [দেখুন, ইবন কাসীর] হাদীসে আছে, ‘পক্ষীকূল সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদরপূর্তি করে ফিরে আসে।’ তিরমিয়ী; ২৩৪৪] অথচ তাদের না আছে ক্ষেত-খলা, না আছে জমি ও বিষয়-সম্পত্তি। তারা কোন কারখানা অথবা অফিসের কর্মচারীও নয়। তারা আল্লাহ্ তা'আলার উন্মুক্ত পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং পেটভর্তি খাদ্যলাভ করে। এটা একদিনের ব্যাপার নয়। বরং তাদের আজীবন কর্মধারা।
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর এমন কত জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজদের রিয্ক নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিয্ক দেন এবং তোমাদেরও। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।
4 Muhiuddin Khan
এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
5 Zohurul Hoque
আর কত না জীবজন্তু রয়েছে যারা তাদের জীবিকা বহন করে না, আল্লাহ্ই তাদের রিযেক দান করেন এবং তোমাদেরও, আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।