আল আহযাব আয়াত ৪৪
تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهٗ سَلٰمٌ ۚوَاَعَدَّ لَهُمْ اَجْرًا كَرِيْمًا ( الأحزاب: ٤٤ )
Tahiyyatuhum Yawma yalqawnahoo salaamunw wa a'adda lahum ajran kareemaa (al-ʾAḥzāb ৩৩:৪৪)
English Sahih:
Their greeting the Day they meet Him will be, "Peace." And He has prepared for them a noble reward. (Al-Ahzab [33] : 44)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান। (আল আহযাব [৩৩] : ৪৪)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে সালাম (শান্তি)। [১] আর তিনি তাদের জন্য সম্মানজনক প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।
[১] অর্থাৎ, জান্নাতে ফিরিশতাগণ মু'মিনদেরকে অথবা মু'মিনগণ আপোসে একজন অপরজনকে সালাম করবেন।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, সেদিন তাদের অভিবাদন হবে 'সালাম’ [১]। আর তিনি তাদের জন্য প্ৰস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান।
[১] আয়াতে বলা হয়েছেঃ “তার সাথে মোলাকাতের সময় সেদিন তাদের অভ্যর্থনা হবে সালাম”। অর্থাৎ যেদিন আল্লাহ তা'আলার সাথে এদের সাক্ষাত ঘটবে-তখন তাঁর পক্ষ থেকে এদেরকে সালাম বা আস্সালামু আলাইকুমের মাধ্যমে সম্ভাষণ জানানো হবে। এখন প্রশ্ন হলো, এ সালাম কখন দেয়া হবে? এর উত্তরে বিভিন্ন সম্ভাবনা উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশের মতে, এখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ সালাম মুমিনগণের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় বা হবে। ইমাম রাগেব প্রমূখের মতে, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন হলো আখেরাতের দিন। আবার কোন কোন তাফসীরকারকের মতে এ সাক্ষাতের সময় হলো জান্নাতে প্রবেশকাল যেখানে তাদের প্রতি আল্লাহ ও ফেরেশতাগণের পক্ষ থেকে সালাম পৌছানো হবে। আবার কোন কোন মুফাসসির মৃত্যু দিবসকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন বলে মন্তব্য করেছেন। সেদিন সমগ্ৰ বিশ্বের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহ সমীপে উপস্থিত হওয়ার দিন। আবার কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এ সালাম মুমিনগণ পরস্পর পরস্পরকে প্ৰদান করবে। দেখুন, ইবন কাসীরা, ফাতহুল কাদীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে; ‘সালাম’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান।
4 Muhiuddin Khan
যেদিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে; সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্যে সম্মানজনক পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।
5 Zohurul Hoque
যেদিন তারা তাঁর সঙ্গে মোলাকাত করবে সেদিন তাদের সম্ভাষণ হবে ''সালাম’’! আর তাদের জন্য তিনি তৈরী রেখেছেন এক মহান প্রতিদান।
6 Mufti Taqi Usmani
মুমিনগণ যে দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, সেদিন তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানো হবে সালাম দ্বারা। আল্লাহ তাদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।
7 Mujibur Rahman
যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে ‘সালাম’। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন উত্তম প্রতিদান।
8 Tafsir Fathul Mazid
৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
(اذْكُرُوا اللّٰهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মু’মিন বান্দাদেরকে বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির করার নির্দেশ প্রদান করেছেন ।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلٰوةَ فَاذْكُرُوا اللّٰهَ قِيٰمًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰي جُنُوْبِكُمْ)
“যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে।” (সূরা নিসা ৪:১০৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَالذّٰكِرِيْنَ اللّٰهَ كَثِيْرًا وَّالذّٰكِرٰتِ أَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّأَجْرًا عَظِيْمًا)
“এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারিণী নারীন এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান।” (সূরা আহযাব ৩৩:৩৫)
হাদীসে এসেছে, আবূ দারদা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি কি তোমাদেরকে উত্তম কাজ, পবিত্র আমল, সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের পুণ্য, স্বর্ণ-রৌপ্য আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করা অপেক্ষা অধিক উত্তম এবং জিহাদ হতে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন কাজের কথা বলব না? সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সেটা কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ তা‘আলার যিকির বা স্মরণ। (আহমাদ ৫/১৯৫, তিরমিযী হা: ৩৩৭৭, ইবনু মাযাহ হা: ৩৭৯০ সনদ সহীহ)
সাওবান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন স্বর্ণ-রৌপ্যের ব্যাপারে যা নাযিল হওয়ার নাযিল হল তখন সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল আমরা কোন সম্পদ গ্রহণ করব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: মানুষ যেন কৃতজ্ঞ আত্মা, যিকিরকারী রসনা এবং এমন স্ত্রী গ্রহণ করে, যে পরকালীন বিষয়ে সহযোগিতা করবে। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ১৫০৫ )
আব্দুল্লাহ বিন বুসর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন দুজন গ্রাম্য লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে একজন বলল: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন্ শ্রেণির মানুষ উত্তম? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যে ব্যক্তি দীর্ঘ আয়ু পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। অপরজন বললন হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে ইসলামের বিধিবিধান অনেক হয়ে গেছে, তাই কোন্ আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: সর্বদা তোমার জিহবাকে আল্লাহ তা‘আলার যিকির দ্বারা সিক্ত রাখবে। (তিরমিযী হা: ৩৩৭৫, ইবনু মাযাহ হা: ৩৭৯৩, সহীহ)
যিকির সম্পর্কে আরো অসংখ্য সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তবে এ যিকির করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে, তন্মধ্যে একটি হল চুপে চুপে এবং ভয়ের সাথে যিকির করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغٰفِلِيْنَ)
“তোমার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে ভয়-ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ কর আর উদাসীনদের মত হয়ো না।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১০৫)
তবে যিকির করার অর্থ এই নয় যে, কয়েকজন একত্রে বসে উচ্চৈঃস্বরে হৈ-হুল্লা করে আওয়াজ করা। তুমি এমনভাবে যিকির কর যেন মানুষ তোমাকে পাগল বলেন ইত্যাদি এ ব্যাপারে যে-সকল কথা বর্ণনা করা হয় তা আদৌ সঠিক নয়। (তাফসীর ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) বরং নম্রভাবে বিশুদ্ধ চিত্তে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার যিকির করতে হবে এবং সকাল-সন্ধ্যায় মহান আল্লাহ তা‘আলার যিকির করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَسُبْحَانَ اللّٰهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ)
“অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান প্রকাশ কর সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে। এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই।” (সূরা রূম ৩০:১৭-১৮)
সুতরাং প্রচলিত ভ্রান্ত যিকির বাদ দিয়ে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক যে সকল যিকির রয়েছে সেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করতে হবে। এ যিকিরের ফযীলত সম্পর্কে অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে, আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি দিনে একশত বার:
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ )
-এ দু‘আ পাঠ করবে তার দশটি গোলাম মুক্ত বা আযাদ করার সমান সওয়াব হবে। তার জন্য একশত নেকী লেখা হবে এবং একশত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে এবং তাকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তার থেকে উত্তম আর কেউ হবে না। তবে যে এর চেয়েও বেশি পাঠ করবে সে ব্যতীত। এবং তিনি আরো বলেন: যে ব্যক্তি দিনে একশত বার
“سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحْمَدِهِ”
এ দু‘আ পাঠ করবে তার সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৯১)
এরপর এর ফযীলত ও এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। এতদসত্ত্বেও কি তোমরা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ থেকে উদাসীন থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيٰتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ - فَاذْكُرُوْنِيْٓ أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ)
“আমি তোমাদের মধ্য হতে এমন এক রাসূল প্রেরণ করেছি যিনি তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন ও তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং তোমাদেরকে কিতাব ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেন আর তোমরা যা জানতে না তাও শিক্ষা দেন। সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর! আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব আর তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় কর ও অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (সূরা বাকারাহ ২:১৫১-১৫২)
হাদীসে এসেছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমাকে একাকী স্মরণ করে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যে আমাকে কোন দলের মধ্যে স্মরণ করে আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম (ফেরেশতাদের) দলের মধ্যে স্মরণ করি। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪০৫, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৭৫)
এমনকি ফেরেশতারাও যিকিরকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَه۫ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِه۪ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ج رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ -رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنّٰتِ عَدْنِ نِالَّتِيْ وَعَدْتَّهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيّٰتِهِمْ ط إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ)
“যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা পার্থনা করে (বলে:) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি সকল কিছুকেই (তোমার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করেছ, অতএব যারা তাওবা করে ও তোমার পথের অনুসরণ করে তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে প্রবেশ করাও স্থায়ী জান্নাতে যার অঙ্গীকার তুমি তাদেরকে দিয়েছ এবং তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা সৎ কর্ম করেছে তাদেরকেও। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।” (সূরা মু’মিন ৪০:৭-৯)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তারা যখন আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তারা তথায় শুধু শান্তিপূর্ণ অভিবাদন শুনবে। এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসের প্রথম দিকে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যিকির করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য। নম্রভাবে ভয়ের সাথে চুপে চুপে এবং সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক।
২. সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ সর্বক্ষণ আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ পাঠ করতে হবে।
৩. ফেরেশতারা মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
৪. জান্নাতে শান্তিপূর্ণ অভিবাদন ছাড়া আর কিছুই সেখানে থাকবে না।
9 Fozlur Rahman
যেদিন তারা আল্লাহর সাথে মিলিত হবে সেদিন তাদের (প্রতি) অভিবাদন হবে জ্ঞসালামঞ্চ (তোমাদের জন্য শান্তি)! তিনি তাদের জন্য এক মহান প্রতিদান (জান্নাত) প্রস্তুত করে রেখেছেন।
10 Mokhtasar Bangla
৪৪. মুমিনরা যেদিন স্বীয় প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে এই বলে যে, তোমাদের উপর সর্ব প্রকার অনিষ্ট থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা। আর আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্যে তাঁর আনুগত্যের কাজ করা ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকার জন্যে প্রস্তুত করে রেখেছেন সম্মানী প্রতিদান যা হচ্ছে জান্নাত।
11 Tafsir Ibn Kathir
৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর
বহু প্রকারের নিয়ামতদাতা আল্লাহ তা'আলা বলছেনঃ আমাকে অধিক মাত্রায় স্মরণ করা তোমাদের উচিত। তাছাড়াও তিনি আরো বহু প্রকারের নিয়ামত প্রদানের ওয়াদা করেছেন। হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে উত্তম কাজ, পবিত্র আমল, সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের পুণ্য, স্বর্ণ-রৌপ্য আল্লাহর পথে ব্যয় করা অপেক্ষা অধিক উত্তম এবং জিহাদ হতে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন কাজের কথা বলবো না?” সাহাবীগণ বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সেটা কি উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহর যিক্র বা স্মরণ। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) وَ الذّٰكِرِیْنَ اللّٰهَ كَثِیْرًا وَّ الذّٰكِرٰتِ আয়াতের তাফসীরে এগুলো ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে এমন এক দু'আ শুনেছি যা আমি কখনো পরিত্যাগ করি না। তা হলো:
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ اُعَظِّمُ شُكْرَكَ وَاتَّبِعُ نَصِيْحَتَكَ وَاُكْثِرُ ذِكْرَكَ وَاحْفَظُ وَصِيَّتَكَ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার বড় কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী, আপনার উপদেশের অনুসরণকারী, আপনার অধিক যিকরকারী এবং আপনার অসিয়তের অধিক হিফাযতকারী বানিয়ে দিন।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বাশার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, দু'জন বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করলো। তাদের একজন জিজ্ঞেস করলো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লোকদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “যে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় পেলো ও ভাল কাজ করলো।” দ্বিতীয়জন জিজ্ঞেস করলো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের উপর ইসলামের বিধান তো অনেক রয়েছে। আমাকে একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বিধান বাতলিয়ে দিন যার সাথে আমি সদা লেগে থাকবো।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “আল্লাহর যিক্র দ্বারা সদা-সর্বদা তোমার জিহ্বাকে সিক্ত রাখবে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা খুব বেশী বেশী আল্লাহর যি কর, এমনকি জনগণ তোমাদেরকে পাগল বলে ফেলে।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা খুব বেশী বেশী আল্লাহর যিক্র কর, শেষ পর্যন্ত যেন মুনাফিকরা বলতে শুরু করে যে, তোমরা লোক দেখানো যিক্র করছে। (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে কওম এমন মজলিসে বসে যেখানে আল্লাহর যিক্র হয় না, তারা কিয়ামতের দিন এ জন্যে আফসোস ও দুঃখ প্রকাশ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
اُذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا আল্লাহ তা'আলার এই উক্তির ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, প্রত্যেক ফরয কাজের একটা সীমা আছে এবং বিশেষ ওজর বশতঃ তা মাফও করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর যিক্রের কোন সীমা নেই। কোন সময়েই তা সঙ্গ ছাড়া হয় না। তবে কেউ যদি পাগল হয়ে যায় তবে সেটা অন্য কথা। দাঁড়িয়ে, বসে, রাত্রে, দিবসে, স্থলে, পানিতে, বাড়ীতে, সফরে, ধনী অবস্থায় ও দরিদ্র অবস্থায়, সুস্থ অবস্থায় ও অসুস্থ অবস্থায়, গোপনে ও প্রকাশ্যে, মোটকথা সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতে হবে। সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে হবে। তুমি যখন এগুলো করতে থাকবে তখন আল্লাহ তা'আলা তোমার উপর তার রহমত বর্ষণ করতে থাকবেন। আর ফেরেশতারাও তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবেন।
এ সম্পর্কে আরো বহু হাদীস ও আসার রয়েছে। এই আয়াতেও খুব বেশী বেশী আল্লাহর যিক্র করার হিদায়াত করা হয়েছে। অনেকে আল্লাহর যিক্র ও অযীফা সম্পর্কে বহু স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করেছেন, যেমন ইমাম নাসাঈ (রঃ), ইমাম মামারী (রঃ) প্রমুখ। এগুলোর মধ্যে এ বিষয়ের উপর সর্বোত্তম কিতাব হচ্ছে ইমাম নববী (রঃ)-এর লিখিত কিতাব।
মহান আল্লাহ বলেনঃ সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ
فَسُبْحٰنَ اللّٰهِ حِیْنَ تُمْسُوْنَ وَ حِیْنَ تُصْبِحُوْنَ ـ وَ لَهُ الْحَمْدُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ عَشِیًّا وَّ حِیْنَ تُظْهِرُوْنَ
অর্থাৎ “আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর সন্ধ্যায় ও সকালে। তারই জন্যে প্রশংসা আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে এবং বিকালে ও যোহরের সময়।” (৩০:১৭-১৮)
অতঃপর এর ফযীলত বর্ণনা এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করার জন্যে মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ স্বয়ং তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। এতদসত্ত্বেও কি তোমরা তাঁর যি হতে উদাসীন থাকবে? যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ
كَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِیْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ یَتْلُوْا عَلَیْكُمْ اٰیٰتِنَا وَ یُزَكِّیْكُمْ وَ یُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ یُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ ـ فَاذْكُرُوْنِیْۤ اَذْكُرْكُمْ وَ اشْكُرُوْا لِیْ وَ لَا تَكْفُرُوْنِ
অর্থাৎ “যেমন আমি তোমাদের মধ্যে তোমাদেরই মধ্য হতে এমন এক রাসূল পাঠিয়েছি যে তোমাদের কাছে আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে থাকে ও তোমাদেরকে (পাপ হতে) পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেয় যা তোমরা জানতে না। সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো, এবং তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (২:১৫১-১৫২)।
নবী (সঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি, আর যে আমাকে কোন জামাআত বা দলের মধ্যে স্মরণ করে, আমি তাকে এমন জামাআতের মধ্যে স্মরণ করি যা তার জামাআত হতে উত্তম।”
صَلٰوة শব্দটি যখন আল্লাহ তা'আলার দিকে সম্বন্ধযুক্ত হয় তখন ওর অর্থ হয় আল্লাহ তা'আলা তার কল্যাণ ও মঙ্গল তাঁর ফেরেশতাদের সামনে বর্ণনা করেন। অন্য কেউ বলেছেন যে, صَلٰوة শব্দটি আল্লাহ তা'আলার দিকে সম্বন্ধযুক্ত হলে ওর অর্থ হবে রহমত। এ দু'টি উক্তির মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। আর শব্দটি صَلٰوة ফেরেশতাদের দিকে সম্বন্ধযুক্ত হলে তখন অর্থ হবে মানুষের জন্যে দু'আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ
اَلَّذِیْنَ یَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَ مَنْ حَوْلَهٗ یُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَ یُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَ یَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَیْءٍ رَّحْمَةً وَّ عِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِیْنَ تَابُوْا وَ اتَّبَعُوْا سَبِیْلَكَ وَ قِهِمْ عَذَابَ الْجَحِیْمِ ـ رَبَّنَا وَ اَدْخِلْهُمْ جَنّٰتِ عَدْنِ نِ الَّتِیْ وَعَدْتَّهُمْ وَ مَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآىٕهِمْ وَ اَزْوَاجِهِمْ وَ ذُرِّیّٰتِهِمْ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ ـ وَ قِهِمُ السَّیِّاٰتِ
অর্থাৎ “আরশ বহনকারীরা ও ওর আশে-পাশে অবস্থানকারীরা তাদের প্রতিপালকের মহিমা কীর্তন করে ও তাঁর উপর ঈমান আনে এবং মুমিন বান্দাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপানি প্রত্যেক জিনিসকে রহমত ও ইলম দ্বারা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন যারা তাওবা করে ও আপনার পথে চলে। তাদেরকে আপনি জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন এবং জান্নাতে আদনে প্রবিষ্ট করুন যার ওয়াদা আপনি তাদের সাথে করেছেন। আর তাদের সাথে তাদেরকেও পৌছিয়ে দিন যারা তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে সৎকর্মশীল নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। আর তাদেরকে মন্দ ও অসৎ কাজ হতে বাঁচিয়ে নিন।” (৪০:৭-৯)
এই দু'আ ও ক্ষমা প্রার্থনার পরিপ্রেক্ষিতে মুমিন বান্দাদের উপর মহান আল্লাহ স্বীয় রহমত বর্ষণ করেন। তাদেরকে তিনি অজ্ঞতা ও কুফরীর অন্ধকার হতে বের করে ঈমানের আলোকের দিকে আনয়ন করেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু। দুনিয়ায় তিনি তাদেরকে সত্যের পথ প্রদর্শন করেন ও জীবিকার ব্যবস্থা করেন এবং আখিরাতে তিনি তাদেরকে ভয়-ভীতি ও কঠিন শাস্তি হতে বাঁচিয়ে নিবেন। ফেরেশতারা বারবার মুমিনদের কাছে এসে তাদেরকে সুসংবাদ দেন। তাদেরকে তারা বলেনঃ “তোমরা জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশের অধিকার লাভ করেছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ তার মুমিন বান্দাদের উপর অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহশীল।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে পথ চলছিলেন। ঐ সময় রাস্তার উপর একটি ছোট ছেলে ছিল। একটি দল আসছে দেখে ছেলেটির মা ভয় পেয়ে গেল এবং আমার ছেলে আমার ছেলে বলে চীৎকার করতে করতে ছুটে আসলো এবং ছেলেকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে একদিকে সরে গেল। ছেলের প্রতি মায়ের এই স্নেহ ও মমতা দেখে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মা কি এই ছেলেটিকে আগুনে ফেলতে পারে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের উদ্দেশ্য বুঝে নিয়ে বললেনঃ “না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা'আলা কখনো তাঁর বন্ধুকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি বন্দিনী নারীকে দেখেন যে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দেখা মাত্রই উঠিয়ে নিলো এবং বুকে লাগিয়ে দিয়ে দুধ পান করাতে শুরু করলো। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “আচ্ছা বল তো, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এই মহিলাটি তার এই ছেলেটিকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে কি? সাহাবীগণ উত্তরে বললেনঃ “না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহর শপথ! এই মহিলা তার ছেলের প্রতি যতটা স্নেহশীল ও দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি এর চেয়ে অনেক বেশী দয়ালু।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
মহান আল্লাহর উক্তিঃ যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে ‘সালাম'। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ
سَلٰمٌ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِیْمٍ
অর্থাৎ “পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবেঃ সালাম।” (৩৬:৫৮) কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো: পরকালে মুমিনরা যখন আল্লাহ তা'আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তারা একে অপরকে সালাম দেবে। ইবনে জারীর (রঃ) এ উক্তিটি পছন্দ করেছেন। আমি বলিঃ এই উক্তির স্বপক্ষে দলীল হচ্ছে নিম্নের আয়াতটিঃ
دَعْوٰىهُمْ فِیْهَا سُبْحٰنَكَ اللّٰهُمَّ وَ تَحِیَّتُهُمْ فِیْهَا سَلٰمٌ وَ اٰخِرُ دَعْوٰىهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ
অর্থাৎ “সেখানে তাদের ধ্বনি হবে- হে আল্লাহ! আপনি মহান, পবিত্র! এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবেঃ সালাম এবং তাদের শেষ ধ্বনি হবে- প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর প্রাপ্য।” (১০:১০)
মহান আল্লাহ বলেনঃ তিনি তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন উত্তম প্রতিদান। অর্থাৎ জান্নাত এবং ওর সমুদয় ভোগ্যবস্ত যেগুলো তাদের জন্যে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে। সেখানে তারা পানাহারের দ্রব্য, পরিধানের বস্ত্র, বাসস্থান, স্ত্রী, নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকন ইত্যাদি সবকিছুই পাবে! এগুলোর ধ্যান-ধারণা মানুষ করতেই পারে না। এগুলো এমনই যে, মানুষ চোখে দেখেনি, কানে শুনেনি এবং অন্তরে কল্পনাও করেনি।