অচিরেই তোমরা কতক লোককে এমনও পাবে, যারা তোমাদের কাছ থেকেও নিরাপদ থাকতে চায়, তাদের নিজ সম্প্রদায় থেকেও নিরাপদ থাকতে চায়, যখন তাদেরকে ফিতনার দিকে মনোনিবেশ করানো হয় তখন তাতেই জড়িয়ে পড়ে। কাজেই যদি তারা তোমাদের শত্রুতা হতে সরে না যায় এবং তোমাদের নিকট শান্তি প্রস্তাব না করে এবং তাদের হস্ত সংবরণ না করে, তবে তাদেরকে গ্রেফতার কর আর যেখানেই পাও হত্যা কর, এরাই হচ্ছে সেই সব লোক তোমাদেরকে যাদের বিরুদ্ধাচরণের স্পষ্ট অধিকার দিয়েছি।
English Sahih:
You will find others who wish to obtain security from you and [to] obtain security from their people. Every time they are returned to [the influence of] disbelief, they fall back into it. So if they do not withdraw from you or offer you peace or restrain their hands, then seize them and kill them wherever you overtake them. And those – We have made for you against them a clear authorization.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অচিরেই তোমরা কিছু অন্য লোক পাবে যারা (বাহ্যতঃ) তোমাদের কাছে ও তাদের স্বজাতির কাছে নিরাপত্তা কামনা করে। [১] যখনই তাদেরকে ফিতনার দিকে আহবান করা হয়, [২] তখনই তারা তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে (পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়)। যদি তারা তোমাদের নিকট হতে পৃথক না হয় (যুদ্ধ না করে), তোমাদের নিকট সন্ধি প্রার্থনা না করে এবং তাদের হস্ত সংবরণ না করে, [৩] তাহলে তাদেরকে যেখানে পাও, সেখানেই গ্রেফতার করে হত্যা কর। আর এই সকল লোকের বিরুদ্ধেই আমি তোমাদেরকে স্পষ্ট প্রমাণ দান করেছি। [৪]
[১] এরা হল তৃতীয় আর একটি দল, যারা ছিল মুনাফিক। এরা মুসলিমদের কাছে এসে ইসলামের প্রকাশ করত, যাতে তাদের (মুসলিমদের) হাত হতে নিরাপদে থাকে। আর যখন স্বীয় জাতির নিকট যেত, তখন তাদের সাথে শিরক ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত হত, যাতে তারা এদেরকে নিজেদেরই দলভুক্ত মনে করে। এইভাবে তারা উভয় থেকেই স্বার্থ লাভ করত।
[২] الفِتْنَة (ফিতনা)এর অর্থ শিরকও হতে পারে। أُرْكِسُوا فِيْهَا এই শিরকের মধ্যেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অথবা 'ফিৎনা'র অর্থ যুদ্ধ। অর্থাৎ, যখন তাদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ফিরানো হত, তখন তারা সেদিকে আগ্রহের সাথে অগ্রসর হত।
[৩]يُلْقُوا এবং يَكُفُّوا এদের সংযোগ হল, يَعْتَزِلُوكُمْ এর সাথে। অর্থাৎ, সবই নেতিবাচক অর্থে। সবের সাথে لَم যোগ হবে।
[৪] এই কথার উপর যে, বাস্তবিকই তাদের হৃদয় মুনাফিক্বীতে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও হিংসায় পরিপূর্ণ। তাই তো তারা সামান্য প্রচেষ্টায় পুনরায় ফিৎনায় (শিরক অথবা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে) লিপ্ত হয়ে পড়ে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তোমরা আরো কিছু লোক অবশ্যই পাবে যারা তোমাদের সাথে ও তাদের সম্প্রদায়ের সাথে শান্তি চাইবে। যখনই তাদেরকে ফিত্নার দিকে মনোনিবেশ করানো হয় তখনই এ ব্যাপারে তারা তাদের আগের অবস্থায় ফিরে যায়। যদি তারা তোমাদের কাছ থেকে চলে না যায়, তোমাদের কাছে শান্তি প্রস্তাব না করে এবং তাদের হস্ত সংবরণ না করে তবে তাদেরকে যেখানেই পাবে গ্রেফতার করবে ও হত্যা করবে। আর আমরা তোমাদেরকে এদের বিরুদ্ধাচারণের স্পষ্ট অধিকার দিয়েছি [১]।
[১] উপরোক্ত ৮৮ থেকে ৯১ আয়াতসমূহে তিনটি দলের কথা বর্ণিত হয়েছে এবং তাদের সম্পর্কে দুটি বিধান উল্লেখিত হয়েছে। এসব দলের ঘটনাবলী নিমোস্কৃত বর্ণনাসমূহ থেকে জানা যাবে। প্রথম বর্ণনাঃ তাফসীরকার মুজাহিদ বলেন, একবার কতিপয় মুশরিক মক্কা থেকে মদীনায় আগমন করে এবং প্রকাশ করে যে, তারা মুসলিম; হিজরত করে মদীনায় এসেছে। কিছুদিন পর তারা দ্বীনত্যাগী হয়ে যায় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পণ্যদ্রব্য আনার অজুহাত পেশ করে পুনরায় মক্কা চলে যায়। এরপর তারা আর ফিরে আসেনি। এদের সম্পর্কে মুসলিমদের মধ্যে দ্বিমত দেখা দেয়। কেউ কেউ বলল এরা কাফের, আর কেউ কেউ বলল এরা মুমিন। আল্লাহ্ তা’আলা ৮৮ ও ৮৯ নং আয়াতে এদের কাফের হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন এবং এদেরকে হত্যা করার বিধান দিয়েছেন। [তাবারী] কাতাদা থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এরা ছিল তিহামার একটি গোত্র, তারা রাসূলকে বলল যে, আমরা আপনার সাথে যুদ্ধ করব না, আমাদের কাওমের সাথেও যুদ্ধ করব না। তারা রাসূল ও তাদের কাওমের যুগপৎ নিরাপত্তা চাচ্ছিল। তাদের অবস্থা বুঝে আল্লাহ তা’আলা তা মানতে অস্বীকার করেন। [ইবন আবী হাতেম; আত-তাফসীরুস সহীহ]
দ্বিতীয় বর্ণনাঃ হাসান বসরী বর্ণনা করেন যে, বদর ও ওহুদ যুদ্ধের পর সুরাকা ইবন মালেক মুদলাজী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা জানালো, আমাদের গোত্র বনী-মুদলাজের সাথে সন্ধি স্থাপন করুন। তিনি খালেদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সন্ধি সম্পন্ন করার জন্য সেখানে পাঠালেন। সন্ধির বিষয়বস্তু ছিল এইঃ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করবো না। কুরাইশরা মুসলিম হয়ে গেলে আমরাও মুসলিম হয়ে যাবো। যেসব গোত্র আমাদের সাথে একতাবদ্ধ হবে, তারাও এ চুক্তিতে আমাদের অংশীদার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯০ নং আয়াত নাযিল হয়।
তৃতীয় বর্ণনাঃ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত আছে যে, ৯১ নং আয়াতে আসাদ ও গাতফান গোত্রদ্বয়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। তারা মদীনায় এসে বাহ্যতঃ নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করতো এবং স্বগোত্রের কাছে বলতো আমরা তো বানর ও বিচ্ছুদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। তারাই আবার মুসলিমদের কাছে বলত, আমরা তোমাদের দ্বীনে আছি। মোটকথা, এখানে তিন দল লোকের কথা উল্লেখিত হয়েছেঃ এক. মুসলিম হওয়ার জন্য যে সময় হিজরত করা শর্ত সাব্যস্ত হয়, সে সময় সামর্থ্য থাকা সত্বেও যারা হিজরত না করে কিংবা হিজরত করার পর দারুল ইসলাম ত্যাগ করে দারুল হারবে চলে যায়। দুই. যারা স্বয়ং মুসলিমদের সাথে ‘যুদ্ধ নয়’ চুক্তি করে কিংবা এরূপ চুক্তিকারীদের সাথে চুক্তি করে। তিন. যারা সাময়িকভাবে বিপদ থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে শান্তিচুক্তি করে অতঃপর মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আহবান জানানো হলে তাতে অংশগ্রহণ করে এবং চুক্তিতে কায়েম না থাকে।
প্রথম দল সাধারণ কাফেরদের মত। দ্বিতীয় দল হত্যা ও ধরপাকড়ের আওতা বহির্ভূত এবং তৃতীয় দল প্রথম দলের অনুরূপ শাস্তির যোগ্য। এসব আয়াতে মোট দু'টি বিধান উল্লেখিত হয়েছে; অর্থাৎ সন্ধিচুক্তি না থাকা কালে যুদ্ধ এবং সন্ধিচুক্তি থাকাকালে যুদ্ধ নয়।
3 Tafsir Bayaan Foundation
তোমরা অচিরেই অন্য লোককে পাবে, যারা তোমাদের কাছে নিরাপত্তা চাইবে এবং নিরাপত্তা চাইবে তাদের কওমের কাছে। যখনই তাদেরকে ফিতনার দিকে ফিরানো হয়, তারা সেখানে ফিরে যায়। সুতরাং যদি তারা তোমাদের থেকে সরে না যায় এবং তোমাদের কাছে সন্ধি প্রস্তাব উপস্থাপন না করে এবং নিজদের হাত গুটিয়ে না নেয়, তাহলে তাদেরকে পাকড়াও করবে এবং হত্যা করবে যেখানেই তাদের নাগাল পাবে। আর ওরাই তারা, যাদের বিরুদ্ধে আমি তোমাদেরকে সুস্পষ্ট ক্ষমতা দিয়েছি।
4 Muhiuddin Khan
এখন তুমি আরও এক সম্প্রদায়কে পাবে। তারা তোমাদের কাছেও স্বজাতির কাছেও এবং নির্বিঘ্ন হয়ে থাকতে চায়। যখন তাদেরকে ফ্যাসাদের প্রতি মনোনিবেশ করানো হয়, তখন তারা তাতে নিপতিত হয়, অতএব তারা যদি তোমাদের থেকে নিবৃত্ত না হয়, তোমাদের সাথে সন্ধি না রাখে এবং স্বীয় হস্তসমূহকে বিরত না রাখে, তবে তোমরা তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে প্রকাশ্য যুক্তি-প্রমাণ দান করেছি।
5 Zohurul Hoque
আর একজন মূমিনের জন্য সঙ্গত নয় যে ভ্রমক্রমে ভিন্ন অন্য একজন মূমিনকে সে হত্যা করবে, আর যে কেউ একজন মূমিনকে ভুল করে কাতল করবে, তাহলে একজন মূমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে আর তার লোকদের হত্যার খেসারত আদায় করবে যদি না তারা দানরূপে মাফ করে দেয়। কিন্তু যদি সে তোমাদের শত্রুপক্ষীয় দল থেকে হয় আর সে মুমিন হয়, তবে একজন মুমিন দাসকে মূক্ত করতে হবে। আর যদি সে এমন দলের লোক হয় যে তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে অঙ্গীকার রয়েছে তাহলে তার লোকদের হত্যার খেসারত আদায় করতে হবে এবং মুক্ত করতে হবে একজন মূমিন দাসকে, কিন্তু যে পায় না তবে পরপর দুই মাস রোযা, -- আল্লাহ্র কাছ থেকে প্রায়শ্চিত্ত। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী।