১২-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তাঁরই হুকুমে মানুষ তাদের ইচ্ছানুযায়ী সমুদ্রে সফর করে থাকে। মালভর্তি বড় বড় নৌযানগুলো নিয়ে তারা এদিক হতে ওদিক ভ্রমণ করে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে আয়-উপার্জন করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা এই ব্যবস্থা এ জন্যেই রেখেছেন যে, যেন তারা তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়।
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আকাশের জিনিস যেমন সূর্য, চন্দ্র, তারাকারাজি এবং পৃথিবীর জিনিস যেমন পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী এবং মানুষের উপকারের অসংখ্য জিনিস তাদের কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন। এগুলোর সবই তাঁর অনুগ্রহ, ইহসান, ইনআম এবং দান। সবই তাঁর নিকট হতে এসেছে। যেমন তিনি বলেনঃ
وَ مَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللّٰهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَاِلَیْهِ تَجْئَرُوْنَ
অর্থাৎ “তোমাদের নিকট যেসব নিয়ামত রয়েছে সবই আল্লাহ প্রদত্ত, অতঃপর যখন তোমাদেরকে কষ্ট ও বিপদ স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁরই কাছে অনুনয় বিনয় করে থাকো।”(১৬:৫৩)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সব জিনিসই আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এসেছে এবং তাতে যে নাম রয়েছে তা তাঁরই নামসমূহের মধ্যে নাম। সুতরাং এগুলোর সবই তাঁরই পক্ষ হতে আগত। কেউ এমন নেই যে তার নিকট হতে এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারে বা তার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতে পারে। সবাই এ বিশ্বাস রাখে যে, তিনি এরূপই।
একটি লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “মাখলুককে কি জিনিস দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “আলো, আগুন, অন্ধকার এবং মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।” অতঃপর তিনি লোকটিকে বলেনঃ “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে দেখা হলে তাকেও জিজ্ঞেস করে নিয়ো। লোকটি সেখান হতে ফিরে গিয়ে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো। তিনিও ঐ উত্তরই দিলেন এবং লোকটিকে বললেনঃ “তুমি আবার হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট ফিরে যাও এবং জিজ্ঞেস কর যে এ সবগুলো কি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে?” লোকটি পুনরায় হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে ওটা জিজ্ঞেস করলো। তখন তিনি وَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ جَمِیْعًا مِّنْهُ -এ আয়াতটি পাঠ করেন। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা গারীব আসার, এমনকি অস্বীকার্যও বটে)
মহান আল্লাহ বলেনঃ চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে বহু নিদর্শন রয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, মুমিনদেরকে ধৈর্যধারণের অভ্যাস রাখতে হবে। যারা কিয়ামতকে বিশ্বাস করে না তাদের মুখ হতে তাদেরকে বহু কষ্টদায়ক কথা শুনতে হবে এবং মুশরিক ও আহলে কিতাবের দেয়া বহু কষ্ট সহ্য করতে হবে।
এই হুকুম ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে জিহাদ এবং নির্বাসনের হুকুম নাযিল হয়।
আল্লাহ পাকের ‘যারা আল্লাহর দিবসগুলোর প্রত্যাশা করে না' এই উক্তির ভাবার্থ হলোঃ যারা আল্লাহর নিয়ামত লাভ করার চেষ্টা করে না। তাদের ব্যাপারে মুমিনদেরকে বলা হচ্ছেঃ তোমরা পার্থিব জীবনে তাদের অপরাধকে ক্ষমার চক্ষে দেখো। তাদের আমলের শাস্তি স্বয়ং আল্লাহ তাআলা প্রদান করবেন। এ জন্যেই এর পরেই বলেনঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। সেই দিন প্রত্যেককে তার ভাল ও মন্দের প্রতিফল দেয়া হবে। সকর্মশীলকে পুরস্কার এবং পাপীকে শাস্তি প্রদান করা হবে।