২৪-২৭ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রুবুবিয়ার প্রমাণ বহন করে এমন কিছু সৃষ্টির বর্ণনা উল্লেখ করছেন। পৃথিবীর সকল যুগের নাস্তিকদেরকে বলে দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: বলে দাওন আকাশ ও জমিন থেকে তোমাদেরকে কে রিযিক দেন? অর্থাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন ফলে জমি উর্বর হয় আর ফসল ফলে, তা কে করেন? উত্তর হল: আল্লাহ তা‘আলা। এ কথা মক্কার মুশরিকরাও স্বীকার করত। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَا۬ءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْأَمْرَ ط فَسَيَقُوْلُوْنَ اللّٰهُ ج فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُوْنَ)
“বল: ‘কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন, জীবিতকে মৃত হতে কে বের করেন এবং মৃতকে জীবিত হতে কে বের করেন এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করেন?’ তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল: ‘তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’’ (সূরা ইউনুস ১০:৩১)
সুতরাং যে এ বিশ্বাসের ওপর আছে সে কি সঠিক পথে আছে, না-কি যে তা বিশ্বাস করে না সে সঠিক পথে? কখনো নয়, বরং যে তা বিশ্বাস করে সেই সঠিক পথের অনুসারী।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি এ কাফির-মুশরিকদেরকে বলে দাও, যখন তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে এত মতানৈক্য ও মতভেদ রয়েছে তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, একদল হিদায়াতের ওপর এবং অন্যদল বিভ্রান্তির ওপর। কেননা বিপরীত মুখী বা বিবাদমান দু’টি দল কখনো সঠিক পথ প্রাপ্ত হতে পারে না। সুতরাং একদল হিদায়াত প্রাপ্ত আর অন্য দল পথভ্রষ্ট। আমরা হলাম আল্লাহর একত্বে আর স্পষ্ট দলিল-প্রমাণের ওপর সু-প্রতিষ্ঠিত। আর তোমরা হলে মুশরিক। তোমরা এমন কিছুর উপাসনা করো যার কোন দলিল-প্রমাণ তোমাদের নিকট নেই। সুতরাং তোমরা যদি আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী হও তাহলে তোমরা আমাদের অন্তর্ভুক্ত আর যদি একত্বে বিশ্বাসী না হও তাহলে তোমরা আমাদের থেকে মুক্ত। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(وَإِنْ كَذَّبُوْكَ فَقُلْ لِّيْ عَمَلِيْ وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ ج أَنْتُمْ بَرِيْـٓئُوْنَ مِمَّآ أَعْمَلُ وَأَنَا بَرِيْ۬ءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ)
“এবং তারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে তুমি বল: ‘আমার কর্ম আমার এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। আমি যা করি সে বিষয়ে তোমরা দায়মুক্ত এবং তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমিও দায়মুক্ত।’’ (সূরা ইউনূস:১০:৪১)
তোমাদের কাজের জন্য তোমরা দায়ী আর আমাদের কাজের জন্য আমরা দায়ী। কেউ কারো কাজের জন্য দায়ী হবে না। যার যার ‘আমাল তার তার জন্য।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ ج لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُمْ مَّا كَسَبْتُمْ ج وَلَا تُسْأَلُوْنَ عَمَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ)
“ওরা একটা দল ছিল যা অতীত হয়ে গেছে; তারা যা অর্জন করেছিল তা তাদের জন্য এবং তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্য এবং তারা যা করে গেছে তার জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১৩৪)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি কাফির-মুশরিকদেরকে বলে দাও যে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা সকলকে একত্রিত করবেন এবং তাদের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করে দেবেন এবং যারা সঠিক পথপ্রাপ্ত তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন আর যারা পথভ্রষ্ট তারা শাস্তি প্রাপ্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(وَیَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ یَوْمَئِذٍ یَّتَفَرَّقُوْنَﭝ فَاَمَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَھُمْ فِیْ رَوْضَةٍ یُّحْبَرُوْنَﭞ وَاَمَّا الَّذِیْنَ کَفَرُوْا وَکَذَّبُوْا بِاٰیٰتِنَا وَلِقَا۬یِٔ الْاٰخِرَةِ فَاُولٰ۬ئِکَ فِی الْعَذَابِ مُحْضَرُوْنَ)
“আর যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে। সুতরাং যারা ঈমান আনে এবং ভাল কাজ করে, তারা তো জান্নাতে আনন্দে থাকবে। আর যারা কুফরী করে এবং অবিশ্বাস করে আমার আয়াতসমূহকে ও আখিরাতের সাক্ষাতকে, তাদেরকেই ‘আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে।” (সূরা রূম ৩০:১৪-১৬) অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেনন হে নাবী! তাদেরকে বলে দাও, তারা যেন দেখিয়ে দেয়ন ঐ সকল লোকদেরকে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক করে, মূলত তারা এটা কখনো করতে সক্ষম হবে না।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَا۬ءَ ط قُلْ سَمُّوْهُمْ ط أَمْ تُنَبِّئُوْنَه۫ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ أَمْ بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ ط بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مَكْرُهُمْ وَصُدُّوْا عَنِ السَّبِيْلِ ط وَمَنْ يُّضْلِلِ اللّٰهُ فَمَا لَه۫ مِنْ هَادٍ)
“তারা আল্লাহর সাথে বহু শরীক সাব্যস্ত করেছে। বল: ‘তাদের পরিচয় দাও।’ তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও যা তিনি জানেন না? অথবা এটা ব্যাহ্যিক কথা মাত্র? না, কাফিরদের নিকট তাদের চক্রান্ত শোভন করে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে সৎ পথ হতে নিবৃত্ত করা হয়েছে, আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।” (সূরা রাদ ১৩:৩৩)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ইবাদাতের যোগ্য দ্বিতীয় আর কেউ নেই। তিনিই একমাত্র ইবাদাতের যোগ্য।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
২. যার যার কর্মের জন্য সে নিজে শাস্তি প্রাপ্ত হবে।
৩. যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক করে তারা কখনো হকের ওপর থাকতে পারে না।
৪. বিতর্কে প্রতিপক্ষের মানসিকতার প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং উত্তেজিত না হওয়া।