৪০-৪২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের মাঠে সকলকে একত্রিত করার পর কাফির-মুশরিকদেরকে লজ্জিত ও অপমানিত করার উদ্দেশ্যে ফেরেশ্তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন যে, এরাই কি তোমাদের ইবাদত করত? অর্থাৎ তোমরা কি তাদেরকে বলেছিলে তোমাদের ইবাদত করার জন্য? না কি তারাই পথভ্রষ্ট ছিল? যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ فَيَقُوْلُ أَأَنْتُمْ أَضْلَلْتُمْ عِبَادِيْ هٰٓؤُلَا۬ءِ أَمْ هُمْ ضَلُّوا السَّبِيْلَ)
“এবং যেদিন তিনি একত্র করবেন তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ‘ইবাদত করত তাদেরকে, সেদিন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, ‘তোমরাই কি আমার এ বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলে, না তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল?’’ (সূরা ফুরকান ২৫:১৭)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَإِذْ قَالَ اللّٰهُ يَا عِيْسَي ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَأُمِّيَ إِلٰهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ ط قَالَ سُبْحٰنَكَ مَا يَكُوْنُ لِيْٓ أَنْ أَقُوْلَ مَا لَيْسَ لِيْ بِحَقٍّ ط إِنْ كُنْتُ قُلْتُه۫ فَقَدْ عَلِمْتَه۫ ط تَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِيْ وَلَآ أَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِكَ ط إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ)
“আর (স্মরণ কর) আল্লাহ যখন বললেন: ‘হে মারিয়ামের ছেলে ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার জননীকে দুই ইলাহরূপে গ্রহণ কর?’ সে বলবে, ‘তোমার প্রবিত্রতা বর্ণনা করছি! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। যদি আমি তা বলতাম তবে তুমি তো তা জানতে। আমার অন্তরের কথা তো তুমি অবগত আছ, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই; তুমি তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।’’ (সূরা মায়িদাহ ৫:১১৬)
উত্তরে ফেরেশতারা বলবে যে, হে আমাদের রব! আপনি পবিত্র, মহান; আপনার কোন শরীক নেই। আপনি আমাদের রব, আমরা আপনাকেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছি, আপনার আগনুত্য ও ইবাদত করি। অন্য কারো সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। মূলত তারা জিন, শাইত্বানের পূজা করত। আর তারা তাদেরই প্রতি বিশ্বাসী ছিল। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(إِنْ يَّدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه۪ٓ إِلَّآ إِنٰثًا ج وَإِنْ يَّدْعُوْنَ إِلَّا شَيْطٰنًا مَّرِيْدًا - لَّعَنَهُ اللّٰهُ م وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا)
“তাঁর (আল্লাহ) পরিবর্তে তারা দেবীরই পূজা করে এবং বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করেন আল্লাহ তাকে লা‘নাত করেন এবং সে বলে, ‘আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব।” (সূরা নিসা ৪:১১৭-১১৮)
কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যদের যাদের ইবাদত করত, তারা কিয়ামতের দিন কোন উপকার ও ক্ষতি কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা এসব মুশরিকদেরকে বলবেন: তোমরা যে শাস্তির কথা অস্বীকার করতে তা আস্বাদন করো।
সুতরাং প্রত্যেককে সতর্ক হওয়া উচিত, আমরা কেন আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের কাছে চাইতে যাব, কেন অন্যের ইবাদত করব? তারা তো কিয়ামতের দিন কোন উপকার তো দূরের কথা ক্ষতিও করতে পারবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য যাদের ইবাদত করা হয়ন তারা সেদিন অস্বীকার করে বলবেন আমরা তাদেরকে আমাদের ইবাদত করতে বলিনি, বরং তারা শয়তান ও জিনদের ইবাদত করেছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের মাঠে সকলকে একত্রিত করা হবে।
২. কাউকে রব হিসেবে যদি পূজা করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকেও জিজ্ঞেস করা হবে যদিও সে ফেরেশ্তা কিংবা নাবী-রাসূল যে কেউ হোক না কেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য যাদের ইবাদত করা হয় তারা কিয়ামতের দিন তা অস্বীকার করবে।