১০০-১০১ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে আহলে কিতাবদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ মু’মিনদের ওপর কোন কল্যাণ নাযিল হোক এটা তারা চায় না; বরং তারা চায় মুসলিমরা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসুক, নিজেদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদে লেগেই থাকুক, তারা মুরতাদ হয়ে যাক। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَدَّ کَثِیْرٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ لَوْ یَرُدُّوْنَکُمْ مِّنْۭ بَعْدِ اِیْمَانِکُمْ کُفَّارًاﺊ حَسَدًا مِّنْ عِنْدِ اَنْفُسِھِمْ)
“আহলে কিতাবের অনেকে তাদের প্রতি সত্য প্রকাশিত হবার পর তারা তাদের অন্তর্নিহিত বিদ্বেষবশত তোমাদেরকে ঈমান আনার পরে মুরতাদ বানাতে ইচ্ছা করে;” (সূরা বাকারাহ ২:১০৯)
ইয়াহূদীদের চক্রান্ত ও মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ কত জঘন্য তা সুস্পষ্ট হয়ে যায় এ ঘটনা থেকে- একদা আউস এবং খাযরাজ নামক দু’টি আনসার গোত্র কোন এক মাজলিসে এক সাথে বসে আলাপ-আলোচনা করছিল। ইত্যবসরে শাস বিন কাইস নামক একজন ইয়াহূদী তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের পারস্পরিক এ সৌহার্দ দেখে হিংসায় জ্বলে উঠল। এটা সে সহ্য করতে পারল না। যারা একে অপরের চিরশত্র“ ছিল, সর্বদা বিবাদে লিপ্ত থাকত তারা আজ ইসলামের বরকতে দুধে চিনির মত পরস্পর অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। সে একজন যুবককে দায়িত্ব দিল যে, তুমি তাদের মাঝে গিয়ে সেই ‘বুআস’ যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দাও, যা হিজরতের পূর্বে তাদের মাঝে সংঘটিত হয়েছিল এবং সে যুদ্ধে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে যে বীরত্ব প্রকাশক কবিতাগুলো পড়েছিল, তা ওদেরকে শুনাও। সে যুবক গিয়ে তা-ই করল। ফলে উভয় গোত্রের পূর্বের আক্রোশ-আগুন পুনরায় জ্বলে উঠলো এবং পরস্পরকে গালি দিতে লাগল। এমন কি অস্ত্র ধারণের জন্য একে অপরকে ডাকাডাকি শুরু করে দিল। তারা আপোষে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত হয়ে তাদেরকে বললেন: আমি তোমাদের মাঝে থাকতেই এমন শুরু করে দিয়েছ? তখন তারা ভুল বুঝতে পেরে অস্ত্র-সস্ত্র ছেড়ে পরস্পর গলাগলি ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। বলা হয় এ প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়। (ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা কিভাবে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী কর অথচ তোমাদের কাছে আল্লাহ তা‘আলার আয়াত তেলাওয়াত করা হয় এবং তোমাদের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদ্যমান রয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ ج وَالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ لِتُؤْمِنُوْا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ أَخَذَ مِيْثَاقَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ)
“তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনছ না? অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে আহ্বান করছে এবং তিনি (আল্লাহ) তোমাদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন, তোমরা যদি বিশ্বাস করতে।” (সূরা হাদীদ ৫৭:৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন সাহাবীদেরকে বললেন, কোন্ মু’মিনের ঈমান তোমাদের কাছে আশ্চর্য মনে হয়? তারা বলল: ফেরেশতা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেন তারা ঈমানদার হবে না অথচ তারা তাদের রবের নিকট থাকে। তারপর তারা নাবীদের কথা উল্লেখ করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের কাছে ওয়াহী আসে, তাদের ঈমানে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। তারপর তারা বলল, তাহলে আমরা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদের কাছে রয়েছি, অতএব তোমাদের ঈমানও কোন আশ্চর্য নয়। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাহলে কারা? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তারা হল এমন সম্প্রদায় যারা পরবর্তীতে আসবে, তারা কিতাব পাবে আর তাতে ঈমান আনবে। (সনদটি ইবনে মাসউদ পর্যন্ত সহীহ, তাফসীর ইবনে কাসীর, ২/৯৪)
সুতরাং ইয়াহূদীদের চক্রান্ত থেকে সাবধান, তাদের কাজ মুসলিমদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করে দিয়ে তাদের মাঝেই হানাহানি সৃষ্টি করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের অনুসরণ করলে আমরা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাব।
২. মুসলিমদের প্রতি ইয়াহূদীদের বিদ্বেষ কিভাবে তাদেরকে উস্কানি দিয়ে পরস্পরের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করে ধ্বংস করা যায়।
৩. কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরলে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকা যাবে, তাই আকীদা ও আমল সকল ক্ষেত্রে একমাত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে হবে, অন্য কোন মত ও পথ নয়।