৪-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
প্রথমত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সান্ত্বনা প্রদান করছেন যে, মক্কার কাফির-মুশরিকরা শুধু তোমাকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেনি, তোমার পূর্ববর্তী নাবী-রাসূলগণকেও সে যুগের মিথ্যুকরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰي مَا كُذِّبُوْا وَأُوْذُوْا حَتّٰيٓ أَتٰهُمْ نَصْرُنَا)
“তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে অবশ্যই মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল; কিন্তু তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা ও কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাদের নিকট এসেছে। ” (সূরা আন‘আম ৬:৩৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(مَا يُقَالُ لَكَ إِلَّا مَا قَدْ قِيْلَ لِلرُّسُلِ مِنْ قَبْلِكَ ط إِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ وَّذُوْ عِقَابٍ أَلِيْمٍ)
“তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয় যা বলা হত তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদের সম্পর্র্কে। তোমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিদাতা।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:৪৩)
সুতরাং এতে মনঃক্ষুন্ন হবার কিছুই নেই। এদের কাজই হলো মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। পূর্বের রাসূলগণ যেমন ধৈর্য ধারণ করেছে তেমনি তুমিও ধৈর্য ধারণ কর। জেনে রেখো, সকলকে আল্লাহ তা‘আলার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আর তখন তাদের এ মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শাস্তি প্রদান করা হবে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে লোক সকল! তোমরা জেনে রাখ! আল্লাহ তা‘আলা পুনরুত্থান, হাশর-নাশর, ভাল-মন্দের প্রতিদান ও জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা সত্য। সুতরাং পার্থিব চাকচিক্যময় জীবন ও আরাম-আয়েশ যেন আখিরাত সম্পর্কে ও তার জন্য আমল করতে প্রতারিত না করে।
(وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللّٰهِ الْغَرُوْرُ) -غرور
-শব্দটি غرر এর বহুবচন, অর্থ অতি প্রবঞ্চক। এর দ্বারা শয়তানকে বোঝানো হয়েছে। তার কাজই হল মানুষকে প্রতারিত করে কুফরী ও গোনাহর কাজে লিপ্ত করা। শয়তান যেন তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে ধোঁকা না দেয়। অর্থাৎ শয়তান যেন মন্দ কর্মকে শোভনীয় করে তোমাদেরকে তাতে লিপ্ত না করে। তখন তোমাদের অবস্থা হবে যে, তোমরা গোনাহ করার সাথে সাথে মনে করতে থাকবে যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় বান্দা আর তোমাদের কোন শাস্তি হবে না। (কুরতুবী) সুতরাং পার্থিব জীবনের মোহে পরে আখিরাতকে ভুলে গেলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা শয়তান সম্পর্কে আরো সর্তক করে বলছেন: শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“, সুতরাং তাকে শত্র“ হিসেবেই গ্রহণ কর। কক্ষনো তার অনুসরণ করো না, সে তোমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া (عليه السلام)-কে জান্নাত থেকে বের করেছে। এভাবে সে তোমাদেরকেও জাহান্নামের দিকেই আহ্বান করে, সে তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ওয়াদাবদ্ধ। এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ১৬-১৭ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(أَفَتَتَّخِذُوْنَه۫ وَذُرِّيَّتَه۫ٓ أَوْلِيَا۬ءَ مِنْ دُوْنِيْ وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ط بِئْسَ لِلظَّالِمِيْنَ بَدَلًا)
“তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছ? তারা তোমাদের শত্র“। যালিমদের এ বিনিময় কতই না নিকৃষ্ট।” (সূরা কাহফ ১৮:৫০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(كُتِبَ عَلَيْهِ أَنَّه۫ مَنْ تَوَلَّاهُ فَأَنَّه۫ يُضِلُّه۫ وَيَهْدِيْهِ إِلٰي عَذَابِ السَّعِيْرِ )
“তার সম্বন্ধে এ নিয়ম করে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং তাকে পরিচালিত করবে প্রজ্জ্বলিত অগ্নির শাস্তির দিকে।” (সূরা হাজ্জ ২২:৪)
অতএব সর্বদা শয়তানকে শত্র“ মনে করে তার অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা সে কখনো মানব জাতির কল্যাণ চায় না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পার্থিব মোহে পড়ে আখিরাতকে ভুলে যাওয়া যাবে না, আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবন কিছুই নয়।
২. শয়তানের অনুসরণ করা যাবে না, কেননা সে মানুষের প্রকাশ্য শত্র“ এবং মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।