নামকরণ:
খন্দক যুদ্ধের অপর নাম “غزوة الأحزاب” আহযাবের যুদ্ধ। এ সূরায় আহযাবের যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে বিধায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ, তাই তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিধি-বিধান সম্বলিত। মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে কষ্ট দিত, পালক পুত্রের স্ত্রী বিবাহ করেছেন সে জন্য অপবাদ দিত ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সূরাটি অবতীর্ণ হয়। এ সূরাতেই সে আয়াত রয়েছে যার বিধান বলবত রয়েছে কিন্তু তেলাওয়াত রহিত হয়ে গেছে। তাহল
(الشيخ والشيخة إذا زنيا فاجلدوهما البتة نكالا من الله والله عزيز حكيم)
-বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা ব্যভিচার করলে তাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করবে, এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। সূরায় মূল যে কয়টি বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে:-
(১) যিহারের পরিচয় ও বিধান,
(২) পালক পুত্র ও তাদের স্ত্রীদের বিধান,
(৩) মু’মিনদের প্রতি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অধিকার,
(৪) আহযাবের যুদ্ধের ঘটনা,
(৫) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবন ও রীতি-নীতি মু’মিনের জন্য উত্তম আদর্শ,
(৬) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের বিধান ও মু’মিনদের সাথে সম্পর্ক,
(৭) নারীদের পর্দার বিধান,
(৮) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যে কোন ফয়াসালার ক্ষেত্রে মু’মিনদের অবস্থান,
(৯) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ নাবী ও রাসূল,
(১০) নিজ ও অন্যের বাড়িতে প্রবেশের আদব কায়দা, বিশেষ করে তিন সময়,
(১১) যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গালি গালাজ করে কষ্ট দিত তাদের বিধান ইত্যাদি।
১-৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা সূরাটি শুরু করলেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করার মাধ্যমে যে, হে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তুমি আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। তুমি আল্লাহ তা‘আলার দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছো ও তাঁর বিধান মেনে চলছো বিধায় কে কী বলবে সে ভয় করো না। যে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে রিসালাত দিয়েছেন ও তোমার প্রতি ওয়াহী করে ধন্য করেছেন সে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। আর কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না বরং তোমার প্রতি যা ওয়াহী করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। কারণ তারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তুমি আল্লাহ তা‘আলার দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছ এবং তাঁর বিধান মেনে চলছো বলে তারা কত ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করবে, কত রসিকতা করবে। তাই বলে আল্লাহ তা‘আলার বিধান থেকে সরে যাওয়া যাবে না, কারণ তারা চায় তুমিও তাদের মত পথভ্রষ্ট হয়ে যাও।
মূলত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করার একটি সুন্দর পদ্ধতি বর্ণনা করছেন। তা হল তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সতর্ক করার দ্বারা তাঁর সকল উম্মতকে সতর্ক করেছেন। অর্থাৎ বড়দের মাধ্যমে ছোটদেরকে সতর্ক করা। যদিও এখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে কিন্তু এর দ্বারা সকল মু’মিন ব্যক্তি উদ্দেশ্য। এসব নিদের্শ দেয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, সকল কাজে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করো। কেননা আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করলে কোন নিন্দুকের নিন্দা ও তিরস্কারকারীর তিরস্কার দীন থেকে সরাতে পারবে না। তিনিই তার জন্য যথেষ্ট, সে অন্য কারো সাহায্য-সহযোগীতার মুখাপেক্ষী হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ يَّتَوَكَّلْ عَلَي اللّٰهِ فَهُوَ حَسْبُه)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট” (সূরা তালাক ৬৫:৩)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে তাঁর দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে কোন নিন্দুকের নিন্দা ও তিরস্কারকারীর তিরস্কার দীন থেকে সরাতে পারবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করা যাবে না, বরং অনুসরণ করতে হবে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের।
২. সদা-সর্বদা ওয়াহীর নির্দেশ মেনে চলতে হবে তাহলে দীনের সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকা যাবে।
৩. সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় ও তাঁর ওপর ভরসা করতে হবে।
৪. ভদ্রতা, শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া বা সতর্ক করার একটি সুন্দর দিক হলো, বড়দেরকে বলে ছোটদেরকে শিক্ষা দেয়া, যাতে ছোটরা শিক্ষার ব্যপারে লজ্জাবোধ না করে।