আন নিসা আয়াত ৪২
يَوْمَىِٕذٍ يَّوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَعَصَوُا الرَّسُوْلَ لَوْ تُسَوّٰى بِهِمُ الْاَرْضُۗ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللّٰهَ حَدِيْثًا ࣖ ( النساء: ٤٢ )
Yawma'iziny yawad dullazeena kafaroo wa'asawur Rasoola law tusawwaa bihimul ardu wa laa yaktumoonal laaha hadeesaa (an-Nisāʾ ৪:৪২)
English Sahih:
That Day, those who disbelieved and disobeyed the Messenger will wish they could be covered by the earth. And they will not conceal from Allah a [single] statement. (An-Nisa [4] : 42)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যারা অস্বীকার করেছে এবং রসূল-এর নাফরমানী করেছে, তারা সে দিন কামনা করবে, হায়! তারা যদি মাটির সাথে মিশে যেত এবং তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই লুকিয়ে রাখতে পারবে না। (আন নিসা [৪] : ৪২)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
যারা অবিশ্বাস করেছে এবং রসূলের অবাধ্য হয়েছে, তারা সেদিন কামনা করবে যে, যদি তারা মাটির সাথে মিশে যেত! এবং তারা (সেদিন) আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেদিন কামনা করবে, যদি তারা মাটির সাথে মিশে যেত [১]! আর তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না [২]।
[১] এ আয়াতে হাশরের মাঠে কাফেরদের দূরাবস্থার বিবরণ দান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এরা কিয়ামতের দিন কামনা করবে যে, হায়! আমরা যদি ভূমির সাথে মিশে যেতাম, ভূমি যদি দ্বিধা হয়ে যেত আর আমরা তাতে ঢুকে গিয়ে মাটি হয়ে যেতাম এবং এখানকার জিজ্ঞাসাবাদ ও হিসাব-নিকাশ থেকে যদি অব্যাহতি লাভ করতে পারতাম। হাশরের ময়দানে কাফেররা যখন দেখবে, সমস্ত জীব-জন্তু একে অপরের কাছ থেকে কৃত অত্যাচারের প্রতিশোধ নেয়ার পর মাটিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের আক্ষেপ হবে এবং কামনা করবে - হায়! আমরাও যদি মাটি হয়ে যেতাম! যেমন অন্য সূরায় বলা হয়েছে “আর কাফেররা বলবে, কতই না উত্তম হত যদি আমরা মাটি হয়ে যেতাম।” [সূরা আন-নাবা; ৪০]
[২] অর্থাৎ এই কাফেররা নিজেদের বিশ্বাস ও কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহর কাছে কোন কিছুই গোপন রাখতে পারবে না। তাদের হাত-পা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বীকার করবে, নবীরাসূলগণ সাক্ষ্য দান করবেন এবং আমলনামসমূহেও সবকিছু বিধৃত থাকবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কুরআনের এক জায়গায় বলা হয়েছে, কাফেররা কোন কিছুই গোপন করতে পারবে না। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, তারা কছম খেয়ে খেয়ে বলবে
(وَاللّٰهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ)
অর্থাৎ “আল্লাহর কছম আমরা শির্ক করিনি”। [সূরা আল-আনআমঃ ২৩]
বাহ্যতঃ এ দুটি আয়াতের মধ্যে যে বৈপরীত্য দেখা যায় তার কারণ কি? তখন ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উত্তরে বললেন, ব্যাপারটি এমন হবে যে, যখন প্রথমে কাফেররা লক্ষ্য করবে শুধুমাত্র মুসলিম ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে যাচ্ছে না, তখন তারা একথা স্থির করে নেবে যে, আমাদেরকেও নিজেদের শির্ক ও অসৎকর্মের বিষয় অস্বীকার করা উচিত। হয়ত আমরা এভাবে মুক্তি পেয়েও যেতে পারি। কিন্তু এ অস্বীকৃতির পর স্বয়ং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আরম্ভ করবে এবং গোপন করার যে মতলব তারা স্থির করেছিল, তাতে সম্পূর্ণভাবে অকৃতকার্য হয়ে পড়বে এবং তখন সবই স্বীকার করে নেবে। এজন্যই বলা হয়েছে (وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللّٰهَ حَدِيْثَا) ‘কোন কিছুই গোপন করতে পারবে না’। যদি কেউ ভাল কাজ করে তাও সে বলবে, এক হাদীসে এসেছে হাশরের দিন আল্লাহ তা'আলা তার কোন বান্দাকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করবেন যাকে তিনি সম্পদ দিয়েছিলেনঃ ‘দুনিয়াতে তুমি কি কাজ করেছ? তখন সে কোন কথাই গোপন করবে না। সে বলবেঃ হে আমার রব, আপনি আমাকে সম্পদ দিয়েছেন, আমি মানুষের সাথে বেচা-কেনা করতাম। আমার স্বভাব ছিল মানুষকে ছাড় দেয়ার। আমি ধনীদের সাথে সহজ ব্যবহার করতাম আর দরিদ্রদেরকে সময় দিতাম। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ “আমি এটা করার জন্য তোমার চেয়েও বেশী উপযুক্ত। আমার বান্দাকে তোমরা ছাড় দাও’। [মুসলিমঃ ১৫৬০]
3 Tafsir Bayaan Foundation
যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেদিন কামনা করবে, যদি যমীনকে তাদের সাথে (মিশিয়ে) সমান করে দেয়া হত, আর তারা আল্লাহর কাছে কোন কথা গোপন করতে পারবে না।
4 Muhiuddin Khan
সেদিন কামনা করবে সে সমস্ত লোক, যারা কাফের হয়েছিল এবং রসূলের নাফরমানী করেছিল, যেন যমীনের সাথে মিশে যায়। কিন্তু গোপন করতে পারবে না আল্লাহর নিকট কোন বিষয়।
5 Zohurul Hoque
সেইদিন তারা চাইবে যারা অবিশ্বাস করে ও রসূলকে অমান্য করে, -- তাদের নিয়ে পৃথিবীটা যদি সমতল হয়ে যেত। আর তারা আল্লাহ্ থেকে কোনো কথা লুকোতে পারবে না।
6 Mufti Taqi Usmani
যারা কুফুর অবলম্বন করেছে এবং রাসূলের অবাধ্যতা করেছে, সে দিন তারা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে, যদি তাদেরকে মাটির (ভেতর ধসিয়ে তার) সাথে একাকার করে ফেলা হত! আর তারা আল্লাহ হতে কোনও কথাই গোপন করতে পারবে না।
7 Mujibur Rahman
যারা অবিশ্বাসী হয়েছে ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে তারা সেদিন কামনা করবে - যেন ভূমন্ডলের সাথে তারা মিশে যায় এবং আল্লাহর নিকট তারা কোন কথাই গোপন করতে পারবেনা।
8 Tafsir Fathul Mazid
৪০ হতে ৪২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছেন যে, তিনি দুনিয়াতে বান্দার ওপর একবিন্দু পরিমাণ জুলুম করেন না এবং কিয়ামতের দিনও করবেন না। বরং প্রত্যেককে তার যথাযথ প্রাপ্য প্রদান করবেন এমনকি সৎ আমলগুলো বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيٰمَةِ)
“এবং কিয়ামাত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড।”(সূরা আম্বিয়া ২১:৪৭)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অপরাধীরা কিয়ামতের দিন বলবে:
(مَالِ هٰذَا الْكِتٰبِ لَا يُغَادِرُ صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً إِلَّآ أَحْصَاهَا)
“এটা কেমন গ্রন্থ যে, ছোট বড় কিছুই বাদ দেয়া হয়নি; বরং সমস্ত হিসেব রেখেছে।’(সূরা কাহফ ১৮:৪৯)
(فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا)
‘তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কী অবস্থা হবে?’ অর্থাৎ কিয়ামাতের দিন মানুষের অবস্থা কেমন হবে; যখন প্রত্যেক উম্মাতের রাসূলকে তাঁর উম্মাতের আমল সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নিয়ে আসবেন এবং অন্যান্য রাসূলগণ যারা তাদের রিসালাতের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছেন সে ব্যাপারে এবং আপনার উম্মাতের সাক্ষীর ব্যাপারেও যখন আপনাকে নিয়ে আসবেন? আমর বিন মুররাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে কুরআন তেলাওয়াত করে শুনাব? কুরআন তো আপনার উপরেই অবতীর্ণ হয়েছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অন্যের নিকট থেকে কুরআন শুনতে আমি পছন্দ করি। আমি তখন তাঁকে সূরা নিসা পাঠ করে শুনাতে লাগলাম। যখন আমি
(فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا)
আয়াতে পৌঁছলাম তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, থামো। আমি দেখলাম, তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্র“ গড়িয়ে পড়ছে। (সহীহ বুখারী হা: ৪২২১)
কিয়ামতের দিন কাফির ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরোধী লোকেরা চাইবে যদি তারা জমিনে মিশে সমান হয়ে যেত। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَيَقُوْلُ الْكٰفِرُ يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ تُرَابًا)
“আর কাফির ব্যক্তি বলবে: হায়! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম।”(সূরা নাবা ৭৮:৪০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার ন্যায় পরায়ণতা ও রহমাতের বর্ণনা জানতে পারলাম।
২. কিয়ামাতের ভয়াবহ অবস্থা জানতে পারলাম।
৩. কিয়ামাতের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-র সাক্ষ্য দানের প্রমাণ জানতে পারলাম।
9 Fozlur Rahman
যারা কুফরি করেছে এবং রসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেদিন কামনা করবে, যদি তাদেরসহ মাটি সমান করে দেওয়া হত (তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হত)! তারা আল্লাহর কাছে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।
10 Mokhtasar Bangla
৪২. যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেই মহান দিনে চাইবে, তারা যদি মাটি হয়ে যেতো তাহলে তারা ও জমিন সমান হয়ে যেতো। সেদিন তারা আল্লাহর কাছ থেকে নিজেদের কর্মকাÐের কোন কিছুই লুকিয়ে রাখতে পারবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সেদিন তাদের জিহŸার উপর মোহর মেরে দিবেন তখন সে জিহŸা আর কোন কথাই বলতে পারবে না। আর তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অনুমতি দিবেন তখন সেগুলো তাদের বিরুদ্ধে তাদের আমলের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে।
11 Tafsir Ibn Kathir
৪০-৪২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বলেন-“তিনি কারও উপর অত্যচার করেন না, কারও পুণ্য নষ্ট করেন না, আরও বৃদ্ধি করে তার পুণ্য ও প্রতিদান কিয়ামতের দিন দান করবেন। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে وَ نَضَعُ الْمَوَازِیْنَ الْقِسْطَ অর্থাৎ আমি ন্যায় বিচারের দাঁড়িপাল্লা রাখবো।' (২১:৪৭) আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন যে, হযরত লোকমান (আঃ) স্বীয় পুত্রকে বলেন یٰبُنَیَّ اِنَّهَاۤ اِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِیْ صَخْرَةٍ اَوْ فِی السَّمٰوٰتِ اَوْ فِی الْاَرْضِ یَاْتِ بِهَا اللّٰهُ اِنَّ اللّٰهَ لَطِیْفٌ خَبِیْرٌ অর্থাৎ বাছা! যদি কোন জিনিস সরিষার দানার সমানও হয় এবং তা কোন পাথরে বা আকাশসমূহ অথবা পৃথিবীর মধ্যে থাকে, আল্লাহ তা আনয়ন করবেন, নিশ্চয়ই তিনি সুক্ষ্মদর্শী ও অভিজ্ঞ।' (৩১:১৬) আর এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেন یَوْمَىٕذٍ یَّصْدُرُ النَّاسُ اَشْتَاتًا ﳔ لِّیُرَوْا اَعْمَالَهُمْ ـ فَمَنْ یَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَیْرًا یَّرَهٗ ـ وَ مَنْ یَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا یَّرَهٗ অর্থাৎ সে দিন মানুষ বিভিন্ন অবস্থায় ফিরে আসবে যেন তাদেরকে তাদের কার্যাবলী দেখানো হয়, অতএব সে অণুপরিমাণও যা সকাজ করেছে তা দেখতে পাবে এবং অণুপরিমাণও যা মন্দ কাজ করেছে তাও দেখতে পাবে।' (৯৯:৬-৮)
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের শাফ‘আতযুক্ত সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছেঃ অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলবেন, ফিরে এসো এবং যার অন্তরে সরিষার দানার সমানও ঈমান দেখ তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আন। সুতরাং বহু মাখলুক জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবে। হযরত আবূ সাঈদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলতেন, “তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআন কারীমের اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ-এ আয়াতটি পাঠ করে নাও।
মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলার কোন দাস বা দাসীকে আনয়ন করা হবে এবং একজন আহ্বানকারী হাশরের ময়দানের সমস্ত লোককে শুনিয়ে উচ্চৈঃস্বরে বলবেন, এ হচ্ছে অমুকের পুত্র অমুক। যে কারও প্রাপ্য তার জিম্মায় রয়েছে সে যেন এসে নিয়ে যায়। সেদিন অবস্থা এই হবে যে, স্ত্রীলোক চাইবে তার কোন প্রাপ্য পিতার উপর, মাতার উপর, ভ্রাতার উপর বা স্বামীর উপর থাকলে সে দৌড়িয়ে এসে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি فَلَاۤ اَنْسَابَ بَیْنَهُمْ یَوْمَىٕذٍ وَّ لَا یَتَسَآءَلُوْنَ (২৩:১০১)-এ আয়াতটি পাঠ করেন। অর্থাৎ সেদিন বংশ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকবে না এবং তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদও করবে না। আল্লাহ তাআলা স্বীয় হক ইচ্ছেমত ক্ষমা করবেন। কিন্তু মানুষের প্রাপ্য ক্ষমা করবেন না। যখন দাবীদারগণ এসে যাবে তখন তাকে বলা হবে, তাদের প্রাপ্য আদায় কর। সে তখন বলবে, দুনিয়াতে শেষ হয়ে গেছে, আজ আমার হাতে কি রয়েছে যে, তা আমি দেবো? অতএব তার সৎ কার্যাবলী নেয়া হবে এবং দাবীদারদেরকে দেয়া হবে ।
এভাবেই প্রত্যেকের প্রাপ্য আদায় করা হবে। এখন লোকটি যদি আল্লাহভক্ত হয় তবে তার কাছে এক সরিষার দানা পরিমাণ পুণ্য অবশিষ্ট থাকলেও আল্লাহ তা'আলা ওকে বৃদ্ধি করতঃ শুধুমাত্র ওরই উপর ভিত্তি করে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। অতঃপর তিনি اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ ـ وَاِنْ تَكُ حَسَنَةً يُّضَاعِفْهَا -এ আয়াতটি পাঠ করেন। আর যদি লোকটি আল্লাহভক্ত না হয়, বরং পাপী ও দুরাচার হয় তবে তার অবস্থা এই হবে যে, ফেরেশতাগণ বলবেন-‘হে। আল্লাহ! তার পুণ্যগুলো শেষ হয়ে গেছে কিন্তু এখনও দাবীদারগণ বাকী রয়েছে।
তখন নির্দেশ দেয়া হবে-দাবীদারদের পাপগুলো তার উপর চাপিয়ে দাও। অতঃপর তাকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট কর।' এ মাওকুফ হাদীসটির কিছু কিছু ‘শাওয়াহিদ' মারফু হাদীসেও বিদ্যমান রয়েছে।
মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে হযরত উমার (রাঃ)-এর উক্তি রয়েছে مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشْرُ اَمْثَالِهَا-এ আয়াতটি মরুচারী আরবদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। এর উপর তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তাহলে মুহাজিরদের ব্যাপারে কোন আয়াতটি অবতীর্ণ হয়? তিনি উত্তরে বলেনঃ এর চেয়ে উত্তম اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ-এ আয়াতটি।
হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলার وَاِنْ تَكُ حَسَنَةً يُّضَاعِفْهَا-এ উক্তি হিসেবে এর কারণে মুশরিকেরও শাস্তি কম করা হবে। হ্যা, তবে জাহান্নাম হতে তো বের হবেই না। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, হযরত আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার চাচা আবু তালিব আপনার আশ্রয়দাতা ছিলেন। তিনি আপনাকে লোকদের কষ্ট দেয়া হতে রক্ষা করতেন এবং আপনার পক্ষ হতে তাদের সাথে যুদ্ধ করতেন, তাহলে তার কোন লাভ হবে কি? রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ হ্যা, তিনি খুব অল্প আগুনের মধ্যে রয়েছেন। যদি আমার এ সম্পর্ক না থাকতো তবে তিনি জাহান্নামের একেবারে নিম্ন তলায় থাকতেন।
কিন্তু খুব সম্ভব এ উপকার শুধুমাত্র আবু তালিবের জন্যেই নির্দিষ্ট। অন্যান্য কাফির এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, মুসনাদ-ই-তায়ালেসীর হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ মুমিনের কোন পুণ্যের উপর অত্যাচার করেন না। দুনিয়ায় খাওয়া-পরা ইত্যাদির আকারে ওর প্রতিদান পেয়ে থাকে এবং আখিরাতে সওয়াবের আকারে ওর প্রতিদান পাবে। হ্যাঁ, তবে কাফির তো তার পুণ্য দুনিয়াতেই খেয়ে নেয়। সুতরাং কিয়ামতের দিন তার নিকটে কোন পুণ্যই থাকবে না।
এ আয়াতে اَجْرٌ عَظِيْمٌ-এর ভাবার্থ হচ্ছে জান্নাত। আমরা আল্লাহ পাকের নিকট জান্নাত যাজ্ঞা করছি। মুসনাদ-ই-আহমাদের একটি গারীব হাদীসে রয়েছে, হযরত আবু উসমান (রঃ) বলেন, আমি সংবাদ পাই যে, আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় মুমিন বান্দাকে একটি পুণ্যের বিনিময়ে এক লক্ষ পুণ্য দান করে থাকেন। আমার বড়ই বিস্ময় বোধ হয় এবং আমি বলি- আমি তো তোমাদের সবার চাইতে অধিক হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর খিদমতে থেকেছি। আমি তো কখনও তাঁর নিকট এ হাদীসটি শুনিনি। তখন আমি দৃঢ় সংকল্প করে ফেলি যে, আমি নিজেই গিয়ে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতঃ এটা জিজ্ঞেস করে আসবো।
অতএব আমি সফরের আসবাবপত্র ঠিক করে নিয়ে এ বর্ণনাটির সত্যতা নিরূপণের জন্যে যাত্রা শুরু করি। আমি জানতে পারি যে, তিনি হজ্বে গিয়েছেন। আমিও হজ্বের নিয়ত করে তথায় পৌছি। তার সাথে সাক্ষাৎ হলে তাকে জিজ্ঞেস করি, হে আবু হুরাইরা (রাঃ)! আমি শুনেছি যে, আপনি এরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটা কি সত্য? তিনি তখন বলেন, “তুমি কি এতে বিস্ময় বোধ করছো? তুমি কি কুরআন কারীম পাঠ করনি যে, আল্লাহ তা'আলা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয়, আল্লাহ তাকে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিয়ে থাকেন।
অন্য আয়াতে রয়েছে, فَمَا مَتَاعُ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا فِی الْاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِیْلٌ অর্থাৎ “পরকালের তুলনায় ইহকালের জগতের আসবাবপত্র খুবই অল্প।” (৯:৩৮) আল্লাহর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছিঃ ‘একটি পুণ্যকে বৃদ্ধি করে ওর বিনিময়ে দু’ লক্ষ পুণ্য প্রদান করবেন।' এ হাদীসটি অন্যান্য পন্থায়ও বর্ণিত আছে।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সেদিন নবীগণকে সাক্ষী রূপে পেশ করা হবে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে وَ اَشْرَقَتِ الْاَرْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَ وُضِعَ الْكِتٰبُ وَ جِایْٓءَ بِالنَّبِیّٖنَ وَ الشُّهَدَآءِ অর্থাৎ “পৃথিবী স্বীয় প্রভুর আলোকে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, আমলনামা দেয়া হবে এবং নবীদেরকে ও সাক্ষীদেরকে আনয়ন করা হবে।” (৩৯:৬৯) অন্য এক জায়গায় ঘোষণা করা হয়েছে وَ یَوْمَ نَبْعَثُ فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِیْدًا عَلَیْهِمْ مِّنْ اَنْفُسِهِمْ অর্থাৎ সেই দিন প্রত্যেক উম্মতের উপর আমি তাদেরই মধ্য হতে সাক্ষী প্রেরণ করবো। (১৬:৮৯)
সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বলেন, “আমাকে কিছু কুরআন কারীম পাঠ করে শুনাও।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তখন বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আপনাকে কুরআন কারীম পাঠ করে কি শুনাবো? কুরআন কারীম তো আপনার উপরই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেনঃ হ্যা, কিন্তু আমি অন্যের নিকট হতে শুনতে চাই।' হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, “আমি তখন সূরা নিসা পাঠ করতে আরম্ভ করি। পড়তে পড়তে যখন আমি। (৪:৪১) فَكَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّ جِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِیْدًا-এ আয়াতটি পাঠ করি তখন তিনি বলেনঃ যথেষ্ট হয়েছে। আমি দেখি যে, তার চক্ষু অশ্রুসিক্ত ছিল।”
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ফুযালা আনসারী (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানী যুক্র গোত্রের নিকট আগমন করেন এবং সে পাথরের উপর বসে পড়েন যা এখন পর্যন্ত সে মহল্লায় বিদ্যমান রয়েছে। তার সাথে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত মুয়াম্ ইবনে জাবাল (রঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীও ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) একজন কারীকে বলেনঃ “কুরআন কারীম পাঠ কর।” তিনি পড়তে পড়তে যখন উক্ত আয়াত পর্যন্ত পৌঁছেন তখন তিনি এত ক্রন্দন করেন। যে, তাঁর গণ্ডদেশ এবং শত্রু সিক্ত হয়ে যায় এবং তিনি আরয করেনঃ “হে আমার প্রভু! আমি যাদের সামনে রয়েছি তাদের উপর আমার সাক্ষ্য দান সম্ভব, কিন্তু যাদেরকে আমি দেখিনি তাদের ব্যাপারে কিরূপে এটা সম্ভব? (মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম)।
তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি তাদের উপর সাক্ষী আছি যতদিন পর্যন্ত আমি তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছি। অতঃপর যখন আপনি আমাকে মৃত্যু দান করবেন তখন আপনিই তাদের উপর রক্ষক।” হযরত আবু আবদুল্লাহ কুরতুবী স্বীয় পুস্তক তাজকেরা’য় একটি পরিচ্ছেদ করেছেনঃ 'নবী (সঃ)-এর স্বীয় উম্মতের উপর সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে যা এসেছে। তাতে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াবের এ উক্তি এনেছেন যে, সকাল সন্ধ্যায় নবী (সঃ)-এর উপর তাঁর উম্মতের কার্যাবলী তাদের নামসহ পেশ করা হয়। সুতরাং তিনি কিয়ামতের দিন তাদের উপর সাক্ষ্য দান করবেন। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন।
কিন্তু প্রথমতঃ এটা হযরত সাঈদ (রঃ)-এর নিজের উক্তি। দ্বিতীয়তঃ এর সনদে ইনকিতা (বর্ণনাকারীদের যোগসূত্র ছিন্ন হওয়াকে ‘ইনকিতা’ বলে) রয়েছে। এতে একজন বর্ণনাকারী সন্দেহযুক্ত যার নামই নেই। তৃতীয়তঃ এ হাদীসটি মারফু’রূপে বর্ণনাই করেন না। হ্যাঁ, তবে ইমাম কুরতুবী (রঃ) এটাকে গ্রহণ করে থাকেন। হাদীসটি আনার পর তিনি বলেন, পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক সোমবার ও বৃস্পতিবার আল্লাহ তা'আলার সামনে কার্যাবলী পেশ করা হয় এবং নবীদের উপর ও পিতা-মাতার উপর প্রতি শুক্রবার হাযির করা হয়, আর এতে কোন তা'আরু বা পরস্পর বিরোধ নেই। কাজেই সম্ভবতঃ আমাদের নবী (সঃ)-এর কাছে প্রত্যেকদিন এবং অন্যান্য নবীদের কাছে প্রতি শুক্রবার উম্মতের কার্যাবলী পেশ করা হয়।
আল্লাহ তা'আলা বলেন-সেদিন কাফিরেরা এবং রাসূল (সঃ)-এর অবাধ্যাচরণকারীরা আকাঙ্খা করবে যে, যদি যমীন ফেটে যেতো এবং তারা ওর ভেতরে প্রবেশ করতে পারতো এবং পরে মাটি সমতল হয়ে যেতো তবে কতইনা ভাল হতো! কেননা, তারা সেই দিন অসহ্য সন্ত্রাস, অপমান এবং শাসন-গর্জনে হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে- یَّوْمَ یَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ یَدٰهُ وَ یَقُوْلُ الْكٰفِرُ یٰلَیْتَنِیْ كُنْتُ تُرٰبًا অর্থাৎ যেদিন মানুষ সম্মুখে প্রেরিত কার্যাবলী স্বচক্ষে দেখে নেবে এবং কাফির বলবে- যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম।' (৭৮:৪০)
অতঃপর বলা হচ্ছে-‘তারা সেদিন এ সমস্ত কাজের কথা স্বীকার করে নেবে যা তারা দুনিয়ায় করেছিল এবং একটি কথাও তারা গোপন করতে পারবে না।' তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে, হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, কুরআন কারীমের এক জায়গায় তো রয়েছে- وَ اللّٰهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِیْنَ অর্থাৎ আমাদের প্রভু আল্লাহর শপথ! আমার মুশরিক ছিলাম না। (৬:২৩) অন্য স্থানে রয়েছে- لَايَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا অর্থাৎ তারা আল্লাহর নিকট কোন কথাই গোপন করবে না। এ দু'টি আয়াতের ভাবার্থ কি?
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মুশরিকরা যখন দেখবে যে, মুসলমান ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না তখন তারা পরস্পর বলাবলি করবে- এস আমরা অস্বীকার করে বসি। তখন তারা বলবে- وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাদের মুখমণ্ডলের উপর মোহর লাগিয়ে দেবেন এবং তাদের হাতগুলো ও পাগুলো কথা বলতে থাকবে। তাই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَلَايَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا
মুসনদি-ই-আবদুর রাযযাকে রয়েছে যে, ঐ লোকটি এসে বলেন, কুরআন পাকের মধ্যে বহু জিনিস আমার নিকট বৈসাদৃশ ঠেকছে।' তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “তোমার উদ্দেশ্য কি? কুরআন কারীমের ব্যাপারে তোমার কি সন্দেহ রয়েছে? লোকটি বলেন, সন্দেহ তো নেই। কিন্তু আমার জ্ঞানে কুরআন পাকের মধ্যে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।' হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যেখানে যেখানে তুমি বৈসাদৃশ্য মনে করছে এগুলো উল্লেখ কর তো। তখন লোকটি উপরোক্ত আয়াতদ্বয় পেশ করে বলেন, একটি দ্বারা গোপন করা প্রমাণিত হচ্ছে এবং অপরটি দ্বারা গোপন না করা প্রমাণিত হচ্ছে। তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ উত্তর প্রদান করতঃ দু'টি আয়াতের আনুকূল্য বুঝিয়ে দেন।
অন্য একটি বর্ণনায় প্রশ্নকারীর নামও এসেছে যে, তিনি ছিলেন হযরত নাফে' ইবনে আযাক (রঃ)। ঐ বর্ণনায় এও এসেছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) লোকটিকে বলেন, আমার ধারণা এই যে, তুমি তোমার সঙ্গীদের নিকট হতে আসছে। সেখানেও হয় তো এ আলোচনা চলছিল। তুমি হয়তো বলেছে‘আমি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে আসছি। আমার ধারণা যদি সত্য হয় তবে যখন তুমি তাদের নিকট ফিরে যাবে তখন তাদেরকে সংবাদ দেবে যে, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন সমস্ত লোককে একই স্থানে একত্রিত করবেন। সে সময় মুশরিকরা বলবে, আল্লাহ তা'আলা একমাত্র একত্ববাদীদের ছাড়া কারও নিকট হতে কিছুই গ্রহণ করবেন না, কাজেই এসো আমরা অস্বীকার করি।
অতঃপর আল্লাহ পাক তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তখন তারা বলবে- وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ অর্থাৎ আল্লাহর শপথ। আমরা মুশরিক ছিলাম না। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাদের মুখের উপর মোহর লাগিয়ে দেবেন এবং তাদের হাতপা কথা বলবে ও তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, তারা মুশরিক ছিল। সে সময় তারা কামনা করবে যে, যেন ভূমণ্ডল তাদের সাথে সমতল হয় এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট কোন কথাই তারা গোপন করতে পারবে না। এটা ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন।