আল আহযাব আয়াত ২৭
وَاَوْرَثَكُمْ اَرْضَهُمْ وَدِيَارَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ وَاَرْضًا لَّمْ تَطَـُٔوْهَا ۗوَكَانَ اللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرًا ࣖ ( الأحزاب: ٢٧ )
Wa awrasakum ardahum wa diyaarahum wa amwaalahum wa ardal lam tata'oohaa; wa kaanal laahu 'alaa kulli shai'in Qadeeraa (al-ʾAḥzāb ৩৩:২৭)
English Sahih:
And He caused you to inherit their land and their homes and their properties and a land which you have not trodden. And ever is Allah, over all things, competent. (Al-Ahzab [33] : 27)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর তিনি তোমাদেরকে উত্তরাধিকারী করে দিলেন তাদের ভূমির, তাদের ঘরবাড়ির আর তাদের ধন-সম্পদের; আর এমন এক ভূখন্ডের যেখানে তোমরা (এখনও) অভিযানই পরিচালনা করনি। আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (আল আহযাব [৩৩] : ২৭)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তিনি তোমাদেরকে ওদের ভূমি, ঘর-বাড়ী ও ধন-সম্পদের এবং এমন এক দেশের উত্তরাধিকারী করলেন[১] যেখানে তোমরা পা রাখনি। [২] আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
[১] এখানে বানী কুরাইযা যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। যেমন পূর্বে বর্ণনা হয়েছে যে, এই গোত্র নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আহযাব যুদ্ধে মুশরিক এবং অন্য ইয়াহুদীদের সাথে মিলিত হয়েছিল। সুতরাং আহযাব যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সবেমাত্র গোসল সেরেছেন এমতাবস্থায় জিবরীল (আঃ) এসে বললেন, আপনি হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন? আমরা (ফিরিশতাদল) তো এখনো হাতিয়ার রাখিনি। চলুন, এখন বানু কুরাইযার হিসাব চুকাতে হবে। আমাকে আল্লাহ তাআলা এই জন্য আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। সুতরাং মহানবী (সাঃ) মুসলিমদের মাঝে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারী করলেন যে, আসরের নামায ঐখানে গিয়ে পড়বে। তাদের বাসস্থান মদীনা হতে কয়েক মাইল দূরে ছিল। তারা আপন কেল্লাতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। বাইরে থেকে মুসলিমগণ তাদেরকে ঘিরে ফেলল। এই অবরোধ প্রায় বিশ-পঁচিশ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকল। পরিশেষে তারা সা'দ বিন মুআযকে নিজেদের বিষয়ে সালিস মেনে নিল যে, তিনি আমাদের ব্যাপারে যে ফায়সালা দেবেন, আমরা তা মেনে নেব। সুতরাং তিনি ফায়সালা দিলেন যে, তাদের মধ্যে যোদ্ধাদেরকে হত্যা এবং নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হবে। আর তাদের সম্পদ মুসলিমদের মাঝে বন্টন করে দেওয়া হবে। নবী (সাঃ) উক্ত ফায়সালা শুনে বললেন, "আকাশের উপর আল্লাহ তাআলার ফায়সালাও এটাই।" এই ফায়সালা অনুযায়ী তাদের যোদ্ধাদের শিরশ্ছেদ করা হল এবং মদীনাকে তাদের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করা হল। (দেখুনঃ সহীহ বুখারী, খন্দক যুদ্ধ) أَنزَل অর্থাৎ কেল্লা থেকে নিচে নামিয়ে দিল। ظاهروهم অর্থাৎ তারা কাফেরদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য করেছিল।
[২] অনেকে বলেছেন, এ স্থান থেকে উদ্দেশ্য হল খায়বার এলাকা। আহযাবের পরেই ৬ হিজরী সনে হুদাইবিয়ার সন্ধির পর মুসলিমরা খায়বার জয় করেন। অনেকে বলেছেন, মক্কা। অনেকে রোম বা পারস্যের এলাকা উদ্দেশ্য বলেছেন। পক্ষান্তরে অনেকের নিকট আয়াতের উদ্দেশ্য হল, ঐ সকল দেশ ও এলাকা যা কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিমগণ জয়লাভ করবেন। (ফাতহুল ক্বাদীর)
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তিনি তোমাদেরকে অধিকারী করলেন তাদের ভূমি, ঘড়বাড়ী ও ধন - সম্পদের এবং এমন ভূমির যাতে তোমরা এখনো পদার্পণ করনি [১]। আর আল্লাহ্ সবকিছুর উপর পূর্ন ক্ষমতাবান।
[১] এখানে মুসলিমদের অদূর ভবিষ্যতে জয়যাত্রার সুসংবাদ দান করা হয়েছে যে, এখন থেকে কাফেরদের অগ্রাভিযানের অবসান এবং মুসলিমদের বিজয় যুগের সূচনা হলো। আর এমন সব ভু-খণ্ড তাদের অধিকারভুক্ত হবে যেগুলোর উপর কখনো তাদের পদচারণা পর্যন্ত হয়নি। যার বাস্তবায়ন সাহাবায়ে কেরামের যুগে বিশ্বমানব প্রত্যক্ষ করেছে। পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্যের এক বিশাল ও সুবিস্তীর্ণ অঞ্চল তাদের অধিকারভুক্ত হয়। আল্লাহ্ তা'আলা যা চান তাই করেন। [দেখুন, ইবন কাসীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর তিনি তোমাদেরকে উত্তরাধিকারী করলেন তাদের ভূমি, তাদের ঘর-বাড়ী ও তাদের ধন-সম্পদের এবং এমন ভূমির যাতে তোমরা পদার্পণও করনি। আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
4 Muhiuddin Khan
তিনি তোমাদেরকে তাদের ভূমির, ঘর-বাড়ীর, ধন-সম্পদের এবং এমন এক ভূ-খন্ডের মালিক করে দিয়েছেন, যেখানে তোমরা অভিযান করনি। আল্লাহ সর্ববিষয়োপরি সর্বশক্তিমান।
5 Zohurul Hoque
আর তিনি তোমাদের উত্তরাধিকার করতে দিলেন তাদের জমিজমা ও তাদের বাড়িঘর ও তাদের ধনসম্পত্তি এবং এক দেশ যেখানে তোমরা অভিযান চালাও নি। আর আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরেই পরম ক্ষমতাবান।
6 Mufti Taqi Usmani
আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়ারিশ বানিয়ে দিলেন তাদের ভূমি, ঘর-বাড়ি ও অর্থ-সম্পদের এবং এমন ভূমির, যা (এখনও পর্যন্ত) তোমরা পদানত করনি। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
7 Mujibur Rahman
তিনি তোমাদেরকে অধিকারী করলেন তাদের ভূমি, ঘরবাড়ী ও ধন সম্পদের এবং এমন ভূমি যা তোমরা এখনও পদানত করনি। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
8 Tafsir Fathul Mazid
২১-২৭ নং আয়াতের তাফসীর:
মুসলিমদের উত্তম আদর্শের প্রতীক একমাত্র নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাই তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে প্রত্যেক মুসলিম জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের সর্বক্ষেত্রে আদর্শ গ্রহণ করবে। আজ বিভিন্ন দল, তরীকা ও সম্প্রদায়ের অনুসারীরা তাদের নেতা ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির আদর্শের দিকে আহ্বান করে থাকে। কখনো একজন মুসলিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ বর্জন করে অন্য কোন ব্যক্তির আদর্শ গ্রহণ করতে পারে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনাদর্শে রয়েছে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার সকল কথা ও কাজ পালনীয় ও অনুসরণীয়, কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত। একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সমস্ত কথা, কাজ ও অবস্থা আনুগত্য ও অনুসরণযোগ্য। প্রতিটি স্থান, কাল ও পাত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ অনুসরণ করলে মুসলিমরা আবার সে স্বর্ণ যুগে ফিরে যেতে পারবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে কথা বলেছেন, কাজ করেছেন, এমনকি যুদ্ধে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ধৈর্য, সহনশীলতা ও বীরত্বের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা অবশ্যই অনুসরণীয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপদে কখনো বিচলিত হননি। বরং সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ ط مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَآءُ وَالضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّٰي يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهُ مَتٰي نَصْرُ اللّٰهِ ط أَلَآ إِنَّ نَصْرَ اللّٰهِ قَرِيْبٌ)
“তোমরা কি ধারণা করেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত সংকটময় অবস্থা এখনো তোমাদের ওপর আসেনি। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এবং তাদেরকে কাঁপিয়ে তুলা হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা শেষপর্যন্ত বলেছিল, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।” (সূরা বাকারাহ ২:২১৪)
নাফি‘(رحمه الله) হতে বর্ণিত যে, ইবনু উমার (رضي الله عنه) তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ এর নিকট গেলেন যখন তাঁর (হাজ্জ যাত্রার) বাহন প্রস্তুত, তখন তাঁর ছেলে বললেন: আমার আশংকা হয় এ বছর মানুষের মধ্যে লড়াই হবে, তারা আপনাকে কাবায় যেতে বাধা দেবে। কাজেই এবার নিবৃত্ত হওয়াটাই উত্তম। তখন ইবনু উমার (رضي الله عنه) বললেন: আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা রওনা হয়েছিলেন, কুরাইশ কাফিররা তাঁকে বাইতুল্লাহ যেতে বাধা দিয়েছিল। আমাকেও যদি বাইতুল্লাহ যেতে বাধা দেয়া হয়, তবে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করেছিলেন আমিও তাই করব। কেননা “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ” (সূরা আহযাব ২১)। এরপর তিনি বললেন: তোমরা সাক্ষী থেকো, আমি উমরাহর সাথে হাজ্জ এর নিয়ত করলাম। নাফি‘ বলেন: তিনি মক্কায় উপনীত হয়ে উভয়টির জন্য মাত্র একটি তাওয়াফ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৬৩৯)
সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ তারাই মনে প্রাণে গ্রহণ করে নিতে পারবে যারা পরকালের সফলতা কামনা করে। তাই আমাদের উচিত হবে যদি আমরা পরকালীন কল্যাণ ও সফলতা চাই তাহলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ অনুরসণ করব। কোন কাজ করার পূর্বে ভেবে দেখব, এ কাজ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছেন কিনা। আর করে থাকলে তিনি তা কিভাবে করেছেন সেভাবেই করতে হবে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে যখন মুসলিম বাহিনীকে তাঁর সাহায্য পাঠিয়ে বিজয়ী করলেন, যারা প্রকৃত মু’মিন ছিল তারা বুঝতে পারলেন এটা আল্লাহ তা‘আলার ও তাঁর রাসূলের ওয়াদার বাস্তবরূপ। ফলে তাদের ঈমান বহুগুণে বৃদ্ধি পেল। এখানে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন ও সাহায্য পেলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এ সম্পর্কে সূরা ফাতহ-এর ৪ ও সূরা তাওবার ১২৪ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
(مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ رِجَالٌ.....) শানে নুযূল:
আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার চাচা আনাস বিন নযর বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি মুশরিকদের সাথে প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন আমি তাতে অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ তা‘আলা যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করার সুযোগ দেন তাহলে দেখিয়ে দেব যে, আমি কী করছি। অতঃপর যখন উহুদ যুদ্ধের সময় আসল তখন তিনি দেখতে পেলেন যে, সা‘দ বিন মুআয (رضي الله عنه) পেছনে ফিরে আসছেন। তখন তিনি তাকে বললেন: হে সা‘দ বিন মুআয! আল্লাহ তা‘আলার শপথ আমি এ দিক থেকে জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। তখন সে সামনের দিকে অগ্রসর হল এবং জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে গেল। তখন তাঁর গায়ে আশিটিরও বেশি যখমের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। কোনটা বর্শার আবার কোনটা তরবারীর। তাঁর ব্যাপারেই এ আয়াতটি নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা: ২৮০৫, সহীহ মুসলিম হা: ১৯০৩)
আয়িশাহ (رضي الله عنها) অত্র আয়াতের তাফসীরে বলেন: এদের অন্তর্ভুক্ত হলেন তালহা বিন উবাইদুল্লাহ যিনি উহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলেন এমনকি ৭০ এর অধিক তীরবিদ্ধ হয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন: তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ৯৪৫)
জনৈক সাহাবী অজ্ঞ গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করুন ‘তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে’ তারা কারা? সাহাবীরা সহজে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করার সাহস পেত না। সে গ্রাম্য ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখ ফিরিয়ে নেন, এভাবে দুবার হয়। সে সাহাবী বলছেন: আমি মাসজিদের দরজা দিয়ে আসছি তখন আমার গায়ে সবুজ কাপড় ছিল, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখলেন তখন বললেন: প্রশ্নকারী কোথায়? সেই গ্রাম্য ব্যক্তি বলল: আমি হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এ হল সেই ব্যক্তিদের একজন। (তিরমিযী হা: ৩২০৩, সিলসিলা সহীহাহ হা: ১২৬)
(فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰي نَحْبَه)- نَحْبَه অর্থ ارادته ومطلوبه
অর্থাৎ তাদের অনেকে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে এবং তাদের ওপর যে হক ছিল তা আদায় করে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় শাহাদাত বরণ করেছে। আর কেউ কেউ দুটি প্রতিদানের একটির অপেক্ষায় রয়েছে। দুটি প্রতিদান হলন এক. সাহায্য-সহযোগিতা, দুই. আল্লাহ তা‘আলার পথে শাহাদাত বরণ। (তাফসীর মুয়াসসার)
আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধ-জিহাদ শরীয়ত সিদ্ধ করে দিয়েছেন যাতে সত্যবাদীদেরকে তাদের ওয়াদা সত্যে পরিণত করার প্রতিদান দিতে পারেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالَ اللّٰهُ هٰذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصّٰدِقِيْنَ صِدْقُهُمْ ط لَهُمْ جَنّٰتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَآ أَبَدًا ط رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ ط ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ)
“আল্লাহ বলবেন, ‘এ সেদিন যেদিন সত্যবাদীগণ তাদের সত্যতার জন্য উপকৃত হবে, তাদের জন্য আছে জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট; এটা মহাসফলতা।’ (সূরা মায়িদা ৫:১১৯) আর আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে মুনাফিকদেরকে তাদের কর্মের কারণে শাস্তি দেবেন অথবা তাওবা করার সুযোগ দিলে তাওবা করতে পারবে ফলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেবেন।
(وَرَدَّ اللّٰهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِغَيْظِهِمْ)
‘আল্লাহ কাফিরদেরকে তাদের ক্রোধ সহকারে ফিরিয়ে দিয়েছেন’ অর্থাৎ কাফিররা খুব আশা নিয়ে এসেছিল তারা যুদ্ধে বিজয়ী হবে, কিন্তু মু’মিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেছিলেন বিধায় কাফিররা বিজয়ী হতে পারেনি। সে কথাই বলা হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে তাদের ক্রোধসহ ফিরিয়ে দিলেন, তারা কোন কল্যাণ তথা বিজয় অর্জন করতে পারেনি। আয়িশাহ বলেন: এখানে কাফির দ্বারা উদ্দেশ্য হল আবূ সুফিয়ান ও উআইনা বিন বদর। আবূ সুফিয়ান ফিরে এসেছিল তুহামাহ এলাকায়, আর উআইনা ফিরে এসেছিল নাজদে। (কুরতুবী)
(وَأَوْرَثَكُمْ أَرْضَهُمْ وَدِيٰرَهُمْ.....)
‘আর তিনি তোমাদেরকে উত্তরাধিকারী করে দিলেন তাদের জমিনের’ এ আয়াত দ্বারা বানী কুরাইযার যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে:
আয়িশাহ (رضي الله عنها) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে অস্ত্র সরঞ্জামাদী রাখলেন এবং গোসল শেষ করলেন। এমতাবস্থায় তাঁর নিকট জিবরীল (عليه السلام) এসে বললেন, আপনি অস্ত্র সরঞ্জামাদী রেখে দিয়েছেন? আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আমরা (ফেরেশতারা) এখনো অস্ত্র সরঞ্জামাদী রাখিনি। আপনি বানী কুরাইযার সাথে যুদ্ধ করার জন্য বের হন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪১১৭, সহীহ মুসলিম হা: ১৭৬৯)
এ যুদ্ধের মাধ্যমেই মুসলিম বাহিনীকে ইয়াহূদীদের ঘর-বাড়ি, ভূমি ও ধন-সম্পদের মালিক বানিয়ে দেয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জীবনের সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কর্মপদ্ধতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও রাজনীতির অনুসরণ করতে হবে। কেননা তিনি হলেন মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ এবং অনুসরণীয় ব্যক্তি।
২. বিপদে বিচলিত হওয়া যাবে না বরং বিপদ যত বড়ই হোক না কেন আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে হবে।
৩. ঈমান বৃদ্ধি পায় আবার কমেও যায়।
৪. অঙ্গীকার করার পর তা অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে, ভঙ্গ করা যাবে না।
৫. বাতিলকে কখনো কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করা যাবে না।
9 Fozlur Rahman
তিনি তোমাদেরকে তাদের ভূমি, ঘরবাড়ি ও ধন-সম্পদের উত্তরাধিকারী করেছেন এবং এমন একটি ভূখণ্ডেরও (মালিক করে দিয়েছেন), যেখানে তোমরা এর আগে যাওনি। আল্লাহ সবকিছুই করতে সক্ষম।
10 Mokhtasar Bangla
২৭. আর আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করার পর তোমাদেরকে তাদের শস্য ও খেজুরসহ জমির মালিক বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী ও অন্যান্য সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। এমনকি তোমাদেরকে খাইবারের জমিরও মালিক বানিয়েছেন। যাতে এখনও তোমরা পদার্পণ করো নি। তবে অচিরেই তাতে পদার্পণ করবে। আর এটি মুমিনদের জন্য অঙ্গীকার ও সুসংবাদ। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। তাঁকে কোন কিছু অপারগ করতে পারে না।
11 Tafsir Ibn Kathir
২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর
ইতিপূর্বে আমরা বর্ণনা করেছি যে, যখন মুশরিক ও ইয়াহূদীদের সেনাবাহিনী মদীনায় আসে ও অবরোধ সৃষ্টি করে তখন বানু কুরাইযা গোত্রের ইয়াহুদীরা যারা মদীনার অধিবাসী ছিল এবং যাদের সাথে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চুক্তি হয়েছিল, তারাও ঠিক এই সময় বিশ্বাসঘাতকতা করলো এবং সন্ধি ভেঙ্গে দিলো। তারা চোখ রাঙাতে শুরু করলো। তাদের সরদার কাব ইবনে আসাদ আলাপ আলোচনার জন্য আসলো। ম্লেচ্ছ হুয়াই ইবনে আখতাব ঐ সরদারকে সন্ধি ভঙ্গ করতে উদ্বুদ্ধ করলো। প্রথমে সে সন্ধি ভঙ্গ করতে সম্মত হলো না। সে এ সন্ধির উপর দৃঢ় থাকতে চাইলো। হুয়াই বললো: “এটা কেমন কথা হলো? আমি তোমাকে সম্মানের উচ্চাসনে বসিয়ে তোমার মস্তকে রাজ মুকুট পরাতে চাচ্ছি, অথচ তুমি তা মানছো না? কুরায়েশরা ও তাদের অন্যান্য সঙ্গীসহ আমরা সবাই এক সাথে আছি। আমরা শপথ করেছি যে, যে পর্যন্ত না আমরা এক একজন মুসলমানের মাংস ছেদন করবো সে পর্যন্ত এখান হতে সরবো না।” কা'বের দুনিয়ার অভিজ্ঞতা ভাল ছিল বলে সে উত্তর দিলো: “এটা ভুল কথা। এটা তোমাদের ক্ষমতার বাইরে। তোমরা আমাকে লাঞ্ছনার বেড়ী পরাতে এসেছে। তুমি একটা কুলক্ষণে লোক। সুতরাং তুমি আমার নিকট হতে সরে যাও। আমাকে তোমার ধোকাবাজীর শিকারে পরিণত করো না।" হুয়াই কিন্তু তখনো তার পিছন ছাড়লো না। সে তাকে বারবার বুঝাতে থাকলো। অবশেষে সে বললো: “মনে কর যে, কুরায়েশ ও গাতফান গোত্র পালিয়ে গেল, তাহলে আমরা দলবলসহ তোমার গর্তে গিয়ে পড়বো। তোমার ও তোমার গোত্রের যে দশা হবে, আমার ও আমার গোত্রেরও সেই দশাই হবে।"
অবশেষে কাবের উপর হুয়াই-এর যাদু ক্রিয়াশীল হলো। বানু কুরাইযা সন্ধি ভঙ্গ করলো। এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও সাহাবীগণ (রাঃ) অত্যন্ত দুঃখিত হলেন এবং এটা তাঁদের কাছে খুবই কঠিন ঠেকলো। আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের সাহায্য করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীগণ সমভিব্যাহারে বিজয়ীর বেশে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলেন। সাহাবীগণ (রাঃ) অস্ত্র-শস্ত্র খুলে ফেললেন এবং রাসূলুল্লাহও (সঃ) অস্ত্র-শস্ত্র খুলে ফেলে হযরত উম্মে সালমা (রাঃ)-এর গৃহে ধূলো-ধূসরিত অবস্থায় হাযির হলেন এবং পাক সাফ হওয়ার জন্যে গোসল করতে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) আবির্ভূত হন। তাঁর মস্তকোপরি রেশমী পাগড়ী ছিল। তিনি খচ্চরের উপর উপবিষ্ট ছিলেন। ওর পিঠে রেশমী গদি ছিল। তিনি বলতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি কি অস্ত্র-শস্ত্র খুলে ফেলেছেন?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা।” হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ “ফেরেশতারা কিন্তু এখনো অস্ত্র-শস্ত্র হতে পৃথক হয়নি। আমি কাফিরদের পশ্চাদ্ধাবন হতে এইমাত্র ফিরে এলাম। জেনে রাখুন! আল্লাহর নির্দেশ, বানু কুরাইযার দিকে চলুন! তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দান করুন! আমার প্রতিও মহান আল্লাহর এ নির্দেশ রয়েছে যে, আমি যেন তাদেরকে প্রকম্পিত করি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে যান। নিজে প্রস্তুতি গ্রহণ করে সাহাবীদেরকেও প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা সবাই বানু কুরাইযার ওখানেই আসরের নামায আদায় করবে। যুহরের নামাযের পর এ হুকুম দেয়া হলো। বানু কুরাইযার দুর্গ মদীনা হতে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত ছিল। পথেই নামাযের সময় হয়ে গেল। তাদের কেউ কেউ নামায আদায় করে নিলেন। তাঁরা বললেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল যে, তারা যেন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসেন।” আবার কেউ কেউ বললেনঃ “আমরা সেখানে না পৌঁছে নামায পড়বো না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ খবর জানতে পেরে দু’দলের কাউকেই তিনি ভৎসনা বা তিরস্কার করলেন না। তিনি ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ)-কে মদীনার খলীফা নিযুক্ত করলেন। সেনাবাহিনীর পতাকা হযরত আলী (রাঃ)-এর হাতে প্রদান করলেন। তিনি নিজেও সৈন্যদের পিছনে পিছনে চলতে লাগলেন। সেখানে গিয়েই তিনি তাদের দুর্গ অবরোধ করে ফেললেন। পঁচিশ দিন পর্যন্ত অবরোধ স্থায়ী হলো। যখন ইয়াহূদীদের দম নাকে এসে গেল তখন তাদের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে উঠলো। তারা হযরত সা’দ ইবনে মুআয (রাঃ)-কে নিজেদের সালিশ বা মীমাংসাকারী নির্ধারণ করলো। কারণ তিনি আউস গোত্রের সরদার ছিলেন। বানু কুরাইযা ও আউস গোত্রের মধ্যে যুগ-যুগ ধরে বন্ধুত্ব ও মিত্রতা চলে আসছিল। তারা একে অপরের সাহায্য করতো। তাদের ধারণা ছিল যে, হযরত সা'দ (রাঃ) তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করবেন। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সাল্ল বানু কাইনুকা গোত্রকে ছাড়িয়ে নিয়েছিল। এদিকে হযরত সা'দ (রাঃ)-এর দেহে একটি তীর বিদ্ধ হয়েছিল, যার কারণে সেখান হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার ক্ষতস্থানে দাগ লাগিয়েছিলেন এবং মসজিদের তাঁবুতে তাঁর স্থান করেছিলেন। যাতে তাঁকে দেখতে যাওয়ার সুবিধা হয়। হযরত সা'দ (রাঃ) যে দু'আ করেছিলেন তন্মধ্যে একটি দু'আ এও ছিলঃ “হে আমার প্রতিপালক। যদি আরো কোন যুদ্ধ আপনার নবী (সঃ)-এর উপর থেকে থাকে যেমন কাফির মুশরিকরা আপনার নবী (সঃ)-এর উপর আক্রমণ চালিয়েছে, তবে আমাকে জীবিত রাখুন, যেন আমি তার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারি। আর যদি কোন যুদ্ধ অবশিষ্ট না থেকে থাকে তবে আমার ক্ষতস্থান হতে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকুক। কিন্তু হে আমার প্রতিপালক! যে পর্যন্ত না আমি বানু কুরাইযা গোত্রের বিদ্রোহের পূর্ণ শাস্তি দেখে আমার চক্ষুদ্বয় ঠাণ্ডা করতে পারি সে পর্যন্ত আমার মৃত্যুকে বিলম্বিত করুন। হযরত সা'দ (রাঃ)-এর প্রার্থনা কবুল হওয়ার দৃশ দেখে বিস্মিত হতে হয়। তিনি এদিকে প্রার্থনা করছেন, আর ওদিকে বানু কুরাইযা গোত্র স্বীকার করে নিয়েছে যে, হযরত সা'দ (রাঃ) তাদের যে মীমাংসা করবেন তা তারা মেনে নেবে এবং তাদের দুর্গ মুসলমানদের হাতে সমর্পণ করবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত সা'দ (রাঃ)-এর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, তিনি যেন এসে তাদেরকে তার ফায়সালা শুনিয়ে দেন।
হযরত সা'দ (রাঃ)-কে গাধার উপর সওয়ার করিয়ে নিয়ে আসা হলো। আউস গোত্রের সমস্ত লোক তাকে জড়িয়ে ধরে বললো: “দেখুন, বানু কুরাইযা গোত্র আপনারই লোক। তারা আপনার উপর ভরসা করেছে। তারা আপনার কওমের সুখ-দুঃখের সঙ্গী। সুতরাং আপনি তাদের উপর দয়া করুন এবং তাদের সাথে নম্র ব্যবহার করুন!” হযরত সা'দ (রাঃ) নীরব ছিলেন। তাদের কথার কোন জবাব তিনি দিচ্ছিলেন না। তারা তাকে উত্তর দেয়ার জন্যে পীড়াপীড়ি করতে লাগলো এবং তার পিছন ছাড়লো না। অবশেষে তিনি বললেনঃ “ঐ সময় এসে গেছে, হযরত সা’দ এটা প্রমাণ করতে চান যে, আল্লাহর পথে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারের তিনি কোন পরওয়া করবেন না। তাঁর এ কথা শোনা মাত্রই ঐ লোকগুলো হতাশ হয়ে পড়লো যে, বানু কুরাইযা গোত্রের কোন রেহাই নেই। যখন হযরত সা'দ (রাঃ)-এর সওয়ারী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর তাঁবুর নিকট আসলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তোমরা তোমাদের সরদারের অভ্যর্থনার জন্যে দাঁড়িয়ে যাও।” তখন মুসলমানরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন। অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাকে সওয়ারী হতে নামানো হলো। এরূপ করার কারণ ছিল এই যে, ঐ সময় তিনি ফায়সালাকারীর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। ঐ সময় তার ফায়সালাই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে। তিনি উপবেশন করা মাত্রই রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “বানু কুরাইযা গোত্র তোমার ফায়সালা মেনে নিতে সম্মত হয়েছে এবং দুর্গ আমাদের হাতে সমর্পণ করেছে। সুতরাং তুমি এখন তাদের ব্যাপারে ফায়সালা দিয়ে দাও।” হযরত সা'দ (রাঃ) বললেনঃ “তাদের ব্যাপারে আমি যা ফায়সালা করবো তাই কি পূর্ণ করা হবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “নিশ্চয়ই।” তিনি পুনরায় প্রশ্ন করলেনঃ “এই তাঁবুবাসীদের জন্যেও কি আমার ফায়সালা মেনে নেয়া জরুরী হবে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যা, অবশ্যই।” আবার তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “এই দিকের লোকদের জন্যেও কি?” ঐ সময় তিনি ঐ দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন যেই দিকে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইজ্জত ও বুযর্গীর খাতিরে তিনি তাঁর দিকে তাকালেন না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাবে বললেনঃ “হ্যা, এই দিকের লোলেদের জন্যেও এটা মেনে নেয়া জরুরী হবে।” তখন হযরত সা'দ (রাঃ) বললেনঃ “তাহলে এখন আমার ফায়সালা শুনুন! বানু কুরাইযার মধ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার মত যত লোক রয়েছে তাদের সবাইকেই হত্যা করে দেয়া হবে। তাদের শিশু সন্তানদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন-সম্পদ মুসলমানদের অধিকারভুক্ত হবে।” তাঁর এই ফায়সালা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হে সা’দ (রাঃ)! তুমি এ ব্যাপারে ঐ ফায়সালাই করেছে যা আল্লাহ তা'আলা সপ্তম আকাশের উপর ফায়সালা করেছেন। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হে সা’দ (রাঃ)! প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহর যে ফায়সালা সেই ফায়সালাই তুমি শুনিয়েছো।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশক্রমে গর্ত খনন করা হয় এবং বানু কুরাইযা গোত্রের লোকদেরকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় হত্যা করে তাতে নিক্ষেপ করা হয়। তাদের সংখ্যা ছিল সাতশ’ বা আটশ'। তাদের নারীদেরকে ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদেরকে এবং তাদের সমস্ত মালধন হস্তগত করা হয়। আমি এসব ঘটনা আমার ‘কিতাবুস সিয়ার’ গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলারই জন্যে।
তাই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ কিতাবীদের মধ্যে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দুর্গ হতে অবতরণে বাধ্য করলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন। এখন তোমরা তাদের কতককে হত্যা করছে এবং কতককে করছো বন্দী।
এই বানু কুরাইযা গোত্রের বড় নেতা, যার দ্বারা এই বংশ চালু হয়েছিল, পূর্ব যুগে এ আশায় সে হিজাযে এসে বসতি স্থাপন করেছিল যে, যে শেষ নবী (সঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী তাদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, তিনি যেহেতু হিজায প্রদেশে আবির্ভূত হবেন, সেহেতু তারা যেন সর্বপ্রথম তাঁর আনুগত্যের মর্যাদা লাভ করতে পারে। কিন্তু শেষ নবী (সঃ)-এর যখন আগমন ঘটলো তখন তার অযোগ্য উত্তরসূরীরা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো। যার ফলে তাদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হলো।
صَيَاصِى দ্বারা দুর্গকে বুঝানো হয়েছে। এই কারণে জন্তুর মাথার শিংকেও صَيَاصِى বলা হয়। কেননা, জন্তুদের দেহের সবচেয়ে উপরে শিংই থাকে। আল্লাহ তা'আলা তাদের অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করে দিলেন। তারাই মুশরিকদেরকে উত্তেজিত করে তুলেছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। শিক্ষিত ও মূর্খ কখনো সমান হয় না। তারাই মুসলমানদেরকে সমূলে উৎপাটিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ঘটনা তার বিপরীত হয়ে গেল। শক্তি দুর্বলতায় এবং সফলতা বিফলতায় পরিবর্তিত হলো। চিত্র নষ্ট হয়ে গেল। মিত্ররা পলায়ন করলো এবং তারা একেবারে অসহায় হয়ে পড়লো। সম্মানের জায়গা অসম্মান দখল করে নিলো। মুসলমানদেরকে দুনিয়া হতে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার আনন্দ তাদের নিজেদেরকেই নিশ্চিহ্ন করে দিলো। এরপর আখিরাতের পালা তো আছেই। তাদের কিছু সংখ্যককে হত্যা করে দেয়া হলো। আতিয়্যা কারামী বর্ণনা করেছে, যখন আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে হাযির করা হলো তখন তিনি বললেনঃ “দেখো, যদি এর নাভীর নীচে চুল গজিয়ে থাকে তবে একে হত্যা করে দেবে। অন্যথায় একে বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত করবে।” দেখা গেল যে, তখনো আমার শৈশবকাল কাটেনি। সুতরাং জীবিত ছেড়ে দেয়া হলো।
মুসলমানদেরকে তাদের ভূমি, ঘরবাড়ী ও ধন-সম্পদের অধিকারী করে দেয়া হলো। এমনকি তাদেরকে ঐ ভূমির মালিক করে দেয়া হলো যা তখনো পদানত হয়নি। অর্থাৎ খাইবারের ভূমি অথবা মক্কা শরীফের ভূমি কিংবা পারস্য অথবা রোমের ভূমি। কিংবা হতে পারে যে, সব জায়গারই ভূমি। অর্থাৎ সব জমিই বাজেয়াপ্ত হয়ে গেল। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “খন্দকের যুদ্ধের দিন আমি বের হলাম, আমার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবস্থা অবহিত হওয়া। এমন সময় আমার পিছন দিক থেকে কারো সবেগে আগমনের আভাষ পেলাম। তার অস্ত্রের ঝনঝনানীর শব্দও আমার কানে এলো। আমি তখন রাস্তা হতে সরে গিয়ে এক জায়গায় বসে পড়লাম। দেখলাম যে, হযরত সা'দ (রাঃ) সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হতে যাচ্ছেন। তার সাথে তাঁর ভাই হারিস ইবনে আউস (রাঃ)-ও ছিলেন। তাঁর হাতে ঢাল ছিল। হযরত সা'দ (রাঃ) লৌহবর্ম পরিহিত ছিলেন। তিনি খুবই লম্বা দেহ বিশিষ্ট লোক ছিলেন বলে তাঁর দেহ বর্মে সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত হয়নি। তাঁর হাত খোলা ছিল। যুদ্ধের কবিতা পাঠ করতে করতে তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি সেখান হতে আরো কিছুদূর এগিয়ে গেলাম। একটি বাগানে আমি প্রবেশ করলাম। সেখানে কিছু মুসলমান উপস্থিত ছিলেন। একটি লোক লৌহ-শিরস্ত্রাণ পরিহিত ছিলেন। ঐ লোকদের মধ্যে হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-ও বিদ্যমান ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে ফেলেছিলেন এবং এ কারণে তিনি আমার উপর অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। তিনি বলতে লাগলেনঃ “হে বীরাঙ্গনা! আপনি কি জানেন না যে, যুদ্ধ চলছে? আল্লাহ তাআলাই জানেন পরিণতি কি হবে! আপনি কি করে এখানে আসতে পারলেন? ইত্যাদি অনেক কিছু বলে তিনি আমাকে ভৎসনা করলেন। তিনি আমাকে এতো বেশী তিরস্কার করলেন যে, যদি যমীন ফেটে যেতো তবে আমি তাতে ঢুকে পড়তাম। যে লোকটি মুখ ঢেকে ছিলেন তিনি হযরত উমারের এসব কথা শুনে মাথা হতে লোহার টুপি নামিয়ে ফেললেন। তখন আমি তাকে দেখে চিনতে পারলাম। তিনি ছিলেন হযরত তালাহা ইবনে উবাইদিল্লাহ (রাঃ)। তিনি হযরত উমার (রাঃ)-কে নীরব করিয়ে দিয়ে বললেনঃ “কি ভৎসনা করছেন? পরিণামের জন্যে কি ভয়? আপনি এতো ভয় করছেন কেন? কেউ যদি পালিয়ে যায় তবে সে যাবে কোথায়? সবকিছুই আল্লাহর হাতে।” একজন কুরায়েশী হযরত সা'দ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে তীর মেরে দিলো এবং বললো: “আমি হলাম ইবনে আরকা।” হযরত সা’দ (রাঃ)-এর রক্তবাহী শিরায় তীরটি বিদ্ধ হয়ে গেল এবং রক্তের ফোয়ারা ছুটলো। ঐ সময় তিনি দু'আ করলেনঃ “হে আল্লাহ! আমার মৃত্যু ঘটাবেন না যে পর্যন্ত না আমি বানু কুরাইযা গোত্রের ধ্বংস স্বচক্ষে দেখে যেতে পারি।” আল্লাহ তাআলার কি মাহাত্ম্য যে, তৎক্ষণাৎ তার ক্ষতস্থানের রক্ত বন্ধ হয়ে গেল। ঝড়-তুফান মুশরিকদেরকে তাড়িয়ে দিলো। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর সদয় হলেন। আবু সুফিয়ান এবং তার সঙ্গী-সাথীরা তেহামায় পালিয়ে গেল। উয়াইনা ইবনে বদর এবং তার সঙ্গীরা পালিয়ে গেল নজদের দিকে। বানু কুরাইযা গোত্র তাদের দুর্গে আশ্রয় নিলো। যুদ্ধক্ষেত্র শূন্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনায় ফিরে গেলেন। হযরত সা'দ (রাঃ)-এর জন্যে মসজিদে নববীতেই একটা তাঁবুর ব্যবস্থা করে দেয়া হলো। ঐ সময়েই হযরত জিবরাঈল (আঃ) আসলেন। তার চেহারা ধূলিময় ছিল। তিনি বলতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি অস্ত্র-শস্ত্র রেখে দিয়েছেন? ফেরেশতারা কিন্তু এখনো অস্ত্র-শস্ত্র খুলে ফেলেননি। চলুন, বানু কুরাইযার ব্যাপারেও একটা ফায়সালা করে নেয়া হালে। তাদের উপর আক্রমণ চালানো হালে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তৎক্ষণাৎ অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হলেন এবং সাহাবীদেরকেও যুদ্ধযাত্রার নির্দেশ প্রদান করলেন। বানু তামীম গোত্রের ঘরবাড়ী মসজিদে নববী সংলগ্ন ছিল। পথে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আচ্ছা ভাই! এখান দিয়ে কাউকেও যেতে দেখেছো কি?” তারা উত্তরে বললো: “এখনই হযরত দাহইয়া কালবী (রাঃ) গেলেন।” অথচ উনিই তো ছিলেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ)। তাঁর দাড়ী এবং চেহারা সম্পূর্ণরূপে হযরত দাহইয়া কালবী (রাঃ)-এর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) গিয়ে বানু কুরাইযার দুর্গ অবরোধ করে বসলেন। পঁচিশ দিন পর্যন্ত এই অবরোধ স্থায়ী হলো। যখন তারা অত্যন্ত সংকটময় অবস্থায় পতিত হলো তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বললেনঃ “দুর্গ আমাদের হাতে ছেড়ে দাও এবং তোমরা নিজেরাও আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ কর। আমি তোমাদের ব্যাপারে যা ইচ্ছা ফায়সালা করবো।” তারা আবু লুবাবা আব্দুল মুনযিরের সাথে পরামর্শ করলো। সে ইঙ্গিতে বললো: “এ অবস্থায় তোমরা জীবনের আশা পরিত্যাগ কর।” তারা এটা জানতে পেরে এতে অসম্মতি জানালো। তারা বললো: “আমরা আমাদের দুর্গ শূন্য করে দিচ্ছি এবং এটা আপনার সেনাবাহিনীর হাতে সমর্পণ করছি। আমাদের ব্যাপারে আমরা হযরত সা'দ (রাঃ)-কে আমাদের ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নিচ্ছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের এ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে গেলেন। তিনি হযরত সা'দ (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। তিনি গাধার উপর সওয়ার হয়ে আসছিলেন যার উপর খেজুর গাছের বাকলের গদি ছিল। তাঁকে অতি কষ্টে ওর উপর সওয়ার করে দেয়া হয়। তাঁর কওম তাকে ঘিরে ফেলেছিল। তারা তাকে বুঝাচ্ছিলঃ “দেখুন, বানু কুরাইযা আমাদের মিত্র। তারা আমাদের বন্ধু। সুখে-দুঃখে তারা আমাদের সাথী। তাদের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক রয়েছে তা আপনার অজানা নয়।” হযরত সা'দ (রাঃ) নীরবে তাদের কথা শুনে যাচ্ছিলেন। যখন তিনি তাদের মহল্লায় পৌছেন তখন ঐদিকে দৃষ্টিপাত করে বলেনঃ “এখন এমন সময় এসে গেছে যখন আমি আল্লাহর পথে কোন ভৎসনাকারীর ভৎসনাকে মোটেই পরওয়া করবো না।” যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর তাঁবুর নিকট হযরত সা'দ (রাঃ)-এর সওয়ারী পৌছলো তখন তিনি স্বীয় সাহাবীদেরকে বললেনঃ “তোমাদের সাইয়্যেদের জন্যে উঠে দাঁড়াও এবং তাঁকে নামিয়ে নাও।” এ কথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “আমাদের সাইয়্যেদ তো স্বয়ং আল্লাহ।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তাঁকে নামিয়ে নাও।” সবাই তখন মিলে জুলে তাঁকে সওয়ারী হতে নামিয়ে নিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “হে সা'দ (রাঃ)! তাদের ব্যাপারে তুমি যে ফায়সালা করতে চাও, কর।” তিনি তখন বললেনঃ “তাদের বড়দেরকে হত্যা করা হালে, ছোটদেরকে গোলাম বানিয়ে নেয়া হালে এবং তাদের মালধন বন্টন করে নেয়া হালে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার এ ফায়সালা শুনে বললেনঃ “হে সা’দ (রাঃ)! এই ফায়সালায় তুমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুকূল্য করেছো।” অতঃপর হযরত সা'দ (রাঃ) প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ! যদি আপনার নবী (সঃ)-এর উপর কুরায়েশদের আর কোন আক্রমণ বাকী থেকে থাকে তবে তাতে অংশগ্রহণের জন্যে আমাকে জীবিত রাখুন। অন্যথায় আমাকে আপনার নিকট উঠিয়ে নিন।” তৎক্ষণাৎ তাঁর ক্ষতস্থান হতে রক্তের ফোয়ারা ছুটতে শুরু করলো। অথচ ওটা সম্পূর্ণরূপে ভাল হয়েই গিয়েছিল। সামান্য কিছু বাকী ছিল। সুতরাং তাকে তার তাঁবুতে ফিরিয়ে আনা হয় এবং সেখানেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ), হযরত
আবু বকর (রাঃ), হযরত উমার (রাঃ) প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণও আসলেন। তাঁরা সবাই কাঁদছিলেন। আমি হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমার (রাঃ)-এর ক্রন্দনের শব্দ পৃথক পৃথকভাবে বুঝতে পারছিলাম। আমি ঐ সময় আমার কক্ষে ছিলাম। সত্যিই তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সহচরই ছিলেন। যেমন মহান আল্লাহ তাঁদের সম্পর্কে বলেনঃ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ অর্থাৎ “তারা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।” (৪৮:২৯)
হযরত আলকামা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিভাবে কাঁদতেন তা বলুন তো?” উত্তরে হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ “কারো জন্যে তাঁর চক্ষু দিয়ে অশ্রু ঝরতো না। তবে, দুঃখ ও বেদনার সময় তিনি স্বীয় দাড়ি মুবারক স্বীয় মুষ্টির মধ্যে নিয়ে নিতেন।”