৪৩-৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
কিয়ামতকে অস্বীকারকারীদের জন্যে যে শাস্তি রয়েছে আল্লাহ তা'আলা এখানে তারই বর্ণনা দিচ্ছেন যে, যারা কিয়ামতকে অবিশ্বাস করতঃ দুনিয়ায় সদা পাপকার্যে লিপ্ত থেকেছে তাদেরকে কিয়ামতের দিন যাককূম গাছ খেতে দেয়া হবে। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা আবু জাহেলকে বুঝানো হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহ যে, এ আয়াতের ভীতি প্রদর্শনের মধ্যে সেও শামিল রয়েছে, কিন্তু শুধু তারই সম্পর্কে আয়াতটি নাযিল হয়েছে এটা মনে করা ঠিক নয়। হযরত আবু দারদা একটি লোককে এ আয়াতটি পড়াচ্ছিলেন, কিন্তু সে اَثِيْمٌ শব্দটি উচ্চারণ করতে অপারগ হচ্ছিল এবং সে اَثِيْمٌ এর স্থলে يَثِيْم শব্দ বলে দিচ্ছিল। তখন তিনি طَعَامُ الْفَاجِرِ (পাপীর খাদ্য) পড়িয়ে দেন। অর্থাৎ তাদেরকে যাককূম গাছ। ছাড়া অন্য কোন খাদ্য খেতে দেয়া হবে না।
হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এই যাককূমের একটা বিন্দু যদি এই যমীনের উপর পড়ে তবে যমীনবাসীর সমস্ত জীবিকা নষ্ট হয়ে যাবে। একটি মারফু হাদীসেও এটা এসেছে যা পূর্বে গত হয়েছে।
এটা হবে গলিত তাম্রের মত, এটা তার পেটে ফুটন্ত পানির মত ফুটতে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের রক্ষকদের বলবেনঃ “এই কাফিরকে ধর এবং টেনে জাহান্নামের মধ্যস্থলে নিয়ে যাও। অতঃপর তার মস্তকের উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দাও।” যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
یُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوْسِهِمُ الْحَمِیْمُ ـ یُصْهَرُ بِهٖ مَا فِیْ بُطُوْنِهِمْ وَ الْجُلُوْدُ
অর্থাৎ তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে, ফলে তার পেটের সমুদয় জিনিস এবং চামড়া দগ্ধ হয়ে যাবে।”(২২:১৯-২০) ইতিপূর্বে এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফেরেশতারা তাদেরকে হাতুড়ী দ্বারা প্রহার করবে, ফলে তাদের মস্তিষ্ক চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর উপর হতে তাদের মাথার উপর গরম পানি ঢেলে দেয়া হবে। এই পানি যেখানে যেখানে পৌছবে, হাড়কে চামড়া হতে পৃথক পৃথক করে দিবে, এমনকি তাদের নাড়িভূড়ি কেটে পায়ের গোছা। পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এর থেকে রক্ষা করুন!
অতঃপর তাদেরকে আরো লজ্জিত করার জন্যে বলা হবেঃ “আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত অভিজাত।” অর্থাৎ আজ তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মোটেই সম্মানিত ও মর্যাদাবান নয়।
উমুভী (রঃ) তাঁর ‘মাগাযী’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) অভিশপ্ত আবু জাহেলকে বলেনঃ “আমার প্রতি আল্লাহর হুকুম হয়েছে যে, আমি যেন তোমাকে বলিঃ দুর্ভোগ তোমার জন্যে, দুর্ভোগ! আবার দুর্ভোগ তোমার। জন্যে, দুর্ভোগ!” তখন সে তার কাপড় তাঁর হাত হতে টেনে নেয় এবং বলেঃ “তুমি এবং তোমার প্রতিপালক আমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। এই সমগ্র উপত্যকায় সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি আমিই।” অতঃপর বদরের যুদ্ধে আল্লাহর হুকুমে সে নিহত হয় এবং তাকে তিনি লাঞ্ছিত করেন। ঐ সময় তিনি। অবতীর্ণ করেনঃ “আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত।” অর্থাৎ আজ তোমার সম্মান ও আভিজাত্য কোথায় গেল?
তারপর ঐ কাফিরদেরকে বলা হবেঃ “এটা তো ওটাই (ঐ শাস্তি), যা সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ পোষণ করতে। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
یَوْمَ یُدَعُّوْنَ اِلٰى نَارِ جَهَنَّمَ دَعًّا ـ هٰذِهِ النَّارُ الَّتِیْ كُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ ـ اَفَسِحْرٌ هٰذَاۤ اَمْ اَنْتُمْ لَا تُبْصِرُوْنَ
অর্থাৎ “যেদিন তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, (এবং বলা হবেঃ) এটা ঐ আগুন যাকে তোমরা অবিশ্বাস করতে। এটা কি যাদু, না তোমরা দেখছো না?”(৫২:১৩-১৫) আল্লাহ তাআলা এখানেও বলেনঃ “এটা তো ওটাই, যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে।”