১২-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতগুলোতে পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারী কাফির-মুশরিকদের কিয়ামতের দিন যে লাঞ্ছনা ও অপমানকর অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সামনে দন্ডায়মান করা হবে এবং স্বচক্ষে তা দেখে দুনিয়াতে আগমনের কামনা করবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তারা যখন পুনরুত্থিত হবে তখন লজ্জায় তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে মাথা নত করে হীন ও লাঞ্ছিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবে এবং বলবে হে আল্লাহ তা‘আলা! দুনিয়াতে না দেখে বিশ্বাস করিনি। এখন তো সব দেখছি ও শুনছি, অতএব আমাদেরকে দুনিয়াতে আসার সুযোগ দেন, আমরা ভাল আমল করে সৎ বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে আসি। কিন্তু তাদের প্রার্থনা কবূল করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَلَوْ تَرٰٓي إِذْ وُقِفُوْا عَلَي النَّارِ فَقَالُوْا يٰلَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِاٰيٰتِ رَبِّنَا وَنَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ – بَلْ بَدَأَ لَهُمْ مَّا كَانُوْا يُخْفُوْنَ مِنْ قَبْلُ ط وَلَوْ رُدُّوْا لَعَادُوْا لِمَا نُهُوْا عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكٰذِبُوْنَ - وَقَالُوْآ إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ)
“তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে অগ্নির পার্শ্বে দাঁড় করান হবে এবং তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমাদেরকে (পৃথিবীতে) আবার ফিরিয়ে দেয়া হত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (বিষয়টি এমন নয়) বরং পূর্বে তারা যা গোপন করেছে তা এখন তাদের নিকট প্রকাশ পেয়েছে এবং তারা প্রত্যাবর্তিত হলেও যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল পুনরায় তারা তাই করত এবং নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী। তারা বলে, ‘আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হব না।’ (সূরা আন‘আম ৬:২৭-২৯) তাদেরকে আর দুনিয়াতে পাঠানো হবে না। তারা তথায় আফসোস করে বলবে।
(وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِيْٓ أَصْحٰبِ السَّعِيْرِ)
“এবং তারা আরো বলবে: যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না।” (সূরা মুলক ৬৭:১০)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, যদি আমি ইচ্ছা করতাম তাহলে সকলকে হিদায়াত দান করতে পারতাম। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَلَوْ شَا۬ءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًا ط أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰي يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ)
“তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলেই ঈমান আনত; তবে কি তুমি মু’মিন হবার জন্য মানুষের ওপর জবরদস্তি করবে?” (সূরা ইউনুস ১০:৯৯) কিন্তু সকলে হিদায়াত পায়নি কারণ পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলার বাণী নির্ধারিত হয়ে গেছে যে, এক শ্রেণির মানুষ ও জিন দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করা হবে। এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করে জাহান্নামে দেবেন, বরং তারা জাহান্নামে যাওয়ার আমল করবে তাই তারা জাহান্নামে যাবে। এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসেও আলোচনা করা হয়েছে।
সুতরাং জাহান্নামে যারা যাবে তারা নিজেদের অপরাধের কারণেই যাবে। আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াতের বাণী দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। তারা যেমন দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলার বানী ভুলে দূরে থাকত আল্লাহ তা‘আলাও কিয়ামতের দিন তাদেরকে ভূলে যাবেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَقِيْلَ الْيَوْمَ نَنْسٰكُمْ كَمَا نَسِيْتُمْ لِقَا۬ءَ يَوْمِكُمْ هٰذَا وَمَأْوَاكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ نّٰصِرِيْنَ)
“আর বলা হবে, আজ আমি তোমাদেরকে ভুলে যাব যেমন তোমরা এই দিবসের সাক্ষাতকে ভুলে গিয়েছিলে। তোমাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।” (সূরা জাসিয়া ৪৫:৩৪)
সুতরাং সময় থাকতে আমাদের হুশিয়ার হওয়া উচিত, কোনক্রমেই যেন আল্লাহ তা‘আলার সাথে নাফরমানী না করি। কারণ তা নিজের বিপদ ডেকে নিয়ে আসবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হিদায়াতের মলিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা অন্য কেউ নয়।
২. জাহান্নাম জিন ও মানুষ জাতি দিয়েই পূর্ণ করা হবে।